০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ব্যাংকের শাখায় গ্রাহকের টাকা তোলার ভিড়

মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গতকালের চিত্র। ছবিটি বেলা সাড়ে ১১টার : নয়া দিগন্ত -

ক্রেডিট কার্ড, ঋণের কিস্তি ও বিভিন্ন সঞ্চয়ী স্কিমের কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থদের কাছ থেকে বাড়তি সুদ বা ফি আদায় করা যাবে না। চলমান ছাত্র আন্দোলনের কারণে তিন কার্যদিবস ব্যাংক বন্ধ ছিল। এ কারণেই যারা এ সময়ে তাদের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেননি তাদের জন্যই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গতকাল পৃথক দু’টি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। এ নির্দেশনা পরিপালনের জন্য গতকালই সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানদেরকে অবহিত করা হয়েছে।
এ দিকে রবি, সোম ও মঙ্গলবার সাধারণ ছুটির কারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও বন্ধ ছিল। গত বৃহস্পতিবার থেকে কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের তীব্রতার কারণে এর পরবর্তী দিনগুলোতে এটিএম বুথগুলোতেও টাকা রিফিল করতে পারেনি অনেক ব্যাংক। এ কারণে এ সময়ে অনেকেই প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে টাকাশূন্য এটিএম বুথগুলো থেকে অর্থ উত্তোলন করতে পারেনি। আর এ কারণেই গতকাল চার ঘণ্টা ব্যাংক খোলা থাকায় গ্রাহকরা তাদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে ব্যাংকের শাখায় ভিড় জমান। অনেক ব্যাংকেই গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। তবে গতকাল টাকা জমা দেয়ার চেয়ে উত্তোলনই হয়েছে বেশি। গতকাল মতিঝিল ব্যাংকপাড়ায় সরেজমিন ঘুরে শাখাগুলোতে এ চিত্র দেখা যায়। গ্রাহকরা বলেন, গত কয়েকদিন ইন্টারনেট না থাকায় মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ও ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা সরবরাহ কম থাকায় কাক্সিক্ষত সেবা মেলেনি। এ কারণে ব্যাংকগুলোর শাখায় নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা তুলতে গ্রাহকদের লম্বা লাইন দেখা গেছে।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারি হওয়া সার্কুলারে বলা হয়েছে, কারফিউ ও সাধারণ ছুটির সময়ে যাদের ঋণের বকেয়া, ক্রেডিট কার্ডের বিল ও সঞ্চয়ী আমানতের কিস্তি দেয়ার সময় ছিল, তারা ৩১ জুলাই পর্যন্ত তা জমা দিতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ১৮-২৫ জুলাই সময়ে প্রদেয় কিস্তির জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো ধরনের বাড়তি সুদ, জরিমানা, বিলম্ব মাশুল আদায় করতে পারবে না। এই সময়ে কিস্তির টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় কোনো সঞ্চয় স্কিম বাতিলও করা যাবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নির্দেশনার ফলে যেসব গ্রাহক এই সময়ে ব্যাংকে বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিল বা কিস্তির অর্থ জমা দিতে পারেননি, তাদের কোনো সমস্যা হবে না। টাকা জমা দিতে এখন তারা বাড়তি সময় পাচ্ছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে অনেক ঋণগ্রহীতা ও ক্রেডিট কার্ড গ্রাহক ব্যাংকে তাদের বকেয়া অর্থ নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করতে সক্ষম হননি। এ ছাড়া অনেক আমানতকারী ডিপোজিট পেনশন স্কিমসহ (ডিপিএস) বিভিন্ন সঞ্চয়ী স্কিমের কিস্তি নির্ধারিত সময়ে জমা দিতে পারেননি। এমন প্রেক্ষাপটে ১৮ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত পরিশোধযোগ্য ঋণের বকেয়া অর্থ পরিশোধ, ক্রেডিট কার্ডের বিল এবং ডিপিএসসহ বিভিন্ন সঞ্চয়ী স্কিমের কিস্তি গ্রহণের ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশনা কার্যকর হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ঋণ এবং ক্রেডিট কার্ডের পরিশোধযোগ্য অর্থ ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে পরিশোধ করা হলে এই বকেয়া অর্থের ওপর কোনো প্রকারের সুদ বা মুনাফা এবং দণ্ড সুদ, অতিরিক্ত সুদ, অতিরিক্ত মুনাফা, বিলম্ব ফি কিংবা জরিমানা (যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন) আদায় বা আরোপ করা যাবে না। ডিপিএসসহ বিভিন্ন সঞ্চয়ী স্কিমের কিস্তি গ্রাহক কর্তৃক ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে পরিশোধ করা হলে এর ওপর কোনো ধরনের বিলম্ব ফি বা জরিমানা আদায়/আরোপ করা যাবে না।
নির্দেশনায় বলা হয়, এই সময়ে কোনো সঞ্চয়ী স্কিমের কিস্তি পরিশোধে গ্রাহক ব্যর্থ হলে তা বন্ধ বা বাতিল করা যাবে না এবং পূর্বঘোষিত হারের তুলনায় কম সুদ অথবা মুনাফা প্রদান করা যাবে না। এ ছাড়া ইতোমধ্যে কোনো ঋণ বা ক্রেডিট কার্ডের ওপর সুদ বা মুনাফা ও দণ্ড সুদ বা বিলম্ব ফি এবং ডিপিএসসহ বিভিন্ন সঞ্চয়ী স্কিমের ওপর কোনো প্রকারের বিলম্ব ফি বা জরিমানা আদায় অথবা আরোপ করা হয়ে থাকলে, তা ফেরত দিতে অথবা সমন্বয় করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement