৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

আবার রাজপথে ছাত্র-জনতা

রাজধানীর উত্তরা, খুলনা ও হবিগঞ্জে নিহত ৩ : সিলেটে গুলিবিদ্ধ ৩০, চট্টগ্রামে জনস্রোত, বহু স্থানে সংঘর্ষ
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীদের সাথে বিভিন্ন পেশার মানুষের সমাবেশ। ইনসেটে রাজধানীর উত্তরায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে হেলমেট বাহিনীর গুলি করার দৃশ্য : নয়া দিগন্ত -


শিক্ষার্থী হত্যার বিচার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে গতকাল আবারো উত্তাল হয়ে ওঠে রাজপথ। এদিন বৃষ্টিতে ভিজে সারা দেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসে। পরিবারের সব সদস্যকে নিয়েও অনেককে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা গণমিছিলে উপস্থিত হতে দেখা যায়। তবে বেশ কিছু স্থানে সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। রাজধানীর উত্তরায় পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুলি, টিয়ার শেলে কমপক্ষে শতাধিক ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ দু’জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে। এর মধ্যে একজনের মৃত্যুর খবর বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর জাতীয় প্রেস ক্লাব, বায়তুল মোকাররম, পল্টন, হাইকোর্ট, শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, উত্তরা, বাড্ডা আফতাবনগরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নানা বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশুরা বিক্ষোভে রাজপথে ফেটে পড়েন। তাদের সাথে যুক্ত হন শিক্ষক-চিকিৎসক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের অংশগ্রহণ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের নিয়ে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে অলিগলি। পুলিশের সাঁজোয়া যান এপিসি দখলে নিয়ে লাল রঙে লিখে দেয়া হয় ‘ভুয়া’। উত্তরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে গুলি, টিয়ার শেল সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পুলিশ। হবিগঞ্জে শিক্ষার্থীদের সাথে সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে এক বিদ্যুৎশ্রমিক নিহত হয়েছেন। খুলনায় সংঘর্ষে এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত ও অর্ধশতাধিক ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সিলেট নগরী দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। লক্ষ্মীপুরে ক্ষমতাসীন দলের হামলার সময় উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়িচালককে শটগান হাতে দেখা গেছে। চট্টগ্রামের রাস্তায় বৃষ্টিতে ভিজে শিক্ষার্থীদের সাথে অভিভাবক ও সাধারণ মানুষের জনস্্েরাত নামে।

উত্তরায় গুলি টিয়ার শেল, ২ জন গুলিবিদ্ধ : উত্তরায় পুলিশ ছাত্রলীগ যুবলীগের সাথে চতুর্মুখী সংঘর্ষে কমপক্ষে অর্ধশতজন আহত হয়েছে। ইনডিপেডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র তাহমিদ হুজাইফা ও লন্ড্রি ব্যবসায়ী দুলাল হাওলাদার গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পুলিশ ও হেলমেট বাহিনীর তীব্র গুলি, টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে আবারো প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা উত্তরা। ১০ নম্বর সেক্টর থেকে শুরু করে ১৩ নম্বর সেক্টর পর্যন্ত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ ছাত্রলীগ যুবলীগের ত্রিমুখী আক্রমণের শিকার হন নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীরা। এতে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন।
প্রথমে সকালে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। তাদের সাথে যুক্ত হন সাধারণ মানুষ। সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যেই ভরে যায় প্রতিষ্ঠানটির সামনের সড়ক। শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিল, স্লোগান, বক্তৃতা। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে শিক্ষার্থী অভিভাবকদের উপস্থিতি। যোগদেন শিক্ষকবৃন্দ। দুই ঘণ্টাব্যাপী এই বিক্ষোভের কারণে সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্লোগান দিতে থাকে ‘তোমার কোটা তুমি নাও, আমার ভাইকে ফিরিয়ে দাও’, ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই,’ ‘সামনে আসছে ফাল্গুন, আমরা হবো দ্বিগুণ’ ইত্যাদি। সকালে বক্তৃতায় শিক্ষার্থীরা বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলেন তারা। কিন্তু সেখানে কোনো প্রকার উসকানি ছাড়াই ছাত্রলীগ হামলা চালায়। পরে পুলিশ তাদের আন্দোলন দমানোর জন্য গুলি চালিয়ে নির্বিচারে অসংখ্য শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। হত্যার পর বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তারা যেকোনো মূল্যে এ ধরনের অন্যায় বন্ধের দাবি জানান। শিক্ষার্থীদের সাথে সমাবেশে অংশ নেন কলেজের অনেক শিক্ষক ও অভিভাবক। তারাও শিক্ষার্থীদের সাথে স্লোগান ধরেন। তারা বলেন, এ ধরনের অন্যায়ের বিচার চাই। তাই বৃষ্টি উপেক্ষা করেই মেয়ের সাথে কর্মসূচিতে এসেছি।’ বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সেখানে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

জুমার নামাজের পর রণক্ষেত্রে পরিণত হয় উত্তরা। আশপাশে থাকা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ১০, ১১ ও ১৩ নম্বর সেক্টরে অবস্থান নেন। হাজার হাজার শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার মানুষ জড়ো হন তাদের সাথে। তাদের স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। ধীরে ধীরে মানুষের উপস্থিত ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এসময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে মুহুর্মুহু গুলি টিয়ার শেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। বিস্ফোরণ ঘটানো হয় সাউন্ড গ্রেনেডের। এতে করে শুরু হয় তুমুল সংঘর্ষ। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকেলে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে মাইলস্টোন কলেজের সামনে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা গণমিছিল কর্মসূচিকে সামনে রেখে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সমর্থকরা উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের জমজম টাওয়ারের সামনে অবস্থান নেন। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা মাইলস্টোন কলেজের সামনে অবস্থান নেন। বিকেল ৪টার পর আওয়ামী লীগের সমর্থকরা মাইলস্টোন কলেজের দিকে থাকা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন। বিকেল সোয়া ৪টার পর আওয়ামী লীগ সমর্থকেরা শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষ চলাকালে হেলমেট পরিহিত দু’জন ব্যক্তির হাতে অস্ত্র দেখা যায়। একজনকে গুলি ছুড়তেও দেখা যায়।

এদিকে পুলিশের বিশেষ শাখার এক কর্মকর্তা দাবি করেন, মার্চ ফর জাস্টিসের মিছিল শেষে যাওয়ার সময় উত্তরা জমজম টাওয়ার ১১ নম্বর সেক্টর এলাকায় পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (বিশেষ শাখা) একজন এসআইকে মারধর করেন আন্দোলনকারীরা। তাকে উদ্ধার করতে পুলিশ টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ছুড়ে এবং আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশের এসআইকে উদ্ধার করে হাসপাতাল পাঠানো হয়েছে। পুলিশের গোয়েন্দা শাখার আরেক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ অবস্থায় আছে। কিছুক্ষণ পরপর তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হচ্ছে। জমজম টাওয়ারের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ-আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে সেক্টরের বিভিন্ন সড়কে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছেন বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ধাওয়া শুরু করেন। এ সময় পুলিশ, শিক্ষার্থী ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করলে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষার্থীদের গণমিছিলকে কেন্দ্র করে পুরো উত্তরা এলাকায় পুলিশের অতিরিক্ত নিরাপত্তা ছিল। মিছিলের একপর্যায়ে পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশকে ফাঁকা গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে দেখা যায়। এ ঘটনায় উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর রোডে অবস্থিত ভুবন লন্ড্রি হাউজের মালিক দুলাল হাওলাদার আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাকে উত্তরার ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সায়েন্স ল্যাবরেটরি : সকাল থেকে মিরপুর রোডের ঢাকা কলেজের সামনে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় জড়ো হতে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তাদের সাথে যুক্ত হয় এলাকার নানা পেশার মানুষ। জুমার নামাজের পর শত শত বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় তারা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) গাড়ি লক্ষ্য করে বোতল নিক্ষেপ করে ভুয়া ভুয়া ধ্বনি তোলেন।
সরেজমিন দেখা যায়, জুমার নামাজের পরেই বেলা ১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ সায়েন্সল্যাব এলাকায় গণমিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইউল্যাবসহ আশপাশের এবং দূরের বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। তারা সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন। পরে বিকেল ৩টার দিকে মিছিল নিয়ে ধানমন্ডি ল্যাবএইড হাসপাতালের মোড় থেকে ঘুরে ফের সায়েন্সল্যাব সিটি কলেজের বিপরীত পাশে আসতেই দু’টি বিজিবির গাড়ি মিরপুর সড়কে দেখতে পান। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিজিবির একটি ছোট জিপ এবং বড় জিপ গাড়ি লক্ষ্য করে পানির বোতল নিক্ষেপ করেন। পরে গাড়ির ভেতরের বিজিবি সদস্যদের লক্ষ্য করেও ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেন। এসময় গাড়ির ভেতর থেকে বিজিবি সদস্যরা হাত নেড়ে শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত হতে আহ্বান জানাতেও দেখা গেছে। অবশ্য গাড়ি দু’টি বিজিবির টহল গাড়ি ছিল না। অপরদিকে সায়েন্সল্যাব মোড়ে পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করেও বোতল নিক্ষেপ এবং ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
মিরপুর ঃ রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে হতাহতের ঘটনায় দায়ীদের বিচারের দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করছেন তারা। শুক্রবার বিকেল ৫টার পর বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছাত্ররা মিরপুর অরিজিনাল ১০ থেকে ১০ নম্বর গোলচত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে পুলিশ সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে মিরপুর ১৩ নম্বর প্রধান সড়কে অবস্থান করছেন। এর বিপরীত দিকে অর্থাৎ মিরপুর ২ নম্বরের দিকে প্রধান সড়কে অবস্থান করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দুই পক্ষের মাঝে রয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। বিকেল ৬টা পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বিক্ষোভ মিছিল থেকে শিক্ষার্থীরা নানান স্লোগান দেন। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই মরলো কেন?’ সহ নানান স্লোগান দেন তারা। শিক্ষার্থীদের সাথে কোনো কোনো অভিভাবককেও বিক্ষোভ মিছিলে দেখা গেছে। ইসিবি চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। তারা গত অন্দোলন চলাকালে নির্বিাচারে চালানো হত্যাযজ্ঞের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

চিকিৎসকদের বিক্ষোভ : চলমান কোটা আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীদের ওপর নির্বিচারে গুলি করে ৮ জন নিরপরাধ শিশুসহ সহস্রাধিক মানুষকে হত্যার প্রতিবাদ ও ছাত্রছাত্রীদের ৯ দফা দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে চিকিৎসকরা। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় প্রতিকূল পরিবেশ উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের চিকিৎসক ও মেডিক্যাল-ডেন্টাল শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এই প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। রাজধানীর বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
সমাবেশে চিকিৎসকরা বলেন, আমাদের মেধাবী চিকিৎসক সজীবকে হত্যা করা হয়েছে। দেশের নানা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। তাদের বুকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তারা আরো বলেন, কেবল লোকমুখেই শুনি গণতান্ত্রিক দেশ। যে আমরা এ দেশের মালিক, কিন্তু এর প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। কিন্তু বাস্তবে আমরা নাগরিক না, আমরা এ দেশের দাস, যেখানে জীবনের কোনো মূল্য নেই।
বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ : শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ‘হত্যা ও বর্বর’ হামলার প্রতিবাদে এবং বিচারের দাবিতে গতকাল জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা ছাত্র ঐক্য। তাদের সাথে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ যোগ দেন। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে ঝটিকা মিছিল নিয়ে তারা পল্টন মোড়, প্রেস ক্লাব ও মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগের দিকে যায়। এ সময় তারা কোটা আন্দোলনে নিহতদের হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় পুলিশ বেরিকেড দিয়ে মিছিলকারীদের আটকাতে চাইলেও ব্যর্থ হয়। পরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ‘দ্রোহ যাত্রা’ সমাবেশ করতে আসা শিক্ষার্থীরাও তাদের সমর্থন দিয়ে স্লোগান দেন। এর আগে জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের সিঁড়িতে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। কিছু সময় অবস্থান নেয়ার পর তারা সমবেত হয়ে মিছিল শুরু করেন।

চট্টগ্রামে বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তায় জনস্রোত
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বৃষ্টিকে সঙ্গী করেই হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও অভিভাবক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষিত গণমিছিলে শামিল হয়েছিলেন। গতকাল জুমার নামাজের পর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের সম্মুখ থেকে শুরু হওয়া গণমিছিলে ছাত্রী ও অভিভাবকদের স্বতঃস্ফুর্ত উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তাদের চোখেমুখে নির্বিচারে ছাত্র হত্যার ক্ষোভ।
চট্টগ্রামে গতকাল সকাল থেকে ছিল টানা বৃষ্টি। আন্দরকিল্লা মসজিদ থেকে জুমার নামাজ পড়ে কয়েক শ’ শিক্ষার্থী রাস্তায় জড়ো হয়। এরপর স্্েরাতের মতো সিরাজ উদ দৌল্লা রোড, মোমিন রোড, সিনেমা প্যালেস রোড, লালদীঘি এলাকা থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে আন্দরকিল্লা এলাকা ও আশেপাশে অবস্থান নেন। মুহূর্তের মধ্যে তা জনস্রোতে রূপ নেয়।
আন্দরকিল্লা চত্বর থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে হাজার হাজার ছাত্র অভিভাবক টেরি বাজার, লালদীঘির পাড় হয়ে নিউ মার্কেট চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, আমাদের ভাইদের হত্যার বিচারসহ ৯ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। হত্যা, গ্রেফতার, হামলা ও মামলা দিয়ে এই আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। কোনো শিক্ষার্থী আক্রান্ত হলে তার পুরো পরিবারসহ শত শত শিক্ষার্থী আন্দোলনে যোগ দিচ্ছে। এরপর বেলা ৩টার দিকে নিউ মার্কেট এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে স্টেশন রোড, বিআরটিসি মোড়, কদমতলী অতিক্রম করে টাইগার পাস মোড়ে গিয়ে সমাবেশ করেন। তবে পুলিশের সাথে কোনো ধরনের সংঘর্ষ হয়নি।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সেখান থেকে মিছিল নিয়ে টাইগার পাস হয়ে ওয়াসার মোড়ে যাওয়ার সময় পথে অবস্থান নেয়া ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আন্দোলনকারীরা ধাওয়া দিলে তারা লালখান বাজারের বাগমনিরাম এলাকার দিকে পালিয়ে যান। এ দিকে শিক্ষার্থীরা বিকেলে মুরাদপুর হয়ে বহদ্দারহাট এলাকায় অবস্থান নেন।

সিলেটে শিশু ও সাংবাদিকসহ গুলিবিদ্ধ ৩০
সিলেট থেকে প্রতিনিধি জানান, গণমিছিলকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সিলেট। এ সময় পুলিশের গুলিতে এক শিশু গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী, পুলিশ, সাংবাদিক ও পথচারী আহত হয়েছেন। শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে নগরীর আখালিয়া এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের ইটপাটকেলে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। বিকেল ৪টা থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ থেমে থেমে চলে ৬টা পর্যন্ত।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গেইট থেকে ‘গণমিছিল’ শুরু হয়। মিছিলটি নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকার দিকে আসার সময় আখালিয়া পয়েন্টসংলগ্ন মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের সামনে শিক্ষার্থীরা পুলিশকে দেখে ভুয়া ভুয়া সেøাগান দিতে থাকলে পুলিশ পেছন দিক থেকে সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়তে শুরু করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে দিগি¦দিক ছুটতে শুরু করে এবং পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। এ সময় আখালিয়া থেকে পাঠানটুলা পর্যন্ত পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গুলিতে এক শিশু আহত হয় এবং অন্তত ২০ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন বলে জানা গেছে। এ সময় পুলিশ কমপক্ষে ১২ জনকে গ্রেফতার করে। তারা শিক্ষার্থী বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এ দিকে সংঘর্ষ নিয়ে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, শিক্ষার্থী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এক শিশু, শিক্ষার্থী ও পথচারীদের পাশাপাশি তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ছাড়া দৈনিক কালবেলা পত্রিকার সিলেট প্রতিনিধি মিঠু দাস জয়ও গুলিবিদ্ধ হন।

খুলনায় পুলিশ নিহত, গুলিবিদ্ধ অর্ধশতাধিক
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় শিক্ষার্থী-পুলিশ-বিজিবি সংঘর্ষে মো: সুমন নামে এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত, অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। পুলিশ শিক্ষার্থীসহ আহত হন শতাধিক। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ২৫ জন খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ও ২০ জনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে ও অনেকে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
খুলনার জিরো পয়েন্ট ও গল্লামারী মোড় এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে অসংখ্য টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা পুলিশের একটি পিকআপে আগুন ধরিয়ে দেয়।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ (রাবার বুলেট ও শটগানের ছররা) অবস্থায় সাতজনসহ ১৬ জনকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। আরো রোগী আসছিল। এ ঘটনায় পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার বেলা ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেটের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশ তাদেরকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও পরে পিছু হটে। এরপর তারা মিছিলসহকারে মজিদ সরণি হয়ে সোনাডাঙ্গা থানার দিকে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা সোনাডাঙ্গা থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তখন পুলিশ সদস্যরা থানার ভেতরে গিয়ে অবস্থান নেন।
শিক্ষার্থীরা বেলা সোয়া ৩টার দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছানোর পর পুলিশের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলে এই সংঘর্ষ। এ ছাড়া উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এ সময় নগরীর গল্লামারী থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
বিকেল ৪টার দিকে পুলিশ কিছুটা পিছু হটে। কিছু পুলিশ জিরো পয়েন্ট এলাকায় এবং কিছু পুলিশ গল্লামারী মোড়ে অবস্থান নেয়। কয়েক দফা শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পুলিশ কিছুটা পেছনে সরে আসতে বাধ্য হয়।

পরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের পর শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে নগরীর শিববাড়ী মোড়ের দিকে যেতে চাইলে সন্ধ্যা ৬টায় গল্লামারী মোড়ে আরেক দফা সংঘর্ষ হয়।
হবিগঞ্জে গুলিতে শ্রমিক নিহত : এমপির বাসায় ভাঙচুর
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জে ছাত্র-জনতার সাথে পুলিশের সংঘর্ষের সময় গুলিতে মোস্তাক আহমেদ নামের এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। মোস্তাক আহমেদের বাড়ি সিলেটের টুকের বাজার এলাকায়। নিহত মোস্তাক আহমেদ বিদ্যুতের ঠিকাদারের শ্রমিক হিসেবে হবিগঞ্জে কাজ করছিলেন। শুক্রবার বিকেলে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মোস্তাক মারা যান। ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েকশ রাউন্ড টিয়ার শেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষের সময় জেলা আওয়ামী লীগের অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস, হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু জাহির এমপির বাসভবনসহ বেশ কিছু স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। পরে হবিগঞ্জ শহরের সিনেমা হল রোডের বিএনপির একটি কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এ ব্যাপারে পুলিশ, আওয়ামী লীগ কিংবা ছাত্রদের সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। নিহত মোস্তাক আহমেদের লাশ হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্মীপুর শহরে কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ঘটেছে। এ সময় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপুর গাড়িচালকের হাতে প্রকাশ্যে একটি শটগান দেখা যায়।
শুক্রবার দুপুরে জেলা শহরের তমিজ মার্কেট এলাকায় টিপুর বাসভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ধাওয়া ও হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।
জানা গেছে, ঘটনার সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে থাকা ওই ব্যক্তির নাম মো: রাসেল। তিনি জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান টিপুর ব্যবহৃত সরকারি গাড়িচালক। জানা গেছে, অস্ত্রটি চেয়ারম্যান টিপুর নামে লাইসেন্সকৃত।
টিপু লক্ষ্মীপুরের বহুল আলোচিত সাবেক পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহেরের ছেলে। তার বড় ভাই এ এইচ এম বিপ্লব বিএনপি নেতা নুর ইসলাম হত্যা মামলার ফাঁসির আসামি ছিলেন। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক দণ্ডাদেশ মওকুফ পান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুমার নামাজ শেষে শহরের চক মসজিদ কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মিছিল করার কথা ছিল। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে ওই মসজিদে নামাজ পড়তে যান। মসজিদ থেকে বেরিয়ে তিনি মুসুল্লিদের ওপর মারমুখী আচরণ করেন এবং লোকজনকে দ্রুত স্থান ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। পরে টিপুর নেতৃত্বে যুবলীগ-ছাত্রলীগ মিছিল নিয়ে তমিজ মার্কেট এলাকায় টিপুর বাসার ভেতরে অবস্থান নেয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) হাসান মোস্তফা স্বপনের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সেখানে অবস্থান নেয়।
এ দিকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মিছিল শেষে হলে কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা বাজার ব্রিজ থেকে মিছিল নিয়ে বের হয়। মিছিলটি চকবাজার মসজিদের সামনে গেলেই শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান শুরু করে।
এতে পুলিশের বাধা ভেঙে লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া ও হামলা করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। তারাও শিক্ষার্থীদের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে। এর মধ্যে সাত-আট শিক্ষার্থীকে লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। শিক্ষার্থীদের ছোড়া ইটপাটকেলে ছাত্রলীগের দু’জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

কিশোরগঞ্জে হাজারো ছাত্র-জনতার মিছিল
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে গণমিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। জুমার নামাজের পর শিক্ষার্থীরা জেলা শহরের শহীদী মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল শুরু করেন। এতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঁচ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। যোগ দেন মুসল্লি ও অভিভাবকেরাও।
গণমিছিলটি শহরের গৌরাঙ্গবাজার মোড়, স্টেশন রোড, কালীবাড়ী মোড়, বটতলা মোড় হয়ে গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, হারুয়া, আখড়া বাজার ও ঈশাখাঁ রোড দিয়ে পুনরায় গৌরাঙ্গবাজার মোড় হয়ে ইসলামিয়া সুপার মার্কেট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
গণমিছিল শেষে ইসলামিয়া সুপার মার্কেট প্রাঙ্গণে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে কিশোরগঞ্জ জেলার প্রধান সমন্বয়কারী অভি চৌধুরীসহ কয়েকজন বক্তব্য রাখেন।

গণমিছিলে উত্তাল বগুড়া
বগুড়া অফিস জানায়, অবিরাম বৃষ্টিপাত উপেক্ষা করে হাজার হাজার ছাত্র জনতার অংশগ্রহণে বগুড়ায় হয়েছে গণমিছিল। পুলিশ কোনো বাধা না দেয়ায় কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবেই পালিত হয়। এতে সর্বস্তরের মানুষ যোগ দেন।
জুম্মার নামাজের পর খণ্ড খণ্ড মিছিলে অংশ নিয়ে ৫-৬ হাজার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় অবস্থান নেয়। এ সময় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের অবস্থান থেকে দূরে সরে গিয়ে সমাবেশের সুযোগ দেন। এ সময় সোনাবাহিনীর সদস্যদের সাতমাথা এলাকায় দেখা যায়নি। ছাত্রজনতা মিছিল শেষে প্রায় ২ ঘণ্টা শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথা স্থান করে আবার মিছিল সহকারে ফিরে যান। এ সময় ওই মিছিলে মা বাবা, ছেলেমেয়ে একই সাথে দেখা গেছে।
এ দিকে জেলার সারিয়াকান্দিতে নাশকতা ঘটানোর চেষ্টা মামলায় দুই স্কুলশিক্ষার্থীসহ তিনজনকে আটক করে বৃহস্পতিবার আদালতে প্রেরণ করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশে দুই শিশুকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। আটককৃতরা হলো-সিয়াম বাবু (১২) ও সাবিদুল ইসলাম সুপ্ত (১১)। সিয়াম সারিয়াকান্দি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র ও সুপ্ত একই বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র। এ মামলার প্রধান আসামি আব্দুল মোমিনকে (২২) আটক করা হয়েছে।

বাকৃবিতে বৃষ্টিতে শিক্ষকদের মিছিল
বাকৃবি প্রতিনিধি জানান, ছাত্রদের কর্মসূচির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বৃষ্টিতে ভিজে মিছিল করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষকবৃন্দ।
জুমার নামাজের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি ভবনের করিডোরে একত্র হন শিক্ষকবৃন্দ। এ সময় তাদের সাথে যুক্ত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী মিছিলে প্রায় ৭০ জন উপস্থিত হয়েছিলেন।
শিক্ষকরা বৃষ্টির মধ্যেই প্ল্যাকার্ড হাতে লাইব্রেরির সামনে থেকে একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয়-৭১ স্মৃতি স্তম্ভের সামনের রাস্তা দিয়ে গিয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। মিছিল শেষে বক্তব্য রাখেন বাকৃবির বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘সোনালী দল’ এর সাবেক সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া।

বরিশালে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশালে প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। জুমার নামাজের পর সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের প্রথম গেট থেকে গণমিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বৈদ্যপাড়ার মুখ হয়ে নথুল্লাবাদ গোল চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সভা করে শিক্ষার্থীরা। দেড় ঘণ্টার বেশি সময় পরে শিক্ষার্থীরা নথুল্লাবাদ থেকে গণমিছিল নিয়ে পুনরায় বিএম কলেজ অভিমুখে যাত্রা করে। পরে বিএম কলেজের মসজিদ গেটের সামনের সড়কে এসে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন এবং সংক্ষিপ্ত সভা করে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাধা প্রদান করেননি।

রামগঞ্জে আহত ১৫
রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা জানান, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে শিক্ষার্থীদের মিছিলে হামলা করেছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
অতর্কিত হামলায় দৈনিক নয়া দিগন্ত রামগঞ্জ সংবাদদাতা মো: ফারুক হোসেনসহ শিক্ষার্থী নেছার আহম্মেদ, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী নুসরাত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাহাত, মো: আতিকুর রহমান শাকিবসহ অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বিকেল ৫টায় পৌর ট্রাফিক পুলিশ বক্স চত্বরের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

নরসিংদীতে আহত ১০
নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ। এ সময় পুলিশের সামনে লাঠিপেটা করে আন্দোলনকারীদের তাড়িয়ে দেয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। জেলা আওয়ামী লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের কিছুসংখ্যক নেতাকর্মীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
পূর্বঘোষিত প্রার্থনা ও ছাত্রজনতার গণমিছিল কর্মসূচি নিয়ে বেলা ৩টার দিকে সদর উপজেলা মোড়ে নরসিংদী প্রেস ক্লাবের সামনে আসেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বেধড়ক লাঠিপেটা করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এতে কমপক্ষে ১০ জন আন্দোলনকারী আহত হন।

পাবনায় পুলিশের সহযোগিতা!
পাবনা প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে শান্তিপূর্ণ গণমিছিল করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গণমিছিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা করতে দেখা গেছে। বাদ জুমা পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নেয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তারা মহাসড়কে অবস্থান নিলে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নেয় পুলিশ, বিজিবি, ডিবি, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় পুলিশের সাঁজোয়া যানও মোতায়েন করতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করার কথা জানালে এতে সহযোগিতা করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

ময়মনসিংহে গণমিছিল সমাবেশ
ময়মনসিংহ অফিস জানান, ময়মনসিংহে ছাত্রজনতার বিশাল গণমিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নগরীর টাউন হল মোড়ে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে নানা সেøাগান দেন। বাদজুমা বড় মসজিদ থেকে ছাত্র-জনতার ব্যানারে একটি মিছিল বৃষ্টির মধ্যে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাউন হল মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে যোগ দেন। পরে হাজারো ছাত্র-জনতার বিশাল মিছিল টাউন হল মোড় থেকে বের হয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে গিয়ে সমাবেশ করে।
এ ছাড়া সকালে নগরীর মালগুদাম চত্বর থেকে ছাত্র-জনতার দ্রোহযাত্রা শুরু হয় টাউন হলে গিয়ে শেষ হয়। এতে শিক্ষার্থী-শিক্ষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক কর্মী, চিকিৎসক, আইনজীবী ও প্রকৌশলীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

ফেনীতে গণবিক্ষোভ
ফেনী অফিস জানায়, ফেনীতে তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করেই গণমিছিল কর্মসূচি পালন করেছেন ছাত্রজনতা। শুক্রবার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে শহরের শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কের জহিরিয়া মসজিদের সামনে থেকে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে মিছিল নিয়ে ট্রাংক রোডের দিকে অগ্রসর হয়। সেখানে খেজুর চত্বরে অবস্থান নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে শিক্ষার্থীরা সেøাগান দেন। কিছু শিক্ষার্থী কাপনের কাপড়ে বিভিন্ন ধরনের সেøাগান লিখে। এ ছাড়া প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে। পরে ফের জহিরিয়া মসজিদের সামনে গিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়। এ সময় ট্রাংক রোড, শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কের ইসলামপুর রাস্তার মাথা এবং জহিরিয়া মসজিদের সামনে পুলিশকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়।

পিরোজপুর-বরিশাল সড়কে বিক্ষোভ
পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার দুপুরে পিরোজপুর জেলা শহরের সি-অফিস মোড়ে জড়ো হয়ে বরিশাল টু খুলনা সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে মিছিলটি শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে কর্মসূচি শেষ করে শিক্ষার্থীরা।

টঙ্গীবাড়ীতে বাধার মুখে কর্মসূচি
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মুন্সীগঞ্জে টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে বাধার প্রদানের ঘটনা ঘটেছে। সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে যায় তাদের কর্মসূচি।শুক্রবার বিকেল সাড়ের তিনটার দিকে উপজেলা সদরের হাসপাতাল সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যদর্শীরা জানায়, শুক্রবার দুপুরে উপজেলা বাজারে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা দেন। বিক্ষোভ প্রতিরোধে বাজারে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শিক্ষার্থীদের জড় হওয়ার স্থানে এসে কর্মসূচি আয়োজনে বাধা দেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশ। এ সময় তাদের ফেস্টুন ও প্লাকার্ড ছিনিয়ে নেয়া হয়। পরে পুলিশ ২ শিক্ষার্থীর মোবাইল জব্দ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

ঝিনাইদহে মিছিল ও সমাবেশ
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানায়,শুক্রবার বিকেলে ঝিনাইদহ শহরের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সামনে থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি প্রেরণা একাত্তর চত্বরে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। পরে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে আন্দোলনকারীরা জড়ো হলে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের জেলা সমন্বয়কারী শারমিন সুলতানা ও হুসাইন।

ইবিতে দোয়া মাহফিল
ইবি সংবাদদাতা জানান, নিহত শিক্ষার্থীদের জন্য দোয়া মাহফিল, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। জুমার নামাজের শেষে কেন্দ্রীয় মসজিদে এর আয়োজন করা হয়। এ সময় বিশ^বিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি ড. নাছির উদ্দিন মিঝি, ড. শেখ এ বি এম জাকির হোসেনসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। দোয়া মাহফিল শেষে মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে আন্দোলনকারীদের হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়।

প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা যশোরে
যশোর অফিস জানায়, যশোরে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি ছিল গত ১৫-২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় মিছিল বলে উল্লেখ করেছে যশোরের মানুষ। শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে শহরের পালবাড়ি মোড়ে জমা হতে থাকে খণ্ড খণ্ড মিছিল। সাড়ে তিনটার মধ্যে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর সাথে সাধারণ মানুষ উপস্থিত হয়। এরপর দোয়া অনুষ্ঠিত হয় সেখানে। হিন্দু ধর্মের শিক্ষার্থীরা এখানে প্রার্থনাও করেন। এরপর মিছিল সহকারে শহরের দড়াটানা অভিমুখে যাত্রা শুরু করে ছাত্র আন্দোলন। মাঝপথে বিমান অফিসের সামনে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য জাগ্রত বাংলাদেশের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ছাত্র আন্দোলনের নেতারাসহ বাবা, মা এবং বিভিন্ন পেশার মানুষ বক্তৃতা করেন।

নোয়াখালীতে অবস্থান কর্মসূচি
নোয়াখালী অফিস জানায়, নোয়াখালীতে ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে জেলা শহর মাইজদীর পুরনো বাসস্ট্যান্ড থেকে ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জিলা স্কুলের সামনের প্রধান সড়কে এসে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এ সময় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চৌমুহনী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী নিহতের সহপাঠীদের হত্যার বিচার ও দাবি মেনে নিতে বিভিন্ন স্লোগানে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে।

জামালপুরে প্রতিবাদ-সমাবেশ
জামালপুর প্রতিনিধি জানান, জামালপুরে প্রতিবাদ-সমাবেশ হয়েছে। বৃষ্টিকে উপক্ষো করে পুলিশি পাহারার মধ্যে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বিকেলে শহরের বাস টার্মিনাল এলাকায় এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজরদারির মধ্যেই দুই ঘণ্টাব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশ করেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ।

মধুপুরে মুখোমুখি শিক্ষার্থী-আ’লীগ
মধুপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের মধুপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলন মধুপুর শাখার শিক্ষার্থী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল। এ সময় প্রায় ঘণ্টাব্যাপী যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়ক ও টাঙ্গাইল জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে। গতকাল বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে মধুপুর থানা মোড় এলাকায় জড়ো হতে থাকে হাজারো শিক্ষার্থী। পরে শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে মধুপুর আনারস চত্বর পার হয়ে ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর সরকারি কলেজ ও রানী ভবানী পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয় পার হয়ে মিছিলটি পুনরায় বাসস্ট্যান্ড আনারস চত্বরে আসলে জামালপুর রোডের ট্রাক মালিক সমিতির সামনে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা।

পটিয়ার হেফাজতের মিছিল
পটিয়া-চন্দনাইশ(চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, চট্টগ্রামের পটিয়ায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। গতকাল বাদ জুমা পটিয়া জামিয়া আল-ইসলামিয়ার তোরণ থেকে এ মিছিলটি বের করা হয়। দেশব্যাপী উদ্ভূত পরিস্থিতির নিরসনে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির আলোকে গতকাল পটিয়ায় হেফাজত ইসলামের উদ্যোগে বিশেষ দোয়া ও মিছিল বের করা হয় বলে জানা গেছে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement