০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

এক দিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর ধার সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা

-

ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার সঙ্কটের মধ্যেও আগামী রোববার ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেবে সরকার। ৯১ দিন ও ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে এ ঋণ নেয়া হবে। রোববার এ জন্য ট্রেজারি বিলের নিলাম ডেকেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারের ঋণের জোগান দিতে অনেক ব্যাংকই হিমশিম খাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এ জন্য অনেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে চলছে। গত বুধবারও ২৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করেছে ব্যাংকগুলো।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, তাদের নগদ টাকার সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। কারফিউ শিথিলের মাঝে মাত্র ৪ ঘণ্টার জন্য ব্যাংক খোলা হয়েছে। সাধারণ ছুটির আওতায় তিন কার্যদিবস ব্যাংক বন্ধ থাকার পর বুধবার থেকে সীমিত পরিসরে ব্যাংক খোলা হয়েছে। ৪ ঘণ্টা ব্যাংক খোলা রাখায় বুধবার প্রতিটি ব্যাংকের শাখায় গ্রাহকের উপচেয়ে পড়া ভিড় দেখা যায়। গ্রাহকরা টাকা জমা দেয়ার চেয়ে টাকা উত্তোলন করেন বেশি। ফলে প্রায় প্রতিটি ব্যাংকেরই নগদ টাকার সঙ্কট দেখা দেয়। এ সঙ্কট মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকা ধার নেয় ব্যাংকগুলো। গত ১৮ জুলাই ব্যাংকগুলো টাকার সঙ্কটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিয়েছিল ১৬ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা।
এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাত থেকে আগামী রোববার ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেবে সরকার। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এমনিতেই ব্যাংকগুলো নগদ টাকার সঙ্কটে দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে পারছে না। নানা ভাবে ঋণখেলাপিদের ছাড় দেয়ার কারণে ব্যাংকের নগদ আদায় কমে গেছে। অপর দিকে কাক্সিক্ষত হারে আমানত আসছে না। এরই মাঝে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে তাতে সরকারের ব্যাংকিং খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে গত দুই বছরের মতো কমিয়ে দেয়া হয়েছে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ। সরকারের বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকিং খাত থেকে বাড়তি অর্থ নেয়া হলে বেসরকারি বিনিয়োগ আরো সঙ্কোচিত হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, নানা ছাড়ের কবলে পড়েছে ব্যাংকিং খাত। কখনো নামমাত্র ডাউন পেমেন্টের নামে ঋণ নবায়ন, কখন এক বা দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ পুনর্গঠন, কখনো সুদহারে ছাড় দিয়ে নামমাত্র ডাউন পেমেন্ট দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ নবায়ন করা হচ্ছে। এভাবে বছরের পর বছর ঋণ পরিশোধ না করে ছাড় পেয়ে যাচ্ছে একটি মহল। এর ওপর ব্যাংকিং খাত থেকে বাড়তি অর্থ সরকার ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে যতটুকু ঋণ বিতরণ করা যেত তাও বাধাগ্রস্ত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে চলতি অর্থবছরে এক লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। প্রতি সপ্তাহে ব্যাংকিং খাত থেকে কী পরিমাণ অর্থ নেয়া হবে তার আগাম কর্মসূচি ঘোষণা করে অর্থ মন্ত্রণালয়। আর এ অর্থ ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে আদায় করার জন্য ভেন্ডারের দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতি সপ্তাহেই এজন্য নিলামের আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর সে অনুযায়ী আগামী রোববার ট্রেজারি বিলের নিলামের আয়োজন করা হয়েছে। ওই দিন ৮ হাজার কোটি টাকা তুলে দেয়া হবে সরকারকে। তিন মাস ও ৬ মাস মেয়াদি নিলামের মাধ্যমে এ অর্থ জোগান দেয়া হবে। গত রোববার কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ফলে ওই দিন ট্রেজারি বিলের নিলামের আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। রোববারের ট্রেজারি বিলের নিলাম অনুষ্ঠিত হয় গত বুধবার। ওই দিন সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিয়েছে সরকার।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, সরকারের ব্যাংক ঋণ দিতে বাধ্য কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। যাদেরকে ব্যাংকিং ভাষায় পিডি ব্যাংক বা প্রাইমারি ডিলার ব্যাংক বলা হয়। কোনো ব্যাংক সরকারের ঋণের জোগান দিতে বাধ্য না হলে পিডিদেরকে টাকা দিতে বাধ্য হতে হয়। একটি পিডি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, এমনিতেই তাদের সঙ্কট এর ওপর সরকারের ঋণের জোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারা অনেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ করে চলছেন। গত বুধবার এমন ১১টি পিডি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তিন হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সরকারের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে ও রাজস্ব আদায় বাড়িয়ে ব্যাংকিং খাতের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাতে পারলে বেসরকারি খাত উপকৃত হতো।


আরো সংবাদ



premium cement