১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

সরকার ও প্রশাসনে ফ্যাসিবাদের দোসরদের চায় না বিএনপি

মির্জা ফখরুল ইসলামের সাথে সাক্ষাতে বিজিএমইএ সভাপতি রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল: নয়া দিগন্ত -

- ছাত্র সমন্বয়কদের বক্তব্যে আপত্তি
- ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ

অন্তর্বতী সরকারের এক মাসের কার্যক্রম পর্যালোচনা করেছে বিএনপি। এ পর্যালোচনায় এখনো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার কাজ শুরু না হওয়া এবং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে স্বৈরাচারের সহায়করা রয়ে যাওয়ায় দ্রুত এ ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপ আশা করছে দলটি। এছাড়া আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ করবে বিএনপি।
গত সোমবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দীর্ঘ বৈঠকে এমন আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। রাত সাড়ে ৮টায় বৈঠক শুরু হয়ে প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী চলে। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সক্রিয় প্রায় সব নেতাই উপস্থিত ছিলেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে সংযুক্ত ছিলেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের তিন দিন পর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। জানা যায়, স্থায়ী কমিটির বৈঠকের শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের গত এক মাসের কার্যক্রম নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। এ ব্যাপারে প্রায় সবাই তাদের মতামত তুলে ধরেন।
বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারে আলী ইমাম মজুমদারকে উপদেষ্টা করায় বিএনপির কয়েকজন নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একজন বলেন, আলী ইমাম মজুমদারও ফ্যাসিবাদের পক্ষের লোক। এটা নিয়ে বিএনপি শিগগিরই তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করবে এবং সরকারের কাছেও তুলে ধরবে। একইসাথে এর বিরুদ্ধে বিএনপি সোচ্চারও হবে। এছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়বিষয়ক উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের পিএস-এর ব্যাপারে বৈঠকে আলোচনা হয়। এক নেতা বলেন, তার পিএস এর আগে আওয়ামী লীগের তিনজন মন্ত্রীর পিএস ছিলেন।
অন্তর্বর্তী সরকার গত এক মাসে ডিসি (জেলা প্রশাসক) এবং সচিব পর্যায়ে প্রশাসনিক যে রদবদল করেছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা সঠিক হয়নি বলে বৈঠকে মতামত আসে। স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, এই রদবদল সর্বত্র নিরপেক্ষ হয়নি। এখানে অনেকেই আছেন যাদের স্বৈরাচারের সহায়ক শক্তি অথবা দোসর হিসেবে পরিচিতি রয়েছে। তাছাড়া এই প্রশাসনিক রদবদল নিয়ে বিএনপির সাথে অন্তর্বর্তী সরকার আলোচনাও করেনি। নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার গত এক মাসে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি, দ্রুততম সময়ে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যেটি তাদের মূল কাজ। কারণ, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৬ বছরে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। সুতরাং ব্যক্তিকেন্দ্রিক সংস্কার নয়, প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। সেই সংস্কার কার্যক্রম এখনো শুরু করেনি অন্তর্বর্তী সরকার। বিএনপি চায়, দ্রুততম সময়ে তারা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার কার্যক্রম শুরু করুক এবং এ ব্যাপারে গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে দ্রুত আলোচনা আরম্ভ করবে অন্তর্বর্তী সরকার।
বৈঠকে একজন নেতা বলেন, ছাত্র সমন্বয়করা দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বিএনপি নেতাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বক্তব্য রাখছে। অথচ বিএনপি স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক গত ১৬ বছর ধরে সবচেয়ে নির্যাতিত ও গণতন্ত্রের লড়াইয়ের প্রধান শক্তি। দীর্ঘ সময় ধরে বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে আসছে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও তাদের অংশগ্রহণ ছিল। দল ও অঙ্গসংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী নিহতও হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ছাত্র সমন্বয়কদের যথাযথ গাইডলাইন প্রয়োজন। দুইজন সমন্বয়ক অন্তর্বর্তী সরকারেরও অংশ। সুতরাং এ ব্যাপারে তাদের ভূমিকা রাখা দরকার।
ওই নেতা আরো বলেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় লড়াই করা বিএনপি নেতাদের নিয়ে এ ধরনের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য জনগণ মেনে নেবে না। ছাত্র সমন্বয়করা এ ধরনের বক্তব্য দিতে থাকলে মাঠপর্যায়ে এক ধরনের ভুল বার্তা যাবে। এতে করে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হবে। তখন একটা সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
বৈঠকে ঢাকার বাইরে সফরের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে গত রোববার জেলা প্রশাসকদের কাছে যে চিঠি দেয়া হয়- সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একজন নেতা বলেন, বিএনপির প্রশ্ন হচ্ছে- কোন প্রটোকলে, কোন বিবেচনায় তাদের এই নিরাপত্তা দেয়া হবে? কারণ, তারা রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কেউ না, দায়িত্বশীল কোনো পদেও নেই।
বৈঠকে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সমাবেশ সফলে প্রস্তুতি শুরু করেছে দলটি।
এছাড়া পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরালো করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় শীর্ষ পর্যায়ের এই বৈঠকে। বৈঠকে বিএনপির হাইকমান্ডকে সাংগঠনিক পুনর্গঠন শুরুর পরামর্শ দিয়ে একজন নেতা বলেন, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল যেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি রয়েছে, সেখানে দ্রুত নতুন কমিটি দেয়া দরকার। এর ফলে সংগঠন গতিশীল হবে।
মির্জা ফখরুলের সাথে বিজেএমইএ নেতাদের সাক্ষাৎ : পোশাক শিল্পের অস্থিরতার মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন বিজেএমইএর একটি প্রতিনিধিদল।
গতকাল গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সাক্ষাৎ করেন তারা। এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।
বিজেএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব, সহসভাপতি রকিবুল আলম, পরিচালক শোভন ইসলাম, নুরুল ইসলাম, আফসার হোসেন।
বিজেএমইএর সাবেক সভাপতিদের মধ্যে ছিলেন এস এম ফজুলল হক, কাজী মুনির, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন, আবুল কালাম প্রমুখ।
বৈঠকে বিজেএমইএ নেতারা পোশাক শিল্পের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিবের কাছে। এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পোশাক শিল্প-কারখানায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে দলীয় নেতাদের যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন তা বিজিএমইএ নেতাদের জানান।
পোশাক শিল্পের মালিকদের একটি বিশেষ গোষ্ঠী অস্থিরতা সৃষ্টি করছে অভিযোগ করে এই ব্যাপারে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতার কামনা করেন ব্যবসায়ী নেতারা।


আরো সংবাদ



premium cement
আড়াইহাজারে ২১ রাউণ্ড রিভলভারের গুলি উদ্ধার আমাদের কথা শুনলে শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে হতো না : হাবিব উন নবী খান কুলিয়ারচরে ‘জশনে জুলুস’ মিছিলকে কেন্দ্র করে নিহতের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ৯ সাম্প্রতিক বন্যায় ১৪ হাজার ২৬৯ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি : উপদেষ্টা আমাদের আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি : যুবদল সভাপতি সুনামগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফোরকান, সম্পাদক কাইয়ুম এনআইডি কার্যক্রম অন্য কোথাও গেলে ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে : ইসি সচিব ছাত্র আন্দোলনে ছররা গুলি, ৫ শতাধিক মানুষের অন্ধত্ব বরণ আবারো ক্ষমতায় ফেরার কৌশল আঁটছে শ্রীলঙ্কায় বিতাড়িত রাজনৈতিক পরিবারটি আজুখাইয়া সীমান্তে ট্রলি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একজন নিহত মুরাদনগরে গোমতীর নদীর পানি কমার সাথে সাথে তীব্র হচ্ছে ভাঙ্গন

সকল