২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সারা দেশে ছাত্র-জনতার বিজয় : হামলা, ভাঙচুর, আগুন নিহত ৩১, আহত ৮১৭

ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ
-


বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘লং মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি এবং শেখ হাসিনার দেশ থেকে পলায়নের ঘটনায় গতকাল সারা দেশে বিজয় উল্লাস হয়েছে। এ সময় দীর্ঘ দিন ভোগান্তিতে থাকা বিক্ষুব্ধ জনতা আওয়ামী লীগের অফিস, সরকারি স্থাপনা, আওয়ামী নেতাদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। গতকাল সকালে কারফিউ ভেঙে মানুষ ঢাকা অভিমুখে রওনা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এসব সংঘর্ষে ৩১ জন নিহত, ৮১৭ জন আহত হয়। নিহতদের মধ্যে একজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৬০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
কাদেরের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ নোয়াখালীতে সংঘর্ষ পুলিশসহ নিহত ৪
নোয়াখালী অফিস জানায়, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানায় হামলা চালায় কিছু যুবক। এ সময় পুলিশের সাথে যুবকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে যুবকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পুলিশও গুলি চালায়। এতে পুলিশসহ চারজন নিহত এবং আহত হয় অর্ধশত জনতা। এ ছাড়া সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয় ।

জানা গেছে গত কাল সোমবার বিকেল ৪টায় সোনাইমুড়ী থানায় আ’লীগ নেতাদের সাথে ওসি মিটিং করছে বলে একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় জনতা থানায় গিয়ে আ’লীগ নেতাদের বের করে দেয়ার জন্য বলেন। পুলিশ বলে এখানে কেউ নেই। পরে জনতা থানায় হামলা চালায়। এ খবর চার দিকে ছড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক বেগমগঞ্জ ও মাইজদী থেকে ট্রাকভর্তি কয়েক হাজার জনতা থানায় যান। রাত ৮টায় থেমে থেমে ইটপাটকেল ছুড়ে মারেন পুলিশ গুলি চালায় । এ সময় পুলিশের এসআই জাহাঙ্গীরসহ চারজন নিহত হয়। এতে অর্ধশত জনতা আহত হন। এ দিকে বিকেলে একদল জনতা সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের গ্রামের বাড়ি কোম্পানিগঞ্জে আগুন লাগিয়ে দেয়।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে নগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে বিজয়মিছিল থেকে ছাত্র-জনতা দারুল ফজল মার্কেটের কার্যালয়টিতে আগুন দেয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা সিটি মেয়র মো: রেজাউল করিম চৌধুরীর বহদ্দারহাটের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। রাউজানের এমপি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর পাথরঘাটার বাসায়ও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানোর ঘটনায় বন্দরনগরী চট্টগ্রামে নারী-পুরুষ-শিশুসহ পরিবারের সব সদস্যরা একযোগে জাতীয় পতাকা হাতে নেমে এসেছেন রাস্তায়। মানুষের চোখে মুখে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, যেন যুদ্ধ জয়ের আনন্দ। ১৬ বছর পর মানুষ যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে রাস্তায় বেরিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন মিলিতভাবে।
সরেজমিন দেখা যায়, চট্টগ্রামের সড়কে সড়কে মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে হাজার হাজার মানুষ। বেলা ৩টার দিকে ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, বায়েজিদ, জিইসি, আগ্রাবাদ, এ কে খান, কাজীর দেউড়ি, প্রবর্তক, চকবাজার, জামালখান, নিউমার্কেট মোড়সহ নগরীর সব অলিগলি জাতীয় পতাকাবাহী মানুষে ছেয়ে গেছে। কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অটো রিকশায় চড়ে জাতীয় পতাকা হাতে উল্লাস করছেন, কেউ গাড়িতে জাতীয় পতাকা মুড়িয়ে আনন্দ প্রকাশ করছেন, আবার অনেকে সম্মিলিতভাবে উল্লাস মিছিল করছেন, কেউবা পটকা ফুটিয়ে মেতে ছিলেন সড়কে সড়কে। মাঝে মাঝে সেনাবাহিনীর গাড়ি টহল দিতে দেখা যায়, তবে পুলিশের উপস্থিতি কোথাও চোখে পড়েনি। এ সময় উল্লাসরত মানুষগুলোর মুখে ধ্বনিত হচ্ছিল- ‘পালাইছেরে পালাইছে, শেখ হাসিনা পালাইছে,’ ‘পালাইছেরে পালাইছে, ভারতে পালাইছে’ ইত্যাদি সে্লাগান। এ সময় ছাত্র-জনতা নগরীর বিভিন্ন স্থানে শেখ মুজিবুর ছবি ও মুর্যাল ভাঙচুর করে।

এ দিকে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় কে বা কারা গতকাল বিকেলে হামলা চালিয়েছে। গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হামলাকারীরা থানার ভেতরে আগুন দেয় এবং গাড়ি ভাঙচুর করে। একইসময়ে দামপাড়া পুলিশ লাইনে ভাঙচুরের খবর মিলেছে।
নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীতে আনন্দ মিছিল এবং জেলার বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘেটেছে। লুটপাট হয়েছে আ’লীগ নেতাদের বাড়িঘরে।
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর প্রচারের পরপরই শহরের বিভিন্ন সড়কে হাজার হাজার মানুষ আনন্দ মিছিল বের করে।
এ দিকে নরসিংদী সদরে জেলা আওয়ামী লীগ অফিস, হাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ি ও হাজীপুরে নন্দ বেকারিতে ব্যাপক ভাঙচুর, হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। আওয়ামী লীগ নেতা দিপক সাহারবাড়ি, এস এম কাইয়ুমের বাড়ি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনির হোসেনের ব্যক্তিগত অফিসসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতার বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন ও নরসিংদী প্রেস ক্লাবের সামনেসহ বিভিন্ন স্থানে শেখ মুজিবুর রহমানের মুর্যাল ভেঙে ফেলা হয়।

সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, সাভারে গতকাল সোমবার মিছিল নিয়ে উল্লাস করে নারী, পুরুষ, রাজনৈতিক, ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ। মিছিলে অংশগ্রহণ করা বলছেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ আমরা দেখিনি, আমরা আজ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের অনির্বাচিত সরকার শেখ হাসিনার অত্যাচার আর নির্যাতন থেকে মুক্ত হতে দেখিছি।
সবাই এ সময় হাতে লাল-সবুজ পতাকা হাতে নিয়ে এই মাত্র খবর এলো বাংলাদেশ স্বাধীন হলো- পালাইছেরে পালাইছে শেখ হাসিনা পালাইছে, হই-হই রই-রই শেখ হাসিনা গেল কই, স্বৈরাচারের পতন হলোসহ নানা স্লোগানে মুখরিত করে তোলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক।
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য রমেশ সেনের ঠাকুরগাঁও শহরের কলেজ পাড়ার বাসায় সোমবার বিকেলে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা।

কুষ্টিয়ায় নিহত ৬
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানায়, কুষ্টিয়ায় বিজয়ের পরেই পুলিশের গুলিতে ছয়টি প্রাণ ঝরে গেল। জেলাবাসীর বিজয়ের আনন্দে বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে। সময়টা দুপুর ২টা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মডেল থানার সামনে বিজয় মিছিল করছে। বিক্ষুব্ধ আন্দোলনাকরীরা পুরো থানা ঘিরে ফেলে। এমন সময় পুলিশকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে সেনাবাহিনী ও বিজিবি। বিজিবি কর্মকর্তা পুলিশকে নিরস্ত্র জনগণের ওপর গুলি করতে নিষেধ করে অস্ত্র সমর্পণ করতে বলে জনগণকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশ-সেনা ও বিজিবি কর্মকর্তাদের কথা অমান্য করেই নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করতে থাকে। এ সময় পুলিশের গুলিতে অসংখ্য মানুষ আহত হয়। শিক্ষার্থীরা প্রাণ ভয়ে আড়ালে গেলেও ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ নির্বিচারে গুলি করতে করতে করতে তারা এনএসরোড হয়ে পুলিশ লাইনের দিকে পালাতে থাকেন। এতেই ছয়টি তাজা প্রাণ ঝরে গেল কুষ্টিয়ায়। এ সময় হাসপাতালে শতাধিক গুলিবিদ্ধকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক ও নার্স এবং শিক্ষার্থীরা তাদের চিকিৎসা-কাজে সহযোগিতা করতে থাকেন। হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান শহরের থানাপাড়ার লোকমানের ছেলে আব্দুল্লাহ-১৪, রিকশাচালক হরিপুরের মিন্টু-৫৫। বাকি নিহতেদের নাম পাওয়া যায়নি। এ দিকে পুলিশের গুলিতে আহত শতাধিক মানুষের মধ্যে ছাত্র-শিক্ষক ও সাংবাদিক রয়েছে।

নাঙ্গলকোটে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ
নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, লং মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচির সময় গতকাল সোমবার কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। এ সময় নাঙ্গলকোট রেল স্টেশন, নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান বাড়ি, পৌর মেয়রের বাড়ি, উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়াও নাঙ্গলকোট থানায় ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
সকাল ৯টা থেকে হাজার-হাজার আন্দোলনকারী নাঙ্গলকোট উপজেলা সদরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। দুপুর ১২টার দিকে নাঙ্গলকোট রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মীদের ছোড়া পাথরের আঘাতে আন্দোলনকারী এক ছাত্র আহতের ঘটনার জেরে আন্দোলনকারীরা প্রথমে নাঙ্গলকোট রেল স্টেশনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নাঙ্গলকোট পৌর মেয়রের বাসভবনে অবস্থিত পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ও মেয়রের বাস ভবন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শামছুউদ্দিন কালুর বাসভবন, উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। বিকেলে আন্দোলনকারীরা নাঙ্গলকোট থানায় ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করে এবং থানায় থাকা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে যায়।

বিকেলে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে হাজার হাজার জনতা উপজেলা সদরে উপস্থিত হয়ে আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ ও শোকরানা নামাজ আদায় করেন।
ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে গতকাল দুপুরে বিভিন্ন স্লোগানে ঢাকা-টাঙ্গাইল-জয়দেবপুর-জমালপুর মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় আ’লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল প্রতিহত করতে গেলে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতাদের সাথে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষে আ’লীগের দুই কর্মী আহত হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। অফিসে থাকা তিনটি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়ে যায়।

গলাচিপায় আ’লীগ অফিসে আগুন ও এমপির বাসা ভাঙচুর
গলাচিপা (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই গলাচিপায় ছাত্র-জনতা একত্র হয়ে আনন্দ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মুহূর্তের মধ্যে এতে হাজার ছাত্র-জনতা যোগ দেয়।
এ ছাড়া গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর এবং আগুন দেয়া হয়। এ ছাড়া পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদার পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের ফিডার রোডের বাসা ভাঙচুর করা হয়েছে। ভাঙচুর করা হয় রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু মিয়ার বাসায় হামলা করা হয়। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা গেছে।

রাজশাহীতে সংঘর্ষ : নিহত ১, আহত ৫০
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, গতকাল রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে এক যুবক নিহত ও অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৪০ জনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এদিকে অপর এক সূত্র জানায়, নগরীর শাহ মখদুম কলেজসংলগ্ন এলাকায় আন্দোলনকারী এক
যুবককে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এছাড়া যুবক নিহতের বিষয়টি পুলিশের তরফ থেকেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ শংকর কে বিশ্বাস গণমাধ্যমকে জানান, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪০ জনের মধ্যে ৩৭ জন এসেছেন রাজশাহী মহানগর থেকে। আর তিনজন এসেছেন জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা থেকে। ভর্তি হওয়া ৪০ জনের মধ্যে ৩০ জনই গুলিবিদ্ধ।

সিলেটে ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ
জৈন্তাপুর (সিলেট) সংবাদদাতা জানান, শেখ হাসিনার পদত্যাগের ও দেশ ছেড়ে পালানোর খবর ছড়িয়ে পড়লে সিলেটে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে সিলেটে উচ্ছ্বসিত জনতা রাস্তায় নেমে আসে। এ সময় সিলেটের সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়িসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে একদল ব্যক্তি সিলেটের সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালানো হয়। সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। এতে ৪ পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন এবং একজন বাবুর্চী গুরুতর আহত হয়ে একটি হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন।
এদিকে নগরের শাপলাবাগ এলাকায় প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর বাসভবন ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

এ ছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, গোপালটিলা এলাকায় অবস্থিত সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) রণজিত চন্দ্র সরকার এবং সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সহসভাপতি আসাদ উদ্দিনের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালায়। এ ছাড়া বন্দরবাজার এলাকায় অবস্থিত সিলেটে পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়, বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, লালাবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমেদের বাসা, কাউন্সিলর লায়েক আহমেদের বাসাসহ নগরীর বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশের বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ও একটি পিকআপ ভ্যান পুড়িয়ে দেয়।

সোনারগাঁওয়ে আ’লীগ কার্যালয় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন
সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও আওয়ামী লীগ নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষ্কর্য ও যুবলীগ নেতার বাড়িঘর ভাঙচুর ও শ্রমিক নেতাসহ দুজনকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। এ ছাড়া জনতা এ সময় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুটপাট করে।
মেহেরপুরে জনপ্রশাসন মন্ত্রীর বাড়ি ও আ’লীগ অফিস ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ
মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, মেহেরপুরে বিজয় মিছিল ও সমাবেশ শেষে মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্যের বাড়ি ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এর আগে জেলা আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর করে সেখানে আগুন লাগানো হয়। একই সময়ে মেহেরপুর কমিউনিটি সেন্টারের সামনের একটি সুপার শপ ভেঙে মালামাল লুটপাট করে জনতা।

সিলেটজুড়ে ভাঙচুর লুটপাট হামলা
দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সাথে সাথে সিলেটজুড়ে চালানো হয়েছে ধ্বংসযজ্ঞ। গতকাল বেলা ২টার পর থেকে নগরজুড়ে আনন্দ উল্লাসের পাশাপাশি অতিউৎসাহী জনতা কর্তৃক ডিসি অফিস, এসপি অফিস, সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, নগরীর কোতোয়ালি থানাসহ বিভিন্ন থানা ও সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিভিন্ন সরকারি অফিসে চলে আসবাবপত্র লুটপাট।
এ দিকে আওয়ামী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বাসা-অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর বাসভবন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের বাসভবন, মাহিউদ্দিন আহমদ লোকমানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মাহা’সহ বিভিন্ন অফিসে হামলা ও লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে।

ভালুকায় বিজিবির গুলিতে নিহত ২, আহত ১০
ভালুকা (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, বিজিবির গুলিবর্ষণে ইনতিশার (২২) ও মাসুম বিল্লাহ (২৪) নামে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল ভালুকা সরকারি হাসপাতালে আনার পর ডাক্তার তাদের মৃত ঘোষণা করেন। বিকেলে গাজীপুর জেলার মাওনা এলাকায় মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় বিজিবির গুলিতে তারা আহত হলে স্থানীয়রা তাদের ভালুকা হাসপাতালে নিয়ে আসছিলেন।
জানা যায়, গতকাল রোববার বিকেলে আবু বকর সিদ্দিকসহ বেশ কয়েকজন লোক ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ৮-১০ জনকে নিয়ে আসেন। পরে হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার ইনতিশার ও মাসুম বিল্লাহকে মৃত ঘোষণা করেন।

খুলনার সর্বত্র আনন্দ উৎসব
খুলনা ব্যুরো জানায়, শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে যাওয়ার খবর জানার পর খুলনা মহানগরীর মানুষের মধ্যেও বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস দেখা যায়। গতকাল সোমবার সকাল ১১টার দিকে শিবাড়ি মোড়ে শিক্ষার্থীরা জমায়েত হয়। এরপর থেকে সেখানে জনসমাগম বাড়তে থাকে। বিকেলে বৃষ্টির মধ্যেই খুলনার শিববাড়ি মোড়ে দুই রাকাত শোকরানার নামাজ পড়েন উপস্থিত মানুষের একাংশ। তারপর হাজার হাজার মানুষ রাজপথে অবস্থান নিয়ে বিজয় উল্লাস শুরু করেন অসংখ্য মা-বাবা তাদের সন্তানদের নিয়েও হাজির হন বিজয় উৎসবে যোগ দিতে। ক্রমান্বয়ে সারা শহরে আনন্দ মিছিল শুরু হয়। এরই মধ্যে কিছু মানুষকে মহল্লায় মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় লোকদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর এবং লুটপাট চালাতেও দেখা যায়।
ময়মনসিংহ অফিস জানান, ময়মনসিংহ নগরী গতকাল ছাত্র-জনতার আনন্দ আর উল্লাসের নগরীতে পরিণত হয়। সোমবার বেলা ৩টার দিকে ছাত্র-জনতা নগরীর টাউনহল মোড়ে খণ্ডখণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হন। বিক্ষিপ্তভাবে হাজারো ছাত্র-জনতা আনন্দ মিছিল নিয়ে নগরীজুড়ে উল্লাস করে।

বিভিন্ন স্থানে মিষ্টিও বিতরণ করা হয়েছে। এদিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদ, ময়মনসিংহ মহানগর সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্ত, সিটি মেয়র ও মহানগর আ’লীগ সভাপতি ইকরামুল হক টিটু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র আসিফ হোসেন ডনের বাসা, আ’লীগ কার্যালয়, সার্কিট হাউজসংলগ্ন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, রাইফেলস ক্লাব, মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নওশেল আহমেদ অনির বাসায় আগুন, ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। এ ছাড়া মুক্তাগাছায় পৌর মেয়র বিল্লাল হোসেন সরকারের পেট্রল পাম্প ও বাসায় আগুন, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মাহবুবুল আলম মনির বাসায় অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে।
বগুড়া অফিস জানান, শেখ হাসিনার পতনের পর আনন্দ উল্লাস করেছে বগুড়াবাসী । মুহূর্তেই শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় মানুষের ঢল নেমে আসে। বিভিন্ন নারী পুরুষ, শিশু বৃদ্ধ যার হাতে যা ছিল তাই বাজিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেছেন। এখানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আনন্দ প্রকাশ করতে আসেন অনেকে।

এদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বগুড়া শহর কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে তাৎক্ষণিক সমাবেশ করেন। সমাবেশ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিও। দুই দলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তোলে ওই এলাকা। বিকেল হওয়ার সাথে সাথে প্রত্যেক বাড়ি থেকে মানুষ বিজয় উল্লাসের জন্য রাস্তায় নেমে আসেন। শিক্ষার্থীরা একটি বড় সাইজের জাতীয় পতাকা মাথার উপর বিছিয়ে পুরো শহর প্রদক্ষিণ করে। সবার মুখে মুখে আনন্দের ছাপ।
তবে সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনে ক্ষোভেরও প্রতিফলন ঘটেছে। সদর থানাসহ বেশ কিছু সরকারি অফিসে ভাঙচুর এবং আগুন দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। বিকেল ৫টার পর থেকে আন্দোলনরতরা বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়িতে প্রবেশ করে ভাঙচুর এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর পাশেই পুলিশ প্লাজায় প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর করে। সন্ধ্যায় বগুড়া সদর থানায় হামলা চালায় তারা।
কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, শেখ হাসিনা পালানোর খবরে বিজয় উল্লাস হয়েছে কুমিল্লায়। অনেকে বিতরণ করেন মিষ্টি। বাবা-মায়ের সাথে এসেছে ছেলেমেয়ে। বন্ধুরা এসেছে কপালে জাতীয় পতাকা বেঁধে। মুখে পলাইছেরে পলাইছে, শেখ হাসিনা পালাইছে স্লোগান। মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত হয়ে উঠে নগরীর আকাশ।

নোমান হোসেন নামের একজন বলেন, বন্দী ছিলাম। এখন মুক্ত হয়েছি। আমাদের ছাত্রজনতা রক্তের বিনিময়ে দেশটাকে স্বাধীন করল। ছেলেমেয়ে সব নিয়ে মিছিল দেখতে এসেছি। এই জয় উল্লাসে অংশ না নিলে নিজেকে অপরাধী মনে হবে।
এ দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা রামঘাট মহানগর আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। নগরীর মুন্সেফবাড়ি এলাকায় সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। হামলা হয় পুলিশ লাইনে।
পাবনা প্রতিনিধি জানান, পাবনায় বিজয় উল্লাস মিছিল করছে সর্বস্তরের সাধারণ জনগণ। এসময় আব্দুল হামিদ রোডের সব মিষ্টির দোকান ভেঙে জনতার মধ্যে সব মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শহরের, টার্মিনাল থেকে শুরু করে অনন্ত মোড় হয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে বের হয় জনতা। ট্রাফিক মোড়ে লাখো জনতার সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

নেত্রকোনায় বিজয় উল্লাস
নেত্রকোনা প্রযতিনিধি জানান, জনরোষের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পলায়ন ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পতনে নেত্রকোনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলামসহ সর্বস্থরের নারী-পুরুষ বিজয় উল্লাস করেছে। গতকাল বিকেলে আওয়ামী লীগের পতনের সংবাদ প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে শতসহস্র ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসে। নানান ধরনের স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় বিভিন্ন বাসা, বাড়ি থেকে গৃহবধূরা হাত নারিয়ে অভিনন্দন জানান। এছাড়া ছাত্র, জনতা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ নেতাকর্মীদের বাসা, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করেন।

ফেনী অফিস : ফেনী জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর মাস্টারপাড়ার বাগানবাড়ি, লমি হাজারী বাড়ীর ভোট কাছারিসহ তিনটি বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। একই সময়ে ফেনী পৌরসভা ভবন, বাঁশপাড়ার উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীলের ব্যক্তিগত কার্যালয় আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, গালর্স ক্যাডেট কলেজ সংলগ্ন ফেনী-১ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়।
এ দিকে ফেনী মডেল থানা, দাগনভূঞা ও ছাগলনাইয়া থানায় অগ্নিসংযোগ করে জনতা। দাগনভূঞা থানা সূত্র জানায়, সরকারি দু’টি জিপগাড়ি ও চারটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়। এ সময় ডিউটি অফিসারের কক্ষসহ বেশ কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। হামলায় ওসি আবুল হাসিম ও কনস্টেবল রফিক আহত হন।

ছাগলনাইয়ায় পুলিশের গুলিতে শিশুর মৃত্যু, থানা ভস্মীভূত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে ছাগলনাইয়া থানায় হামলার চেষ্টা করে বিক্ষুব্ধ জনতা। পুলিশ হামলাকারীদের নিয়ন্ত্রণে গুলি ছোড়লে ১১ বছর বয়সী এক শিশু মারা যায়। পরবর্তীতে বিক্ষুব্ধ জনতা থানায় প্রবেশ করে হামলা-ভাঙচুর চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। এতে থানা ভস্মীভূত হয়ে যায়।
উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে আওয়ামী সরকারের পতন হয়েছে। এতে ছাত্রদের সাথে নিয়ে উখিয়া উপজেলা বিএনপি আনন্দ মিছিল করেছে। উখিয়া সদর স্টেশনে মিছিলটি দক্ষিণ স্টেশনের দিকে গেলে ফলিয়াপাড়া থেকে আসা আওয়ামী সমর্থিত লোকজনের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোলতান মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ বিজয় মিছিলে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দেয়া দুষ্কৃতকারীরা আমাদের দলীয় অফিস ভাঙচুর করে এবং সিরাজ সওদাগরের দোকান ভাঙচুর ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। সিরাজ সওদাগর বলেন, ফলিয়াপাড়ার লোকজন আমার দোকানে এসে ভাঙচুর ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ দিকে উখিয়া সদর রাজাপালং ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শালা উদ্দিন বলেন, আমার বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও আমার মালিকানাধীন এনজিওর অফিস ভাড়া বাসায় ভাঙচুর ও ১৫টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা।

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, সারা দেশের মতো মৌলভীবাজারে বিজয় মিছিল করেছে সাধারণ জনতা। বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণ করেন ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক, পেশাজীবী, ব্যবসায়ীসহ সর্বসাধারণ। এ সময় তারা উল্লাসে মেতে উঠেন। কেউ সড়কে সেজদা দিয়ে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানায়।
মৌলভীবাজার চৌমুহনা এলাকার মিষ্টি দোকানগুলোতে অল্পক্ষণের মধ্যে মিষ্টি শেষ হয়ে যায় বলে জানান ব্যবসায়ীরা। আনন্দে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা এ সময় ক্ষোভে ভাঙচুর করেন জেলা পরিষদের বিভিন্ন স্থাপনা, বঙ্গবন্ধুর মোরাল, পুলিশ ক্লাব, ডিসি আফিসের প্রধান ফটক, স্থানীয় সংসদ সদস্য এর অফিস। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় রাত পর্যন্ত চলছে আনন্দ মিছিল মিষ্টি বিতরণ। বিছিন্নভাবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলার খবর পাওয়া গেছে।

টাঙ্গাইলে পুলিশের গুলিতে নিহত ৩
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলে পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা সবাই শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল সদর থানায় দু’জন এবং বিকেলে ধনবাড়ীতে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ সময় অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। তাদের টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, গুলিবিদ্ধ দু’জনের লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং আহতদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

বানিয়াচঙ্গে থানায় হামলা, গুলিতে ৭ জন নিহত
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানায় হামলার ঘটনায় গুলিতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- বানিয়াচং উপজেলার যাত্রাপামা গ্রামের শানু মিয়ার ছেলে হাসান মিয়া (১২), মাইজের মহল্লা গ্রামের আবদুন নূরের ছেলে আশরাফুল মিয়া (১৭, জাতুকর্ণপাড়া গ্রামের আবদুর রউফের ছেলে নয়ন মিয়া (১৮), কামালখানী গ্রামের নয়ন মিয়া (১৮), পূর্বপাড় গ্রামের ধনাই উল্লাহর ছেলে সাদিকুর রহমান (৩০) এবং পাড়াগাঁও গ্রামের শমসের মিয়ার ছেলে মোজাক্কির মিয়া (৪০)। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে আনা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সোমবার সকালের দিকে আওয়ামী লীগ নেতা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হায়দারুজ্জামান ধন মিয়া, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল মিয়ার নেতৃত্বে বানিয়াচং উপজেলা সদরে একটি শোডাউন করা হয়। এ সময় আন্দোলনকারীদের সাথে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা থানায় হামলা করলে পুলিশ গুলি ছুড়তে থাকে। আন্দোলনকারীরা থানায় ভাঙচুর করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। গুলিতে উল্লিখিত ছয়জন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। আহত হয়েছে একশরও বেশি। উত্তেজিত জনতা হায়দারুজ্জামান ধন মিয়ার বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এ দিকে আন্দোলনকারীদের সাড়ে ৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও হবিগঞ্জ সদর আসনের এমপি মো: আবু জাহিরকে তার হবিগঞ্জ শহরের বাসা থেকে উদ্ধার করে সার্কিট হাউজে নিয়ে আসে। এর আগে আবু জাহিরের বাসার সামনে গুলিতে রিপন শীল নামের এক যুবক নিহত হয়। পরে নিজের হেফাজতে যান আবু জাহির। উত্তেজিত জনতা আবু জাহিরের বাসার সব আসবাবপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়। সোমবার বিকেলে বৃষ্টিতে ভিজে হাজার হাজার জনতা হবিগঞ্জের রাস্তায় বিজয় মিছিল করে।

ফরিদপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত ১, থানায় হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ
ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুরে কোতোয়ালি থানায় হামলার ঘটনায় থানায় অবরুদ্ধ পুলিশেরা থানা থেকে বের হওয়ার সময় টিয়ারশেল ও গুলিবর্ষণ করলে কমপক্ষে একজন নিহত ও আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরে থানা ছেড়ে পুলিশ বেরিয়ে গেলে থানা ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর ও কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
গতকাল সোমবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার খবরে দুপুরের পর থেকেই ফরিদপুর শহরের জনতা ব্যাংকের মোড়ে হাজারো ছাত্রজনতা বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিজয় উল্লাসে জড়ো হয়। বিকেল ৫টার দিকে সেখানে উপস্থিত একটি দল পাশেই অবস্থিত কোতোয়ালি থানায় হামলার চেষ্টা করে। এ সময় সেখানে উপস্থিত জেলা বিএনপির সদস্য সচিব একে কিবরিয়া স্বপন, যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন জুয়েলসহ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল ও যুবদলের নেতারা তাদের থানায় হামলা থেকে বিরত রাখার জন্য প্রায় আধঘণ্টা ধরে চেষ্টা চালায়। তাদের অনুরোধ উপেক্ষা করেও থানার দিকে ইটপাটকেল রুড়তে থাকলে সেখানে অবরুদ্ধ পুলিশ টিয়ার শেল ও চাইনিজ রাইফেলের গুলিবর্ষণ করে তারা থানা থেকে বেরিয়ে পুলিশ লাইন্সে চলে যায়। এ সময় টিয়ারশেল ও মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণে হামলাকারীরাসহ বিজয় উল্লাসে সমবেতরা মুহূর্তের মধ্যে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় থানার সামনে বাদামপট্টি সড়কে একজন মধ্য বয়সী ব্যক্তির চোখ ভেদ করে মাথা দিয়ে গুলি বেরিয়ে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ ছাড়া গুলিতে ছাত্রদল নেতা ভিপি ইউসুফ, বিএনপি নেতা ওবায়দুল কাদেরসহ প্রায় সাতজন গুলিবিদ্ধ হন।
পরে থানা ছেড়ে বেরিয়ে গেলে কোতোয়ালি থানায় আবারো হামলা করে ভাঙচুর ও সেখানে থাকা গাড়ি ও অন্যান্য জিনিসপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

সাভারে সংঘর্ষে নিহত ৪ আহত ৩ শতাধিক
সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, সাভারে পুলিশের সাথে গতকাল সোমবার আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে এক নারীসহ চারজন নিহত ও তিন শতাধিক আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে সাভার প্রেস ক্লাবের সদস্য ও স্থানীয় মাছরাঙা টেলিভিশনের সাভার প্রতিনিধি সৈয়দ হাসিবুন নবীসহ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন শতাধিক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা লং মার্চ-ঢাকা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে তাদের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলো গুলিতে নিহত রমজান আলী (৩৫)। তার বুকের বাম পাশে গুলি লেগেছে। সে আশুলিয়ার বাইপাইল মৎস্য আড়তে লেবারের কাজ করত। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের বলে জানা গেছে। নিহত অপর দুইজনের নাম বার্নিস মিস্ত্রি মোজাহিদ (২৮), শ্রাবণ (২২) । এ ছাড়া নিহত অপর অজ্ঞাত তরুণীর লাশ নিয়ে যান স্থানীয়রা। তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। সাভার এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি অফিসার ইউসুফ আলী তিনজনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সাভার ও আশুলিয়া। ঢাকা অভিমুখে ছাত্রজনতার ঢল মোকাবেলায় দিনভর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শেষে বেলা ৩টার দিকে পিছু হটতে শুরু করে পুলিশ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অভিমুখে যাওয়ার জন্য জমায়েত হন কয়েক হাজার আন্দোলনকারী। এ সময় বাইপাইলে তাদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ রাবার বুলেট ও গুলি ছুড়লে গুলিবিদ্ধ হন বেশ কয়েকজন। এদের মধ্যে রমজান আলী নামের এক ব্যক্তিকে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এ দিকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলে সাভারের রেডিও কলোনি ও বাজার বাসস্ট্যান্ডে সমবেত হওয়ার চেষ্টার সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে গুলি ছুড়লে সাংবাদিকসহ শতাধিক গুলিবিদ্ধ হয়।

যশোরে ব্যাপক ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ, নিহত ৫
যশোর অফিস জানায়, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর প্রচারিত হওয়ার পরপরই যশোরের রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। বিজয় উল্লাস করেন তারা। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
শহরের চিত্রামোড়ে অবস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি শাহীন চাকলাদারের ফাইভ স্টার হোটেল দি জাবির ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করেন জনতা। আগুনে ওই হোটেলে আটকাপড়া পাঁচজন মারা গেছেন। তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এ সময় দু’শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতে সহায়তা করেন। হোটেল জাবিরের ছাদ থেকে এক ব্যক্তিকে হেলিকপ্টারে উদ্ধার করতে দেখা গেছে। তবে ওই ব্যক্তির বিস্তারিত জানা যায়নি।

সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, সাভারে গতকাল সোমবার বিকেলে পুলিশের গুলিতে এক শিক্ষার্থী মারা গেছে বলে জানান নিহতের বাবা নজরুল ইসলাম। নিহত শিক্ষার্থীর নাম মো: সৈকত হোসেন (১৭)। সে বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলার উত্তর দেগলগান্ধি গ্রামের মো: নজরুল ইসলামের ছেলে। সাভার পৌর এলাকার শাহীবাগে পরিবারের সাথে ভাড়া বাড়িতে থেকে ঢাকার মিরপুর কমার্স কলেজের প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করত।
নিহতের পিতা জানান, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার খবর পেয়ে সাভারে যখন সব শ্রেণিপেশার মানুষ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসহ বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল করছিল তখন ৫.৪০ মিনিটের সময় পৌর এলাকার মুক্তির মোড়ে তার ছেলেকে পুলিশ গুলি করে। তিনি বলেন, আমার ছেলে তো কোনো দোষ করেনি, কেন আমার ছেলেকে পুলিশ গুলি করল। আমি এর বিচার চাই। রাত ১০.১৫মি. সাভার মডেল কলেজ মাঠে নিহতের নামাজে জানাজা হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement