০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

নিরাপত্তা বাহিনীর সরাসরি গুলিতে উদ্বেগ জাতিসঙ্ঘের

ক্র্যাকডাউনের বিস্তারিত তথ্য জরুরিভাবে প্রকাশের আহ্বান
-

নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সরাসরি গুলি ব্যবহারসহ বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেছে জাতিসঙ্ঘ। এ উদ্বেগের কথা প্রকাশ্য বিবৃতির মাধ্যমে জানানো হয়েছে, একইভাবে ঢাকায় ও নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে সরাসরি জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
গতকাল নিউ ইয়র্কে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারেক এসব কথা বলেন। তাকে প্রশ্ন হয়েছিল, একটি বিশেষ বাহিনীসহ নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এর ফলে শিক্ষার্থীরা নিহত হয়েছেন। জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ কি শান্তিরক্ষা বাহিনীতে বাংলাদেশের ভূমিকার ওপর কোনো প্রভাব পড়বে?
উত্তরে ডুজারেক আরো বলেন, শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ভূমিকাকে আমরা সম্মান করি। মিশনে যেসব সদস্যকে পাঠানো হয় তাদের বিষয়ে মানবাধিকারের রেকর্ড যাচাইয়ের ক্ষেত্রে প্রথমত সদস্য দেশগুলো দায়ী। তাদেরকে নিশ্চিত করতে হয় যে, যেসব সদস্যকে শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েনের জন্য মনোনীত করা হয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বা মানবাধিকার বিষয়ক আইন লঙ্ঘন করেননি অথবা জাতিসঙ্ঘ থেকে তাদের কখনো ফেরত পাঠানো হয়নি। এ ইস্যুতে আমরা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কর্তৃপক্ষের সাথে স্পষ্টতই যুক্ত রয়েছি। আমরা এটি নিশ্চিত করতে চাই যে, আমাদের মানবাধিকার বিষয়ক নীতির সব চাহিদা মেনে চলা হয়েছে।
মুখপাত্রকে আবারো প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যবসায়ী নেতারা অবহিত করেছেন যে, ছাত্র আন্দোলনকে পুঁজি করে পরিত্যক্ত একটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের পক্ষ থেকে কি কোনো পর্যবেক্ষণ আছে?
জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যা ঘটছে, যে গণগ্রেফতার ও হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তা আমরা দেখেছি। সব সহিংস কর্মকাণ্ডের তদন্ত স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে হওয়া উচিত। এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত, যা হবে সংলাপের উপযোগী। বিশ্বের বিভিন্ন অংশে, বিভিন্ন দেশে সম্প্রতি আমরা প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখেছি। তরুণরা সেখানে বিশ্বের অবস্থা, তাদের ভবিষ্যৎ, প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি হতাশা প্রকাশ করেছেন। এর একটি অংশ হলো সরকারের শাসনব্যবস্থা। আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা যেভাবে অন্যায় করে যাচ্ছে, এতে তার প্রভাব রয়েছে। তারা পরিস্থিতিকে এমন উপায়ে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়নি, যাতে তরুণরা আহত না হন। বিশ্বজুড়ে সব জায়গায়ই এমন কিছু আমরা প্রত্যক্ষ করছি। কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যেখানেই প্রতিবাদ বিক্ষোভ হোক, জনগণকে গ্রেফতারের আতঙ্ক, আহত হওয়ার আতঙ্ক অথবা তার চেয়েও খারাপ কোনো অবস্থার আতঙ্ক ছাড়াই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বিক্ষোভ করতে দেয়া উচিত।
ক্রকডাউনের বিস্তারিত তথ্য জরুরিভাবে প্রকাশের আহ্বান : বিক্ষোভকারীদের ওপর ক্র্যাকডাউনের বিস্তারিত তথ্য জরুরি ভিত্তিতে প্রকাশ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক।
গতকাল জেনেভা থেকে দেয়া বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, সহিংসতার ভয়াবহতা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণে গত সপ্তাহে বাংলাদেশে বিক্ষোভকারীদের ওপর ক্র্যাকডাউনের বিস্তারিত তথ্য জরুরি ভিত্তিতে প্রকাশ করার জন্য আমি বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোর মতে, সহিংসতায় ১৭০ জন নিহত এবং হাজারো মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কিছু মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে। সরকারের নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র-তরুণদের প্রতিবাদের কারণে অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। অন্তত দুইজন সাংবাদিক নিহত ও অনেক সাংবাদিক আহত হয়েছেন। বিরোধী নেতাসহ হাজারো মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিহত, আহত ও আটক ব্যক্তিদের তথ্য পরিবারগুলোকে দেয়া এখন অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, সাংবাদিক ও গণমাধ্যমসহ সব মানুষকে মুক্তভাবে যোগাযোগের জন্য আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সরকারকে অবশ্যই অবিলম্বে পূর্ণ ইন্টারনেট সুবিধা পুনর্বহাল করতে হবে। সরকারকে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। সহিংসতার অন্তর্নিহিত ইস্যুগুলো নিয়ে প্রকাশ্য সংলাপের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতি ও মান নিশ্চিত করতে হবে।
জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার প্রধান বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠা ঘটনাগুলো সম্পর্কে আমি বাংলাদেশ সরকারকে নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত করার আহ্বান জানাই। এ ব্যাপারে সরকারকে সমর্থন দেয়ার জন্য আমার কার্যালয় প্রস্তুত রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement