পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টের রুল
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর রায়ের হাইকোর্ট বেঞ্চ জনস্বার্থে পাঁচজন বিশিষ্ট নাগরিকের করা রিট আবেদনে প্রাথমিক শুনানি শেষে এ রুল জারি করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফয়েজ আহমেদ।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক রিট করেন। অন্য চারজন হলেন- তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান বলেন, সংবিধানের ব্যাসিক স্ট্রাকচার হচ্ছে- গণতন্ত্র, রুল অফ ল’ ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট অব জুডিশিয়ারি। তিনি বলেন, ব্যাসিক স্ট্রাকচারে হিট (আঘাত) করেছে পঞ্চদশ সংশোধনী। সংবিধানের মৌলিক কাঠামোটা পরিবর্তন করে দিয়েছে। এই সংশোধনীর মধ্যদিয়ে গণতন্ত্রহীনতার দিকে বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে। সংশোধনীর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় এক ধরনের হস্তক্ষেপের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই জায়গাগুলো থেকে আবেদনকারীরা সচেতন নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের ভয়েস রেইজ করেছেন। সেই জায়গা থেকে তারা এই আবেদন করেছেন। এই ব্যাপারে আমরা গ্রাউন্ড ইকজামিন করব। তারপর সিদ্ধান্ত নেবো।
তিনি বলেন, রিট আবেদনে বলা হয়েছে, পঞ্চদশ সংশোধনী সংবিধানের ব্যাসিক স্ট্রাকচারের সাথে সাংঘর্ষিক। প্রাথমিক পর্যায়ে এই স্টেজে এসে আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে স্থগিতাদেশের বিরোধিতা করেছি। তিনি বলেন, আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে রিট আবেদনকারী বদিউল আলম মজুমদার বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বাধ্যাধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা যায়। এটা যাতে না হয়, এ জন্য আমরা এই মামলা করেছি। তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করতে অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, কারসাজির মাধ্যমে বর্তমান এই নির্বাচন কমিশন নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আইনে ত্রুটি আছে। পদ্ধতিগত ত্রুটি আছে। আমাদের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দলীয়করণের প্রশ্ন রয়েছে। আমরা যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা এড়াতে পারি সে জন্য এই রিট করেছি।
এ বিষয়ে আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া বলেন, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে আছে একসঙ্গে অনেকগুলো অনুচ্ছেদে পরিবর্তন বা সংশোধনী আনতে হলে গণভোট করতে হবে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের অনেকগুলো অনুচ্ছেদের পরিবর্তন আনা হয়। কিন্তু কোনো গণভোট করা হয়নি। গণভোট না করে সংশোধনী পাস করা সংবিধান পরিপন্থী।
তিনি বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত মামলার লিখিত সংক্ষিপ্ত আদেশে আপিল বিভাগ বলেছিলেন পরবর্তী দুটি (দশম ও একাদশ) জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। কিন্তু সেই আদেশকে অমান্য করে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া হয়। ফলে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না করে দলীয় সরকারের অধীনে করা হয়। যে কারণে পঞ্চদশ সংশোধনী আপিল বিভাগের আদেশের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিপন্থী।
২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া হয়। এ ছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়; সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয়। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয় এ সংশোধনীর মাধ্যমে।
উল্লেখ্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আপিল বিভাগ (ওপেন কোর্টে) ২০১১ সালের ১০ মে যে রায় দেন। পরবর্তী দু’টি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে আপিল বিভাগের আদেশে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ওই রায় বলবৎ অবস্থায় ২০১১ সালের ৩০ আগস্ট সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে। আইনজীবীদের অভিযোগ পরবর্তী সময়ে সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ২০১১ সালের ১৭ মে অবসর গ্রহণের ১৬ মাস পরে সর্বোচ্চ আদালতের প্রকাশ্য রায়ের অংশ পরিবর্তন করে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রদান করেন। সেখানে পরবর্তী দু’টি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে আপিল বিভাগের আদেশ বাদ দেয়া হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা