১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬
`

ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল সমাবেশ

আজ প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল
নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকরা ঢাবির অপরাজেয় বাংলায় সমাবেশ শেষে মিছিল করেন : নয়া দিগন্ত -

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস’ কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি ৯ দফা পূরণের দাবিতে গতকাল দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও মহানগরীতে মৌন মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন এবং প্রতিবাদী চিত্র অঙ্কন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে কর্মসূচিতে অংশ নেন।
ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা, গণগ্র্রেফতার, হামলা-মামলা, গুম ও শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ, জাতিসঙ্ঘের অধীনে তদন্তের দাবি এবং ছাত্রসমাজের ৯ দফা আদায়ের লক্ষ্যে গত বুধবার সারা দেশে এ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়।
শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ
ঢাবি প্রতিনিধি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দুই শিক্ষকের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদ ও সারা দেশে নিরীহ শিক্ষার্থীদের হত্যার বিচার দাবিতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষকরা। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা অংশ নিয়েছেন। গতকাল বেলা ১১টার দিকে বৃষ্টিতে ভিজেই অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু করেন ঢাবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এর আগে, আলাদা ব্যানারে সকাল ১০টার দিকে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষকরা এবং বেলা ১১টায় অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষকরা সমাবেশ করেন। এতে কয়েকশ’রও অধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষকরা। মিছিলটি ভিসি চত্বর প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্য হয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় শহীদ মিনারে গিয়ে শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তারা।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে গুলি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হেলিকপ্টার থেকে গুলি, গরম পানি ঢালা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া অবস্থায়ও গুলি করা হয়েছে। আহত অবস্থায় পড়েছিল, সেই লাশের ওপর গুলি করা হয়েছে। যেটা সুস্পষ্ট মানবধিকার লঙ্ঘন, সংবিধানপরিপন্থী। আমরা শুধুমাত্র আমাদের শিক্ষার্থীদের হত্যার বিচার চেয়েছিলাম। এরপর দেখলাম এই হত্যার জন্য সরকারপ্রধানের কোনো দুঃখ নাই। উনি নিরীহ জনগণের মৃত্যুর শোকের থেকে স্থাপনা ধ্বংসের জন্য কেঁদেছেন। এখন হত্যার জন্য আবার মায়াকান্না কাঁদছেন। তিনি বলেন, আমরা চোখের সামনে দেখলাম, পুলিশের পোশাক পরে গুলি করা হচ্ছে। জাতি দেখেছে চোখের সামনে ভিডিও আবু সাঈদকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে। চোখের সামনে দেখলাম পুলিশের হাতে গুলি, যুবলীগ-ছাত্রলীগের হাতে পিস্তল, আগ্নেয়াস্ত্র। একজন ছাত্রের হাতেও আমরা অস্ত্র বা পিস্তল দেখিনি। কোনো পত্রিকার ছবি কিংবা টিভির ফুটেজে দেখি নাই। এখন আমাদের মনে হয়, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার সরকার করবে না। কারণ এই সরকারই প্রকৃত খুনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস বলেন, ১৯৭১ সালে ঘরে ঘরে গিয়ে দরজায় ঠকঠক করে জিজ্ঞেস করা হতো মুক্তিবাহিনী আছে কি না। আর এখন ঘরে ঘরে ঠকঠক করে জিজ্ঞেস করা হয়, ছাত্র আছে কি না, শিক্ষক আছে কি না। আপনি একজনকে মারবেন দশ জন দাঁড়াবে। দশজনকে মারবেন হাজারজন দাঁড়িয়ে যাবে। শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান, আপনাদের কোনো অধিকার নেই তাদের গুলি করে মেরে ফেলার।
বিক্ষোভ মিছিলের এক পর্যায়ে শিক্ষকদের সাথে যুক্ত হন ঢাকায় অবস্থানরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উই ওয়ান্ট জাস্টিস, আমার ভাই মরলো কেন-শেখ হাসিনা জবাব চাই, স্বৈরাচার নিপাত যাক-গণতন্ত্র মুক্তি পাক ইত্যাদি স্লোগান দেন।
এর আগে বুধবার আন্দোলনের কর্মসূচি মার্চ ফর জাস্টিসে পুলিশের হাতে আটক হওয়া শিক্ষার্থীকে ছাড়াতে গিয়ে আহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক। শিক্ষকদ্বয় হলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক শেহরীন আমিন মোনামী ও নুসরাত জাহান চৌধুরী। গত বুধবার দুপুরে দোয়েল চত্বরের সামনে মার্চ ফর জাস্টিসে অংশগ্রহণকৃত এক শিক্ষার্থীকে পুলিশ আটক করতে গেলে বাধা দেয় ওই দুই শিক্ষক। এসময় কী কারণে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে জানতে চান তারা। একপর্যায়ে এক পুলিশ সদস্য জোরপূর্বক শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করেন এবং ওই দুই নারী শিক্ষককে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এতে ঘটনাস্থলে তারা মারাত্মকভাবে আহত হন। পরে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা নেন বলে জানা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষক সমিতি বিবৃতি দিয়ে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানান।
শুক্রবার প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল : ঢাবি প্রতিনিধি জানায়, নিহতদের হত্যার বিচার, গণগ্রেফতার বন্ধ, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলার প্রতিবাদসহ ৯ দফা দাবিতে সারা দেশে আজ শুক্রবার প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল বৃহস্পতিবার আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক আবদুল কাদেরের এক বিবৃতিতে গণমাধ্যমকে এ কর্মসূচির কথা জানানো হয়। এসময়, কর্মসূচিতে সব শ্রেণীপেশার মানুষের যোগ দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, গণহত্যা ও গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দোয়া, শহীদদের কবর জিয়ারত, মন্দির, গির্জাসহ সব উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন ও জুমার নামাজ শেষে ছাত্র-জনতার গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে। বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়, মসজিদের ইমাম ও খতিবদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আপনারা জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে চুপ থাকবেন না। মসজিদের মিম্বর থেকে প্রতিবাদের ঘোষণা দিন। মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আপনারাই জাতির দুর্দিনের কাণ্ডারি। এই দুঃসময়ে ঘরে বসে না থেকে গণহত্যা ও গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বাদ জুমা মসজিদ ও মাদরাসা থেকে ‘ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ মিছিল বের করুন।
এই গণমিছিল কর্মসূচিতে পেশাজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, বুদ্ধিজীবী, আলেম ওলামাসহ বাংলাদেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের প্রতি প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল দেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতি চলমান কোটা আন্দোলন সম্পর্কে বলা হয়, দেশ ও দেশের জনগণ বর্তমানে মহাসঙ্কটকাল অতিক্রম করছে। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা হামলা পরিচালনা করে শান্তিপ্রিয় ছাত্র-জনতার রক্তে রাজপথকে রঞ্জিত করছে। কারো পরিচয় শিক্ষার্থী হলে তার ফোন চেক করে অত্যাচার নির্যাতন চালানোর মতো দুঃসাহস দেখিয়েছে। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড অথচ আজ ছাত্র হওয়া যেন অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক সমাজও রক্ষা পাচ্ছে না তাদের নির্যাতনের হাত থেকে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করতেও ছাড়ছে না। শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সমর্থনকারী ছাত্র-জনতা কাউকে পেলেই গ্রেফতার ও এর মাধ্যমে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। পরবর্তীতে বাছাই করে পাড়া মহল্লায় রেইড দিয়ে গণগ্রেফতারের নামে গ্রেফতার বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে তারা। গুম করার হুমকি দিয়ে আদায় করছে মোটা অঙ্কের অর্থ। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন সমন্বয়কসহ অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে গতকাল গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ কেন্দ্রীয় ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে ছেড়ে দিলেও এখনো ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আক্তার হোসেন, সমন্বয়ক আরিফ সোহেলসহ অসংখ্য ছাত্র জনতাকে কারাগার ও রিমান্ডে নির্যাতন করছে। জুলুম নির্যাতনে নিষ্পেষিত ছাত্র জনতা মুক্তির প্রহর গুনছে। অসংখ্য ছাত্র জনতা হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নিয়ে। অনেক ছাত্র ও সাধারণ মানুষ চোখ, কান, হাত, পা কিংবা শরীরের অন্য কোনো অঙ্গ হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছে।
আজ ছাত্রসমাজ ঘরে শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না। প্রতি মুহূর্তে কাটাতে হচ্ছে গ্রেফতার ও গুম হওয়ার আতঙ্কে। শহীদ ও গুম হয়ে যাওয়া মানুষের স্বজনের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে বাংলার আকাশ বাতাস। এছাড়াও আগামীর বাংলাদেশ গড়ার কারিগর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকমণ্ডলীর ওপর ক্যাম্পাসের ভেতরে হামলা করেছে পুলিশ নামক সন্ত্রাসীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শ্রদ্ধেয় শিক্ষিকা শেহরীন আমিন মোনামী ও নুসরাত জাহান চৌধুরীর গায়েও হাত তুলেছে পুলিশের কিছু কর্মকর্তা। এই ঘৃণ্য হামলার আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
চট্টগ্রামের সমন্বয়ক আদনান গ্রেফতার : এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের অন্যতম সমন্বয়ক আদনান শরীফকে (২২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত বুধবার রাতে নগরীর বাকলিয়া থানাধীন ডিসি রোডের বাসা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় করা হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দুই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। বাংলা ট্রিবিউন। আদনান শরীফ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি চট্টগ্রামের দারুল উলুম মাদ্রাসার সমন্বয়কের দায়িত্বে আছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সুমাইয়া শিকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রাবিতে শিক্ষার্থীদের তুলে নেয়ার চেষ্টা : রাবি প্রতিনিধি জানান, সারা দেশে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে লাল কাপড় মুখে বেঁধে মৌন মিছিল করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা মৌন মিছিলে অংশ নেয়। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে। সমাবেশ শেষ হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের জোর করে তুলে নেয়ার চেষ্টা চালান সাদা পোশাকে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এমন ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করতে এসেছিলেন। কিন্তু মৌন মিছিল শেষে হঠাৎ করে তাদের জোর করে তুলে নিতে চাইলে তারা শিক্ষকদের সহযোগিতা চান। শিক্ষকরা বাধা দিলে শিক্ষার্থীদের আটক করতে পারেনি পুলিশ। তবে শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রদের মাঝে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।
শাবি ফটকে ২ শিক্ষার্থী আটক : সিলেট থেকে প্রতিনিধি জানান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) প্রধান ফটক থেকে দুই শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। তবে তারা শাবিপ্রবি’র ছাত্র নয় বলে জানা গেছে। গতকাল বিকাল ৩টার দিকে দুজনকে আটক করা হয়। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে আটককৃতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বৃহস্পতিবারের কর্মসূচি ছিল ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস’। কর্মসূচি পালনে বেলা ২টার পর শাবি মূল ফটকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকলে বিকেল ৩ টার দিকে তাদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। এ সময় দুজনকে আটক করা হয়।
জাবিতে প্রতিবাদী গানের মিছিল : সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে একত্রিত হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের সাথে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরাও যোগ দেন। এ ছাড়া সংহতি জানিয়ে কর্মসূচিতে সাভারের খাগানে অবস্থিত বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষকরাও অংশ নেন। পরে সেখান থেকে প্রতিবাদী গানের মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুরনো ফজিলাতুন্নেসা হলসংলগ্ন কোটাসংস্কার আন্দোলনের সময় নিহতদের স্মরণে নবনির্মিত ছাত্র-জনতা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে যায়। এরপর সেখান থেকে আবার মিছিলটি একই পথে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া একই স্থানে পারফরম্যান্স আর্ট পরিবেশন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা এবং নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সমন্বয়ক আরিফ সোহেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী লিয়নসহ গ্রেফতার সব শিক্ষার্থীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়।
কুবি শিক্ষকদের মানববন্ধন, পথে বাধা : কুবি সংবাদদাতা জানান, শিক্ষার্থীদের হত্যা, গ্রেফতার ও হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পথে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার অভিযোগ তোলেন। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক এ মানববন্ধনে অংশ নেন। এ সময় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট কাজী. এম আনিছুল ইসলামের সঞ্চালনায় উপস্থিত শিক্ষকরা সারা দেশে শিক্ষার্থীদের হত্যা, গ্রেফতার ও হয়রানির প্রতিবাদে বক্তব্য রাখেন।
ইবিতে মৌন মিছিল : ইবি সংবাদদাতা জানান, কোটাসংস্কার আন্দোলনে বিভিন্ন বাহিনীর গুলিতে নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে মৌন মিছিল করেছে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের পাদদেশ থেকে এ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন চত্বর প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দেন।
বগুড়ায় কর্মসূচি পালন : বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় প্রতিবাদী গান, দেয়াল লিখন, চিত্রাঙ্কনের মধ্য দিয়ে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস’ কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে নগরীর উপশহর এলাকায় বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদী গান, দেয়াল লিখন, হাতে জাতীয় পতাকা ও বিভিন্ন প্লাকার্ডের মাধ্যমে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণ করেন।
খুবি ও কুয়েটে মৌন মিছিল, মানববন্ধন : খুলনা ব্যুরো জানায়, শিক্ষার্থীসহ নিরাপরাধ জনসাধারণ হত্যা ও নিপীড়নের প্রতিবাদ এবং বিচারের দাবিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মৌনমিছিল এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতার স্তম্ভ ‘দুর্বার বাংলা’ পাদদেশে সাধারণ শিক্ষকদের ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। অপর দিকে খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেলা সোয়া ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদী চত্বরে মানববন্ধন করেন। এর আগে শিক্ষকরা মুখে ও মাথায় লালপট্টি ধারণ করে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন।
ময়মনসিংহে মানববন্ধন : ময়মনসিংহ অফিস জানায়, ৯ দফা দাবিতে ময়মনসিংহে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোস’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মিছিল সহকারে নগরীর টাউন হল মোড়ে জড়ো হয়। সেখানে অবস্থান নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে নানা স্লোগানের পাশাপাশি বক্তৃতা, কবিতা আবৃত্তি, বিদ্রোহী সঙ্গীত পরিবেশন করে শিক্ষার্থীরা।
যশোরে মানববন্ধন : যশোর অফিস জানায়, যশোরের বহুমাত্রিক জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র প্রাচ্যসংঘের উদ্যোগে ‘জুলাই গণহত্যা’র প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার পর এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন প্রাচ্যসংঘের প্রতিষ্ঠাতা লেখক ও গবেষক বেনজীন খান, সভাপতি কাসেদুজ্জামান সেলিম ও সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আকরামুজ্জামান। সঞ্চালনা করেন প্রাচ্যসংঘের যুগ্ম সম্পাদক ও সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সাবেক সভাপতি নুর ইসলাম।
নোয়াখালীতে সড়কে শিক্ষার্থীরা : নোয়াখালী অফিস জানায়, চলমান কোটাসংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালনের সময় ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নে নোয়াখালীতে সড়কে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকেল আড়াইটা থেকে পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত বৃষ্টি উপেক্ষা করে জেলা শহর মাইজদীর পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের সামনে প্রধান সড়কে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করে। এ সময় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চৌমুহনী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী নিহতের সহপাঠীদের স্মরণসহ বিভিন্ন স্লোগানে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল