১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

বিএনপির আশা দ্রুত সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের দিকে যাবে সরকার : ফখরুল

বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : নয়া দিগন্ত -

প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সংস্কার কাজগুলো দ্রুত শেষ হবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের দিকে যাবে।
জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সংস্কার বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রতিক্রিয়ায় গতকাল নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন। এর আগে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস পালনে বিএনপির ঘোষিত দুই দিনের কর্মসূচির প্রস্তুতি পর্যালোচনা করতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নিয়ে সমন্বয় সভা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য রেখেছেন এবং তিনি কিছু সংস্কারের কথা বলেছেন সেখানে সংস্কারে যারা দায়িত্ব নেবেন তাদের নামও উল্লেখ করেছেন। তিনি মোটামুটিভাবে তার যে একটা ভিশন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের, সেটা তিনি মোটা দাগে তুলে ধরেছেন। এখানে আমি মনে করি যে, সংস্কারের কথা আমরা সবাই বলেছি, সংস্কার প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক অধিকার একেবারে ধ্বংস করে ফেলেছিল। সেক্ষেত্রে অতি দ্রুত যেন এই সংস্কারের কাজগুলো শেষ করা হয়। মূলত গণতন্ত্রের জন্যে জনগণের পরিচালনায় তাদের নির্বাচিত সংসদ দিয়ে দেশ চলবে সেই বিষয়টা যেন অবশ্যই খুব দ্রুততার সাথে সমাপ্ত হয় সেটাই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাফল্য কামনা করি। আমরা মনে করি যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করছেন। এই কাজ করার জন্য তাদের সময় সুযোগ সবই দেয়ার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ফখরুল বলেন, এই সরকার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এসেছে। আমরা আশা করব, তারা জনগণের আশা-আকফক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। একটি কথা স্পষ্টভাবে বলা প্রয়োজন, গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। গণতন্ত্র হচ্ছে একমাত্র ব্যবস্থা যা জনগণের আশা-আকফক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে। সেজন্যই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তৈরি করা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু সেই কাজটাতে জনগণের সম্পৃক্ততা থাকতে হবে। জনগণ কি চায়, জনগণ কিভাবে জিনিসটা দেখতে চায় সেই বিষয়টা থাকতে হবে। আমরা আশা করব, বর্তমান যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আছে তারা সেটা উপলব্ধি করবেন, যাদের দায়িত্ব দেয়া আছে তারা দায়িত্ব অত্যন্ত সুচারুরূপে পালন করার চেষ্টা করবেন এবং জনগণ যাতে উপকৃত হয় সেই প্রত্যাশাই আমাদের থাকবে।
গণতন্ত্র দিবসের সমাবেশের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ১৫ সেপ্টেম্বর বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ হবে। এই সমাবেশটি হবে গত ১৪/১৫ বছরে যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন তাদের নিয়ে। এই সমাবেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, আবৃত্তি, কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান থাকবে। এই সমাবেশটি হবে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবার সমাবেশ। মির্জা ফখরুল বলেন, প্রশাসনে এতদিন ধরে আওয়ামী লীগ যেটা করেছে সম্পূর্ণ রাজনীতিকরণ করতে গিয়ে সব জায়গায় বেশির ভাগ লোকই তাদের মতাবলম্বী লোকদের প্রমোশন দিয়েছে, পদায়ন করেছে, তাদের দিয়ে কাজ করিয়েছে। ফলে এটা একটু সময় লাগবেই। পুরোপুরিভাবে নতুন করে এই মুহূর্তে এতো অফিসার নিয়োগ করা সম্ভব না। যা আছে তাদের দিয়ে করতে হবে। সেজন্য আমাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে। আমার বিশ্বাস যে, অতি অল্পসময়ের মধ্যে সব কিছু সুষ্ঠু হয়ে যাবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান এটাকে নস্যাৎ করে দেয়ার জন্যে একটা চক্র কাজ করছে। পতিত ফ্যাসিবাদী হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন এবং সেখান থেকে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে এই বাংলাদেশ সম্পর্কে, বাংলাদেশের মানুষের সম্পর্কে। এই অপপ্রচার কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সাথে শিল্পক্ষেত্রে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমরা সবাইকে অনুরোধ করব, এই শিল্প-কল-কারখানাগুলো চালু রাখার ক্ষেত্রে বিএনপির নেতা-কর্মীরা যে যেখানে আছি আমরা যেন সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে পারি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় চেয়ারপারসনের থউপদেষ্টা আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মীর সরাফত আলী সপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement