২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আশুলিয়ায় ফের বিক্ষোভ

৭৯ পোশাক কারখানায় ছুটি, সংঘর্ষে আহত ৩০
-


সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে মাত্র একদিন শান্ত থাকার পর ফের শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভের মুখে শিল্পাঞ্চলের ৭৯টি পোশাক কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে ডিইপিজেডসহ অন্যান্য কারখানাতে উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। অপরদিকে একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক, স্টাফদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে শিল্পাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও শিল্প পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
গতকাল সোমবার আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, বেলা ১১টা পর্যন্ত অন্তত ৭৯টি পোশাক কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা খবর পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সেনাবাহিনী টহল অব্যাহত রেখেছে বলে জানান তিনি।
শিল্প পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল সকালে আশুলিয়ার নরসিংহপুর, জামগড়া, জিরাবোসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে বেরিয়ে আসে। পরে অসন্তোষের মুখে কিছু কারখানায় ছুটি ও বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

গতকাল দুপুরে আশুলিয়ার জিরাবো, নিশ্চিন্তপুর, নরসিংহপুর, সরকার মাকের্টসহ বেশ কিছু এলাকায় ঘুরে ৭৯টি পোশাক কারখানা সাধারণ ছুটি খবর পাওয়া গেছে। আশুলিয়া-ডিইপিজেডে-আবদুল্লাহপুর সড়কের নরসিংহপুর এলাকায় হা-মীম ও শারমিন নামে বড় দু’টি পোশাক কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। পরে ওই এলাকার নিউএইজ, নাসা, আল মুসলিম জেনারেশন নেক্সটসহ ৭৯টি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে।
এ দিকে গত রোববার রাতে আশুলিয়ার শিমুলতলা এলাকায় ইউফোরিয়া অ্যাপারেলস লিমিটেডের পোশাক কারখানার শ্রমিক, স্টাফ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। ইউফোরিয়া গার্মেন্টের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানান, গত কয়েক দিন ধরে আমরা টিফিন বিল ও রাত্রীকালীন অতিরিক্ত ডিউটির টাকা বৃদ্ধি, ছুটি বাড়ানোসহ নানা দাবি নিয়ে মালিকপক্ষের সাথে আলোচনা করেছি। গত পরশুদিন মিটিংয়ের সময় আমাদের এক সহকর্মীকে মারধর করে কারখানার স্টাফরা। এ ছাড়া প্রতি মাসের ৭ তারিখ আমাদের বেতন পরিশোধের কথা থাকলেও তা করছে না মালিকপক্ষ। এসবের দাবিতে রোববার সকাল থেকেই কারখানার ভেতরে কর্মবিরতি পালন করছিলেন শ্রমিকরা। পরে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের আংশিক বেতন পরিশোধ করলে সবাই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। আর সন্ধ্যা হয়ে গেলেও মালিকপক্ষ দাবি না মানায় শ্রমিকরা ভেতরেই অবস্থান করছিলেন। এ সময় সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা কারখানার ভেতরে প্রবেশ করে শ্রমিকদের এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে। এতে অন্তত ২০ জন শ্রমিক আহত হন।

র্যাব-৪ সিপিসি ২ সাভার ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর জালিস মাহমুদ খান বলেন, আমরা এবং যৌথবাহিনীর সদস্যরা সমন্বয় করে শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে বিকেলের দিকে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে। তখন গার্মেন্ট থেকে তাদের ডিসপাস করার জন্য আমরা চেষ্টা করি। পরবর্তীতে তারা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে সমর্থ হই। গার্মেন্টে যারা দুষ্কৃতকারী ছিল তারা র্যাবের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং অগ্নিসংযোগ করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে আমরা আগুন নেভাতে সমর্থ হই। এ সময় সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতেও তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন, তবে এটা মেজর না। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে গার্মেন্ট সেক্টরে অরাজকতার সৃষ্টিকারীদের শনাক্তে আমাদের ছায়া তদন্তের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আমরা নির্দিষ্ট করতে সক্ষম হচ্ছি, কারা এর পেছনে মদদদাতা এবং গার্মেন্ট সেক্টরকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেবো।

 


আরো সংবাদ



premium cement