০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১, ৫ শাবান ১৪৪৬
`
সাক্ষাৎকারে তথ্য উপদেষ্টা

ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে

-


ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থান উত্তর সরকারের তথ্য, সম্প্রচার ও টেলিকমিউনিকেশন বিষয়ক উপদেষ্টা মো: নাহিদ ইসলাম গণমাধ্যমকে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসনের সময় গণমাধ্যম স্বাধীন ছিল না। নানাভাবে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছিল। গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা চেষ্টা করছি গণমাধ্যম যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, এর প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে।

আমার দেশ অনলাইনের সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী ও বিশেষ প্রতিনিধি অলিউল্লাহ নোমান।
ফ্যাসিবাদের নায়ক শেখ হাসিনার বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আছেন। সেখানে তিনি কী স্ট্যাটাস নিয়ে আছেন আমরা জানি না। এ বিষয়ে আমরা কূটনৈতিক পর্যায়ে ভারতের সাথে যোগাযোগ রাখছি। দেশে ট্রাইব্যুনালেই তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। সেই বিচার যাতে আর্ন্তজাতিক মানের হয় তা অবশ্য নিশ্চিত করা হবে।

তিনি আরো জানান, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে আমরা নিশ্চিত হয়েছি শিশুসহ আট শতাধিক ছাত্রজনতাকে শহীদ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৫ হাজারের মতো আহতের তালিকা তৈরি হয়েছে। আরো কাজ চলছে। বিভিন্ন হাসপাতালে আহতদের দেখাশোনার জন্য সরকারি একটি কমিটি কাজ করছে। এ ছাড়া ছাত্র সমন্বয়করাও দেখাশোনা করছেন। আহত ও নিহতদের পরিবারকে সহযোগিতা এবং পুনর্বাসনের জন্য একটি ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে।

গণহত্যায় জড়িতদের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী বেশির ভাগ অপরাধীই দেশে আছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে আছে। তাদের গ্রেফতারের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আমরা আশা করি তারা দ্রুতই ধরা পড়বে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, বিগত সরকার গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধে যেসব কালাকানুন তৈরি করেছিল সেগুলো বাতিল ও সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের পুরো রহস্য উদঘাটন করা হবে। এতদিন এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার নিয়ে প্রহসন করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ও সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
জুলাই গণহত্যার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, শুধু জুলাই গণহত্যাই নয়, অন্যান্য হত্যাকাণ্ড যেমন, বিডিআর ও শাপলা চত্বর গণহত্যা এবং গুমের ঘটনাগুলোর যথাযথভাবে আন্তর্জাতিক মানের তদন্ত করা হবে যাতে ঘটনাগুলোর বিচার আন্তর্জাতিক মানের হয়।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে রাষ্ট্রীয় কাঠামোগুলো ভেঙে পড়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সংস্কারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে শক্তিশালী করা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেছেন। ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থের দাবি-দাওয়া নিয়ে তিনি ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ধৈর্যহারা হয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করলে আমি মনে করি আমাদের মহান অভ্যুত্থানের প্রতি অশ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার জঙ্গি কার্ড ব্যবহার করে অনেক নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করেছে, গুম করেছে। এতে দেশের ভাবমর্যাদা দারুণভাবে বিনষ্ট হয়েছে। তবে কেউ প্রকৃতভাবে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত হলে আমরা তাদের কঠোরভাবে আইনের আওতায় আনব।
আওয়ামী লীগ বিগত ১৫ বছরে মানুষের ওপর যে জুলুম, অত্যাচার ও নির্যাতন করেছে এতে মানুষ তাদের আর কখনো গ্রহণ করবে না। জুলুম, অত্যাচার ও বর্তমান ষড়যন্ত্রে যারা জড়িত তাদের কঠোরভাবে আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, কোন কোন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তবে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের এসব ষড়যন্ত্র সফল হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement