০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
ভেঙে চুরমার দীপক-বিউটির পরিবারের স্বপ্ন

একটা বুলেট কেড়ে নিলো ছোট্ট রিয়া গোপের প্রাণ

-

নারায়ণগঞ্জ সদরের নয়ামাটি এলাকায় একটি রড-সিমেন্টের দোকানে ম্যানেজারের কাজ করেন দীপক কুমার গোপ। তার স্ত্রী বিউটি গৃহিণী। তাদের একমাত্র কন্যাসন্তান রিয়া গোপ (৬) এ বছরই ভর্তি হয়েছিল স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। দীপক ও বিউটির বুকভরা আশা ছিল তাদের একমাত্র কন্যা যেন মানুষের মতো মানুষ হয়। তাকে উচ্চশিক্ষিত করার ইচ্ছেও ছিল তাদের। কিন্তু একটা বুলেট কেড়ে নিলো ছোট্ট রিয়ার প্রাণ। হঠাৎ করে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেল দীপক-বিউটির পরিবারের।
গত শুক্রবার দুপুরে খাওয়ার পর ছাদে খেলতে গিয়েছিল রিয়া। কোটা সংস্কার আন্দোলন তখন ছড়িয়ে পড়ে পুরো নারায়ণগঞ্জে। খানিক পরেই রাস্তায় সংঘর্ষ বাধে। বাসার সামনে হট্টগোল শুনে বাবা দীপক গোপ ছুটে যান ছাদ থেকে মেয়েকে ঘরে আনতে। মেয়েকে কোলে নিতেই একটি বুলেট এসে বিদ্ধ হয় মাথায়। মুহূর্তেই ছোট্ট দেহটি ঢলে পড়ে বাবার কোলে।
নয়ামাটি এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, ছোট্ট রিয়া গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। মানুষের মধ্যে দেখা দেয় আতঙ্ক। রক্তে ভেজা মেয়ে রিয়াকে নিয়ে তখনই বাবা দীপক ছুটে যান হাসপাতালে। প্রথমে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নেয়া হলে সেখান থেকে ডাক্তার দ্রুত পাঠিয়ে দেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সে রাতেই তার মাথায় অস্ত্রোপচার হয়। রিয়াকে রাখা হয় নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ)। রোববার ও সোমবার আইসিইউতে একটু একটু করে আঙুল নাড়ছিল মেয়েটি। স্বজনদের বুকে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু বুধবার সকালের দিকে সে নড়াচড়াও থেমে যায়। পরিবারের সবাইকে শোকের সাগরে ফেলে চলে যায় পরপারে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রিয়ার মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়, ‘গানশট ইনজুরি’।
একমাত্র মেয়েকে হারানোর শোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন দীপক কুমার। ‘কোথা থেকে কী হয়ে গেল, কিছুই বুঝি নাই। আমার কোলেই মেয়ের মাথা থেকে রক্ত বেয়ে পড়ছিল।’ বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন।
রিয়ার স্বজন স্মৃতি রানী বলেন, বাসার ছাদে খেলতে গিয়ে বাবার কোলেই গুলিবিদ্ধ হয় মেয়েটা। এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে! রিয়ার ছোট খালা আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘আমার ছোট মারে, তুই আমাদের ছেড়ে চলে গেলি! তোরে ছাড়া আমরা কেমনে বাঁচব?’


আরো সংবাদ



premium cement