১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হলেও প্রাথমিক জ্বালানি নিশ্চিত করা হয়নি

-

- নবায়নযোগ্য প্রকল্পের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে হবে
- প্রতি বছর সাশ্রয় হবে ১০ হাজার কোটি টাকা

দায়মুক্তি আইনের মাধ্যমে বিনা টেন্ডারে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছিল বিদায়ী সরকার। কিন্তু এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর জন্য যে পরিমাণ প্রাথমিক জ্বালানি দরকার তা নিশ্চিত করা হয়নি। নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার বা দেশীয় কয়লা উত্তোলনের জন্য তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য জ্বালানি আমদানিতে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দিতে যেমন আগ্রহ দেখা যেত, প্রাথমিক জ্বালানি নিশ্চিত করতে তেমন আগ্রহ দেখা যেত না। ফলে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র আমদানিকৃত জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় জ্বালানি নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে দেশীয় কয়লা ও গ্যাস উত্তোলনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ওপর জোর দিতে হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে ১৪৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ডিজেল, ফার্নেস ওয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ৬৬, আর গ্যাসভিত্তিক রয়েছে ৬০টি। দেশীয় গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে আসার কারণে উচ্চমূল্যের এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। দায়মুক্তি আইনের মাধ্যমে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন পাওয়ায় এক দিকে যেমন সরকারের বিভিন্ন মহল হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে তেমনি অন্য দিকে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনগণের কষ্টের টাকা এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিক ও সরকার দলীয় লোকদের পকেটে গেছে। ফলে হাসিনা সরকারের পতনের পর বিদ্যুৎ খাত এখন কঠিন চাপের মুখে পড়েছে।
৫ আগস্ট ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রথমেই কালো আইন রহিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এই কালো আইনের মাধ্যমে যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র বা প্রকল্প অনুমোদন ছিল সেগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়েছে কিনা তা যাচাই করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্পগুলো চালু থাকলে এক দিকে প্রাথমিক জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমে যাবে, অপর দিকে সমপরিমাণ বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর জন্য যে জ্বালানি আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হতো তা সাশ্রয় হবে।
জানা গেছে, বিগত সরকার ৩১টি নবায়নযোগ্য জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎপ্রকল্প অনুমোদন করেছিল। এসব বিদ্যুৎপ্রকল্পের আগ্রহপত্র (লেটার অব ইনটেন্ট-এলওআই) ইস্যু করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার এসব প্রকল্প বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎপ্রকল্পগুলো থেকে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের সম্ভাবনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এক সমীক্ষা অনুসারে, ইস্যুকৃত ৩১টি নবায়নযোগ্য প্রকল্প থেকে দুই হাজার ৬৭৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। আর এ সমপরিমাণ এইচএফও বেসড (তেলভিত্তিক) বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রতি বছর ৮২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৯৭০০ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হবে। অর্থাৎ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎপ্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে ৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসআরইএ) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, বিভিন্ন দেশ যেমন চীন, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ৫০টিরও বেশি বিদেশী বিনিয়োগকারী নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎপ্রকল্প উন্নয়ন ও বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে নিযুক্ত রয়েছে। তিনি বলেন, উল্লিখিত ৩১টি এলওআইপ্রাপ্ত বিনিয়োগকারীরা নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্পের উন্নয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ অল্প সময়ের মধ্যে বেসরকারী খাত থেকে কমপক্ষে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ পেতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিনিয়োগকারীরা ওই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে জমি কেনা এবং ৩১টি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎপ্রকল্প বাস্তবায়নের অন্যান্য পদক্ষেপ।
তিনি আরো বলেন, যদি বিদ্যুৎবিভাগ উল্লেখিত প্রকল্পগুলো বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাহলে প্রত্যক্ষভাবে বিদেশী ও দেশী বিনিয়োগের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে। এ পরিস্থিতিতে বিএসআরইএর পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগকে মোস্তফা আল মাহমুদ কিছু সুপারিশ করেছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন যে, বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত এলওআই এর শর্তাবলি অনুযায়ী প্রকল্প উদ্দোক্তা জমি অধিগ্রহণ, লজিস্টিক সম্প্রসারণ, পরিশোধিত মূলধনসহ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক বাজার মূল্য এবং নো ইলেক্ট্রিসিটি নো পেমেন্ট ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে প্রকল্পের শুল্ক অনুমোদন করা হয়েছিল। লেটার অব ইন্টেন্ট (এলওআই) প্রক্রিয়াটি আবার প্রথম থেকে শুরু করা হলে কমপক্ষে এক বছর বা তার বেশি সময় নিতে পারে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা ও নিরুৎসাহ তৈরি হতে পারে বলে বিএসআরইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জানান।
বিএসআরইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট জাহিদুল আলম বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পগুলো যথাযথ প্রক্রিয়া এবং সচ্ছতার মাধ্যমে প্রাপ্ত হওয়ায় দেশের উন্নয়ন ও বাস্তরায়নের জন্য ওই প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে প্রধান উপদেষ্টার সদয় দৃষ্টি কামনা করছি। এই প্রকল্পগুলোতে কোনো ধরনের ক্যাপাসিটি চার্জের প্রয়োজন নেই। নো ইলেক্ট্রিসিটি নো পেমেন্টে বাস্তবায়িত হওয়ায় সরকারের বিদ্যুৎ খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেফতার সোনারগাঁয়ে শেখ হাসিনা-শেখ রেহেনাসহ ২৩৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা গাজার চলমান ঘটনাবলী সমসাময়িক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভুল : বসনিয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার পর থেকে ভারতের আসাম-মেঘালয় সীমান্তে আটক ৬৫ বাংলাদেশী ঐক্যের মাধ্যমেই কেবল মুসলিম উম্মাহ'র মর্যাদা প্রতিষ্ঠা সম্ভব : ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হোসেনপুরে স্কুলশিক্ষকের বসতঘর পুড়ে ছাই রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টির আভাস 'শ্রম আইন সংস্কার করে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে' সিংগাইরে ধলেশ্বরী নদী থেকে লাশ উদ্ধার সাতক্ষীরায় বজ্রপাতে মৎস্যচাষির মৃত্যু সাংবাদিক শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল বাবুর ওপর ডিম নিক্ষেপ

সকল