১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

কক্সবাজারে পাহাড়ধসে ৬ জনের মৃত্যু, ২৪ ঘণ্টায় ৫০১ মি.মি. বৃষ্টি

ডুবে গেছে নগরীর সৈকত এলাকার হোটেল-রিসোর্ট, কটেজ জোন। পানিবন্দী ২৫ হাজার পর্যটক
-


ভাদ্রের শেষ ভাগে এসে কক্সবাজারে ২৪ ঘণ্টায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে; যা গত দুই দশকের মধ্যে দেশে সর্বোচ্চ। এই অতি ভারী বৃষ্টিতে পৃথক দুই পাহাড়ধসের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ছয়জন।
এ ছাড়া ডুবে গেছে পর্যটন নগরীর সৈকত এলাকার হোটেল-রিসোর্ট, কটেজ জোন। জলাবদ্ধতা দেখা দেয়ায় বিপাকে পড়েছেন পর্যটকরা। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত অন্তত ২৫ হাজার পর্যটক আটকা পড়েন হোটেল কক্ষে। জলাবদ্ধতার কারণে তারা কোথাও বের হতে পারেননি। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে লাল নিশানা উড়িয়ে পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হচ্ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় এক শ গ্রাম।

আবহাওয়াবিদ তোফায়েল আহমেদ বলেন, বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেলা ৩টা থেকে শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজারে। যা চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ।
শুক্রবার সকালে আবহাওয়ার এক সতর্কবার্তায় বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ তৈরি হওয়ার কথা জানিয়েছিল আবহাওয়া অফিস। সেটি বিকেল ৩টায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবেই বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। আজ থেকে বৃষ্টিপাত কমে যাবে।
এ দিকে অতি ভারী বৃষ্টিতে কক্সবাজার শহরের ৯০ শতাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। প্রধান সড়কসহ শহরের ৫০টি উপসড়ক বৃষ্টির পানিতে তলিয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করে নষ্ট হয়েছে মালামাল; বসতবাড়িতে পানি ঢোকায় সীমাহীন দুর্ভোগে আছেন বাসিন্দারা।
পর্যটন জোন কলাতলীর সব সড়ক, সৈকতসংলগ্ন এলাকা আর বাজার ডুবে আছে পানিতে। কলাতলী সড়কের দুই পাশের পাঁচ শতাধিক হোটেলে যাতায়াতের ২০টি উপসড়কও ডুবে গেছে। এতে করে অন্তত ২৫ হাজার পর্যটক হোটেল কক্ষই বন্দী হয়ে পড়েছেন।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ভারী বৃষ্টির কারণে হোটেল-মোটেল জোন এখন পানিতে সয়লাব। কলাতলী সড়ক, সব উপসড়ক, সৈকতসংলগ্ন ছাতা মার্কেট, হোটেল লাবণী থেকে সুগন্ধা এলাকায় এখন পানি আর পানি।
শহরের প্রধান সড়কের বাজারঘাটা, বড়বাজার, মাছবাজার, এন্ডারসন সড়ক, টেকপাড়া, পেশকারপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, গোলদিঘিরপাড়, তারাবনিয়াছড়া, রুমালিয়ারছড়া, বাঁচামিয়ার ঘোনা, পাহাড়তলী, সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, নুনিয়াছড়া, বৈদ্যঘোনা, ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, খাজা মঞ্জিল, লাইটহাউস, কলাতলী, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, লারপাড়া এলাকা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে ভারী বৃষ্টিতে টেকনাফ ও উখিয়ার অন্তত ৮০টি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে টেকনাফের ৬০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। টেকনাফ সদর, হোয়াইক্যং, হ্নীলা, বাহারছাড়া ও সাবরাং ইউনিয়নে এসব গ্রামের অবস্থান।
এ ছাড়া উখিয়ার রাজাপালং, জালিয়াপালং, হলদিয়াপালং ও পালংখালী ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

পাহাড়ধসে ৬ জনের মৃত্যু
টানা বর্ষণে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কক্সবাজার সদর উপজেলা এবং উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক পাহাড়ধসের ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ ডিককূল এলাকায় পাহাড় ধসে মারা গেছে একই পরিবারের তিনজন। তারা হলেন- ওই এলাকার মিজানুর রহমানের স্ত্রী আঁখি মনি (২১) এবং দুই মেয়ে মিহা জান্নাত নাঈমা (৫) ও লতিফা ইসলাম (১)।
প্রতিবেশীরা জানান, বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ২টার দিকে ভারী বৃষ্টি হওয়ার সময় মিজানের বাড়ির দিক থেকে একটি পাহাড় ধসের বিকট শব্দ শোনা যায় পরে তারা গিয়ে দেখে, মিজানের পুরো পরিবার মাটিচাপা পড়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে মিজানকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। পরে দমকল বাহিনীর সহযোগিতায় উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে স্ত্রী ও দুই শিশু মেয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আর উখিয়া উপজেলার ১৪ নম্বর হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে আরেক পরিবারের তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন। তারা হলেন- রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-২ ব্লকের কবির আহমেদের ছেলে আব্দুর রহিম, আব্দুল হাফেজ ও আব্দুল ওয়াহেদ।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল গনি ওসমানী বলেন, কক্সবাজারে পাহাড় ধসে মোট ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন বাংলাদেশী ও তিনজন রোহিঙ্গা।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, ঝিলংজায় পাহাড় ধসে নিহত তিনজনের পরিবারকে ৭৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কাজ চলছে। পানিবন্দী এলাকার তালিকা তৈরি, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার কাজ করা হচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement