গুলিতে নিহত ৪ বছরের আহাদের জন্য ঘরে মসজিদে দোয়া

কোটা আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর একটি ভবনের আটতলার বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত শিশু আহাদের রূহের মাগফিরাত কামনায় তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের বিভিন্ন মসজিদ ও এতিমখানায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৯ জুলাই বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকার একটি বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয় আহাদ। ১১তলা বাড়িটির আটতলায় থাকতেন আবুল হাসান, স্ত্রী সুমি আক্তার, বড় ছেলে দিহান মাতুব্বর (১১) ও ছোট ছেলে আহাদ (৪)। আয়কর বিভাগের উচ্চমান সহকারী আবুল হাসানের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া গ্রামে।
নিহত শিশু আহাদের চাচা মোখলেসুর রহমান বলেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরের দিন শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আহাদকে মৃত ঘোষণা করা হয়। মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে রোববার বেলা ৪টার দিকে আহাদের লাশ তারা বুঝে পান। তারপর অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে গ্রামের বাড়ি ভাঙ্গার পুখুরিয়া গ্রামে চলে যান। বাদ মাগরিব পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় আহাদকে।

মোখলেসুর আবেগভরা কণ্ঠে বলেন, ‘বাড়িতে আগে পারিবারিক কবরস্থান ছিল না। আহাদকে দাফনের মধ্য দিয়েই কবরস্থানটির যাত্রা শুরু হলো।
আহাদের মৃত্যুতে শুক্রবার বাদ জুমা স্থানীয় পুখুরিয়া মুন্সিবাড়ী মাদরাসা ও এতিমখানা, ব্রাহ্মণকান্দা মাদরাসা ও এতিমখানা, হরুপদিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা এবং পুখুরিয়া রেল স্টেশন জামে মসজিদ ও পুখুরিয়া গ্রামের ৮টি মসজিদে মিলাদ মাহফিল এবং দোয়া ও মুনাজাত করা হয়।
পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই বিকেলে নিজ বাসার বারান্দায় এক পাশে বাবা, আরেক পাশে মা, মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিল ছোট্ট আবুল আহাদ। বাসার বারান্দায় দাঁড়ানো তিন জোড়া চোখ নিচের দিকে তাকিয়ে, সেখানে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলছিল। এরইমধ্যে আচমকা মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে আহাদ।

বাবা ভেবেছিলেন ছেলে মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। ছেলেকে ধরে তুলতে গিয়ে বুকের রক্ত হিম হয়ে যায় আবুল হাসানের। ছেলেটার চোখ, মুখ, মাথা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। গুলিটা ডান চোখে বিদ্ধ হয়ে মাথার ভেতরেই আটকে গেছে। রক্তাক্ত ছেলেকে কোলে নিয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসেন তিনি। অস্ত্রধারীরা এগিয়ে এসে তাকে বাধা দেয়। পরে ছেলের রক্তাক্ত অবস্থা দেখে সরে দাঁড়ায়। আহাদকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। চিকিৎসকেরা বলেন, গুলি মাথার মধ্যে আছে। কিন্তু কোন অবস্থানে আছে, তা বোঝার জন্য সিটিস্ক্যান করতে হবে। কিন্তু সিটিস্ক্যান করতে নেয়া হলে আইসিইউর যন্ত্রপাতি খুলে ফেলতে হবে। এতে শিশুটির মৃত্যুও হতে পারে। তবে সিটিস্ক্যান করাও জরুরি। আবুল হাসান বলেন, একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার শিকার হয়ে আমার ছেলে চলে গেল। এ নিয়ে আমি আর কী বলব! চেয়েছিলাম ময়নাতদন্ত না করতে। অতটুকু শরীর যাতে আর কাটাছেঁড়া করা না হয়। কিন্তু আমাদের সে চেষ্টাও সফল হয়নি।