১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

দেশের সর্বত্র মামলা আতঙ্ক

গ্রেফতার হওয়া প্রিয়জনকে দেখতে আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করেন স্বজনরা : নয়া দিগন্ত -

- কারাগারে বিএনপি-জামায়াতের হাজারের বেশি নেতাকর্মী
- রিমান্ড শেষে আমীর খসরু কারাগারে, ডা: সৈয়দ তাহের ৫ দিনের রিমান্ডে

চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউনের পর গত পাঁচ দিনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর আটক সহ¯্রাধিক নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর এলাকার বিভিন্ন থানা থেকে গ্রেফতার হওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ ৩৯৬ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। এছাড়া নাশকতার বিভিন্ন মামলায় আরো ২৫ জনকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। এদিকে গ্রেফতার আতঙ্কে রাজধানীসহ সারা দেশের বিরোধী নেতাকর্মীরা এখন ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
কারফিউয়ের মধ্যে গ্রেফতার বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে তিন দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মইনুল ইসলাম তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এদিকে নাশকতার বিভিন্ন মামলায় রিমান্ডে নেয়া ২৫ জনের মধ্যে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ধানমন্ডি থানার মামলায় গতকাল তাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে বিচারক পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত আটক বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ আমান, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক, ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর প্রমুখ।
এর মধ্যে আমীর খসরু ও নিপুণ রায়কে গত রোববার তিন দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। রিমান্ড শেষে নিপুণকে মঙ্গলবার কারাগারে পাঠানো হয়। অপর দিকে মিয়া গোলাম পরওয়ার, টুকু, আমিনুল ও নুরকে রোববার পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। আদালত সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার প্রায় পাঁচশ এবং গত পাঁচ দিনে সহ¯্রাধিক নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ২৩ জুলাই ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীসহ ৪৭৪ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে গত ২২ জুলাই ৩৯৪ জন, ২১ জুলাই ১৮৮ জন, ২০ জুলাই ১৪২ জন ও ১৯ জুলাই ৬০ জন আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার নাশকতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ নানা অভিযোগে ঢাকা মহানগরের ৩৭টি থানার মামলায় গ্রেফতার ৪৭৪ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। তাদেরকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

কারাগারে যাওয়া আসামিদের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা রয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানার ৩৭ জন, বাড্ডা থানার ৫০ জন, ভাটারা থানার ১৮ জন, মোহাম্মদপুর থানার আটজন, আদাবর থানার চারজন, তেজগাঁও থানার ১১ জন, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ছয়জন, হাতিরঝিল থানার ১৩ জন, রমনা মডেল থানার একজন, তুরাগ থানার সাতজন, উত্তরা পূর্ব থানার ২৪ জন, উত্তরা পশ্চিম থানার ছয়জন, পল্টন মডেল থানার চারজন, মতিঝিল থানার সাতজন, শাহজাহানপুর থানার ছয়জন, রামপুরা থানার ১৮ জন, সবুজবাগ থানার একজন, কলাবাগান থানার তিনজন, নিউমার্কেট থানার আটজন, সূত্রাপুর থানার পাঁচজন, ওয়ারী থানার ৪১ জন, ক্যান্টনমেন্ট থানার দু’জন, রূপনগর থানার ১২ জন, পল্লবী থানার ১৮ জন, কাফরুল থানার ছয়জন, কদমতলী থানার ৪৪ মামলায়, ধানমন্ডি থানার সাতজন, মুগদা থানার ছয়জন, যাত্রাবাড়ী থানার ২৬ জন, ডেমরা থানার মামলায় ১৮ জন, বনানী থানার ৩৮ জন, গুলশান থানার চারজন, বিমানবন্দর থানার দু’জন, কোতোয়ালি থানার পাঁচজন, বংশাল চারজন থানার, লালবাগ থানার চারজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ডা: তাহেরসহ ৭ জন রিমান্ডে : সরকারি কাজে বাধা ও ক্ষতিসাধনের অভিযোগে করা মামলায় জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নায়েবে আমির ডা: আব্দুল্লাহ মো: তাহেরসহ সাত জনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডভুক্ত অপর আসামিরা হলেন- ড্যাবের সাবেক সভাপতি ডা: মো: সালেহ উদ্দিন সাঈদ (৫৯), জামায়াতের শ্যামপুর থানা সেক্রেটারি মো: কামরুল আহসান রিপন (৫০), জামায়াত নেতা আলহাজ মো: মোবারক হোসেন (৭৩), মোহাম্মদ আলী (৪৫) ও মেহেদী হাসান (২২)। বুধবার তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্তের জন্য তাদের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসির পুলিশ পরিদর্শক এসএম রাইসুল ইসলাম। অপর দিকে তাদের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে আসামিদের গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর তাদের ধানমন্ডি থানার নাশকতার মামলায় সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে হাজির করা হয়।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ২০ জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলনের ইস্যুকে পুঁজি করে দুষ্কৃতকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে ধানমন্ডি থানা এলাকায় লাঠিসোঠা ও ইটপাটকেলসহ অবস্থান করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটায়। আনুমানিক তিন শ’ থেকে চার শ’ জন অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারী সাতমসজিদ রোডের শংকর বাসস্ট্যান্ডে রাস্তার উভয় পাশে বেআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে রাস্তার মাঝখানের আইল্যান্ডের ১৫৫টি লোহার রেলিং ল্যাম্পপোস্ট এবং সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় অতর্কিত আক্রমণ করে একটি গাড়ি ভাঙচুর ও একটি পিকআপ ভ্যানে অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় ধানমন্ডি থানার এমআই কামরুল ইসলাম বাদি হয়ে একটি মামলা করেন।

রাজধানীতে ১৮০০ গ্রেফতার : ৪ দিনে সারা দেশে প্রায় ৪ হাজার
কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে বিক্ষোভের জেরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বুধবার ভোর পর্যন্ত রাজধানীতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীসহ প্রায় এক হাজার ৮০০ জন গ্রেফতার হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীসহ আরো প্রায় দেড় হাজার জন গ্রেফতার হয়েছে।
এ নিয়ে গত চার দিনে সারা দেশে গ্রেফতারের সংখ্যা প্রায় চার হাজার ছাড়িয়েছে। সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গতকালও বিভিন্ন জেলায় নতুন করে মামলা হয়েছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল বুধবার ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার জানান, রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ, হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গত মঙ্গলবার পর্যন্ত দায়ের করা ১৫৪টি মামলায় এক হাজার ৭৫৮ জনকে (মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত) গ্রেফতার করা হয়েছে।
ডিএমপি সূত্র জানায়, ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের অনেকে বিএনপি, জামায়াতের নেতাকর্মী।
নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দলের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। গত মঙ্গলবার রাতে পুলিশ রাজধানীর বারিধারায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুর বাসায় অভিযান চালিয়েছে। বুলুর ছেলে সানিয়াতকে পুলিশ আটক করেছে বলে জানায়। এ ছাড়া সাবেক যুবদল নেতা এস এম জাহাঙ্গীরকে পুলিশ আটক করে। এ ছাড়া মঙ্গলবার রাতে নেতাকর্মীর বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে বলে বিএনপি সূত্র জানিয়েছে।
এ দিকে সূত্র জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশিলতার ঘটনায় গত পাঁচ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন থানার দায়ের হওয়া বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার এক হাজার ২৫৮ আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীসহ আরো ৪৭৪ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত ২২ জুলাই ৩৯৪ জন, ২১ জুলাই ১৮৮ জন, ২০ জুলাই ১৪২ জন ও ১৯ জুলাই ৬০ আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কারাগারে যাওয়া আসামিদের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা রয়েছেন। এরমধ্যে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানার ৩৭ জন, বাড্ডা থানার ৫০ জন, ভাটারা থানার ১৮ জন, মোহাম্মদপুর থানার আটজন, আদাবর থানার চারজন, তেজগাঁও থানার ১১ জন, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ছয়জন, হাতিরঝিল থানার ১৩ জন, রমনা মডেল থানার একজন, তুরাগ থানার সাতজন, উত্তরা পূর্ব থানার ২৪ জন, উত্তরা পশ্চিম থানার ছয়জন, পল্টন মডেল থানার চারজন, মতিঝিল থানার সাতজন, শাহাজাহানপুর থানার ছয়জন, রামপুরা থানার ১৮ জন, সবুজবাগ থানার একজন, কলাবাগান থানার তিনজন, নিউমার্কেট থানার আটজন, সূত্রাপুর থানার পাঁচজন, ওয়ারী থানার ৪১ জন, ক্যান্টনমেন্ট থানার দু’জন, রূপনগর থানার ১২ জন, পল্লবী থানার ১৮ জন, কাফরুল থানার ছয়জন, কদমতলী থানার ৪৪ মামলায়, ধানমন্ডি থানার সাতজন, মুগদা থানার ছয়জন, যাত্রাবাড়ী থানার ২৬ জন, ডেমরা থানার মামলায় ১৮ জন, বনানী থানার ৩৮ জন, গুলশান থানার চারজন, বিমানবন্দর থানার দু’জন, কোতয়ালি থানার পাঁচজন, বংশাল থানার চারজন, লালবাগ থানার চারজন রয়েছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার রাত থেকে ডিএমপি ও র‌্যাবের চিরুনি অভিযান শুরু হয়। ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো: ফারুক হোসেন বলেন, সহিংসতা ও নাশকতায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ডিএমপির চিরুনি অভিযান চলছে। এই চিরুনি অভিযানে গ্রেফতার ব্যক্তিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা: রফিক গ্রেফতার
বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ ডা: মো: রফিকুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর শান্তিনগর পপুলারের ডক্টরস চেম্বারে তিনি রোগী দেখছিলেন। এই অবস্থায় একদল পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। কি কারণে ধরে নিয়ে গেছে, পুলিশ তাকে কোনো ওয়ারেন্ট দেখিয়েছে কি না তা কেউ বলতে পারেনি। এ ব্যাপারে শান্তিনগর পপুলারের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো: ইলিয়াসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডা: রফিককে পুলিশের ধরে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত করেন। তবে কি কারণে ডা: রফিকুল ইসলামকে ধরে নিয়ে গেছে, তা তিনি বলতে পারেননি। ইলিয়াস বলেন, ‘ডা: মো: রফিকুল ইসলাম পপুলারে চেম্বার করেন। এর বাইরে তার সম্বন্ধে আমরা কিছু জানি না।

চট্টগ্রামে নেতাকর্মীরা বাড়িছাড়া
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে পুলিশি দমন-পীড়নের মুখে বাড়িতে থাকতে পারছেন না বিএনপি ও জামায়াতের হাজার হাজার নেতাকর্মী। এমন অভিযোগ করে সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন সরকার শিক্ষার্থীদের হত্যার দায় ঢাকতে উল্টো বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রামে প্রায় সাড়ে ছয় শ’ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে দায়েরকৃত ১৪টি মামলার পর গতকাল বুধবার নতুন করে একটি মামলায় ৫০০-৭০০ জন অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ১৫টি মামলা রুজু হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল নগরীর চান্দগাঁও থানায় অজ্ঞাতনামা ৫০০-৭০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আন্দোলন চলাকালে বহদ্দারহাটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিসে ভাঙচুরের অভিযোগে এ মামলা দায়ের হয়েছে বলে সিএমপি সূত্র জানিয়েছে। এ পর্যন্ত দায়েরকৃত ১৫টি মামলায় আসামি প্রায় ৩৬ হাজার।
এ দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে পুলিশ বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে। পুলিশি অভিযানের মুখে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গতকালও গ্রেফতার করা হয়েছে শতাধিক ব্যক্তিকে। যার মধ্যে মহানগরীর বিভিন্ন থানায় গ্রেফতার করা হয়েছে; এ পর্যন্ত ৩৭৩ জন।

রাজশাহীতে জামায়াত ও শিবিরের ১১ নেতাকর্মী গ্রেফতার
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ১১ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। সরকারি চাকরিতে কোট সংস্কার নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরুর পর থেকে গতকাল পর্যন্ত রাজশাহীতে শুধু জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৪৫ নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
এদিকে রাজশাহীতে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৪৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার এবং বাসা-বাড়ি ও ছাত্রাবাসে সরকারের যৌথবাহিনীর তল্লাশির নিন্দা জানিয়ে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি চেয়েছে নগর জামায়াতে ইসলামী। গতকাল রাজশাহী নগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা কেরামত আলী ও সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাহবুবুল আহসান বুলবুল এক যৌথ বিবৃতিতে গ্রেফতারের নিন্দা ও মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।

ফরিদপুরে বিএনপি নেতাসহ গ্রেফতার ৫৪
ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুরে বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকায় পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। লোকাল রুটে কিছু বাসসহ যানবাহন চলাচল শুরু করেছে। তবে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে এখনো। অফিসপাড়া খোলা ছিল। নিম্ন আদালতের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে বুধবার থেকে। এ দিকে ভাঙ্গায় পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান পান্নাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভাঙ্গায় পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে দায়েরকৃত মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ নিয়ে বুধবার পর্যন্ত ফরিদপুরে আটকের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৪ জনে।

নারায়ণগঞ্জে ৮ মামলায় ৭ হাজার আসামি
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সাথে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সংঘর্ষ, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে জেলার ৫টি থানায় ৮টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ বাদি হয়ে নাশকতার অভিযোগে ৬টি এবং নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মাহমুদুল হাসান ও নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার ওবায়েদ বাদি হয়ে দুটি মামলা দায়ের করেন। ৮টি মামলায় কয়েক হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। তবে আসামির তালিকায় নারায়ণগঞ্জ জেলা, মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মী রয়েছেন। সোমবার রাতে মামলাগুলো দায়ের করা হয়।
অন্য দিকে পুলিশের ৬টি মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা, মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং সহস্রাধিক ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৮টি মামলায় প্রায় ৭ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ দিকে সোমবার রাতে চিরুনি অভিযান চালিয়ে ৭৪ জনকে আটক করে পুলিশ। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সদরে ১১, ফতুল্লায় ১০, সিদ্ধিরগঞ্জে ১২, সোনারগাঁয়ে ১১, আড়াইহাজারে ৮, রূপগঞ্জে ৭ ও বন্দরে ১৫ জন। পরে তাদের দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে মঙ্গলবার আদালতে পাঠায় পুলিশ। এর আগে রোববার রাতে ১১৬ জনকে আটক করা হয়।

গাজীপুরে নেতাকর্মীদের টার্গেট করে গণগ্রেফতার
গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরে পুলিশের গণগ্রেফতার চলছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পুলিশের গ্রেফতার অভিযানে বিএনপি-জামায়াত নেতারা টার্গেটে পরিণত হওয়ায় তারাও গা ঢাকা দিয়েছেন। ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশের এলাকার ছাত্রাবাসগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে। গত সোমবার রাতে ডুয়েটের পেছনের কয়েকটি ছাত্রাবাসে পুলিশ হানা দেয়ার পর শিক্ষার্থীরা এখন আতঙ্কে। পুলিশ সোমবার রাত ৩টায় ডুয়েট-সংলগ্ন ‘আপন ভুবন’ ছাত্রাবাসসহ (মেস) আশপাশের কয়েকটি ছাত্রাবাসে হানা দিয়ে দেড় শতাধিক বাসিন্দাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের অধিকাংশই ডুয়েট-সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী বলে স্থানীয়রা জানান। তবে জিএমপি পুলিশ গ্রেফতারের সংখ্যা জানালেও গ্রেফতারকৃতদের নাম পরিচয় প্রকাশ করছে না।

সিলেট বিভাগে ২৮ মামলায় আসামি ২০ সহস্রাধিক
সিলেট থেকে প্রতিনিধি জানান, কোটা আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় সারা দেশের মতো সিলেটজুড়ে চলছে গ্রেফতারের হিড়িক। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি গ্রেফতারের তালিকায় শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন। সাম্প্রতিক ঘটনায় সিলেট বিভাগে পুলিশ বাদি হয়ে ২৮টি মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় ২০ হাজারের বেশি মানুষকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় গতকাল বুধবার পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন অন্তত ২০০ জন। সিলেট মহানগর এলাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রেফতারের সংখ্যা ১২১ জন বলে জানানো হলেও প্রকৃত সংখ্যা বেশি হতে পারে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। মঙ্গলবার এই সংখ্যা ছিল ১০৭ জন।

বগুড়ায় ৭৭৬ জন আসামি, গ্রেফতার ৯৫
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় ৪ দিনে জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর হেনা, শহর জামায়াতের আমির আবিদুর রহমান সোহেল, সেক্রেটারি আব্দুল মালেকসহ ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরের ৭৭৬ জন নেতাকর্মীর নামে মোট ১২টি মামলা করা হয়েছে। সবশেষ বগুড়া হেড পোস্ট অফিসে ১৬ জুলাই ভাঙচুরের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে পোস্টমাস্টার আল আমিন বাদি হয়ে ৫০০ জন অজ্ঞাত নামা আসামি করে বগুড়া সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মোট দায়েরকৃত মামলা ১২টিতে ৭৭৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনাসহ ৯৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক তদন্ত শাহীনুজ্জামান জানান, মোট ৭৭৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

চাঁদপুরে পুলিশের ৯ মামলা, সহস্রাধিক আসামি
চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, চাঁদপুরে পুলিশ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত আটটি মামলা দায়ের করেছে। আসামি করা হয়েছে এক হাজার জনকে। পুলিশের গ্রেফতার অভিযান অব্যহত রয়েছে। চাঁদপুর থেকে দূরপাল্লার বাস ও লঞ্চ চলাচল সীমিত ছিল। দোকান পাট, বিপণি বিতানগুলোর ব্যবসায়ীরা অজানা আতঙ্কে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল অব্যাহত আছে। সর্বত্যই থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বিদ্যুৎ গ্রাহকদের দুর্ভোগ এখনো লাঘব হয়নি।

ময়মনসিংহে গ্রেফতার আরো ২৪
ময়মনসিংহ অফিস জানায়, ময়মনসিংহে চলমান কারফিউ পঞ্চম দিনে গতকাল বুধবার নগরীজুড়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর টহল অব্যাহত ছিল। কয়েক দিন বন্ধ থাকার পর সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকায় নগরীর বিপণি বিতানসহ দোকানপাট, অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা খোলা থাকায় জনজীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এ দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ জেলায় ছাত্র আন্দোলনের সময় দায়ের করা বিভিন্ন মামলায় আরো ২৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সখীপুরে বিএনপির ৭ নেতা গ্রেফতার
সখীপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের সখীপুরে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৭ বিএনপি নেতাকে আটক করেছে সখীপুর থানা পুলিশ। গত রোববার, সোমবার ও মঙ্গলবার দিন ও রাতের বিভিন্ন সময়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়।

মধুপুরে সহস্রাধিক আসামি
ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের মধুপুরে পৃথক মামলায় ২৭৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা এক হাজার জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। থানার এসআই ফরহাদ হোসেনের দায়ের করা মামলায় ৭৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩০০ জনকে আসামি করা হয়। ট্রাক মালিক সমিতির অফিস সহকারী কাম মালিক শ্রমিক সমন্বয় অফিসের সহকারী মুনছের আলীর মামলায় ১০৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এই মামলায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ জনকে আসামি করা হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement