১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত পুলিশ সদস্যরা গাঢাকা দিয়েছেন

-

- অনেকে কাজে যোগ দেয়ার পর আত্মগোপনে চলে যান
- কতসংখ্যক কাজে যোগ দেননি তা জানা যায়নি

পুলিশের অনেক সদস্য এখনো কাজে যোগ দেয়নি। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে; তাদের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হলেও অধিকাংশরা গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। এদের মধ্যে কিছু সদস্য কাজে যোগ দেয়ার পরেও আত্মগোপনে চলে যান। কিছু দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে আত্মগোপনে থাকা পুলিশ সদস্যের সংখ্যা কতো তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র বলেছে, এই সংখ্যা ২৫০-৩০০। তবে অপর একটি সূত্র বলেছে, এই সংখ্যা তিন হাজারের ওপরে। অনেকের বিরুদ্ধে এখনো সুনির্দিষ্টভাবে মামলা দায়ের না হলেও মামলা হতে পারে এই আশঙ্কায় পলাতক রয়েছেন। নিজেদের অপরাধ সম্পর্কে জেনে বুঝেই তারা গা ঢাকা দিয়েছেন।

ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর তাকে সারদায় সংযুক্ত করা হয়। সেখানে তিনি যোগ দেয়ার পর গা ঢাকা দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে সাভারের আশুলিয়ায় ৬ ছাত্র-জনতাকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ রয়েছে। ওই ঘটনায় ২১ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি হারুন অর রশিদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক এডিশনাল কমিশনার হারুন অর রশিদ, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত এসপি মোবাশ্বিরা জাহান, সাবেক এডিশনাল এসপি আবদুল্লাহ হিল কাফি, ইন্সপেক্টর আরাফাত। এই ঘটনায় এরইমধ্যে সাবেক আইজিপি এবং কাফিকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গতকাল ইন্সপেক্টর আরাফাত গ্রেফতার হয়। কাফিকে গ্রেফতারের পর তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে এই নৃশংস ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের নাম। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশেই সে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর সৈয়দ নুরুলকে সারদা পুলিশ অ্যাকাডেমিতে সংযুক্ত করা হলে তিনি সেখানে যোগদানও করেছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে লাপাত্তা তিনি। তিনি এখন আর কর্মস্থলে যাচ্ছেন না। ধারণা করা হচ্ছে, গ্রেফতার ও বিচারের পর শাস্তি এড়াতে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। আশুলিয়ার ঘটনায় আরো যেসব পুলিশ সদস্যের নাম এসেছে তারা হলেন- আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নির্মল চন্দ্র, ওসি এ এফ এম সায়েদ আহমেদ, উপপরিদর্শক (এসআই) আফজালুল, এসআই জলিল, এসআই মো: রাকিবুল এসআই আবুল হাসান, এসআই হামিদুর রহমান, এসআই নাসির উদ্দিন, এসআই আবদুল মালেক, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সুমন চন্দ্র গাইন, এএসআই বিশ্বজিৎ রায়, কনস্টেবল মুকুল এবং কনস্টেবল রেজাউল করিম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যেসব পুলিশ সদস্য সরাসরি ছাত্র-জনতা হত্যার ঘটনায় সম্পৃক্ত তাদের বেশি ভাগই এখনো লাপাত্তা। বিশেষ করে যাদের ছবি-ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে, তারা আত্মগোপনে রয়েছে। ছাত্র-জনতার ওপর প্রকাশ্যে গুলি চালানোর ঘটনায় যেসব ছবি-ভিডিও এরইমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে, ওইসব নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে। তাতে যাদের বিরুদ্ধে মানবতবিরোধী গণহত্যার অভিযোগ মিলছে তাদের সবাইকেই বিচারের মুখোমুখি করার চেষ্টা করা হবে বলে একাধিক সূত্র জানায়। যারা আত্মগোপনে রয়েছে বা গা ঢাকা দিয়েছেন তাদেরকেও খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করার প্রক্রিয়া চলছে।
এ দিকে কতসংখ্যক পুলিশ সদস্য এখনো গা ঢাকা দিয়ে আছেন সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য এখনো জানা যায়নি। ঢাকার বেশির ভাগ থানার কার্যক্রম শুরু হলেও জনবল অধিকাংশই অনুপস্থিত থাকছে বলে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে।
এ দিকে কতসংখ্যক পুলিশ এখনো কর্মস্থলে যোগ দেননি তা জানার জন্য পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজির (এইচআর) সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি ডিআইজি (অপস) বলতে পারবেন। ডিআইজির (অপস) সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement