০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ছুটির দিনেও আদালতে স্বজনের ভিড় আহাজারি

ভুক্তভোগী অনেকে জানেন না কেন গ্রেফতার : ভিপি নুরকে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ
-


ছুটির দিনেও গতকাল ঢাকার সিএমএম আদালতে ছিল গণহারে আটক হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনের ভিড়। বন্দী প্রিয়জনকে নির্দোষ দাবি করে তাদের কারো কারো আহাজারিতে আদালতে আগতরা ছিলেন বাকরুদ্ধ। অনেকের শিশু সন্তানও চিৎকার-কান্নাকাটি করে বাবার মুক্তি দাবি জানায়। এ ছাড়া অনেককে বিনা অপরাধে গ্রেফতারের পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ করেন তাদের স্বজনরা।

গতকাল দুপুরের পর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বর ঘুরে দেখা গেছে, পুরো আদালত ভবনজুড়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের উপস্থিতি। আটকের পর প্রিয়জনের খোঁজ নিতে তারা আদালতে ভিড় করছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন কারো মা-বাবা, কারো ভাই কারো বোন কিংবা স্ত্রী-সন্তান। তারা স্বজনের খোঁজ নেয়ার পাশাপাশি আইনজীবীদের সাথেও পরামর্শে ব্যস্ত ছিলেন।
আটকদের একজন খোরশেদ। তার স্ত্রী জানান, তার স্বামী রামপুরায় দারোয়ানের চাকরি করেন। বনশ্রীর সি ব্লক, সাত নম্বর বাড়ি, ১০ নাম্বার রোড থেকে তিন দিন আগে তাকে আটক করা হয়। স্ত্রীর অভিযোগ, তার স্বামীকে বলা হয় বিশ হাজার টাকা আর কয়েকজন ছাত্র ধরিয়ে দিতে পারলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। এরপর তিনি ২০ হাজার টাকা নিয়ে গেলেও তাকে ছাড়া হয়নি। তিন দিন নির্যাতনের পর গতকাল তাকে আদালতে আনা হয়। এ নিয়ে আদালতের বারান্দায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি তার স্বামীকে নির্দোষ দাবি করে তার মুক্তি দাবি করেন।

রাজধানীর সাইনবোর্ডের বাসিন্দা তুষার। বুধবার রাত ৩টায় গ্রেফতার হন তিনি। পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। আদালত চত্বরে তুষারের মা মমতাজ বেগম ছেলেকে দেখার জন্য ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট চত্বরের অপেক্ষা করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ছেলে তুষারের বয়স ২১ কিংবা ২২ হবে। সে রাজমিস্ত্রির কাজ করে। তাকে রাত ৩টায় ডেমরা থানার পুলিশ এসে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। আমি জানি না আমার ছেলে কী করছে। গত কয়েক দিনের আন্দোলনেও যায়নি। আজ ১২টার দিকে আদালতে ছেলের জন্য এসেছি। সে গাড়ি থেকে আমাকে দেখেই মা মা বলে চিৎকার করছিল।’

রাজধানীর কাজলা সামাদ নগরের বাসিন্দা মনির হোসেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে তাকে তুলে নিয়ে যায় যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ। মনির হোসেনের স্ত্রী ছালমা বলেন, ‘আমার স্বামী দোকান বন্ধ করে বাসায় এসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। হঠাৎ পুলিশ এসে বাসায় ঢুকে। এরপর কিছু না বলেই হ্যান্ডকাফ পরাতে গেলে আমি জিজ্ঞেস করি, কেন আমার স্বামীকে গ্রেফতার করবেন? কী অপরাধ? এতে হ্যান্ডকাফ দিয়ে আমার হাতে পুলিশ আঘাত করে। এ সময় আমার ছোট্ট ছেলে এসে বাধা দিলে তাকে টেনে সরিয়ে দিয়ে আমার স্বামীকে নিয়ে চলে যায়। এ সময় তারা আমাদের বাসার নিচের সব সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে।’

তার সাথে থাকা আটক মনির হোসেনের মা জানান, ছেলেকে দেখতে এসেছি। এই আন্দোলনে সে কখনো রাস্তায় বের হয়নি। এক সময় বিএনপি সমর্থন করত। এখন সে কোনো দল করে না। শুধু মনির কিংবা তুষারের স্বজন নয়, গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে আদালত চত্বরে অনেক স্বজনই আটকদের নির্দোষ দাবি করে প্রতিবাদ করেন। তারা বিনা অপরাধে গ্রেফতারের অভিযোগ করেন।
গ্রেফতার হওয়া দ্য মিরর এশিয়া নিউজের সাংবাদিক সাঈদ খানের স্ত্রী সানজিদা ইতি বলেন, ‘আমার স্বামীকে নিউজ করার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে। মেট্রোরেলে হামলার অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি সাংবাদিক, নিউজতো করবেনই। আমার স্বামী দেশের জন্য কাজ করছেন। এ ছাড়া আন্দোলনে তার পায়ে ইট পড়ায় কয়েক দিন ভালোভাবে কাজ করতে পারেননি। আমি কখনো আদালতে আসিনি। আমার অসুস্থ ছেলেটা বাবার জন্য কেঁদে কেঁদে অস্থির। আপনারা প্লিজ আমার ছেলের জন্য তার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।’

অন্য দিকে সেতু ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহাম্মদ তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। শুনানিকালে নুরকে এজলাসে তোলা হয়। তখন নুর দাঁড়াতে পারছিলেন না। এ সময় আইনজীবীরা তার জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে রিমান্ডে নিয়ে নুরকে নির্যাতনের অভিযোগ করেন আইনজীবীরা। শারীরিক অবস্থা ও সার্বিক বিবেচনায় তারা জামিন চান। তবে শুনানি শেষে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

নুরের স্ত্রী মারিয়া আক্তার লুনা ও বাবা ইদ্রিস হাওলাদার আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তারা নুরের ওপর নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানান। নুরের স্ত্রী ও তার আইনজীবীরা নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ করেন। লুনা বলেন, নুরের ছোট ভাইকেও আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্বামীর চিকিৎসার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, তাকে পায়ে বেঁধে উপরের দিকে ঝুলিয়ে পিঠানো হয়েছে।
এ সময় তার আইনজীবী বলেন, ‘নুরকে আদালতে আনার আগেও ফুটবলের মতো লাথি দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের একটাই ক্ষোভ, কেন তিনি নির্বাচনে যাননি। এখন সে বুঝবে রাজনীতি কাহাকে বলে।’
এর আগে গত ২১ জুলাই নুরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন অপর একটি আদালত। সেই রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক আবু সাইদ মিয়া। আবেদনে বলা হয়, ভিপি নুর কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও আসিফ মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি তাদের আট দফা কর্মসূচি লিখে দেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
এ সরকার জনপ্রত্যাশার কী করবে? আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন : তাজুল ইসলাম চিফ প্রসিকিউটর আবুধাবির কারাগার থেকে দেশে ফিরেছেন ১৪ বীর কোনাবাড়ীতে কলেজছাত্রকে গুলি করে হত্যা : কনস্টেবল গ্রেফতার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্তগুলো যৌক্তিক : ফখরুল ‘একটি চক্র জামায়াত আমিরের বক্তব্য নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে’ অস্ত্র জমা দেয়নি শামীম ওসমান ও গাজী পরিবার এবি পার্টির উপদেষ্টার পদ ছাড়লেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক কর্মকর্তাদের তালিকা চাওয়া নিয়ে বিতর্কে মন্ত্রণালয়ের দুঃখ প্রকাশ আশুলিয়ায় শ্রমিক দলের সমাবেশে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৫ রূপগঞ্জে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা

সকল