০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
সুজনের গভীর উদ্বেগ

হত্যাকাণ্ডের নির্মোহ তদন্ত, ঢালাও মামলা ও গ্রেফতার বন্ধের দাবি

-


সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথার সংস্কারের লক্ষ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জের ধরে সৃষ্ট অচলাবস্থা এখনো নিরসন হয়নি। মৃত্যুর সংখ্যাও দিন দিন বেড়েই চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের নির্মোহ তদন্ত, ঢালাওভাবে মামলা ও গ্রেফতার বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান এবং সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সাথে লাখ করছি যে, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়া, স্বার্থান্বেষীমহলের ইন্ধন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত বল প্রয়োগের ফলে এত প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা মনে করি।

বিবৃতিতে তারা বলেন, দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে বলেও আমরা মনে করি। কোনো স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে কোনো অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে এত প্রাণহানি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা মনে করি, প্রত্যেকটি প্রাণই গুরুত্ব¡পূর্ণ। কোনো কিছুর বিনিময়ে তা পূরণ হওয়ার নয়। আমরা নিরপেক্ষ ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিশন গঠন করে প্রত্যেকটি হত্যার নির্মোহ তদন্ত করা এবং দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে ঢালাওভাবে মামলা ও গ্রেফতার বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা আরও মনে করি, আন্দোলনের নামে সহিংসতা চালানো এবং সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেয়া কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

সুজনের নেতারা বলেন, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সামর্থ্য ও প্রস্তুতি বাড়ানো দরকার। তবে কিছুটা দেরিতে হলেও আদালতের নির্দেশনা মেনে কোটা পদ্ধতির সংস্কার করায় আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে এ আন্দোলনকে ঘিরে যাতে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের আর নতুন করে হয়রানি না করা হয় এবং বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় সেদিকে দৃষ্টি দেয়ার জন্য আমরা সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, বর্তমান লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতির কারণে আমাদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায়ই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ও শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হয়। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার ফলে ছাত্রনেতাদের হাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নানাভাবে বঞ্চিত ও নিগৃহীত হয়, যা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধিত) অধ্যাদেশ ১৯৭২ অনুযায়ী, নিবন্ধিত দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন রাখা বেআইনি। ড. শামসুল হুদা কমিশনের মেয়াদকালে সকল রাজনৈতিক দলের সম্মতিতে এ বিধানটি আরপিওতে যুক্ত করা হয়, যা রাজনৈতিক দলগুলো বাস্তবায়ন করেনি। তাই লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতির অবসান ঘটানো এবং তরুণদের নেতৃত্ব বিকাশে নিয়মিত ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা মনে করি।

আমরা মনে করি, সরকারের উচিত কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ মানুষ কেন এত ক্ষুব্ধ তা উপলব্ধিতে আনার চেষ্টা করা। আমাদের আশঙ্কা, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে যে জন-বিস্ফোরণ হয়েছে তা রোগের উপসর্গমাত্র। মূল রোগ হলো ভোটাধিকার থেকে শুরু করে জনগণের অন্যান্য নাগরিক অধিকার না পাওয়ার বঞ্চনা। তাই স্থায়ীভাবে সঙ্কটের নিরাময় ঘটাতে হব, উপসর্গের নয়। রোগের চিকিৎসা আবশ্যক। এ লক্ষ্যে সকল অংশীজনকে, বিশেষ রাজনৈতিক দলগুলোরসাথে অনতিবিলম্বে সংলাপের আয়োজন এবং গুরুতর সমস্যাগুলোর একটি টেকসই সমাধানে পৌঁছার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একইসাথে অবিলম্বে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে এবং তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিয়ে সব ধরনের অচলাবস্থা নিরসনের জন্য জোর দাবি জানান সুজন নেতারা।


আরো সংবাদ



premium cement