১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
পরিবর্তিত বাংলাদেশ নিয়ে বৈশ্বিক মূল্যায়ন

কট্টরপন্থীদের প্রত্যাবর্তন হিসেবে দেখছে দ্য হিন্দু

-

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দি হিন্দু মনে করছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেফাজত ইসলামকে প্রশ্রয় দেয়ার ফলে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির এই চূড়ান্ত পরিণতি হয়েছে। হাসিনার পতনের পর কট্টরপন্থী ইসলামপন্থীদের বাংলাদেশ সরকারে অন্তর্ভুক্ত করার পালা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। এক প্রতিবেদনে দি হিন্দু লিখেছে, বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন ‘বেগম’দের অনুপস্থিতিতে ইসলামপন্থীরা - দেশের রাজনীতির ওপর প্রভাব বিস্তার শুরু করেছে। ক্ষমতার স্বার্থে শেখ হাসিনা যেমন ‘কট্টরপন্থী’ সংগঠন হেফাজতে ইসলামকে শান্ত রাখার চেষ্টা করেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতা মুহাম্মদ ইউনূসও একই ধরনের পন্থা অবলম্বন করছেন। চরমপন্থী গোষ্ঠীর উপ-প্রধান অধ্যাপক এ এফ এম খালিদ হোসেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা।

দি হিন্দু বলছে, হেফাজতে ইসলাম, যা ‘ইসলামের রক্ষক’ হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং এ সংগঠনটি ২০১০ সালে শেখ হাসিনা সরকারের নারী উন্নয়ন নীতির বিরোধিতা করার জন্য গঠিত হয়েছিল। ওই নীতিতে পিতার সম্পত্তিতে নারীদের সমান অধিকারের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের ১৯,১৯৯টি কওমি মাদ্রাসা এবং এর ছাত্রদের একটি নেটওয়ার্কের নেতৃত্বে প্রধানত সুন্নি আলেমদের সমন্বয়ে গঠিত হেফাজত ইসলাম মহিলা বিলের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসার সাথে সাথে তারা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। দলটি পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করেছিল যা সামরিক শাসনের সময় সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতান্ত্রিক প্রকৃতিকে পরিবর্তন করেছিল। সেই বিক্ষোভের সময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছিল।

হিন্দু বলছে, ইসলামিক পন্ডিত শাহ আহমদ শফী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই দলটি বাংলাদেশে একটি ইসলামী শাসন পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে একটি ‘বিশুদ্ধভাবে ধর্মীয়’ সংগঠন হিসেবে কার্যক্রম শুরু করেছিল। এর বর্তমান আমির (প্রধান) হলেন মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী যিনি একাধিক মাওলানাদের সমন্বয়ে গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান। ২০২১ সালে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিরুদ্ধে সহিংস বিক্ষোভের জন্য কমিটির বেশির ভাগ সদস্যকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ইকোনমিস্ট রিপোর্ট অনুসারে, হেফাজতের মাদ্রাসাগুলো সৌদি আরবের সালাফি-ওয়াহাবি ইসলামপন্থীদের মাধ্যমে অর্থায়ন পেয়ে থাকে।

হাসিনার নরম অবস্থান ও মোদিবিরোধী প্রতিবাদ
রাস্তা দখলের লড়াই বা রাস্তার শক্তির প্রাথমিক প্রদর্শনে উৎসাহিত হয়ে, হেফাজত ইসলাম শাহবাগ বিক্ষোভে জড়িত ‘নাস্তিক’ ব্লগারদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে ২০১৩ সালে ঢাকায় একটি ‘লং মার্চ’ শুরু করেছিল। ওই ব্লগাররা তাদের পোস্টে ‘ইসলামকে অবমাননা’ করেছে বলে হেফাজত অভিযোগ করেছিল। ঢাকায় একটি বিশাল সমাবেশের মাধ্যমে চরমপন্থী গোষ্ঠীটি ১৩-দফা ঘোষণা করে যার মাধ্যমে ইসলাম অনুসারে কঠোর পোশাক কোড চালু, মূর্তি নিষিদ্ধ, মোমবাতি প্রজ্বলন বন্ধ, নারী উন্নয়ন নীতি বাতিল, নারী-পুরুষের জনসমক্ষে মেলামেশা নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে। আহমদিয়ারা (কাদিয়ানি) ‘অমুসলিম’ এমন দাবিও করে তারা। মে মাসে ‘ঢাকা অবরোধ’ কর্মসূচি পালন করার সময় ইসলামপন্থী বিক্ষোভকারী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সহিংস সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়।

চরমপন্থী নীতি এবং সংঘর্ষে জড়িত থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা সরকার একপর্যায়ে হেফাজতকে প্রশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের প্রাঙ্গণ থেকে গ্রিক দেবী থেমিসের মূর্তি অপসারণে শ্রীমতি হাসিনার সিদ্ধান্ত, ২০১৮ সালে দাওরা-ই-হাদিস (কওমি মাদ্রাসাগুলোর দ্বারা প্রদত্ত স্নাতকোত্তর সমতুল্য) স্বীকৃতি দেয়া এবং ইতিহাসের পাঠ্য পরিবর্তন করা তার প্রমাণ। মৌলবাদীদের অব্যাহত সমর্থন আদায়ের জন্য তাদের সন্তুষ্ট রাখাটাই ছিল তার পছন্দ। কারণ, সম্ভবত এই সত্য ছিল যে, হেফাজত ইসলাম, যা জামায়াতে ইসলামীর একটি কম জঙ্গি সংস্করণ। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সমর্থনে এবং মিস হাসিনার পরিবারের ১৯৭৫ সালের গণহত্যার বিরোধিতায়ও জামায়াত থেকে তারা মৌলিকভাবে আলাদা।

এ সাফল্যের পর, হেফাজত ২০২১ সালে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ শুরু করে যখন নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের ৫০তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঢাকা সফর করেন। ২০০২ সালে গুজরাটে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গার জন্য মোদিকে অভিযুক্ত করে হেফাজত। অন্যান্য ইসলামপন্থী দলগুলোর সাথে ওই সময় মোদিবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয় যার ফলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৩ জন নিহত হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেশ কয়েকটি হিন্দু মন্দিরও লক্ষ্যবস্তু করা হয় এবং একটি ট্রেনে হামলা চালানো হয়।

মোদির ঢাকা থেকে প্রস্থান করার পর, শেখ হাসিনা সরকার হেফাজতের ওপর দমন-পীড়ন চালায়, মামুনুল হক, হারুনুর রশিদ এবং মনির হোসেন কাসেমীর মতো এর ২৩ জন শীর্ষ নেতাসহ শত শত সদস্যকে গ্রেফতার করে। হেফাজত পুনর্গঠন এবং সংস্কার শুরু করার সাথে সাথে, মিস হাসিনা ২০২২ সালে ‘এর আরো যুক্তিসঙ্গত দাবিগুলো দেখার’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে দলটিকে - প্ররোচিত করেছিলেন। মামুনুল হক এবং কাসেমী ছাড়া বেশির ভাগ কারাবন্দী নেতাদের ২০২৩ সালে জামিন দেয়া হয়েছিল।

হাসিনার আকস্মিক প্রস্থানের পর, ইসলামপন্থীরা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে আরো বড় সহযোগী খুঁজে পেয়েছে। ইউনূস সরকার জামায়াতে ইসলামীর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে এবং আল-কায়েদা-অনুপ্রাণিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আনসারুল্লাহ বাংলার প্রধান জসিমুদ্দিন রাহমানিকে জামিন দিয়েছে। তা ছাড়া মি. ইউনূস মামুনুল হকের সাথেও দেখা করেছিলেন, যিনি হেফাজতের ২০২১ সালের মোদি-বিরোধী বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়ে ভারতের শঙ্কা জাগিয়েছিলেন। হিন্দুদের উপর একাধিক হামলা এবং মন্দির ও বাড়িঘর ভাঙচুরের খবরের মধ্যে, জনাব ইউনূস এটিকে খাটো করে বলেছেন যে তারা সাম্প্রদায়িক ছিল না, কিন্তু হাসিনা সরকারের প্রতি সম্প্রদায়ের অনুমিত সমর্থনের কারণে একটি রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের ফল যা বাংলাদেশের অন্ধকারে ফিরে যাওয়ার পথ চিহ্নিত করে এবং তা হচ্ছে, কট্টর ইসলামী শাসন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায় আসলে কী হয়েছিল? মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করুন : তথ্য উপদেষ্টা বহিরাগতমুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে ঢাবিতে নামবে ‘মোবাইল কোর্ট’ পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কোন্নয়ন প্রচেষ্টায় নজর ভারতের এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রিট নাটোরে গৃহবধূকে গণধর্ষণের অভিযোগে যুবদল নেতাসহ গ্রেফতার ৬ বহিরাগতমুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে ঢাবিতে নামবে ‘মোবাইল কোর্ট’ ভিসা সমস্যার সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা মার্চেন্ট শিপিং ফেডারেশনের শহীদ পরিবার পাচ্ছে ৫ লাখ, আহতরা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা রাজশাহীতে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হলেন অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম

সকল