বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সাহায্য দেবে যুক্তরাষ্ট্র
ঢাকায় উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদল- কূটনৈতিক প্রতিবেদক
- ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সঠিক অর্থনৈতিক সংস্কার করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাত বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে সহায়তা করতে পারে। জ্বালানি নিরাপত্তা থেকে শুরু করে ডাটা সেন্টার এবং পরিবহন পর্যন্ত, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসাগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দফতরের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ এরশাদ আহমেদের নেতৃত্বে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠকে এ অভিমত প্রকাশ করেন। নেইম্যান বাংলাদেশ সফররত উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ প্রতিনিধি দলে আরো রয়েছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জ্যেষ্ঠ পরিচালক লিন্ডসে ফোর্ড, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (ইউএসএআইডি) উপ-সহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কাউর ও যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ।
গতকাল সকালে মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতা ব্রেন্ট নেইম্যান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম। ডেনান্ড লু দুপুরে দিল্লি থেকে ঢাকা এসে প্রতিনিধি দলের সাথে যোগ দিয়েছেন।
প্রতিনিধিদলটি আজ রোববার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সাথে সাক্ষাৎ করবে। দুপুরে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিনের সাথে ওয়ার্কিং লাঞ্চে যোগ দেবেন। একই দিন প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সাথে বৈঠক করবে। ডোনাল্ড লু গুলশানের ইএমকে সেন্টারে পৃথক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ঢাকায় অবস্থানকালে প্রতিনিধি দলটি কূটনীতিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনদের সাথে মতবিনিময় করতে পারে।
বাংলাদেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলার পাশাপাশি অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনাটা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করে নতুন বিনিয়োগের পথ সুগম করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির রাজস্ব ও অর্থবিভাগ বাংলাদেশের আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা আনতে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বিনিয়োগের পরিবেশে উন্নতি ও দুর্নীতি দমনে সহায়তা দিতে আগ্রহী।
প্রক্রিয়াগত কারণ এবং নিয়মানুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঋণ পাওয়া কঠিন কাজ। চলতি বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে দেশটি থেকে সরাসরি ঋণ পাওয়াটা প্রায় অসম্ভব বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহায়তা করার সুযোগ যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে। এই সফরের সময় বাংলাদেশের সাথে ইউএসএআইডির ২০০ কোটি ডলারের আর্থিক খাতে কারিগরি সহযোগিতাবিষয়ক একটি চুক্তি সই হতে পারে।
ডোনাল্ড লু বাংলাদেশে আসার আগে গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে চার দিন ভারত সফর করেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্কে হঠাৎ করে ছেদ পড়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশকে ঘায়েল করতে চাইছে ভারত। আবার বাংলাদেশে আকস্মিক বন্যার জন্য অনেকেই ভারতের বাঁধ খুলে দেয়া বা আগাম তথ্য সরবরাহ না করাকে দুষছে। এ ছাড়া ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনে নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাকে দিল্লি থেকে ঢাকায় ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার একটা চাপ অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর রয়েছে।
বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি নিয়ে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। হাসিনার সরকার পতন পরবর্তী পরিস্থিতিকে ভারত যেভাবে দেখছে, যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি তার চেয়ে ভিন্ন। বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা দিতে চায়।
সংশ্লিষ্টদের ধারণা, দিল্লি সফরকালে বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বার্তা ভারতকে দিয়েছে। অন্য দিকে ভারতের কোনো বার্তা থাকলে তা বাংলাদেশকে অবগত করবেন ডোনাল্ড লু। দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সুসম্পর্কের স্বার্থে বাংলাদেশ ও ভারতের রাজনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ নিয়মিতভাবে চালু থাকাটা জরুরি বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। এরই অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র চাইছে নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশনের ফাঁকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাৎ হোক। এ সাক্ষাতের জন্য বাংলাদেশ অনুরোধ জানালেও ভারত এখন পর্যন্ত সাড়া দেয়নি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা