ধারণা ছিল একটা আঘাত আসবে : প্রধানমন্ত্রী
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৫ জুলাই ২০২৪, ০২:২৩
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সাম্প্রতিক ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি জানতাম যে নির্বাচন করতে দেবে না। তার পরও নির্বাচন করে ফেলেছি। নির্বাচন করার পর গ্রহণযোগ্য হবে না, সেটাও গ্রহণযোগ্য আমরা করতে পেরেছি, সরকার গঠন করতে পেরেছি। আমার একটা ধারণা ছিল এই ধরনের একটা আঘাত আবার আসবে।’
গতকাল বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এডিটরস গিল্ডসের উদ্যোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও হেড অব নিউজ এবং সিনিয়র সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। বাংলা ট্রিবিউন।
কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে অনেক বড় ষড়যন্ত্র ছিল জানিয়ে সরকার প্রধান বলেছেন, এটা যে একটা বিরাট চক্রান্ত বোঝাই যাচ্ছিল। এই যে লোক চলে আসা, আমরা কিন্তু আগে থেকে খবর পেয়েছি লোক ঢুকবে। গোয়েন্দা দিয়ে সমস্ত হোটেল, যেখানে তারা থাকতে পারে সেগুলো কিন্তু নজরদারিতে আনা হয়েছে। ওরা সেখানে ছিল না; এরা চলে এসেছে ঢাকার ঠিক বাইরের পেরিফেরিতে (সংলগ্ন এলাকায়)।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারা দেশ থেকে শিবির-জামায়াত এরা এসেছে। সাথে ছিল ছাত্রদলের ক্যাডাররাও। যতগুলো ঘটনা ঘটেছে এরাও (বিএনপি) সক্রিয় ছিল।’ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আরেকটা জিনিস খেয়াল করবেন তখনো কিন্তু লাশ পড়েনি। কিন্তু স্টেট ডিপার্টমেন্টের (যুক্তরাষ্ট্রের) বক্তব্যে এসে গেল যে লাশ পড়েছে। লাশের খবর তাদের কে দিলো? তাহলে লাশ ফেলার নির্দেশটা কে দিয়েছে? এটাও খবর নেয়া দরকার। এবং তারপরে কিন্তু লাশ পড়তে শুরু করল।’
সাম্প্রতিক সহিংসতায় মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বাংলাদেশ টেলিভিশন, দুর্যোগ ভবন, সেতু ভবন, বিআরটিএ অফিস, ডাটা সেন্টারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) এইভাবে কেন সুযোগটা সৃষ্টি করে দিলো সেই জবাবটাও জাতির কাছে তাদেরকে দিতে হবে। আমরা তো বারবার তাদের সাথে বসলাম। প্রজ্ঞাপনও করা হলো। তাদের কোনো দাবি পূরণ করা ছাড়া রাখিনি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে দাবি তারা করেছিল কোটা সংস্কারে, যতটুকু চেয়েছিল তার থেকে অনেক বেশি দিয়েছি। যখন তাদের দাবি মেনে নেয়া হলো, তার পরও তারা এই জঙ্গিদের সুযোগ করে দিলো কেন? কোটা আন্দোলনকারীদের কিন্তু জাতির কাছে এক দিন এই জবাব দিতে হবে। কেন মানুষের এত বড় সর্বনাশ করার সুযোগ করে দিলো?’
আন্দোলনকারীদের প্রতি সরকারের সহানুভূতিশীল মনোভাবের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সব সময় তাদের সাথে সহানুভূতি দেখিয়েছি। তাদেরকে সব সময় নিরাপদ রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু যেসব ঘটনা ঘটেছে- এটা কখনো ক্ষমা করা যায় না।’
দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ রেখে তিনি বলেন, যারা দেশের এই সর্বনাশটা করল, যারা আজকে গণমানুষের আর্থসামাজিক উন্নতির জন্য, তাদের আয় বৃদ্ধি, তাদের চলাচলের সুবিধার জন্য, জীবনমান উন্নত করবার জন্য যতগুলো স্থাপনা তৈরি করেছি সবগুলোতেই তারা আঘাত করেছে, ভেঙে দিয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এতে ক্ষতিটা কার হলো? নিশ্চয়ই জনগণের। এখানে তো জনগণকেই রুখে দাঁড়াতে হবে, এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, জনগণকেই সোচ্চার হতে হবে। কারণ এরা তো কোনোদিনই কোনো দেশে ভালো কিছু করতে পারেনি।’
বিগত বছরগুলোতে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকা এবং স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জঙ্গিবাদ দমন করে দীর্ঘসময় একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করেছি। সেই জায়গাটায় আজকে চরম একটা আঘাত দিলো।’
সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে কারফিউ দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি চাইনি আমাদের গণতান্ত্রিক ধারায় এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটুক, কারফিউ জারি হোক। ...একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশে এটা আসুক আমাদের কাম্য ছিল না। কিন্তু না দিয়ে কোনো উপায় ছিল না। না দিলে আরো যে কত লাশ পড়ত তার হিসাব নেই।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সংগ্রামের পর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত ছিল, দেশের উন্নতিও করতে পেরেছিলাম। মাত্র ১৫ বছরের মধ্যে যে উন্নয়ন করেছি আর এর আগে কে পেরেছে!’
গণমাধ্যমগুলোকে সঠিক সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে গুজব প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা ঠিক অনেকে গুজবে কান দেয়। কান নিয়ে গেছে চিলে, ওটার পেছনে ছোটে, কানে হাত দিয়ে দেখে না, কান আছে কি না। মিথ্যাচারের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করেন, মানুষ যাতে সঠিক তথ্য জানতে পারে সেভাবে সংবাদগুলো পরিবেশন করুন।’
তিনি আরো বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি এর সুফলও মানুষ পেলো, কুফলও পেল। আপনাদের কাছে যা তথ্য আছে, আপনারা তা ব্যাপকভাবে প্রচার করে জনমত সৃষ্টি করুন।’
মতবিনিময় সভা সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো: নাঈমুল ইসলাম খান। স্বাগত বক্তব্য দেন- এডিটরস গিল্ডসের প্রেসিডেন্ট মোজাম্মেল হক বাবু।
এরপর বক্তব্য রাখেন- সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, ডিবিসি টেলিভিশনের এডিটর ইন চিফ মঞ্জুরুল ইসলাম, ভোরের কাগজ সম্পাদক এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, ঢাকা জার্নালের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, নাগরিক টেলিভিশনের হেড অব নিউজ ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব দীপ আজাদ, আমাদের সময়ের নির্বাহী সম্পাদক মাঈনুল আলম, বাংলাদেশ জার্নালের সম্পাদক শাহজাহান সরদার, ডিবিসি টেলিভিশনের নিউজ এডিটর জায়েদুল আহসান পিন্টু, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের হেড অব নিউজ আশিষ সৈকত, বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, একাত্তর টিভির হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ, অ্যানার্জি অ্যান্ড পাওয়ারের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ, কিংস নিউজের হেড অব নিউজ নাজমুল হক সৈকত এবং আরটিভির হেড অব নিউজ মামুনুর রহমান খান।
মালয়েশিয়া পেরোডুয়া গাড়ি তৈরি করতে পারে বাংলাদেশে: প্রধানমন্ত্রী
বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশিয়াকে তাদের পেরোডুয়া ব্র্যান্ডের গাড়ি বাংলাদেশে তৈরির কারখানা স্থাপনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। গতকাল সকালে মালয়েশিয়ার বিদায়ী হাইকমিশনার হাজনাহ মো: হাশিম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার সাথে বিদায়ী সাক্ষাৎ করার সময় তিনি এই আহ্বান জানান।
বৈঠকে দূত বলেন, স্থানীয় পিএইচপি মোটরস এখানে মালয়েশিয়ান ব্র্যান্ড পেরোডুয়া গাড়ি জড়ো করছে। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব মোহাম্মদ নাঈমুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
পিএইচপি পরিবারের পিএইচপি মোটরস মালয়েশিয়ার একটি শীর্ষস্থানীয় অটোমোবাইল ব্র্যান্ড পেরোডুয়ার সাথে তাদের গাড়ি ও এসইউভিগুলো বাংলাদেশে একত্রিত করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করার জন্য চুক্তি করেছে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ও হাইকমিশনার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমল থেকে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী ও বিদ্যমান সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন।
ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, সে বিষয়ে হাশিম প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে আপনার সামর্থ্যরে ওপর আমার আস্থা আছে। আপনি পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে ও ভালোভাবে মোকাবেলা করছেন। এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’ দূতের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রেসসচিব বলেন, ‘তিনি দেখছেন সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আছে।’
হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে- যা মূলত দু’টি টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি রবি ও এডটকো বাংলাদেশ দ্বারা চালিত হয়েছে এবং তারা এখানে তাদের মুনাফা পুনঃবিনিয়োগ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে মালয়েশিয়ার বেশ কিছু শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।
মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যসুবিধা তুলে ধরে দূত বলেন, তাদের অনেক হাসপাতাল সিঙ্গাপুরের কাছাকাছি। তবে চিকিৎসাসেবা বিবেচনা করলে খরচ সে তুলনায় কম। তাই, বাংলাদেশীরা সেখানে স্বাস্থ্যসুবিধা নিতে পারেন। কারণ, সিঙ্গাপুরের ৭০ জনেরও বেশি চিকিৎসক মালয়েশিয়ার।
অ্যাম্বাসেডর-এট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ও মুখ্যসচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা