১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

গাজীপুর ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা

৪৫ কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ : গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ ও গুদামে আগুন
গাজীপুরের কাশিমপুরে বিগবস কারখানার গুদামে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের আগুন: নয়া দিগন্ত -

গাজীপুর ও ঢাকার আশুলিয়ায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের মধ্যে পোশাক শিল্পে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে প্রায় অর্ধশত কারখানা। এ ছাড়া সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে আরো অর্ধশত কারখানায়। গাজীপুরে বেতনভাতা পরিশোধ ও বৃদ্ধির দাবিতে গতকাল দু’টি কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। এ সময় তারা মহাসড়ক অবরোধ ও বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরও করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা একটি কারখানার গুদামে অগ্নিসংযোগ করে।
ঢাকার আশুলিয়া সংবাদদাতা জানান, শ্রমিক বিক্ষোভ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখে আশুলিয়ায় অন্তত ৪৫টি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অন্তত আরো অর্ধশত পোশাক কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। গতকাল বিকেলে শিল্প পুলিশ-১ এর পরিচালক সারোয়ার আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
শিল্প পুলিশ জানায়, শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবির মুখে মালিকপক্ষ আলোচনা করলেও কোনো ধরনের সিদ্ধান্তে যেতে পারেনি। ফলে গতকাল সকাল পর্যন্ত ২২টি কারখানা ১৩(ক) ধারায় অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। দুপুরের পরে অন্যান্য কারখানায় শ্রমিক ও মালিকপক্ষ আলোচনায় বসলে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পাড়ায় দুপুরে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৫টিতে। তবে সব ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শক্ত অবস্থানে রয়েছে সেনাবাহিনী, র্যা ব, বিজিবি, জেলা পুলিশ ও শিল্প পুলিশ।
গতকাল ভোর থেকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের চক্রবর্তী, নবী টেক্সটাইল, জিরানী বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বেক্সিমকোর শ্রমিকরা লাঠিসোটা হাতে নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ ছাড়া বিভিন্ন কারখানার সামনে গিয়ে ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। ফলে জিরানী বাজার এলাকার অধিকাংশ পোশাক কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে আতঙ্কে জিরানী বাজার ও আশপাশের দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয়। যার ফলে অনেক কারখানার সামনে ‘কারখানা বন্ধ’ সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শিল্প সুরক্ষায় আশুলিয়ার অন্তত ৪৫টি তৈরী পোশাক কারখানা শ্রম আইন ২০০৬ সালের ১৩ (ক) ধারায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ধারায় কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হলে শ্রমিকরা বন্ধ সময়কালীন কোনো বেতন পাবেন না।
সকাল ৮টা থেকে বিকেল পর্যন্ত বাইপাল-আবদুল্লাহপুর সড়কের বাইপাইল থেকে জিরাবো, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক ও বিশমাইল জিরাবো সড়কসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনন্ত, মেডলার, শারমিন গ্রুপ, ডেকো, এস টুয়েন টি ওয়ান, মন্ডল নিটওয়্যার লিমিটেড, ম্যাংঙ্গো টেক্স, এআর জিন্স, এনভয়, স্টাইলিং গ্রুপ, ভিনটেক্স, ইয়াগী বাংলাদেশ, ক্রস ওয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, অরোনিমা, ডেবনিয়ার, দি রোজ, জেনারেশন নেক্সট, সিনসিন, ডিসান সোয়েটার, হা-মীম গ্রুপের দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার লি., সিগমা ফ্যাশন, এ্যাপারেলস গ্যালারি লিমিটেড, রিফাত গার্মেন্টস, এক্সপ্রেস ওয়াশিং অ্যান্ড ডাইং, এবং নেক্সট কালাকশনসহ শ্রম আইন ২০২৬ সালের ১৩(ক) ধারা অনুযায়ী অন্তত ৪৫টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখে আরো অর্ধশত পোশাক কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সকাল ১০টা পর্যন্ত নিউএইজ, আল মুসলিম, নাসা সুপার কমপ্লান্স, নাসা এ জে সুপার, নাসা বেসিক কমপ্লেক্স ও জণ রণ সোয়েটারের উৎপাদন চলছে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া হা-মীম গ্রুপের একটি কারখানা বন্ধের নোটিশে লেখা রয়েছে, সব কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আশুলিয়া শিল্প অঞ্চলে বর্তমান সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ১৩ (১) অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং তারিখ হইতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করলো। পরবর্তীতে আঞ্চলিক পরিবেশ নিরাপদ হলে শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মপরিবেশ ও নিরপত্তা নিশ্চিত করে নোটিশের মাধ্যমে কারখানা খোলার তারিখ জানিয়ে দেয়া হবে। কারখানায় নিরাপত্তা বিভাগ অত্র নোটিশের আওতামুক্ত থাকবে।
পুলিশ, শ্রমিক ও স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি জানান, গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানার সারাবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা আগস্ট মাসের বকেয়া বেতনভাতা পরিশোধের দাবিতে কয়েক দিন ধরে আন্দোলন করে আসছিল। কর্তৃপক্ষ একাধিকবার তারিখ দিয়েও বেতন পরিশোধ না করায় শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে মঙ্গলবার পরিশোধের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিশোধ না করায় বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা। পরদিন বুধবার সকালে শ্রমিকরা পার্কে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা পার্কের পার্শ্ববর্তী ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে। এসময় শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য আশপাশের বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের বের করে আনতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা পার্শ্ববর্তী ভবানীপুর এলাকার বিগবস করপোরেশন লিমিটেডের এপটেক কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের বের করে আনার চেষ্টা করে। এ সময় ওই কারখানার শ্রমিকরা বাধা দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষকালে উত্তেজিত শ্রমিকরা বিগবস কারখানার ফেব্রিক্স ও ঝুটের গুদামে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা বাধা দেয় এবং ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভাঙচুর করে। শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ফিরে যায়। ইতোমধ্যে আগুন ফেব্রিক্স ও ঝুটের গুদামের বিভিন্ন মালামাল পুড়ে পাশের কেমিক্যাল গুদামে ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আগুন নেভানোর কাজ করছিল ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। অন্য দিকে সন্ধ্যার পরও শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিল বলে জানান জিএমপির কোনাবাড়ি জোনের সহকারী কমিশনার সুবীর কুমার সাহা।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের (জোন-২) পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, গাজীপুরের কাশিমপুর থানার সারাবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পাকের্র কারখানাগুলোতে প্রায় ৩২ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। গত কয়েক দিন ধরে শ্রমিকরা আগস্ট মাসের বকেয়া বেতন দাবি জানিয়ে আসছে। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ করলেও বেশির ভাগ শ্রমিকের অ্যাকাউন্টে বেতন যায়নি। ওই দিন সন্ধ্যার পর থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শ্রমিকরা আন্দোলন ও বিক্ষোভ করে। গতকাল সকাল থেকে একই দাবিতে শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চক্রবর্তী এলাকায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ বিক্ষোভ করে। তিনি আরো বলেন, বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা বেতন দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু শ্রমিকরা তাদের সময়ই দিচ্ছে না। তবে আশা করা যাচ্ছে আজকের মধ্যেই সবার বেতন পরিশোধ করবে কর্তৃপক্ষ।
এ দিকে গাজীপুর মহানগরীর সদর থানার লক্ষ্মীপুরা এলাকার আড়ং ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রজেক্টের কর্মীরা শ্রমিকদের বেতন বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ১৮ হাজার টাকা এবং ক্যাজুয়াল কর্মীদের চাকরি স্থায়ীকরণসহ ১০ দফা দাবিতে কর্মবিরতি ও কারখানা গেইটের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement
আশুলিয়ায় শ্রমিকদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে নারী শ্রমিক নিহত বর্ণাঢ্য আয়োজনে ঢাবিতে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) পালিত অব্যাহতিপ্রাপ্ত ভিসি মোজাম্মেল হককে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা ইসলামী ব্যাংকের সাথে ফরেন করেসপনডেন্ট ব্যাংকগুলোর মতবিনিময় সহকর্মীদের তোপের মুখে শিল্পকলা ছাড়লেন জ্যোতি বগুড়ায় আমরা বিএনপি পরিবারের সহায়তা পেল ৩ শহীদ পরিবার শিক্ষাভবনে দুই গ্রুপের উত্তেজনা ও হাতাহাতি কাঁচপুরে ছয় হাজার স্কয়ার ফুটের ক্যালিগ্রাফিতে ঐক্যের ডাক ‘মহানবী সা: জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করে গেছেন : আল্লামা আবদুল হাই নদভী এনআইডি কার্যক্রম স্থানান্তরে ভোটার তালিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে ডিআরইউর সাবেক সভাপতি আজমল খাদেমের ইন্তেকাল

সকল