১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`
সরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ

দেশবাসীর কাছে বিচার চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর-১০ মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন করেন : বাসস -

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর-১০ মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন শেষে সারা দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় দেশবাসীর কাছে বিচার চেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘দেশের জনগণকে তাদের (দেশব্যাপী তাণ্ডবের সাথে জড়িত অপরাধীদের) বিচার করতে হবে। আমি জনগণের কাছে ন্যায়বিচার চাইছি। ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেয়ার মতো আমার আর কোনো ভাষা নেই।’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে মিরপুর-১০ নম্বরে মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শনে এসে গণমাধ্যমের উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে আবেগাপ্লুতকণ্ঠে এ কথা বলেন।
এছাড়াও তিনি দেশবাসীর প্রতি যারা ১৭ জুলাই থেকে একাধিক দিন ধরে তাণ্ডব চালিয়েছে এবং তার সরকারের জনজীবনকে সহজ এবং বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত করতে গত ১৫ বছরে নির্মিত সরকারি স্থাপনায় কোটা আন্দেলনকে পুঁজি করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের প্রতিহত করারও আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, এই মেট্রোরেল করার সময়ও অনেক বাধা-বিঘœ আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছিল। সব বাধাবিঘœ অতিক্রম করে এই মেট্রোরেল আমরা করে দিয়েছি এবং সময়ের আগেই আমরা করতে পেরেছি। আজ মেট্রোরেল বন্ধ কারণ, এই স্টেশন সেভাবে ধ্বংস হয়েছে যেটা সম্পূর্ণ ডিজিটাল ও ইলেকট্রনিক সিস্টেম, সম্পূর্ণ মডার্ন। এটাতো কত দিনে ঠিক হবে আমি জানি না। কষ্ট পাবে কিন্তু মানুষ।
সরকারপ্রধান বলেন, এটা তার সরকার করে দিয়েছে সকলে যাতে সময়মতো স্কুল কলেজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা নিজ নিজ কর্মস্থলে যেতে পারেন এবং কর্মস্থল থেকে আবার ঘরে ফিরে অন্তত কিছুটা সময় পরিবারের সাথে কাটাতে পারেন। আর্থিক দিকটাও সাশ্রয় হয়। সেসব কথা চিন্তা করেই তার সরকার দেশের মানুষের কল্যাণে মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন যোগাযোগের মাধ্যম নির্মাণ করে দিয়েছে। অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেল ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এতে আপনারাই কষ্ট পাবেন। দেশের মানুষই কষ্ট পাবে। এই ঢাকা শহরের মানুষই কষ্ট পাবেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আবার ট্রাফিক জ্যামে পড়ে থাকতে হবে। কর্মস্থলে সময়মতো পৌঁছানো আবার ফেরত আসায় দীর্ঘ সময় লাগবে, বসে বসে সেই ট্রাফিক জ্যামে কষ্ট পাওয়া থেকে আপনাদের এই কষ্ট লাঘব করতে চেয়েছিলাম। তিনি বলেন, ‘তাই আমি আপনাদেরকেই বলব যে কষ্ট আমি লাঘব করতে চেয়েছি সেই কষ্ট আবার যারা সৃষ্টি করল তাদের বিরুদ্ধে আপনাদেরই রুখে দাঁড়াতে হবে। দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে। এর বিচার তাদের করতে হবে। আমি তাদের কাছেই বিচার চাই।’
এর আগে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন করেন তিনি। তিনি পুরো স্টেশন ঘুরে ঘুরে দেখেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গত শুক্রবার তাণ্ডবলীলা চালানো হয় মেট্রোরেল স্টেশনে। সন্ত্রাসীদের হামলায় অন্যান্য স্থাপনার মতোই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় আধুনিক গণপরিবহনের এই মেট্রোস্টেশন। ভাঙচুর করা হয় সিসি ক্যামেরা, এলইডি মনিটর, টিকিট কাটার মেশিনসহ বিভিন্ন জায়গা। লুট করা হয় মূল্যবান অনেক জিনিস। শেখ হাসিনা বলেন, যেসব স্থাপনা মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করে বেছে বেছে সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। যারা উন্নয়নবিরোধী এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের মানসিকতা কোন ধরনের সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন দৃশ্যমান। বাংলাদেশ আজ বিশ^দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। যারা আজ বিদেশে যাচ্ছে, তারা সেই সম্মান পাচ্ছে। আগে সেটা পেত না। ভিক্ষুকের জাতি হিসেবে আমাদেরকে একটা বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। আজকে সেটা ছিল না। কিন্তু আমি জানি না এই যে প্রতিটি স্থাপনা তৈরি করেছি যেগুলো মানুষকে সেবা দেয়, তাদের জীবনযাত্রা সহজ করেছে। মানুষের জীবনকে উন্নত করেছে ঠিক সেইগুলো ভেঙে সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেয়া কী ধরনের মানসিকতা।
সরকারপ্রধান বলেন, এই মেট্রোরেলে চড়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্বিঘেœ মানুষ যাতায়াত করছে। এই মেট্রোরেলের ওপর কেন এত আক্রমণ? এটাই আমার প্রশ্ন। এই মেট্রোরেল এবং এর স্টেশনগুলো যে আমরা তৈরি করেছি এর সার্ভিসসহ সবকিছুই ছিল আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। অন্যান্য বহু দেশের তুলনায় আধুনিক দৃশ্যমান সুন্দর একটা মেট্রোরেল আমরা করেছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধ্বংসের চিহ্ন দেখলাম এটা বিশ^াস হতে চায় না যে এদেশের মানুষ এটা করতে পারে। কিন্তু, সেই কাজই করেছে। আর আমার দুঃখ লাগে ২০১৮ সালে যখন ছাত্ররা কোটাবিরোধী আন্দোলন করল আমি সাথে সাথে সেটা মেনে নিয়ে কোটা বাতিল করে দিলাম। এর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার থেকে মামলা করা হলো সরকারের জারি করা পরিপত্র হাইকোর্টে বাতিল হলো। সেটার বিরুদ্ধে সরকার আপিল করল। সেই সময়ে হাইকোর্টের রায়কে স্থিতাবস্থা দিয়ে তারা একটা সময় (সুপ্রিম কোর্ট) দিলেন। এই সময়ের মধ্যে সবার বক্তব্য শুনে তারা একটা সিদ্ধান্ত দেবেন। তিনি বলেন, ‘আমি কোটা আন্দোলনকারী থেকে শুরু করে দেশবাসীকে বললাম একটু ধৈর্য ধারণ করতে হবে। এটাতো সরকার আপিল করেছে, তাদের হতাশ হতে হবে না। সেই আশ^াস দিয়ে তাদেরকে বললাম বিরত থাকতে। একটুতো ধৈর্য ধরতে হবে। যেকোনো নাগরিককেইতো আইন আদালত মেনে চলতে হবে। আর এই এর সুযোগ নিয়ে সেই ১৭ জুলাই থেকে যেভাবে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু হলো।’
তিনি প্রশ্ন করেন এগুলো কাদের জন্য? এই মেট্রোরেলে কি আমি চড়ব? আমাদের সরকার ও মন্ত্রীরা শুধু চড়বে না জনগণ চড়বে, এটা আমার প্রশ্ন। এর উপকারিতা আপনারা পাচ্ছেন। এদেশের সাধারণ জনগণ পাচ্ছেন। তাহলে এটার ওপর এত ক্ষোভ কেন? আমরা বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও আন্দোলন, কোটাবিরোধী আন্দোলন। আদালতের রায় নিয়েও আমরা বারবার কথা বলেছি, বোঝাতে চেষ্টা করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমি তো দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করতেই কাজ করে যাচ্ছি এবং করেছিও। যা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের কী অবস্থা ছিল? আর আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের একধাপ উচ্চধাপে উঠে গেছে। সেখান থেকে নামাতে হবে কেন? আমার প্রশ্ন সেটাই। বাষ্পরুদ্ধকণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। এই অ্যালাইনমেন্টে (মেট্রোরেলের) আমি পরিবর্তন এমনভাবে করে দিয়েছি যাতে দ্রুত সময়ে হয়।
যারা এর ওপর আঘাত করল এই মেট্রোরেল এভাবে ভাঙচুর করল, যেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ চলাচল করতে পারতো অল্প সময়ের মধ্যে। এই আনন্দ যারা নষ্ট করল, জনগণের নির্বিঘেœ চলাচলের পথ যারা রুদ্ধ করল তাদের বিচার এদেশের জনগণকেই করতে হবে। আমি সেই বিচারের দিকে চেয়ে আছি। আমি এর নিন্দা জানানোর ভাষা পাচ্ছি না।


আরো সংবাদ



premium cement