জাতির পাশে ঢাবি শিক্ষার্থীরা
- হারুন ইসলাম ঢাবি
- ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০৩:১৯
সম্প্রীতি দেশে গণ-অভ্যুত্থান সফল করেছেন দেশের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাধারণ জনতা। এ অভ্যুত্থানে ঝরেছে হাজারো মানুষের তাজা রক্ত। হাসপাতালগুলোতে এখনো আহতরা আহাজারি করছে। বলা যায়, জুলাই বিপ্লবের কঠিন ধাক্কায় কাহিল জনগণ। সেই ধাক্কা না সামলাতেই বন্যার মতো ভয়াবহ দুর্যোগের কবলে বাংলাদেশ। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১৩টি জেলা এখন ভয়াবহ বন্যার কবলে রয়েছে। এই দুর্যোগে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১৮ জন, আটকা পড়ে আছে অর্ধকোটি মানুষ। জুলাই বিপ্লবের পর ভয়াবহ বন্যার মোকাবেলা কার্যক্রমকে নাম দেয়া হয়েছে আগস্ট বিপ্লব। দুই বিপ্লবেই বুক চিতিয়ে লড়ে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। বন্যার্তদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্লাটফর্মে হাজারো ঢাবি শিক্ষার্থী স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাঁধে কাঁধ রেখে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
গত বুধবার রাতে ভারত ত্রিপুরায় ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেয়ায় আকস্মিক বন্যাকবলিত হয় দেশের ১৩ জেলা। কোনো জায়গায় বিল্ডিংয়ের দোতলা পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। দুর্যোগকালীন সময়ে বসে নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সন্তানরা। বন্যার্তদের সহায়তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচির ডাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচিতে রাজধানী ঢাকার নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ যে যার সাধ্যমতো দিয়ে যাচ্ছেন ত্রাণসামগ্রী। ত্রাণসামগ্রীর হিসাব রাখা থেকে মজুদ করা এবং বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে পৌঁছে দেয়ার কাজে মনপ্রাণ লাগিয়ে পরিশ্রম করছে তারা। আবাসিক হলগুলোর প্রতিটি রুমে রুমে গিয়ে তোলা হয়েছে নগদ টাকা ও শুকনো খাবার, কাপড় চোপড়, স্যানিটারি ন্যাপকিন, ওষুধসহ জরুরি সামগ্রী। প্রতিটি বিভাগেও তোলা হচ্ছে নগদ টাকা, জরুরি ত্রাণসামগ্রী। ত্রাণ সংগ্রহ, সংরক্ষণে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্টেজে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। টিএসসি এলাকায় যানজট এড়ানো এবং ত্রাণসামগ্রীর গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি যাতে টিএসসির ভেতরে ঢুকতে না পারে, সে জন্য ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন শিক্ষার্থীরা। আবার কেউ ত্রাণের গাড়িগুলো থেকে ত্রাণসমাগ্রী নামিয়ে বহন করে ক্যাফেটোরিয়া বা গেমসরুমে পৌঁছে দিচ্ছেন। কেউবা দান করা টাকার খেয়াল রাখছেন, আবার কেউ বহন করা মালগুলো স্তূপাকারে সাজিয়ে রাখছেন। আবার সেসব ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে টিমের সাথে বন্যাদুর্গত এলাকায় যাচ্ছে অনেকে। এই অপূর্ব দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে এ যেন নতুন এক বাংলাদেশ। এমন বাংলাদেশ এর আগে কেউ কখনো দেখেনি। শিক্ষার্থীরা বলছে, আমরা সম্মিলিত হয়ে স্বৈরাচারকে হটিয়েছি, সম্মিলিত এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভয়াবহ এই বন্যাদুর্যোগকেও আমরা জয় করতে পারব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযয়ের সমাজবিভাগের শিক্ষার্থী হারুন ইসলাম বলেন, গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচিতে টিএসসিতে উপচে পড়া ভিড় দেখে মনে হচ্ছে- এটিই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ কখনো হারবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অকাতরে পরিশ্রম করছেন। ৬ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৬০ বছর বয়সী বৃদ্ধ এসেছেন বন্যাকবলিত মানুষের সেবায় বস্তাভর্তি ত্রাণ নিয়ে। এভাবেই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সবাই মিলে একতার বাংলাদেশ গড়ে তুলব। গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবক বলেন, দেশ ও দশের ক্রান্তিলগ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ থেকে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দিন-রাত পরিশ্রম করছে। দেশের এ রকম পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল, প্রতিটি বিভাগ থেকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে নগদ অর্থ, শুকনা কাপড় কালেক্ট, তাদের জন্য ওষুধ ও শুকনা খাবার পানির ব্যবস্থা করছে। আবার টিম গঠন করে সেই ত্রাণসামগ্রী দুর্গতদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে পাশাপাশি বিভিন্ন বোট বা নৌকার মাধ্যমে তাদেরকে উদ্ধার করছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা