১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩১ ভাদ্র ১৪৩১, ১১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত ও বিচার হবে

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মন্তব্য
-


বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার শিগগিরই শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
গতকাল সোমবার সকালে সচিবালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলির সাথে সাক্ষাৎ শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের অধিকার, সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। শুধু স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে নয়, একজন সাধারণ নাগরিক ও সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সদস্য হিসেবে আমি বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার চাই। সঠিকভাবে এই হত্যাকাণ্ডের পূর্ণ তদন্ত ও ন্যায়বিচার প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু করা হবে।
সাক্ষাৎকালে দুই দেশের মধ্যে মানবপাচার প্রতিরোধ, কৃষি পুনর্বাসন ও বীমা, পুলিশ বাহিনীর পুনর্গঠন ও সংস্কার, মানি লন্ডারিং ও দুর্নীতি প্রতিরোধ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকের শুরুতে উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানান। রাষ্ট্রদূত এ মুহূর্তে উপদেষ্টার অগ্রাধিকারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বন্যাপরবর্তী কৃষি পুনর্বাসনই এখন সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার ও চ্যালেঞ্জ। উপদেষ্টা এ সময় কৃষি পুনর্বাসনে সুইজারল্যান্ডের সহযোগিতা কামনা করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা মানবপাচার প্রতিরোধে বিদ্যমান সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে চাই। তিনি বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় কৃষকদের সক্ষমতা ও সামর্থ্য বৃদ্ধিতে কৃষি ক্ষেত্রে বীমা চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের কৃষকরা এখনো এ বিষয়ে খুব বেশি আগ্রহী নয়। ভবিষ্যতে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন বেশ বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। যে কারণে বন্যাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি এসব সমস্যা সমাধানে কৃষকদের কাছে গ্রহণযোগ্য ও উদ্ভাবনী প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন।
রাষ্ট্রদূত জানান, পুলিশ সংস্কার ও পুনর্গঠনে সুইজারল্যান্ডের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। বাংলাদেশ এ সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে। এ সময় উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তিনি বাংলাদেশে মানবাধিকার সুউচ্চ ও সমুন্নত রাখতে সুইজারল্যান্ডের সহায়তা চান। রাষ্ট্রদূত বলেন, আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও পাচার হওয়া টাকা দেশে ফেরত আনতে সহযোগিতা করবে সুইজারল্যান্ড। বৈঠকে সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ক কাউন্সেলর আলবার্তো জিওভানেত্তিসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। এই ঘটনার চার বছর পর ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বিচারিক আদালতে হত্যা মামলাটির রায় হয়। এখনো পর্যন্ত এ মামলাটিতেই বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যক আসামি। ৮৫০ জন বিডিআর সদস্যের বিচার হয় এ মামলাটিতে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে ভারতীয় হাইকমিশনারের বৈঠক : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সাথে গতকাল বিকেলে সচিবালয়ে তার অফিস কক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাৎকালে দুই দেশের মধ্যে পুলিশ বাহিনী, সীমান্ত নিরাপত্তা, ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তা, বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে তথ্য আদান-প্রদানসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

মন্ত্রণালয়ের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শুরুতে উপদেষ্টা হাইকমিশনারকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, চলমান সংস্কারের অংশ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীতে সংস্কার করা হবে। তবে তা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
বৈঠকে দুই পক্ষ সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধির মাধ্যমে সীমান্ত হত্যা সর্বনিম্ন বা শূন্যে নামিয়ে আনার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করে। হাইকমিশনার বাংলাদেশে বসবাসরত ভারতীয় শিক্ষার্থী ও অন্যান্য নাগরিকের নিরাপত্তার বিষয়ে উপদেষ্টার সহযোগিতা চাইলে তিনি তাকে এ বিষয়ে পুরোপুরি আশ্বস্ত করেন। উপদেষ্টা এ সময় জানান, বাংলাদেশে ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তায় কোনো শঙ্কা নেই। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পরিপূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, ভারতীয় শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে এসে তাদের পাঠকার্যক্রম শুরু করতে পারে।

পুলিশের আরো ৪ কর্মকর্তাকে অবসর
পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) পদমর্যাদার চার কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অবসর দেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের (পুলিশ শাখা-১) আলাদা চারটি প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন স্বাক্ষর করেন। অবসরে পাঠানো কর্মকর্তারা হলেন, অপরাধ তদন্ত বিভাগের উপ-মহাপরিদর্শক (চলতি দায়িত্ব) মো: ইমাম হোসেন, নোয়াখালী পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির, ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মীর রেজাউল আলম ও পুলিশ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খন্দকার লুৎফর কবির। প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, অবসরপ্রাপ্তরা বিধি অনুযায়ী অবসরজনিত সুবিধাদি প্রাপ্য হবেন এবং জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশে ব্যাপক রদবদল শুরু হয়। ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল, পদোন্নতি, বদলি বা দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করা হচ্ছে।

১৩ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা একাধিক প্রজ্ঞাপনে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এবং রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। গত ২২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পৃথক তিনটি প্রজ্ঞাপনে অবসরে পাঠানো হয়, শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মো. মাহাবুবর রহমান ও সদ্য সাবেক সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া এবং পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি জয়দেব কুমার ভদ্রকে। গত ২৭ আগস্ট পুলিশ সদর দফতরে কর্মরত অতিরিক্ত আইজিপি কৃষ্ণপদ রায় ও খুলনা মহানগর পুলিশের কমিশনার (ডিআইজি) মো: মোজ্জাম্মেল হককে অবসর দেয়া হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement