রাষ্ট্র সংস্কারে ৬ কমিশন
প্রাণঘাতী অস্ত্রের সামনে হিমালয়ের মতো দাঁড়িয়েছিল ছাত্র-জনতা : ড. ইউনূস- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রাণঘাতী অস্ত্রের সামনে হিমালয়ের মতো দাঁড়িয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়।
বক্তব্যের শুরুতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি জুলাই-আগস্ট মাসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত সব শহীদের প্রতি। আমি আরো স্মরণ করছি তাদের যারা ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রাণঘাতী অস্ত্রের সামনে হিমালয়ের মতো দাঁড়িয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে, আহত হয়েছে, পঙ্গুত্ববরণ করেছে, হারিয়েছে তাদের চোখের দৃষ্টি।
তিনি বলেন, সেসব বীরকে স্মরণ করছি যারা মিথ্যাচার, লুটপাট, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক দফা দাবি নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি আমাদের ভাইবোনদের, আমাদের সন্তানদের যারা এই বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছে।
গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারকে পুনর্বাসন সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেন, আগেও জানিয়েছি, আবারো জানাচ্ছি, গণ-অভ্যুত্থানে সব শহীদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে।
সব আহত শিক্ষার্থী, শ্রমিক, জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আহতদের দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং শহীদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন নতুন তথ্য পাওয়ার ভিত্তিতে এই তালিকা হালনাগাদ করা হতে থাকবে।
এই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে ‘জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, এখন সেই ফাউন্ডেশন তৈরি হয়েছে। সব শহীদ পরিবার ও আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসাসহ তাদের পরিবারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব এই ফাউন্ডেশন গ্রহণ করছে। এই ফাউন্ডেশনে দান করতে দেশের সব মানুষ এবং বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।
ব্যর্থ হওয়ার অবকাশ নেই : ড. ইউনূস
দেশবাসীকে উদ্দেশ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমাদের সামনে অনেক কাজ। আমাদের কাজ বড় কঠিন। কিন্তু জাতি হিসেবে এবার ব্যর্থ হওয়ার কোনো অবকাশ আমাদের নেই। আমাদের সফল হতেই হবে। এই সাফল্য আপনাদের কারণেই আসবে। আপনার সহযোগিতার কারণে আসবে। আমাদের কাজ হবে আপনার, আমার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করা।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমাদের প্রথম মাসে যে গতিতে যে উদ্যম নিয়ে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা আমরা চিন্তা করেছিলাম হয়তো সেটি করতে পারিনি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা গেলে আশা করি আমরা আমাদের গতি অনেক বাড়াতে পারব। এ জন্য দেশের সব মানুষের কাছে শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, কৃষক, শ্রমিক, পেশাজীবী, বড় ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিনমজুর, গৃহিণী সবার সহযোগিতা চাইছি।
তিনি বলেন, সবাই মিলে আমরা অগ্রসর হতে চাই। আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে যে সুপ্ত প্রতিভা লুকিয়ে আছে, সেটি যেন বিনা বাধায়, রাষ্ট্রের ও সমাজের সহযোগিতায় প্রকাশ করতে পারি সেই সুযোগের কাঠামো তৈরি করতে চাই। সবাই মিলে আমাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে, সে ঝাড়ুদার হোক, ছাত্র হোক, শিক্ষক হোক, যেকোনো ধর্মের হোক, সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে চাই। এই হলো আমাদের সংস্কারের মূল লক্ষ্য। আসুন ছাত্র, শ্রমিক, জনতার এই বিপ্লবের লক্ষ্যকে আমরা দ্রুত বাস্তবায়ন করি। তিনি বলেন, এখন আমরা দ্বিতীয় মাস শুরু করছি। আমাদের দ্বিতীয় মাসে যেন আপনাদের মনে দৃঢ় আস্থার সৃষ্টি করতে পারি সে চেষ্টা করে যাবো।
সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ধৈর্য ধরুন এ কথাটি আমি মোটেই আপনাদের বলব না। আমরা সবাই অধৈর্য হয়ে পড়েছি এতসব কাজ কখন যে শেষ হবে এটি চিন্তা করে। আমরা অধৈর্য হবো, কেন হবো না! কিন্তু সঠিকভাবে কাজ করব। কাজে কোনো অধৈর্যের চিহ্ন রাখব না।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, দেশের মোট ছয়টি ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য সরকার ছয়টি কমিশন গঠন করেছে। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব পেয়েছেন ড. শাহদীন মালিক। আরো পাঁচটি কমিশন গঠন করে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পাঁচজনকে।
এ নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিকের নেতৃত্বে কমিশনগুলো পরিচালনা করার দায়িত্ব দিয়েছি। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. বদিউল আলম মজুমদার। পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন সরফরাজ চৌধুরী। বিচারবিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিচারপতি শাহ আবু নাইম মমিনুর রহমান। দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব পালন করবেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. শাহদীন মালিক।
এর আগে ড. ইউনূস বলেন, আমরা সংস্কার চাই। আমার একান্ত অনুরোধ, দেশ সংস্কারের যে গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন সে দায়িত্ব দিয়ে দর্শকের গ্যালারিতে চলে যাবেন না। আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকুন। আমরা একসঙ্গে সংস্কার করব।
সংস্কার নিয়ে তিনি আরো বলেন, আপনারা নিজ নিজ জগতে সংস্কার আনুন। একটি জাতির সংস্কার শুধু সরকারের সংস্কারের ওপর নির্ভর করে না।
[ভাষণের পূর্ণ বিবরণ উপসম্পাদকীয় পৃষ্ঠায়]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা