১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

সিন্ডিকেটের কবলে তাঁতবোর্ড

দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এখনো বহাল তবিয়তে
-

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দফতর, অধিদফতরে কর্মকর্তাদের মধ্যে পরিবর্তন হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগকৃত কর্মকর্তারা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ থাকলেও তারা এখনো বহাল রয়েছেন।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের তিন ব্যক্তির একটি সিন্ডিকেটের অনিয়ম দুর্নীতি প্রতিরোধে এক বছর আগে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত তারা রিপোর্ট জমা দেয়নি। বিভিন্ন তাঁতি সমিতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে তিন সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গত এক বছরেও তদন্তের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় দেশের তাঁতি সমাজের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ তাঁতি সমিতির বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাঁত বোর্ডের সিন্ডিকেটের দুর্নীতির কারণে ২৫ লাখ দেশী তাঁতের মধ্যে পনের লাখ তাঁত এখন বন্ধ। তাঁত বোর্ডের এই সুবিধাভোগীরা গত চার বছরে শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেছে। এই লুটপাটের রহস্য উন্মোচন করতে গঠন করা হয় কমিটি। কিন্তু এক বছর অতিবাহিত হলেও তারা এখন পর্যন্ত রিপোর্ট দিতে পারেনি।
জানা গেছে, দশ বছর ধরে একই পদে থাকা তাঁত বোর্ডের জিএম কামনাশীষের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট পরিচালিত হচ্ছে। কামনা শীষ দাশ জেনারেল ম্যানেজারের পদে ১০ বছর ধরে অবস্থান করার পাশাপাশি বোর্ডের অধীন অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
সিন্ডিকেট, দুর্নীতি এবং একই পদে জিএম এর ১০ বছর অবস্থান করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড এর সদস্য দেবাশীষ নাগ ফোনে এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, সারা দেশে এক হাজার ৩৬০টি তাঁতি সমিতি আছে তাঁত বোর্ডের। এর মধ্যে শুধু ৩০ থেকে ৩৫টি সমিতি বারবার রং ও রাসায়নিক দ্রব্য আমদানির সুযোগ পাচ্ছে। বিগত দিনে সভাপতি মনোয়ার হোসেন জিম কামনাশীষ দাশ ও মন্ত্রীর এপিএসের মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে।
সিন্ডিকেটের কারণে বাংলাদেশের প্রায় এক হাজার ৩৮৭ সমিতি সুতা রং ও রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা আমদানি সুবিধা না পাওয়ায় একে একে অনেক তাঁত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তারা সরকারের কোনো সুবিধা পাচ্ছে না। দেশের প্রতিটি তাঁতি সমিতিকে সুবিধা দেয়ার নিয়ম থাকলেও এই সিন্ডিকেট ২২ থেকে ২৩টা সমিতিকে সুবিধা দিয়ে আসছে। এসব সমিতির নামে আমদানি করা পণ্য কালোবাজারে তিনগুণ দামে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সমিতিগুলো প্রয়োজনীয় পণ্য যেমন রং রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি করতে না পারে এক এক করে সব বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নতুন মন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১৬ জানুয়ারি মন্ত্রী বরাবর একটি অভিযোগ করেন নরসিংদী জেলার শিবপুর পুটিয়া ইউনিয়ন ৩নং ওয়ার্ড প্রাথমিক তাঁতি সমিতির সম্পাদক মো: ফজলুল হক। অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, চার বছর আগে নির্বাচিত কমিটি জাতীয় তাঁতি সমিতির সভাপতির মেয়াদ শেষে মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন নির্বাচন ব্যতীত টিকিটের সহযোগিতায় অ্যাডহক কমিটি প্রথমবার সভাপতি নিয়োগ নেয়। কিন্তু কোনো নির্বাচনের প্রয়োজন মনে করেনি। দ্বিতীয়বার দুই বছর পর এই অনির্বাচিত কমিটিসহ পূর্বের ন্যায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধভাবে পুনরায় মেয়াদ বৃদ্ধি করে। এই দুই বছরেও কোনো নির্বাচন করেনি।
গত ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে সভাপতির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু তৃতীয়বারের মতো আবারো মেয়াদ বৃদ্ধি করে নেয়ার পাঁয়তারা চলছে। তারা বলছেন তাঁত বোর্ডের এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তাতিরা দফায় দফায় আন্দোলন সংগ্রাম ঘেরাও নানান কর্মসূচি পালন করলেও এরা বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement