২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

২২ দিনে নিহত ৬৫০

আন্দোলনে হতাহত সম্পর্কে জাতিসঙ্ঘের তথ্য
গত ৪ আগস্ট রাজধানীর উত্তরার আজমপুর এলাকায় সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে দুইজন বিক্ষোভকারী গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাস্তায় এভাবেই পড়েছিলেন : সংগৃহীত -


প্রথমে কোটা এবং তারপর সরকার পতনের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত জুলাই ও আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডকে ‘জুলাই গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এই সময়ে অন্তত ৬৫০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘ।
এদিকে ছাত্র আন্দোলনে এক হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেছেন সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও বর্তমানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময়ে নিহতদের সংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশের একেকটি গণমাধ্যমে একেক রকম সংখ্যা তুলে ধরা হচ্ছে।
মোটা দাগে, আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা নিয়ে নানা আলাপ হলেও এর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, নিহতদের সংখ্যা জানার জন্য তালিকা তৈরির কোনো বিকল্প নেই। একইসাথে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জন্যও নিহতদের তালিকা করা প্রয়োজন।

আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা কত?
সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও অস্থিরতা নিয়ে গত শুক্রবার জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দফতর থেকে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে কমপক্ষে ৬৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, এদের মধ্যে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ৪০০ কাছাকাছি এবং বাকি প্রায় ২৫০ জন পরের দুই দিনে প্রাণ হারিয়েছেন।
আর জুন থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনে ৩২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।
একই দিন ভারতের অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম নর্থইস্ট নিউজকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, এই সময়ে নিহত হয়েছে সহস্রাধিক মানুষ। তিনি বলেন, ঢাকার কিছু জায়গায় এবং অন্যান্য জেলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনী মানুষকে প্রাণঘাতী অস্ত্র দিয়ে আঘাত ও গুলি করে, যাদের বেশির ভাগই ছিলেন ছাত্র ও তরুণ।

যা বলছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন : নির্দিষ্ট কোনো তালিকা করা না হলেও সংঘাতে মৃতের সংখ্যা অন্তত দেড় হাজার হতে পারে বলে মনে করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা।
প্রথমে তো ভেবেছিলাম অন্তত ৫০০ হবে। কিন্তু হাসপাতালের ডাটা (উপাত্ত), মানুষের মুখের কথা শুনে এখন মনে হচ্ছে এটা কোনোভাবেই এক থেকে দেড় হাজারের নিচে হবে না। বিশেষ করে যেদিন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করল, সেদিনও ২০০-২৫০ ওপর লাশ পড়েছে। এর আগে, কোটা আন্দোলনের সময় ১৬ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে ২৬৬ জনের মৃত্যুর তথ্য প্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরপর আর নিহতদের নিয়ে নতুন তালিকা করার কোনো কাজ শুরু হয়নি বলে জানান ফাতেমা।
এই সমন্বয়ক বলছেন, নিহতদের অনেকের মৃত্যু হার্ট এটাক, স্ট্রোক, সড়ক দুর্ঘটনা বলে নথিভুক্ত করা হয়েছে। আবার অনেকের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে কিংবা বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী বিচার করা হবে বলে গণমাধ্যমে জানান আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
তবে এই আন্দোলনে কত মানুষ নিহত বা আহত হয়েছে, সে বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে এখনো কোনো উদ্যোগের কথা জানা যায়নি।

প্রকৃত সংখ্যা কি জানা সম্ভব?
আন্দোলন চলাকালীন নিহত অনেকের তথ্যই হাসপাতালে নথিভুক্ত করা হয়নি। আবার ময়নাতদন্ত ছাড়াই অনেকের লাশ নিয়ে গেছেন স্বজনরা। থানাগুলোতেও নেই প্রকৃত মৃতের সংখ্যা। এমন প্রেক্ষাপটে কেবল নথিবদ্ধ তথ্যগুলোই প্রকাশিত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে মৃতের প্রকৃত সংখ্যা পাওয়া যাওয়ার সুযোগ কম বলেই মনে করছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন।
প্রথম দিকে পাখির মতো মানুষ মেরেছে, হাসিনা সরকারের বাহিনী ও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগ।
এছাড়াও ঢাকায় ভাসমান জনগোষ্ঠী আছে। তাদের শনাক্ত করতে সময় লাগবে। ফলে প্রকাশিত কোনো সংখ্যাই হয়তো বা সঠিক না হতে পারে বলে মনে করেন এই মানবাধিকারকর্মী।

নিহতদের তালিকা করা কেন জরুরি?
বিচারপ্রাপ্তি, ইতিহাসের প্রয়োজন এবং পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে নিহতদের তালিকা থাকা দরকার বলে মনে করেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। অর্থাৎ মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার বিচার করতে চাইলে নিহতদের সম্পর্কে জানা জরুরি বলেই মনে করেন তিনি।
দ্বিতীয়ত ইতিহাসের প্রয়োজনে তথ্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এত বড় নির্মমতা হয়ে গেল এখানে, কত মানুষকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হলো সেটি জানাটা আমাদের দরকার, বলেন এই মানবাধিকারকর্মী।
নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হলেও এই তালিকা লাগবে বলে মত তার। সেক্ষেত্রে কাজ শুরুর পর এক থেকে দেড় মাসের মতো সময় লাগতে বলে ধারণা করেন মি. লিটন।


আরো সংবাদ



premium cement