১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ভারত দখলে কেউ সীমান্ত পার হচ্ছে না, হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে

পিটিআইকে প্রধান উপদেষ্টা
ভারত দখলে কেউ সীমান্ত পার হচ্ছে না, হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে -


প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সীমান্ত হত্যার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘হত্যাকাণ্ড কোনো সমাধান নয়। কাউকে হত্যা করা কোনো সমাধান নয়, কারণ এটি মোকাবেলার আইনি উপায় রয়েছে।’ বৃহস্পতিবার ভারতের সরকারী বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে এক সাক্ষাৎকারে সীমান্ত হত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা একতরফা ব্যাপার। আপনার দেশ দখলের জন্য তো কেউ সীমান্ত অতিক্রম করছে না। এ হত্যাকাণ্ড অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’

এ দিকে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের সাথে মতপার্থক্য দূর করতে সরকার কাজ করবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের সাথে দীর্ঘদিনের মতপার্থক্য দূর করতে হবে। বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকায় কোনো দেশেরই লাভ হচ্ছে না। দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টনের সমস্যা অবশ্যই আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী সমাধান করা উচিত। বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলোর এ ব্যাপারে অধিকার রয়েছে। আমাদের আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভাটির দেশগুলোর কিছু অধিকার আছে এবং আমরা সেই অধিকার চাই। এ ইস্যুটি (পানি বণ্টন) ঝুলিয়ে রেখে কোনো উদ্দেশ্য সাধন হচ্ছে না। আমি যদি জানি, আমি কতটুকু পানি পাবো, সেটি ভালো হতো। এমনকি পানির পরিমাণ নিয়ে যদি আমি খুশি নাও হই, তাতেও কোনো সমস্যা নেই। এ বিষয়টি সমাধান হতেই হবে।

দ্রুত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির জন্য ভারতকে অন্তর্বর্তী সরকার চাপ দেবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, চাপ একটি বড় শব্দ। আমি এটি বলছি না। তবে আমাদের একসাথে বসে সমাধান করতে হবে।
তিনি বলেন, এটা নতুন কোনো সমস্যা নয়, অনেক পুরনো সমস্যা। এ বিষয়ে আমরা একাধিকবার কথা বলেছি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয় পাকিস্তান আমলে। আমরা সবাই চেয়েছিলাম এই চুক্তি হোক, এমনকি ভারত সরকারও এর জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার এর জন্য প্রস্তুত ছিল না। আমাদের এটি সমাধান করতে হবে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে ভয়াবহ বন্যার জন্য ভারতকে দায়ী করে ঢাকার গণমাধ্যমের খবরের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের সঙ্কটে আমরা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে একসাথে কাজ করে এর সমাধান করতে পারি।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা সাক্ষাৎ করেন। বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভারতের হাইকমিশনার যখন আমার সাথে দেখা করতে আসেন, আমি বলেছি যে কিভাবে বন্যা মোকাবেলা করা যায় সে ব্যাপারে আমরা আরো ভালোভাবে কাজ করতে পারি। দুই দেশের মধ্যে এ ধরনের সমন্বয়ের জন্য কোনো চুক্তিরও প্রয়োজন নেই। মানবিক দিক বিবেচনা করেই এ সমস্যা সমাধানে আমরা একসাথে কাজ করতে পারি। কেননা এটি গণমানুষের দুর্দশা লাঘব করবে। এ ধরনের মানবিক পদক্ষেপ সত্যিকার অর্থেই সহায়তা করবে।

ট্রানজিট ও আদানি চুক্তির মতো চুক্তিগুলো পুনর্বিবেচনা করবে সরকার
ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে পিটিআইকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘ট্রানজিট ও আদানি চুক্তির মতো কিছু চুক্তি নিয়ে পুনর্বিবেচনার দাবি রয়েছে। সবাই বলছে এটা দরকার। আমরা দেখব, কাগজে-কলমে কী আছে আর বাস্তবে কী ঘটছে। আমি এখনই এর নির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারব না। রিভিউয়ের প্রয়োজন হলে আমরা প্রশ্ন তুলব।’
প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘উভয় দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে এবং এটি বর্তমানে নিম্নপর্যায়ে রয়েছে। এই সম্পর্কের উন্নয়নে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যা এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে।’ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নের উপায় সম্পর্কে জানতে চাইলে এবং বর্তমান উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নে ভারত ও বাংলাদেশকে একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ৮৪ বছর বয়সী ড. ইউনূস।
সম্প্রতি বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর কথিত হামলার ঘটনা এবং ভারত এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, এটি একটি অজুহাত মাত্র। সংখ্যালঘুদের অবস্থা এত বড় আকারে তুলে ধরার চেষ্টা একটা অজুহাত মাত্র।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে আশা প্রকাশ করেছিলেন যে সহিংসতাপূর্ণ বাংলাদেশের পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। তিনি বলেছিলেন, ভারত প্রতিবেশী দেশের হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
এ দিকে প্রধান উপদেষ্টা সার্ক প্রসঙ্গে বলেন, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার চেতনার পুনরুজ্জীবন হওয়া দরকার। একটি মহৎ উদ্দেশ্যে সার্ক প্রতিষ্ঠিত হলেও এটি এখন শুধু কাগজেই সীমাবদ্ধ এবং এটি এখন কাজ করছে না। আমরা সার্কের নাম ভুলে গেছি; আমি সার্কের চেতনার পুনরুজ্জীবন ঘটানোর চেষ্টা করছি। ইউনূস বলেন, ‘দীর্ঘদিন সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হয়নি। আমরা যদি একত্র হতে পারি, তবে অনেক সমস্যার সমাধান হবে।’
ইউনূস বলেন, সার্কের অনুরূপ লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে এ জোট অনেক কিছু অর্জন করেছে। একই রকম অর্জন এখনো করতে পারেনি সার্ক। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে তাকান, কত সুন্দরভাবে এটি কাজ করছে। পাকিস্তানকে নিয়ে যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে, তবে অন্য পথ খুঁজে বের করা যেতে পারে। কিন্তু সার্কের কার্যক্রম অবশ্যই থামানো উচিত নয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement
বাড়ির জমির রেজিষ্ট্রি না পাওয়ায় ৬০ পরিবারের সাংবাদিক সম্মেলন বায়াররা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, গার্মেন্টস শিল্প এখন ঘুরে দাঁড়ানোর পালা : শ্রমসচিব রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগের দাবিতে মহাসড়ক ব্লকেড চকরিয়ায় গোসলে নেমে পুকুরে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু হাসিনা-রেহেনা-জয়সহ ১৭৯ জনের বিরুদ্ধে সোনারগাঁওয়ে মামলা গত ১৫ বছর বঞ্চিত আড়াই হাজার কর্মকর্তার সুযোগ-সুবিধা ফেরত পেতে আবেদন নবীনগরে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত 'আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে রাসুল সা.-এর পথ অনুসরণ করতে হবে' কমলনগরে যুবদল নেতা বহিষ্কার আ’লীগ নেতাকর্মীদের অবৈধ অস্ত্র জব্দ না হওয়ায় সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে : রিজভী নাগরিক ফোরাম দেশ পুনর্গঠনে নিয়োজিত তরুণদের প্লাটফর্ম : আখতার

সকল