০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা

ছাত্রলীগ ক্যাম্পাস দখলের চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা আবার রাস্তায় দাঁড়াবে

-

কোটা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক শারজিস আলম বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ কী নির্মম নির্যাতন-হামলা চালিয়েছে সেটা সবাই দেখেছে। আবার যদি ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে এসে রাজনৈতিক কার্যক্রমের পাঁয়তারা বা পুনর্দখলের চেষ্টা করে তাহলে বিক্ষুব্ধ ছাত্রসমাজ তাদের বিরুদ্ধে আবারো রাস্তায় দাঁড়াবে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটলে প্রশাসন দায়ী থাকবে বলে জানান তিনি। এ দিকে আজ বাদ জুমা শহীদদের স্মরণে মসজিদ, মন্দির ও গির্জায় প্রার্থনা, দেশব্যাপী গায়েবানা জানাজা ও শোকমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ। গতকাল রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা বলেন, কোটাসংস্কার আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা দুইশত ছাড়িয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় রয়েছে হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী। চলমান আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনাও কম নয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের হামলার পর থেকেই আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে। একপর্যায়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী বনাম ছাত্রলীগ সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। যদিও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো শেষমেষ শিক্ষার্থীদের দখলে ছিল। হল থেকে ছাত্রলীগ বিতাড়িত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রভোস্টদের স্বাক্ষর নিয়ে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে অঙ্গীকারনামা আদায় করে নিয়ে ছিল শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও সাড়া দেয়। তারা বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ক্যাম্পাস বন্ধ শেষে হল খুলে মেধার ভিত্তিতে সিট দেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী ও কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক শারজিস আলম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়হ অন্যান্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ কী নির্মম নির্যাতন হামলা চালিয়েছে সেটা সবাই দেখেছে। তাদের ভাড়া করা সন্ত্রাসীদের দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাদের হামলায় নারী শিক্ষার্থীরাও রেহাই পায়নি। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এমন হামলার মুখে আবারো পড়তে চাই না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হলগুলোতে লেজুরবৃত্তিক সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। তবুও যদি আবার ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে এসে রাজনৈতিক কার্যক্রমের পাঁয়তারা বা পুনর্দখলের চেষ্টা করে তাহলে বিক্ষুব্ধ ছাত্রসমাজ তাদের বিরুদ্ধে আবারো রাস্তায় দাঁড়াবে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটলে প্রশাসন দায়ী থাকবে বলে জানান তিনি। এ সময় ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানান।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ঢাবির হলগুলোর প্রভোস্ট স্বাক্ষরিত অঙ্গীকারনামায় জানানো হয়, হলের অভ্যন্তরে কোনো ধরনের ছাত্ররাজনীতি (ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্রশিবির) নিষিদ্ধ করা হলো। কোনো ধরনের পলিটিক্যাল গণরুম বা পলিটিক্যাল রুম থাকবে না। কোনো ধরনের পলিটিক্যাল প্রোগ্রাম হবে না। কোনো ধরনের পলিটিক্যাল সম্পৃক্ততা হলের সাথে থাকবে না। আমরা হলের শিক্ষার্থীরা (স্ব স্ব হলের শিক্ষার্থীরা) যদি এসব দলের দ্বারা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই, তাহলে এই দায় প্রশাসন ও হল প্রভোস্টকে নিতে হবে। অনির্দিষ্টকাল বন্ধ ঘোষণার আগে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় মেধার ভিত্তিতে সিট দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের সূত্র ধরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত জানায় ঢাবি প্রশাসন।
ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা : আজ বাদ জুমা শহীদদের স্মরণে মসজিদ, মন্দির ও গির্জায় প্রার্থনা, দেশব্যাপী গায়েবানা জানাজা ও শোকমিছিল আহ্বান করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ। গতকাল রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নিরীহ ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারদলীয় ক্যাডারা নগ্নভাবে হামলা করে। শত শত মানুষকে শহীদ করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি; উপরন্তু নির্যাতিত ছাত্রসমাজের ওপরই ফের গণগ্রেফতার চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব সন্ত্রাসী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে, তারাই এখন নির্যাতিত ছাত্রজনতার বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। পুলিশ বাদি হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হাজার হাজার মামলা দায়ের করছে; যাকে যেখানে পাচ্ছে তাকেই গ্রেফতার করছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, জুলুম নির্যাতন চালিয়ে ছাত্রজনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে দমন করা যাবে না। শিক্ষার্থীরা শত শত শহীদের রক্তের উপযুক্ত প্রতিশোধ না নিয়ে ঘরে ফিরবে না। ৯ দফা দাবি বাস্তবায়ন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলনকে অব্যাহত রাখব। ইতোমধ্যে আমাদের শত শত ভাই শহীদ হয়েছেন। সুতরাং তাদের রক্তের সাথে বেঈমানী করে পেছনে হটার কোনো সুযোগ নেই।
এমতাবস্থায় আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে দেশব্যাপী সব শহীদের স্মরণে শুক্রবার সারা দেশে মসজিদ, মন্দির ও গির্জাসহ সব ধর্মীয় স্থানে প্রার্থনা, বাদ জুমা দেশব্যাপী গায়েবানা জানাজা এবং শহীদদের স্মরণে শোকমিছিল অনুষ্ঠিত হবে। গ্রাম, হাটবাজার, উপজেলা শহর জেলা শহরসহ সব স্থানের প্রতিটি মসজিদ থেকে গায়েবানা জানাজা শেষে শোকমিছিল বের করুন। প্রতিটি শহীদের নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদদের স্মরণে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করুন। নিষ্ঠাবান শিক্ষকবৃন্দের প্রতি আহ্বান, ছাত্রদের স্মৃতিস্তম্ভ তৈরিতে সহযোগিতা করুন। জুমার নামাজ শেষে মসজিদে দেশপ্রেমিক শহীদদের জন্য দোয়া করুন এবং মন্দির-গির্জায় স্বীয় রীতিতে প্রার্থনার আয়োজন করুন। মনে রাখবেন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। দেশপ্রেমিক শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে না। বাংলাদেশে ছাত্রদের কখনই দমন করা যায়নি, আজো যাবে না। শহীদের প্রতি ফোঁটা রক্তের প্রতিশোধ না নেয়া অব্দি আমাদের থেমে যাওয়ার অবকাশ নেই।


আরো সংবাদ



premium cement