১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১, ৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

বন্যায় ভাসছে ৮ জেলা

আখাউড়ায় বন্যার পানিতে তলিয়ে রাস্তাঘাটসহ ব্রিজ-কালভার্ট :নয়া দিগন্ত -

- মৌলভীবাজারে ২ লাখ মানুষ পানিবন্দী
- আখাউড়া বন্দরে আমদানি রফতানি বন্ধ
- সাজেকে আটকা পড়েছেন ২৫০ পর্যটক
- গোমতি ও মুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি

বন্যায় ভাসছে দেশের ৮ জেলা। এ অবস্থা আরো খারাপ হয়ে বন্যায় আরো নতুন নতুন জেলা প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সিলেটের মৌলভীবাজারে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ।
জেলাগুলো হলো, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও খাগড়াছড়ি বন্যার পানিতে রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় সাজেকে আটকা পড়েছেন ২৫০ পর্যটক।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানায়, দেশের মধ্যে ভারী বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের এই জেলাগুলো বন্যাকবলিত হয়েছে। বন্যা আরো নতুন নতুন অঞ্চলে বিস্তৃত হতে পারে বলে এতে জানানো হয়। গতকাল বিকেলে সচিবালয়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা।

এ সময় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি বাড়ছে জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন, আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার প্রধান নদীগুলোর পানি সমতল কতিপয় পয়েন্টে সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেতে পারে। তিনি বলেন, কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, খোয়াই, মুহুরী, ফেনী, হালদা নদীর পানি ৭টি স্টেশনে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টায় মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই ও সারিগোয়াইন নদীর পানি কয়েকটি পয়েন্টে বিপদসীমার আরো ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এতে ওই সব অঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে জানানো হয়।

টানা বৃষ্টিতে চাঁদপুরে পদ্মা মেঘনা নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে। গত মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। বৃষ্টির কারণে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।
অপর দিকে চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী এবং হালদা নদীর পানি সমতল বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। ফলে এসব এলাকার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
এ ছাড়াও কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যার কবলে পুরো খাগড়াছড়ি। বিভিন্ন উপজেলায় পানিবন্দী হাজার হাজার মানুষ। খাগড়াছড়ি জেলা সদরে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দীঘিনালায় পরিস্থিতি অপরিবর্তিত।
এ দিকে টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী, কমলগঞ্জ, রাজনগর ও সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের হাজার হাজার ঘরবাড়ি। এতে কমপক্ষে দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে একাধিক স্থানে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। উজানের পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ইসলামপুর, আদমপুর, মাধবপুর, কমলগঞ্জ, শমশেরনগর, রহিমপুর, পতনঊষা, মুন্সিবাজার ইউনিয়নের প্রায় ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানির নিচে তলিয়ে গেছে উপজেলার বেশিরভাগ সড়ক।
পাহাড়ি ঢলে কমলগঞ্জ-আদমপুর আঞ্চলিক সড়কের ঘোড়ামারা ও ভানুবিল মাঝেরগাঁও এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। আদমপুর ইউনিয়নের ঘোড়ামারা, রানিরবাজার, ইসলামপুর ইউনিয়নের মোকাবিল ও কুরমা চেকপোস্ট এলাকায় নদীর বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। আদমপুর-ইসলামপুর সড়কের হেরেঙ্গা বাজার, শ্রীপুর ও ভান্ডারিগাঁও এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
কুলাউড়ায় বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার টিলাগাঁও, জয়ন্ডী, সদর, রাউৎগাঁও ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সহস্্রাধিক মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। সড়ক পথেও অনেক গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

কয়েক দিনের টানা বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল এবং উজান থেকে নেমে আসা পানিতে জেলার সব ক’টি নদনদীতে পানি বাড়ছে বলে জানিয়েছে মৌলভীবাজারের পাউবো। সংশ্লিষ্টরা জানান, টানা বর্ষণে মনু ও ধলাই নদীর অন্তত পাঁচটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের সহস্রাধিক মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন। বন্যার তলিয়ে গেছে জুড়ী উপজেলার ফুলতলা, গোয়াবাড়ি ও সাগরনাল ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের শতাধিক গ্রাম। ৪০ হেক্টরের বেশি আমন ধান পানিতে ডুবে গেছে। রাজনগর উপজেলার মনু নদীর বাঁধ ভেঙে টেংরা ও তারাপাশা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ দিকে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ও চাঁদনীঘাট ইউনিয়নেরও কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, জেলার মনু নদী (রেলওয়ে ব্রিজ) বিপদসীমার ১০৫ সেন্টিমিটার চাঁদনীঘাট এলাকায় ৭০ সেন্টিমিটার, ধলাই নদীতে ৮ সেন্টিমিটার ও জুড়ী নদীতে বিপদসীমার ১৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানিও বিপদসীমা স্পর্শ করেছে।
কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে গোমতী ছাড়াও কাকড়ী, পাগলী ও সালদা নদী দিয়ে ভারত থেকে পানি আসা ও বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে কুমিল্লায় বড় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বাঁধে অবস্থান করছে চরের সহস্রাধিক পরিবার। পানিতে ডুবে গেছে দক্ষিণ কুমিল্লার অধিকাংশ সড়ক-ফসলি জমি। টানা তিন দিনের বৃষ্টির সাথে ভারতের ত্রিপুরা থেকে আসছে পানি। গোমতী নদীতে পানি বেড়ে অন্তত ৪ হাজার হেক্টর চরের জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। গোমতী পাড়ের বাসিন্দারা জানান, গেল ১০ বছর পর গোমতীর পানি এত বেশি বৃদ্ধি পেলো । এদিকে চরের ভেতর সহস্রাধিক পরিবার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।
সরেজমিনে বুধবার কুমিল্লা গোমতী নদীর আদর্শ সদর উপজেলার বানাশুয়া, পালপাড়া, রত্নবতী, টিক্কারচর, জালুয়াপাড়া, বুড়িচং উপজেলার ভান্তি, শিমাইলখাড়া, পূর্বহুড়া, নানুয়ার বাজার, মিথিলাপুর, গোবিন্দপুর, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়ায় গোমতীর তীর ঘেঁষে পানির ঢেউ। চরের হাজার একর সবজিক্ষেত ডুবে গেছে। চরের বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার দেবিদ্বার অংশে গোমতী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ঘরবাড়িতে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ঘর ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন মানুষ। আকস্মিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেবিদ্বার উপজেলার কালিকাপুর, বেগমাবাদ চরবারক (চান্দিনা), বিনাইপার, রগুরামপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ও বাঁধের ভেতরে থাকা তিন শতাধিক পরিবার অনেকে পানিবন্দী।
বুড়িচং (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, ভারতের ত্রিপুরা থেকে খরস্রোতা পানিতে গোমতীর চরের ফসলী জমি ও বাড়ি ঘর ভেসে গেছে। এতে হাজার হাজার মানুষ তীরে অবস্থান করছে। ষোলনল ইউনিয়নের কিংবাজেহুড়া গ্রামের মানুষের ঘরবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি ও আখাউড়া সংবাদদাতা জানান, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

বন্দরের সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। পাশাপাশি ইমিগ্রেশন ভবনে হাঁটুপানি জমায় যাত্রী পারাপার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন স্থানে গত মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। অব্যাহত বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বুধবার সকাল থেকেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয় আখাউড়া স্থলবন্দরে। পাশাপাশি টানা বৃষ্টির ফলে ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে স্থলবন্দরের সড়কটি। এতে ব্যাহত হচ্ছে ভারতে পণ্য রফতানি কার্যক্রম।
এ দিকে আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্জাতিক সড়কের আখাউড়ার জাজিরা খালের ওপর অবস্থিত একটি বেইলি সেতু পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি জানান, রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় টানা চার দিনের বৃষ্টিপাতে ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো তলিয়ে যাচ্ছে এবং পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
দীঘিনালার কবাখালীতে সড়কের একাংশ তলিয়ে যাওয়ায় বাঘাইছড়ি থেকে দেশের অন্যান্য জেলা-উপজেলায় দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিরীন আখতার জানান, বাঘাইছড়িতে আবারো বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ৫৫ এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং বন্যাদুর্গতদের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। আজ থেকে কিছু আশ্রয়কেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্তরা আশ্রয় নেয়া শুরু করেছে। গত তিন মাসের ব্যবধানে বাঘাইছড়িতে এটি চতুর্থ বারের বন্যা।

ফেনীতে ভয়াবহ বন্যায় পানিবন্দী দুই লাখ মানুষ, নিহত ১
ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীতে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ফুলগাজী ও পরশুরামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে মুহুরি নদীর পানি। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে দুই লক্ষাধিক মানুষ। উপজেলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে যাওয়ায়, বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়া প্রবল স্রোতে ভেসে যাওয়ায় একজন নিখোঁজ রয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে এ নিয়ে তৃতীয়বার বন্যার কবলে পড়েছে জেলার তিন উপজেলার দুই শতাধিক গ্রাম। এতে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব জানিয়েছেন, প্রবল স্রোতে ভেসে যাওয়ায় একজন নিখোঁজ রয়েছেন। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। ফুলগাজী ইউএনও তানিয়া ভূঁইয়া জানান, উপজেলায় স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় ছয় ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।

আখাউড়ায় ৩০ গ্রাম প্লাবিত, নারীর মৃত্যু
আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংবাদদাতা আরো জানান, ভারী বর্ষণ আর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এবং একজন গর্ভবতী নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া অস্থায়ী সেতু ভেঙে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে আখাউড়া-আগরতলা সড়কে। এদিকে পানিতে ডুবে সুবর্ণা আক্তার (২৫) নামে গর্ভবতী নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি বীরচন্দ্রপুর গ্রামের পারভেজ মিয়ার স্ত্রী।
দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: জালাল উদ্দিন জানান, দক্ষিণ ইউনিয়নের পাঁচ-ছয়টি গ্রামে পানি উঠেছে। আখাউড়া-আগরতলা সড়কের অস্থায়ী সেতু ভেঙে গেছে। আব্দুল্লাহপুর প্রাইমারি স্কুলে ১৫/২০টি পরিবারকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এছাড়া পানিতে ডুবে একজন গর্ভবতী নারীর মৃত্যু হয়েছে।

সাজেকে আটকে পড়েছেন ২৫০ পর্যটক
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়ক ডুবে গিয়ে সাজেকের সাথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সাজেকে আটকে পড়েছেন ২৫০ পর্যটক।
গত মঙ্গলবার বিকেলের দিকে খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কের দীঘিনালা উপজেলার কবাখালি অংশটি ডুবে যায়।
জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কের দীঘিনালা উপজেলার কবাখালি অংশের সড়ক ডুবে গিয়ে রাঙ্গামাটির সাজেকসহ বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলার সাথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সাজেক যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি ডুবে যাওয়ায় পানি না কমা পর্যন্ত সেখানেই থাকতে হবে পর্যটকদের।

সিলেট থেকে প্রতিনিধি জানান, সিলেটে টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে ফের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সুরমা, কুশিয়ারা, পিয়াইন, গোয়াইন, ধলাইসহ সব নদীর পানি বেড়েছে। একই বছরের তৃতীয় দফার বন্যার আশঙ্কায় সীমান্তবর্তী মানুষেরা রয়েছেন ভয় আতঙ্কে।
বুধবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টায় ১৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বাড়ছে সিলেটের বিভিন্ন নদীর পানি। এরই মধ্যে কুশিয়ারার নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।

এ দিকে আবহাওয়া অধিদফতর বলছে কাল শুক্রবার পর্যন্ত সিলেটসহ দেশের কয়েকটি অঞ্চলে হালকা থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনায় আবারো টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। অতি বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে নারী-পুরুষ কার্যত গৃহবন্দী হয়ে পড়ায় অফিস, আদালতে উপস্থিতি ছিল একেবারেই নগণ্য। আর শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল একেবারেই ফাঁকা। আর কর্মচঞ্চল শহরে ছিল না অন্যান্য দিনের মতো কোনো যানজট ও কর্মব্যস্ততা।

নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে টানা ছয় দিনের অরিরাম বৃষ্টি এবং ভারতীয় উজানের পাহাড়ি পানির প্রবাহে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার ডাকাতিয়া নদী তীরবর্তী বাঙ্গড্ডা, রায়কোট উত্তর, দক্ষিণ, মৌকরা, ঢালুয়া, বক্সগঞ্জ ও সতাবাড়িয়া ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রাম পৌরসদরসহ উপজেলার অন্য ১০টি ইউনিয়নের আরো ৫০টি গ্রামের দেড় লক্ষাধিক মানুষের বাড়িঘর প্লাবিত হয়ে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন বাড়িঘরে পানি ওঠায় মানুষজনকে ঘরের খাটে বসে থাকতে হচ্ছে। পানিতে নিমজ্জিত বাড়িঘরের চুলায় আগুন না জ্বলায় হাজার হাজার মানুষকে অভুক্ত থাকতে হচ্ছে। বন্যাকবলিত বাড়িঘরগুলোতে বিষধর সাপ আতঙ্কেও ভুগছেন।

নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) সংবাদদাতা জানান, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে অবিরাম বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে জামছড়ি এলাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ির জামছড়ির সংযোগ সড়কের ব্রিজটি। ব্রিজটির এহেন অবস্থার কারণে সাময়িকভাবে যানবাহন চলাচল বন্ধ ও সীমান্তের এই সড়ক দিয়ে বর্তমানে মালামাল পরিবহনে করা যাচ্ছে না।
নোয়াখালী অফিস জানায়, গত ১০ দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে পুরো নোয়াখালী। গতকাল বুধবার ভারী বর্ষণ ও ফেনী মুহুরিগঞ্জ নদীর পানি ধেয়ে আসায় বন্যার পরিস্থিতি চরম অবনতি ঘটেছে । হু হু করে আসা বন্যার পানিতে বসতঘর, সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়ছে লাখ লাখ মানুষ। শত শত মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement