২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

নতুন ইতিহাস টাইগারদের

পাকিস্তানকে টেস্টে বাংলাওয়াশ
দেশের বাইরে পাকিস্তানকে হারিয়ে তৃতীয় টেস্ট সিরিজ জয় বাংলাদেশের : বিসিবি -


সিরিজ শুরুর আগে নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, পাকিস্তান সফরে তারা পরিসংখ্যান নতুন করে লিখতে চান। শান্ত তার কথা রেখে নতুন ইতিহাস তৈরি করেছেন। ২ টেস্টের সিরিজে পাকিস্তানের মাটিতে তাদেরকে বাংলাওয়াশ করেছে টাইগাররা।
আগের দিনই প্রস্তুত ছিল ইতিহাস সৃষ্টির পট। যা গতকাল বৃষ্টিতে ধুয়ে যেতে পারত; কিন্তু আবহাওয়ার পূর্বাভাসকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে রাওয়ালপিন্ডির আকাশ। গল্পের শেষটা বাংলাদেশও টেনেছে তুলি দিয়ে। চতুর্থ ইনিংসের ব্যাটিং চ্যালেঞ্জ উতরে পাকিস্তানকে হারিয়েছে ৬ উইকেটে। দেশের বাইরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের পর তৃতীয় টেস্ট সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।

এই টেস্টে আরেকটি অনন্য রেকর্ড গড়েছে টাইগাররা। টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় দল হিসেবে প্রথম ইনিংসে ৩০ রানের নিচে ৬ উইকেট হারানোর পরও টেস্ট জিতেছে। এমন কীর্তি দেখা গিয়েছিল ১৩৭ বছর আগে ১৮৮৭ সালে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিডনিতে প্রথম ইনিংসে ১৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। পরে তারা অলআউট হয়ে গিয়েছিল স্রেফ ৪৫ রানেই। তারপরও অসিদের জয়ের জন্য ১১১ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়ে ১৩ রানে ম্যাচ জিতেছিল ইংল্যান্ড। আবরার আহমেদের বল এক্সট্রা কাভার দিয়ে সীমানা ছাড়া করলেন সাকিব আল হাসান। ড্রেসিংরুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে উল্লøাস করে উঠল পুরো দল। রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানকে টানা দুই টেস্ট হারিয়ে বাংলাওয়াশের নজির স্থাপন করল টাইগাররা। প্রতিপক্ষ, প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এই সিরিজ জয় নিশ্চিতভাবেই সবার উপরে।

পাকিস্তানের দেয়া ১৮৫ রানের লক্ষ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে জয় স্পর্শ করে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। নাটকীয়তায় ভরা টেস্টে প্রথম ইনিংসে ২৭৪ রান করেছিল স্বাগতিকরা। জবাবে প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজের বিশ্বরেকর্ড গড়া ১৬৫ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায়। লিটনের অনবদ্য ১৩৮ রানে ২৬২ রান তুলে লড়াইয়ে ফেরে বাংলাদেশ। এরপর বোলারদের পালা। দ্বিতীয় ইনিংসে তিন পেসার হাসান-নাহিদ-তাসকিন ১০ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে ১৭২ রানে আটকে দেয়। টেস্টে এই কৃতিত্ব বাংলাদেশের প্রথম। এর মধ্যে হাসান মাহমুদ নেন পাঁচ উইকেট।

ম্যাচ শুরুর আগেই রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টে চোখ রাঙিয়েছিল বৃষ্টি। সেই পূর্বাভাসই অনেকাংশেই সত্যি হয়েছিল। ম্যাচের প্রথম দিনের পুরোটাই গিয়েছিল বৃষ্টির পেটে। এরপর ম্যাচের চতুর্থ দিন আবারও হানা দেয় বৃষ্টি। ততক্ষণে প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে ৬ উইকেটের বিপর্যয় কাটিয়ে পাকিস্তানকে নাগালের মধ্যে অল আউট করে ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করে রেখেছিল টাইগাররা। পঞ্চম দিনও বৃষ্টির সম্ভাবনা ছিল। সেই সাথে ছিল বজ্রঝড়ের আশঙ্কা। তবে সব শঙ্কার মেঘ দূর করে পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাতে লাল বলের ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে বাংলাওয়াশের স্বাদ দিয়েছে টাইগাররা। প্রথম টেস্টে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল ১০ উইকেটে।

বিনা উইকেটে ৪২ রানে চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করে বাংলাদেশ। দিন শুরু হওয়ার তৃতীয় ওভারেই দলীয় ৫০ রানে পৌঁছায় বাংলাদেশ। এ দিন কিছুটা সতর্ক হয়েই খেলছিলেন দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম এবং জাকির হাসান। ইনিংসের দশম ওভারে উইকেট হারাতে পারত বাংলাদেশ। মোহাম্মদ আলীর বল জাকিরের ব্যাটের নিচের অংশ ছুঁয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষক সরফরাজ আহমেদের হাতে। আম্পায়ার আউট দেননি। পাকিস্তানের কোনো ক্রিকেটার বুঝতে না পারায় আবেদনও করেননি। তবে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল জাকিরের ব্যাটের কোনা ছুঁয়ে গিয়েছিল।
আগের দিন ২৩ বলে ৩১ রান করা এই ব্যাটার এ দিন ৩৯ বলে ৪০ রানে থেমেছেন। ১৩তম ওভারে মীর হামজার ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে বোল্ড হওয়ার আগে তিনটি চার ও দু’টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন জাকির। দলীয় ৫৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

এরপর সাদমানকে আউট করার সুযোগ তৈরি করেছিলেন হামজা। তার ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে ব্যাকফুট পাঞ্চ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ তুলেছিলেন। তবে সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি সালমান আগা। অবশ্য পরের ওভারেই খুররম শেহজাদের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন এই ওপেনার। পাকিস্তানের এই পেসারের পিচড আপ ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে মিড অফে শান মাসুদের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। এরপর কোনো বিপর্যয় ছাড়াই বাংলাদেশকে দলীয় এক শ’তে নিয়ে যান অধিনায়ক শান্ত ও মুমিনুল। তাদের জুটিও পঞ্চাশ পেরিয়ে যায়। প্রথম সেশনে বাংলাদেশ ২ উইকেটে ৮০ রান করে।

দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই অধিনায়ক শান্তর উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৩৮ রান করে তিনি আগা সালমানের বলে গালিতে ক্যাচ দেন আব্দুল্লাহ শফিকের হাতে। শান্ত মূলত ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন। তবে বল ব্যাটের কোনায় লেগে চলে যায় গালিতে থাকা ফিল্ডারের হাতে।
এরপর মুশফিকুর রহীমকে নিয়ে বাংলাদেশকে প্রায় জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান মুমিনুল। যদিও ধৈর্য হারিয়ে আত্মঘাতী শটে উইকেট দিয়ে এসেছেন ৩৪ রান করা এই ব্যাটার। আবরারের ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে মিড অফে সাইম আইয়ুবের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। অবশ্য বাংলাদেশকে আর কোনো বিপদ হতে দেননি মুশফিকুর রহীম ও সাকিব আল হাসান। মুশফিক ২২ ও সাকিব ২১ রান করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :
পাকিস্তান (১ম ইনিংস)- ৮৫.১ ওভারে ২৭৪/৮ (শান ৫৭, সাইম ৫৮, সালমান ৫৪, মিরাজ ৫/৬১, তাসকিন ৩/৫৭)।
বাংলাদেশ (১ম ইনিংস)- ৭৮.৪ ওভারে ২৬২/১০ (লিটন ১৩৮, মিরাজ ৭৮, হাসান ১৩*, শেহজাদ ৬/৯০)।
পাকিস্তান (২য় ইনিংস)- ৪৬.৪ ওভারে ১৭২ (মাসুদ ২৮, রিজওয়ান ৪৩, সালমান ৪৭*, হাসান ৫/৪৩, নাহিদ ৪/৪৪)।
বাংলাদেশ (২য় ইনিংস)- ৫৬ ওভারে ১৮৫/৪ (লক্ষ্য ১৮৫) (জাকির ৪০, সাদমান ২৪, শান্ত ৩৮, মুমিনুল ৩৪, মুশফিক ২২*, সাকিব ২১*, হামজা ১/৪৬, খুররম ১/৪০, আবরার ১/৪০)।
ফল : বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ : বাংলাদেশ ২-০ তে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : লিটন দাস।
সিরিজ সেরা : মিরাজ।

 


আরো সংবাদ



premium cement