২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কবে খুলবে শিক্ষাঙ্গন

শিগগিরই নয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার বাইরের স্কুল-কলেজ খুলতে পারে আগে
-

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিগগিরই খুলছে না। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে অস্থিরতার কারণে গত ১৭ জুলাই থেকে বন্ধ রয়েছে সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। একই সাথে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল কলেজ, মাদরাসা ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটও বন্ধ রয়েছে। যদিও সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের রায়ে সরকারি চাকরিতে কোটা সংক্রান্ত শিক্ষার্থীদের দাবি ইতোমধ্যে পূরণ করা হয়েছে। কিন্তু দেশব্যাপী আন্দোলন ও সহিংসতায় অনেক শিক্ষার্থী নিহত ও অসংখ্য ছাত্র-জনতা আহত হওয়ার প্রতিবাদে আন্দোলনের রেশ এখনো রয়েই গেছে। এই পরিস্থিতিতে সারা দেশে জারি করা কারফিউ এখনো বলবৎ রয়েছে। তাই উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনি খুলে দেয়ার সম্ভাবনা কম বলেই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে দেশ যখন উত্তাল ঠিক তখন গত ১৭ জুলাই বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে আসতে থাকে একের পর এক বন্ধের বিজ্ঞপ্তি। যে দাবি নিয়ে এত উত্তেজনা, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি হলো পরে অবশ্য দেরিতে হলোও আপিল বিভাগের রায়ে সে আন্দোলন এখন অনেকটাই সফল। তবে সফলতা এলেও আন্দোলনকে ঘিরে নানা ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো বন্ধই রয়েছে।

এ দিকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা বলছেন, কোটা আন্দোলন ঘিরে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। এতে আবাসিক হলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ক্ষতিসাধন হয়েছে। এগুলো আগে সংস্কার করতে হবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার পরেই কেবল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। অবশ্য এই ক্ষতি নিরূপণে কী পরিমাণ সময় লাগতে পারে তা কেউই নিশ্চিত নন। আপাতত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপের চেষ্টা চলছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ চিহ্নিত করা গেলে ভিসিরা ইউজিসির কাছে আর্থিক বরাদ্দের আবেদন করবেন।

গত ২৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ও স্যার এ এফ রহমান হল পরিদর্শন করেন ভিসি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। পরিদর্শন শেষে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, বিভিন্ন হলে প্রায় ৩০০টি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হলগুলোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেছেন। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্নের মাধ্যমে হলগুলো সংস্কার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হবে।

সূত্র আরো জানায়, সহিংসতার মধ্যে গত ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ওইদিন সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর আগের দিন ১৬ জুলাই রাতে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নির্দেশনা দেয় ইউজিসি।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কবে খুলবে- এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইউজিসি বলছে, কোটা আন্দোলন এখন শেষ হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা একটা উপযুক্ত রায় পেয়েছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের নির্দেশনায় বন্ধ করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে হবে। যদিও আন্দোলনের কারণে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ব্যাপক ক্ষতির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো আগে সংস্কার করতে হবে। একইসাথে শিক্ষার্থীদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: নূরুল আলম জানান, গত কয়েক দিনের অরাজক পরিস্থিতিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে আবাসিক হলগুলো শিক্ষার্থীদের বসবাসের উপযুক্ত করে ক্যাম্পাস খুলে দেয়া হবে। সরকারও চায় শিক্ষার্থীরা দ্রুত পড়ার টেবিলে ফিরে যাক। আমরা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম চালু করব।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, দেশের বর্তমান যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, আগে সেটা স্বাভাবিক হতে হবে। তবে শুধু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে পারব না, আমাদের শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তাও নিশ্চিত হতে হবে। এগুলো হওয়ার পর আমরা সিন্ডিকেট মিটিং ডাকব। সেখানেই বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, সহিংসতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমাদের হলগুলোতেও ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। বিভিন্ন হলের ১৫৮টি কক্ষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন ক্যাম্পাস খুলতে হলে একটা সিস্টেম ডেভেলপ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা ও হলগুলোকে বসবাসের উপযোগী করে ক্যাম্পাস খুলতে হবে।

অপর দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছে সরকারও। শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা এই মুহূর্তে বিবেচনা করতে পারছি না।

ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে সরকারের নির্দেশনার ওপর ভিত্তিতে ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বন্ধের চিঠি দিয়েছিল। আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে ইউজিসি সে সময় এ পদক্ষেপ নিয়েছিল। এখন আসলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ বা খোলার সিদ্ধান্ত একান্তই তাদের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। আন্দোলন চলাকালে ক্যাম্পাসগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এগুলো আগে সংস্কার করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

আগে খুলবে ঢাকার বাইরের স্কুল-কলেজ : দীর্ঘ ১০ দিনের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা স্কুল-কলেজ কবে খুলবে এ প্রশ্ন এখন সব অভিভাবকের। কোটা আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতার কারণে চলছে কারফিউ। এই অবস্থা দিনের একাংশে শিথিল থাকলেও জনমনে এখনো আতঙ্ক কাটেনি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে শিগগিরই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে। খুলে দেয়া হবে স্কুল-কলেজও। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়েছে ঢাকাসহ পাশের চারটি জেলায় স্কুল-কলেজ খুলতে আরো কিছুটা সময় লাগবে। অর্থাৎ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুর জেলা বাদে অন্যান্য জেলার আইনশৃঙ্খলা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথাটি বিবেচনা করে আগে খুলে দেয়া হবে সেসব জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীও বলেছেন, স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়টি নিয়ে আমরা এখনি ভাবছি না। তবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাটা চালানো এখন অন্যতম লক্ষ্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা সকলের উদ্দেশ্যে বলতে চাই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে আলোচনা শুরু করেছি। আমরা চাই শিগগিরই আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কলরবে মুখরিত হোক। গতকাল বিকেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতায় নিহত বিউপি শিক্ষার্থী মুগ্ধর উত্তরার বাসায় গিয়ে তার বাবা, ভাইসহ পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন শিক্ষামন্ত্রী। এর পরপরই সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন তিনি।

শিক্ষামন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে একযোগে সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একসাথে খুলে দেয়া হবে না। বরং ঢাকার বাইরের কয়েকটি জেলায় সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিবেচনায় এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়েই খুলে দেয়া হবে স্কুল-কলেজ। এরপর যেসব জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগে স্থিতিশীল হবে ওই সব জেলায় পর্যায়ক্রমে খুলে দেয়া হবে স্কুল-কলেজ।

প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আজ : অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা প্রাথমিক বিদ্যালয় পুনরায় কবে নাগাদ খুলতে পারে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে আজ। অস্থিতিশীল পরিস্থিতে গত এক সপ্তাহ আগে সরকারের জরুরি নির্দেশে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো কবে নাগাদ খুলতে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ রোববার বৈঠক করবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল শনিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহমদ এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেয়ার চেষ্টা চলছে।

বিদ্যালয় কবে খোলা হবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আজ রোববার মিটিং হবে। মিটিংয়ের পরে জানা যাবে কবে প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলবে।


আরো সংবাদ



premium cement
কপ২৯ সম্মেলনে অনুদানভিত্তিক অর্থ বরাদ্দের আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার শিক্ষা প্রশাসনে ফের রদবদল, ৪৬ কর্মকর্তাকে পদায়ন এখন পর্যন্ত বড় কোনো পদক্ষেপ নেই : রোহিঙ্গা বিষয়ক প্রতিনিধি স্পেন অবৈধ অভিবাসীদের বসবাস ও কাজের অনুমতি দেবে ঢাবিতে চলতি মাসেই চালু হচ্ছে শাটল বাস সার্ভিস আসামের করিমগঞ্জের নাম বদলে ‘শ্রীভূমি’ হয়ে গেল ডিসেম্বরে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারত বৈঠক পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত অন্তত ৩৮ বিচারের পর আ’লীগকে নির্বাচন করতে দেয়া হবে : ড. ইউনূস সিরাজগঞ্জে সাবেক পিপি ৫ দিনের রিমান্ডে গাজায় ফিলিস্তিনিদের নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার ছাড়াল

সকল