২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ভারত-বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজ শুরু আজ

-


ভারতের সামনে অপেক্ষা করছে ব্যস্ত এক মৌসুম। বাংলাদেশের বিপক্ষে জোড়া টেস্ট দিয়ে শুরু, এরপর নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে আটটি টেস্ট খেলবে রোহিত শর্মার দল। তবে রোহিত বাংলাদেশের বিপক্ষে এই সিরিজকে ওই সব সিরিজের প্রস্তুতির মঞ্চ হিসেবে দেখতে নারাজ। বিপরীতে বাংলাদেশ পাকিস্তানে তাদেরই ঘরের মাঠে ২-০ তে টেস্ট সিরিজ জিতে টুইটুম্বুর অবস্থানে। তারাও চাচ্ছে সে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে। প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্ব সহকারে দেখছেন দুই দলের অধিনায়ক। উভয়ের দাবি এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় নয়। এগিয়ে যেতে, লক্ষ্যে পৌঁছতে দেশের জন্য প্রতিটি ম্যাচই সমান গুরুত্ব বহন। এমন অনড় অবস্থানে থেকে আজ থেকে চেন্নাইয়ের এম চিদম্বরম স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত টেস্ট দ্বৈরথ। ম্যাচটি শুরু হবে সকাল ১০টায়। বাংলাদেশের টি-স্পোর্টস ও গাজী টিভি সরাসরি সম্প্রচার করবে।

প্রায় দুই যুগ আগে অভিষেক টেস্ট থেকে শুরু করে ভারতের বিপক্ষে লাল বলে এখন পর্যন্ত কোনো সাফল্য নেই বাংলাদেশের। ১৩ ম্যাচের ১১টিতে পরাজয় আর বৃষ্টির সৌজন্যে বাকি দুইটি ড্র। এই সিরিজেও পরিষ্কারভাবে এগিয়ে ভারত। তবে অতীত যাই হোক, সাম্প্রতিক সময়ের ভালো পারফরম্যান্সের আত্মবিশ্বাসে ভর করে এবার ভালো কিছুর আশা টিম টাইগারদের।
চেন্নাই টেস্টের উইকেট স্পিন ধরবে নাকি পেস, নাকি ব্যাটারদের আধিপত্য-ধোঁয়াশা কাটছেই না। ম্যাচ শুরুর আগে হয়তো শিগগিরই বোঝাও যাবে না। তার ওপর ভারতীয় গণমাধ্যমের চটকদার খবর, সাথে মাঠে দুই উইকেট নিয়ে কিউরেটরদের নানারকম মন্তব্য। শেষ পর্যন্ত কেমন উইকেট হবে তা নিয়ে যখন ধোঁয়াশা, তখন নির্ভারই থাকছে বাংলাদেশ দল। একে তো খেলা হবে এসজি বলে যে বলে বাংলাদেশের খেলা হয় কম, তার ওপর উইকেট নিয়ে এই দ্বিধার কুণ্ডলী। চেন্নাইয়ে বরাবরই স্পিনবান্ধব উইকেট হয়। তবে গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ভারতীয় মিডিয়ায় বলাবলি হচ্ছে, উইকেট হবে বাউন্সি, থাকবে ঘাস। তার ওপর বিভ্রান্তি বেড়ে যায়, যখন দেখা যায় মাঠে কিউরেটররা কাজ করছেন একটি নয়, দু’টি উইকেট নিয়ে! লাল পিচ, কালো পিচ কত্ত কী।

নাজমুল হোসেন শান্ত উইকেট নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা না করে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করার পক্ষে। তিনি বলেন, ‘উইকেটের ব্যাপারে যতটুকু দেখে বুঝেছি ভালো উইকেট হবে। পেস বা স্পিন এটা নিয়ে কথা বলতে চাই না। কাল (আজ) যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উইকেট মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করব। স্পিন-পেস দুই দিক থেকেই দল ভারসাম্যপূর্ণ। তাই চিন্তা কারণ হবে না।’
এ দিকে ভারতের মাটিতে টেস্ট হয় এসজি বলে। বাংলাদেশ দল খেলে অভ্যস্ত কুকাবুরা বলে। কুকাবুরা বলের মতো এসজি বলে সিম সমান থাকে না, একটু উঁচু। তবে বলের পালিশ দ্রুত ক্ষয়ে যায়। এই বলে তাই মানিয়ে নেয়ার ব্যাপার আছে। শান্তর এ নিয়ে মাথা ঘামাতে চান না, ‘বাংলাদেশে এসজি বলে প্র্যাকটিস করেছি। এখানে আসার পরও এসজি বলে বেশ কয়েকটা সেশন হয়েছে। ভালোভাবেই ব্যাটাররা মানিয়ে নিয়েছে। তাদের বোলিং অ্যাটাক ভালো, চ্যালেঞ্জ থাকবেই। চ্যালেঞ্জ নেয়ার জন্য সবাই প্রস্তুত। বল নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। সবাই অনেক দিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে, এ ধরনের জিনিস মানিয়ে নেয়ার সামর্থ্য সবার আছে।’

চেন্নাইতে গতকাল রোহিত বলেন, ‘দেশের জন্য যখন খেলছেন, তখন প্রত্যেকটা ম্যাচ সমান গুরুত্বপূর্ণ। এটা অস্ট্রেলিয়া সিরিজের পোশাকি মহড়া নয়। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য পয়েন্ট দরকার আমাদের। মৌসুমটাও ভালোভাবে শুরু করা দরকার।’ বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজেই আপাতত মনোযোগটা আটকে রাখতে চান রোহিত। দূরের ভাবনাটা দূরে ঠেলে রাখছেন তিনি ও তার দল। তার কথা, ‘আমার দলের মনোযোগ হচ্ছে বাংলাদেশ সিরিজে। আমরা অনেক দূরে মনোযোগ দিচ্ছি না।’ ঘরের মাঠে সবশেষ সিরিজটা ভারত হেরেছিল সেই ২০১২ সালে। সেবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে হেরেছিল। এরপর থেকে টানা ১৭টা সিরিজ জিতেছে দলটা। এ সময় ৫১ টেস্টের চারটিতে হেরেছে মাত্র। তবে রোহিত সতীর্থদের সতর্ক করে দিলেন, তাদের যেন আত্মতুষ্টি পেয়ে না বসে। ‘আমরা অনেক লম্বা সময়ের পর আবারো টেস্টে নামছি। যখন এটা শুরু হবে, আমাদের দেখতে হবে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি। সেখান থেকে আগে বাড়তে হবে।’

শেষ কয়েক বছরে পেস আক্রমণে বেশ ভালো করেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তান সফরে দ্বিতীয় টেস্টটা বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন পেসাররাই। এমন সাফল্য বাংলাদেশকে টেস্টেও বেশ ফল দিচ্ছে। বর্তমানে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ স্থানে আছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
প্রধান কোচ হাথুরুসিংহে জানালেন শেষ কয়েক বছরে বিসিবি বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছিল, যা এখন ফল দিচ্ছে বাংলাদেশকে। তিনি বলেন, ‘এটা রাতারাতি হয়ে যায়নি। বোর্ড বেশ কিছু প্রক্রিয়া শুরু করেছে ফাস্ট বোলারদের জন্য। তাদের খেলাটা উপভোগের সুযোগ করে দিয়েছে, সাফল্য পাইয়ে দিয়েছে। আমাদের দেশেও অনেক ফাস্ট বোলার আছে, সবাই যখন ফিরে আসবে, তখন দেখবেন ফাস্ট বোলিংয়ের গভীরতা কতটুকু। পাকিস্তানের বিপক্ষে যা হয়েছে, ভারতের বিপক্ষেও তা হতে পারে।’
দলের ব্যাটিং ইউনিটের পারফরম্যান্স ও সামর্থ্যে আস্থা রেখে অধিনায়ক শান্ত বলেন, ‘ভালো একটা সিরিজ শেষ করে আসলাম। আমাদের সেটআপ খুব ভালো অবস্থানে আছে। টপ অর্ডাররা রান করেনি? সাদমান একটা ভালো ইনিংস খেলেছে, জাকিরেরও একটা ভালো ইনিংস ছিল। যে যে জায়গায় ব্যাট করছে ভালো করছে। মুশফিক ভাই, লিটন, মিরাজ খুব বেশি পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। উপরের চার ব্যাটার ভালো করার সামর্থ্য রাখে।’

 


আরো সংবাদ



premium cement