১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ইসলামী ব্যাংকে সাবেক দখলদারদের অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা

নিরীহ কর্মকর্তাদের নামে মামলা
-

স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার অন্যতম দোসর ও ব্যাংক লুটের মাধ্যমে অর্থের জোগানদাতা সাইফুল আলম মাসুদ ওরফে এস আলমের বিরুদ্ধে ইসলামী ব্যাংকের অভ্যন্তরে নানা উপায়ে অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারার অভিযোগ উঠেছে। এস আলম গত সাত বছরে শুধু এক লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, ইসলামী ব্যাংক যেন সামনে এগোতে না পারে সে জন্য নানা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। ব্যাংকটি থেকে টাকা বের করে নেয়ার তার অন্যতম সহযোগী পিএস আকিজ উদ্দিন, মিফতা উদ্দিন ও জেকিউএম হাবিবুল্লাহদের পেছনে যারা হাঁটতেন বা তোষামোদি করতেন এমন কর্মকর্তারা এখন নানাভাবে তদবির করে গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে বসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিপরীতে দীর্ঘ দিন যারা এস আলমের টাকা বের করার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতেন তাদেরকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এস আলম সন্ত্রাসী গ্রুপকে লেলিয়ে দিয়ে ইসলামী ব্যাংকের পাঁচজন কর্মকর্তাকে গুলি করে আহত করার ছবি সবধরনের মিডিয়ায় প্রকাশিত হলেও ওই ঘটনায় এখন নিরীহ কিছু কর্মকর্তাকে জড়িয়ে মামলা দেয়া হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে এক হাজার কর্মকর্তাকে। বিশ্লেষকদের মতে, চক্রান্তকারীদের ষড়যন্ত্র থেকে সাবধানতা অবলম্বন করে কিভাবে ব্যাংককে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া যায় সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় আস্থার সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার কর্মসূচি হোঁচট খাবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর নানা সময়ে বলে আসছেন, ইসলামী ব্যাংকগুলো থেকে যে পরিমাণ অর্থ লুট করে পাচার করা হয়েছে পৃথিবীর আর কোথাও এমন ঘটেনি। তিনি বলেছেন, যারাই অর্থ লুট করেছে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আর এ জন্য তিনি ইসলামী ব্যাংকগুলোকে এস আলম মুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে এস আলমের দখলে থাকা সবগুলো ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছেন। স্বল্প সময়ের জন্য নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। তিনি সবাইকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সবধরনের সহযোগিতারও আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে এস আলম ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হওয়া ইসলামী ব্যাংককে পুনর্গঠনে নিষ্ঠাবান কর্মকর্তারা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। আর এ কারণে এস আলমের দখলকৃত অন্য ব্যাংকগুলো যেখানে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে গেছে, সাধারণ আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না, সেখানে ইসলামী ব্যাংকে বিপরীত অবস্থা বিরাজ করছে। আমানতপ্রবাহ বেড়ে গেছে, বিপরীতে কমেছে আমানত প্রত্যাহারের চাপ। তবে ব্যাংকটি সামনে দিকে এগোনোর রাস্তা বন্ধ করতে সাবেক দখলদার এস আলমের বিরুদ্ধে নানাভাবে চক্রান্তের অভিযোগ উঠেছে। তার টাকা বের করার সহযোগী আকিজ উদ্দিন, মিফতা উদ্দিন এবং জে কিউ এম হাবিবুল্লøাহ ব্যাংক থেকে পালিয়ে গেলেও একটি স্বার্থানেষী গোষ্ঠী এখনো সক্রিয় রয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমান যারা ব্যাংকটি পরিচালনা করছেন তাদের কাছে নানাভাবে ভিড় জমাচ্ছেন এস আলমের সহযোগীদের দোসর একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী কর্মকর্তা। কিছু দিন আগেও যেসব কর্মকর্তা আকিজ ও মিফতা উদ্দিনের পেছনে পেছনে ঘুরতেন তারাই এখন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে বসছেন। তারা ব্যাংকটিতে কী ঘটছে তা সময়ে সময়ে এস আলমের কাছ তথ্য পাচার করছেন এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিপরীতে গত সাত বছরে যারা এস আলমের অর্থপাচারের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিরোধিতা করছেন এমন কিছু কর্মকর্তাকে নাজেহাল করার অভিযোগ উঠেছে।
গত ১১ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকের আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের ওপর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্যসচিব রবিউল ইসলাম নয়নের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী গ্রুপকে লেলিয়ে দেয়া হয়। তাদের গুলিতে ইসলামী ব্যাংকের পাঁচজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী গুলিবিদ্ধ হন। ইসলামী ব্যাংকের এ সংবাদ পরের দিন সব মিডিয়ায় প্রচারিত হয়। এ জন্য ১৪ আগস্ট ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো: জাকি আল ফারাবির আদালতে চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার আসামি করা হয় যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়ন, ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি আকিজ উদ্দিন, মিফতা উদ্দিন ও ইভিপি মোহাম্মদ নিয়ামত উল্লাহকে।

আলোচিত এ ঘটনার ২৫ দিনের মাথায় গত ৫ সেপ্টেম্বর আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তাকে জড়িয়ে। কিছু কর্মকর্তাকে ফাঁসাতে কৌশলে আসামির তালিকায় রাখা হয়েছে এস আলম, তার জামাতা বেলাল হোসেন, আকিজ উদ্দিন, মিফতা উদ্দিনসহ অজ্ঞাত এক হাজার কর্মকর্তাকে। ভুক্তভোগী এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাত বছর এস আলম, আকিজ উদ্দিন, মিফতা উদ্দিনের বিরুদ্ধে অবস্থান করেছিলেন। বিভিন্ন সময় অর্থ যাতে বের করে নিতে না পারে সে জন্য বিরোধিতা করেছেন। দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হওয়ায় ব্যাংকটি যখন সবাই মিলে পুনর্গঠনের কাজ শুরু করা হয়েছে তখনই একটি অশুভ গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের এ অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। আর তারই অংশ হিসেবে কিছুু নিরীহ কর্মকর্তাকে এস আলমের নামের সাথে যুক্ত করে হয়রানি করা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এস আলম ও তার দোসররা নানাভাবে ষড়যন্ত্রের পাঁয়তারা করবে। তাদের পাতা ফাঁদে পা না দিয়ে কিভাবে সামনের দিকে ব্যাংকটিকে এগিয়ে নেয়া যায় সেই চেষ্টা করতে হবে। অন্যথায় ষড়ন্ত্রকারীরাই জয়ী হবে, যার ফল ভালো হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেফতার সোনারগাঁয়ে শেখ হাসিনা-শেখ রেহেনাসহ ২৩৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা গাজার চলমান ঘটনাবলী সমসাময়িক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভুল : বসনিয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার পর থেকে ভারতের আসাম-মেঘালয় সীমান্তে আটক ৬৫ বাংলাদেশী ঐক্যের মাধ্যমেই কেবল মুসলিম উম্মাহ'র মর্যাদা প্রতিষ্ঠা সম্ভব : ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হোসেনপুরে স্কুলশিক্ষকের বসতঘর পুড়ে ছাই রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টির আভাস 'শ্রম আইন সংস্কার করে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে' সিংগাইরে ধলেশ্বরী নদী থেকে লাশ উদ্ধার সাতক্ষীরায় বজ্রপাতে মৎস্যচাষির মৃত্যু সাংবাদিক শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল বাবুর ওপর ডিম নিক্ষেপ

সকল