১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১, ৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ফেনী-নোয়াখালী-কুমিল্লা বিপর্যস্ত

১০ জেলায় বন্যার অবনতি : ১০ ফুট পানির নিচে ফেনী, চট্টগ্রামে কোমরপানি : ঢাকার সাথে সিলেট-চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ বন্ধ : ৫২ লাখ মানুষ পানিবন্দী : মৃত্যু ৪
আখাউড়ায় বন্যার পানির চাপে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে : নয়া দিগন্ত -

টানা ভারীবর্ষণ ও ভারত থেকে ধেয়ে আসা ঢলের পানিতে দেশের ১০ জেলার বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লার বেশির ভাগ এলাকা ১০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় মহাবিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। ফেনীতে হু হু করে প্রবল বেগে পুরো জেলায় পানি প্রবেশ করায় উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে। ইতোমধ্যে এখানে চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ফেনীর বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, পানির তোড়ে অনেক মানুষ, গবাদিপশু ভেসে গেছে। অনেক এলাকায় বাড়ির থালাবাটি পাতিল ও তৈজসপত্র পানিতে ভেসে যেতে দেখা গেছে। চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, সিলেট অঞ্চলের শহর নিম্নাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। চট্টগ্রাম শহরের অনেক এলাকা কোমরপানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যাকবলিত এসব জেলার প্রায় ৫২ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কক্সবাজারের রামুতে বানের পানিতে দুই যুবক ভেসে গেছে। বানের পানিতে রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় ঢাকার সাথে সিলেট ও চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। অতিবর্ষণে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি ও কক্সবাজারে পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল পর্যন্ত ৮ জেলায় ২৯ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ভারীবর্ষণ আরো দুই দিন অব্যাহত থাকবে। ঢলের পানি প্রবল বেগে আসতে থাকায় এসব জেলার সব নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রতিনিধি, সরকারি ও বেসরকারিভাবে উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়েছে। মানুষের জন্য হাজার হাজার আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

কুমিল্লায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী : ৪ জনের মৃত্যু
হাবিবুর রহমান চৌধুরী কুমিল্লা থেকে জনান, টানা বৃষ্টি ও বন্যার প্রভাবে কুমিল্লায় অন্তত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গোমতি নদীর পানি বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। জেলায় ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। অব্যাহত বৃষ্টি ও উজানের ঢলের পানিতে কুমিল্লার তিন উপজেলার লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। গোমতি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি আরো বাড়তে পারে। বুধবার রাত থেকে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জে ১০ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তলিয়ে গেছে শত শত মাছের ঘের, আউশ ধান ও আমনের বীজতলা। এ ছাড়া আদর্শ সদর, লাকসাম, বুড়িচং, বরুড়া, দেবীদ্বার, মুরাদনগর ও দাউদকান্দির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার নদীর চর, তীরবর্তী শাকসবজির ক্ষেতসহ ফসল তলিয়ে গেছে। কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলের উপজেলা নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ ও চৌদ্দগ্রামের অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
কুমিল্লায় চারজনের মৃত্যু : টানা বৃষ্টি ও বন্যার প্রভাবে কুমিল্লায় অন্তত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বুধবার কুমিল্লা নগর, লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোট উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। দুজন বন্যার পানিতে তলিয়ে, একজন বৃষ্টির মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এবং একজনের মাথায় গাছ পড়ে মারা যান। মৃত ব্যক্তিরা হলেন নাঙ্গলকোট পৌরসভার দাউদপুর এলাকার বাসিন্দা কেরামত আলী (৪৫), কুমিল্লা নগরের ছোট এলাকার কিশোর রাফি (১৫) ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সোনাকাটিয়া গ্রামের কানু মিয়ার ছেলে শাহাদাত হোসেন (৩৪)। লাকসামে পানিতে তলিয়ে মারা যাওয়া শিশুর নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিক জানা যায়নি। চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লার সিভিল সার্জন নাছিমা আক্তার।
খোলা হয়েছে ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র : কুমিল্লা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবেদ আলী বলেন, জেলায় ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আরো কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র বাড়তে পারে। বন্যাদুর্গতদের চাল ও শুকনা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।

নোয়াখালীতে বন্যার অবনতি লাখ লাখ মানুষ পানি বন্দী
মুহাম্মদ হানিফ ভূঁইয়া জানান, গত ১১ দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে পুরো নোয়াখালী। গতকাল ভারী বর্ষণ ও ফেনী মহুরিগঞ্জ নদীর পানি ধেয়ে আসায় বন্যার পরিস্থিতি চরম অবনতি ঘটেছে। বন্যার পানিতে বসতঘর, সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়ছে প্রায় ৮ লাখ মানুষ। হাজার হাজর মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে। শত শত মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে। বুধবার রাত থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক বিঘœ ঘটেছে।
অব্যাহত রেকর্ড পরিমাণ ভারী বর্ষণ ও ফেনী মহুরিগঞ্জ নদী থেকে আসা বন্যার পানিতে জেলা শহর মাইজদী নোয়াখালীর পৌর সভার ৯টি ওয়ার্ড চৌমুহনী পৌরসভার সব ক’টি ওয়ার্ডের রাস্তাগুলো কোমর, হাঁটু পরিমাণ পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়া জেলার, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল সেনবাগ, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট, সুবর্ণচর উপজেলায় সব রাস্তা রাস্তাঘাট বাড়িঘর হাঁটু পরিমাণ পানিতে তলিয়ে গেছে।
দাউদকান্দি (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, অব্যাহত ভারী বর্ষণ ও উজানের দেশ ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে ক্রমে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে কুমিল্লার গোমতি নদী।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তিতাস উপজেলার ভিটিকান্দি, নারান্দিয়া ও কলাকান্দি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ইউনিয়নগুলোর বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছে । ভিটিকান্দি ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের মো: ডালিম মিয়া বলেন, গত বুধবার (২১ আগস্ট) রাত থেকে আমাদের ঘুম নাই। এলাকার ফসল পানিতে ডুবে যাচ্ছে। ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। অনেক বাড়িতে চুলা ডুবে গেছে।
সোনাগাজী (ফেনী) সংবাদদাতা জানান, পাহাড়ি ঢল আর উজানের পানি ফেনীর শহরকে চাপিয়ে এখন সোনাগাজীর নবাবপুর, আমিরাবাদ, ভোরবাজার, থলিয়া, সোনাপুরসহ পূর্ব-উত্তর এবং পূর্ব-দক্ষিণ অঞ্চল লোকালয়ে পানি ঢোকা শুরু হয়ে গিয়েছে। এসব এলাকায় পুকুরের মাছ, মৎস্যঘের, পোলট্রি শিল্পসহ ফসল পানিতে ভেসে গিয়ে ঘরবাড়িতে পানি ওঠা শুরু হয়েছে।
এ দিকে ফেনী শহরের অধিকাংশ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পেট্রোবাংলা, পূর্ব উকিলপাড়া, পশ্চিম উকিলপাড়া, রামপুর, মাস্টারপাড়া, টাংরোড, পাঁচগাছিয়া বাসাবাড়ি অন্তত ১০ ফুট পানির নিচে। এসব এলাকার প্লাটগুলোতে ইতোমধ্যে গ্রাউন্ড ফ্লোর পানিতে ডুবে গেছে। মানুষের মাঝে চরম উৎকণ্ঠা আর আতঙ্ক বিরাজ করছে।

লক্ষ্মীপুরে পানিবন্দী ৬ লাখ মানুষ
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, অতি ভারী বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে লক্ষ্মীপুরের পাঁচটি উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা। এতে পানিবন্দী হয়ে আছে জেলার ৬ লাখ মানুষ।
গত কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টিপাতের পানি নামতে না পারায় বাড়ির উঠান, মাঠঘাট, পুকুর, জলাশয়, ফসলিক্ষেত তলিয়ে গেছে।
কারো কারো ঘরেও পানি ঢুকে পড়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন অনেকে। গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন বন্যাদুর্গতরা। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাছচাষিরা। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে প্রায় ৪০ হাজার পুকুর ভেসে গেছে। এতে পুকুরের সব মাছ বের হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন মৎস্যচাষিরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, ভারী বর্ষণ ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের কারণে আখাউড়া উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও কসবা উপজেলার একটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি আখাউড়ার খলাপাড়া এলাকায় হাওড়া নদীর দু’টি স্থানে বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অন্তত এক হাজার ২০০ পরিবার।
বুধরাত রাত থেকে ঢলের পানি তীব্র গতিতে বিভিন্ন গ্রামে প্রবেশ করে। এতে করে আখাউড়া উত্তর, দক্ষিণ, মোগড়া ও মনিয়ন্দ, কসবা উপজেলার বায়েকসহ মোট সাতটি ইউনিয়নের ৪০টিরও বেশি গ্রাম পানিবন্দী রয়েছে। এছাড়াও পানির নীচে তলিয়ে গেছে পাঁচ হাজর ৪৭৬ হেক্টর ধানি জমি, ৭৫০ হেক্টর শাকসবজির জমি, ২০০ হেক্টর ধানের বীজতলাসহ বিভিন্ন মাছের ঘের।

আখাউড়ায় বাড়িঘর ভাসছে পানিতে
আখাউড়া সংবাদদাতা জানান, উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়ন, মনিয়ন্দ ও মোগড়া ইউনিয়নে গ্রামে গ্রামে ঢুকে পড়েছে। হাওড়ানদী ও জাজির খাল দিয়ে ভারত থেকে তীব্র গতিতে পানি নামছে। পানির তোড়ে মাছের প্রজেক্ট, জলাশয় ও পুকুরের পাড় ধসে কোটি কোটি টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। সেই সাথে প্রায় চার হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছপালা ও রাস্তার পাড় ভেঙে চলাচল অনুযোগী হয়ে পড়েছে এই তিন ইউনিয়নের সব রাস্তাঘাট। পানিতে ভাসছে হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ির মালামাল। মনিয়ন্দ এলাকায় হাওড়ানদীর বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে নতুন আরো কিছু এলাকা।

সিলেটে ৪ পয়েন্টে বিপদসীমার ওপরে
সিলেট থেকে প্রতিনিধি জানান, সিলেটে বৃষ্টিপাত ও ভারতের ঢলে বিপদসীমা ছাড়িয়েছে কুশিয়ারা নদীর পানি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য মতে কুশিয়ারার চারটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সাথে সিলেটের অন্যতম প্রধান নদী সুরমার পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত রয়েছে। পাউবোর বৃহস্পতিবারের তথ্য মতে সুরমার পানিও বিপদসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো: আব্দুল মুঈদ বলেন, বৃষ্টিপাত আরো দুই দিন অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে পারে।
চুনারুঘাটে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, শতাধিক গ্রাম
চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে তলিয়ে গেছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার শতাধিক গ্রাম।

চট্টগ্রাম নগরী তলিয়েছে কোমর সমান পানিতে
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানান, ভারী বর্ষণের সাথে জোয়ারের পানি একাকার হয়ে পানিতে থই থই করছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল। কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে নগরীর অধিকাংশ এলাকা। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। একই সাথে ভারী বৃষ্টির প্রবণতা কমলেও বৃষ্টি আজও অব্যাহত থাকার কথাও জানিয়েছে সূত্র।
গত রোববার রাত থেকেই লঘুচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। টানা বৃষ্টিতে কয়েক দফা পানি নিমজ্জিত হয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই নগরী। সবচেয়ে বেশি ভারি বৃষ্টি হয় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে। সকাল থেকে ভারী বর্ষণের পাশাপাশি একই সময়ে জোয়ার থাকায় নগরীর বিস্তীর্ণ সড়ক অলিগলি, বাজার, বিভিন্ন বাসাবাড়ির নিচতলা এবং বিভিন্ন মার্কেট ও দোকান পানি নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। এ সময় নগরীর অধিকাংশ এলাকায় কোমর সমান পানি মাড়িয়েই অফিসগামী মানুষকে বিশেষ করে গার্মেন্টশ্রমিকদের পথ চলতে হয়েছে চরম ভোগান্তি সঙ্গী করে। বৈরী পরিস্থিতির কারণে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ রাখে। তা ছাড়া যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ছিল তাতে শিক্ষার্থীরা যেতে পারেননি। নগরীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও পানিতে তলিয়ে যায়। সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর কাপাসগোলা, বাদুরতলা, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, ইপিজেড, সল্টগোলা, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ এলাকা, জিইসি, পাহাড়তলী, ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, শুলকবহর বহদ্দারহাট, চকবাজার, বাকলিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকা, ডিসি রোড, সিরাজউদ্দৌলা সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সড়ক-অলিগলি কোমর সমান পানি নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। এ সময় বিভিন্ন বাসাবাড়ি, দোকানপাট, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে পানি ঢুকে পড়ে। নগরী ছিল অনেকটাই যানবাহন শূন্য।

চট্টগ্রামের সব ক’টি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে
চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম জেলার সব ক’টি নদীর খাল ও পাহাড়ি ছড়ার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ চট্টগ্রাম জেলা ৯টি উপজেলার ৪৫ হাজার ৯১৬ পরিবার কার্যত পানি বন্ধ হয়ে দুই লাখ চার হাজার ৮৫০ মানুষ (পুরুষ মহিলা ও শিশু) ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে জরুরি সেবা দেয়ার জন্য জেলায় ১১৯টি মেডিক্যাল টিমের মধ্যে ইতোমধ্যে ১১১টি মেডিক্যাল চালু করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে বিতরণের জন্য ২০০ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

কালুরঘাটে ফেরি চলাচল বন্ধ
পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, ভারী বর্ষণ ও অস্বাভাবিক জোয়ারে কর্ণফুলী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কালুরঘাটে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে, এ কারণে চলাচলরত মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। সেই সাথে সব ধরনের যানবাহন পারাপার বন্ধ রয়েছে।
ঈদগাঁও (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি অনুপ্রবেশ করে ঈদগাঁও হাইস্কুল, ঈদগাঁও কেজি স্কুল, ঈদগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঈদগাঁও বাজারের ডিসি সড়ক, ও অলিগলিগুলো কোমর সমান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
বাজরের শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের গুদাম এবং দোকানপাটে পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে গেছে ব্যবসায়ীদের বিপুল পরিমাণ মালামাল।

বন্যার পানিতে ভেসে গেল রামুর দুই যুবক
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, বন্যা পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারণ করেছে কক্সবাজারের রামু উপজেলায়। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দাঁড়িয়েছে উপজেলার গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া ও কাউয়ারখোপ ইউনিয়নে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বন্যার পানির স্রোতে ভেসে গেছে, রামুর গর্জনিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের দু’জন যুবক। তারা হলেন পূর্বজুমছড়ি গ্রামের ছৈয়দ হোসেনের ছেলে আমজাদ হোসেন (২২) ও ছালেহ আহমদের ছেলে রবিউল আলম (৩৫)।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবুল কাসেম বলেন, পূর্বজুমছড়ি কবরস্থান সড়ক পার হতে গিয়ে পানির স্রোতে আমজাদ হোসেন এবং নাইক্ষ্যংছড়ির দোছড়ি ইউনিয়নের বাঁকখালীতে পানির স্রোতে রবিউল আলম ভেসে গেছেন। রবিউল দোছড়ি ইউনিয়নের বাঁকখালীতে কাজ করতেন বলে নিশ্চিত করেন ইউপি সদস্য।
পেকুয়া-চকরিয়ায় লক্ষাধিক পরিবার পানিবন্দী : এ দিকে পেকুয়া-চকরিয়ায় টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে অন্তত ২০ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। এ সময় পেকুয়া ও চকরিয়ার ওপর দিয়ে প্রবাহিত মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ফুঁসে উঠেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা। বিশেষ করে এই উপজেলার চার ইউনিয়নের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। ফেনী নদীর পানি বিপদসীমার উপরে চলে আসায় প্রতিটি বসতঘরে পানি উঠে গেছে। অনেক কষ্টে বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়ি ও আশ্রয়কেন্দ্রে। অনেকে এখনো বাড়িতে আটকা রয়েছেন। অতিরিক্ত পানির কারণে তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। নদীর তীরবর্তী চারটি ইউনিয়নের সব বাড়িঘর আক্রান্ত হয়েছে। সময় যত যাচ্ছে ততই পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। গত ৭০ বছরেও এত পানি দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন বন্যাকবলিত করেরহাট ইউনিয়নের হাবিলদারবাসা এলাকার বৃদ্ধ জানে আলম।

সিলেটের সাথে ট্রেন চলাচল বন্ধ
সিলেট থেকে প্রতিনিধি জানান, টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারসহ দেশের ৯টি জেলায় দেখা দিয়েছে বন্যা। এতে রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। পানি উঠেছে মহাসড়ক ও রেললাইনে। এমন অবস্থায় সিলেটের সাথে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয়। এতে বলা হয়, আকস্মিক বন্যায় সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের অনেক জায়গায় রেলপথ ডুবে গেছে। এমন অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় সব আন্তঃনগর, কমিউটার ও মেইল ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হলো। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে।

রাঙ্গামাটিতে ২০ স্থানে পাহাড়ধস
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি জানান, রাঙ্গামাটিতে চার দিনের টানা বর্ষণে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ২০টি স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক পর্যটন কেন্দ্রে বেড়াতে আসা দুই শতাধিক পর্যটক বৃহস্পতিবারও সাজেক থেকে চলে যেতে পারেনি। কাচালং নদীর পানি বেড়ে খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা-সাজেকের একাধিক স্থানে সড়ক ডুবে যাওয়ায় পর্যটকরা বুধবার থেকে সাজেকে আটকা পড়েন। বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার জানান, বাঘাইছড়ি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। রাতের বৃষ্টিতে আরো কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সাজেক পর্যটন কেন্দ্রে এখনো পর্যটকরা আটকে রয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতে এবার ৭ বছরের মুসলিম ছাত্রের টিফিন নিয়ে বিতর্ক বঙ্গোপসাগর হয়ে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা সিলেটে গৃহকর্মী শিশুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার রাষ্ট্র সংস্কারের পর নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেবে সরকার উপদেষ্টা রিজওয়ানা শৈলকুপায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ভ্যানচালকের মৃত্যু তাইম হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ বেসরকারি ব্যাংক থেকে জনগণের টাকা ফেরত পেতে উদ্যোগ আমতলীতে ছাত্রলীগ নেতার অস্ত্রের আঘাতে যুবদল নেতা জখম সামিটের এলএনজি টার্মিনালের মেরামত সম্পন্ন, পরিষেবা পেতে লাগবে ২০ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু ২২ সেপ্টেম্বর খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে বড় চ্যালেঞ্জের আশঙ্কা

সকল