০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি

-

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে গতকাল সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। সরকারি-আধাসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত/আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্বশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনের সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি সংশোধনে দেয়া প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘সরকার এই মর্মে আদেশ জারি করিতেছে যে, সমতার নীতি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রজাতন্ত্রের কর্মে প্রতিনিধিত্ব লাভ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ সরকারি-আধাসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত/ আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্বশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে/ কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সব গ্রেডে নি¤œরূপভাবে কোটা নির্ধারণ করা হইল।’
(ক) মেধাভিত্তিক শতকরা ৯৩ শতাংশ, (খ) মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, (গ) ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ, (ঘ) শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের ১ শতাংশ।
‘নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদ সাধারণ মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখার বিগত ৪ঠা অক্টোবর ২০১৮ তারিখের পরিপত্রসহ পূর্বে জারিকৃত ও এ সংক্রান্ত সব পরিপত্র/ প্রজ্ঞাপন/ আদেশ/ নির্দেশ/ অনুশাসন রহিত করা হলো। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রজ্ঞাপনটি পড়ে শোনান এবং এ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা কোটা সংস্কারে দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছেন তা কিন্তু প্রতিপালন করেছি। আমরা আগের যে সহিংসতা হয়েছে তার জন্য এক সদস্যবিশিষ্ট একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। তিনি কাজ শুরু করেছেন। আমি পত্রিকায় দেখেছি অবস্থা শান্ত হলেই তিনি স্পটগুলো ঘুরে দেখবেন। তিনি আরো বলেন, যে সহিংসতা হয়েছে এতে সাধারণ ছাত্রছাত্রী যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে সরকার। আর সাধারণ ছাত্রছাত্রী যারা এই কোটাবিরোধী আন্দোলন করছিলেন তাদের ব্যাপারে যদি কোনো মামলা হয়ে থাকে সে ব্যাপারে আমরা দেখব। আর শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার এবং সব ছাত্রছাত্রীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তার পরিবেশ সরকার তৈরি করবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সরকার আপিল বিভাগের রায় প্রতিপালন করেছেন। আপিল বিভাগের রায়ের একটা দাড়ি, কমা, সেমিকোলন বদলানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। যেহেতু নেই তারা যেভাবে দিয়েছেন আমরা সেভাবেই এটা প্রতিপালন করেছি।
আপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মূলত এটা ছিল কোটাবিরোধী আন্দোলন। ছাত্রছাত্রীরা কোটাবিরোধী আন্দোলন করছিল সংস্কার চেয়ে, আমরা সংস্কার করেছি। এখন আমাদেরও একটি বক্তব্য আছে। এখন তাদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করা উচিত, এটা তাদের কাছে আমার আহ্বান।
আইনমন্ত্রী বলেন, আপিল বিভাগ রায়ে চারটি গ্রেড করে দিয়েছেন। এর বাইরে সরকার যেতে পারবে না। কারণ এটা আপিল বিভাগের রায়। এর বাইরে যাওয়া আমাদের কোনো অভিপ্রায়ও নেই। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালত অত্যন্ত বিচক্ষণ একটি রায় দিয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালত যদি এখানে বলে শেষ করে দিতেন তা হলে ভবিষ্যৎ প্রেক্ষিত এখানে বাদ থাকত। যদি বদলাতে হতো তা হলে রিভিউ করতে হতো। তার কারণ হচ্ছে এটা সর্বোচ্চ আদালত। রিভিউ করার সময়ও চলে যেত। এই জন্য সর্বোচ্চ আদালত ভবিষ্যতের কথা বলেছেন। সেই ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে যদি প্রয়োজন হয় তখন দেখা যাবে। এ বিষয়ে আগে কোনো আইন ছিল না। এটা সরকারের পলিসি ম্যাটার এবং এটা পরিপত্র ও প্রজ্ঞাপন দ্বারাই বলা হতো।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায় সে ব্যাপারে সচেষ্ট। আপনারা আশা করতে পারেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এটা শুধু কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের কোটা সংস্কারের আন্দোলনে ছিল না। এটা জঙ্গিরা এবং বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির এবং ছাত্রদলের যারা তারা এই আন্দোলনের সাথে সংযুক্ত হয়ে দেশ নষ্ট করার চেষ্টা করেছে।
সরকার প্রয়োজন ও সার্বিক বিবেচনায় আদালত কর্তৃক নির্ধারিত কোটা বাতিল, সংশোধন ও সংস্কার করতে পারবে বলে আপিল বিভাগের আদেশ সম্পর্কে আইনমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে যদি কোনো সমস্যা হয় তা হলে রিভিউ করার প্রশ্ন উঠত। কিন্তু আদালত অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে একটি সুদূরপ্রসারী কথা বলে দিয়েছেন। আমাদের যদি কোনো সময় মনে হয় এটা পরিবর্তন করার বা এটা বাতিল করে দেয়ার বা এটা আরেকটু কমানোর সেটা আমরা করতে পারি। তবে এখন নয়, তার কারণ হচ্ছে- আমার মনে হয় সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন সেটাতে হাত দিলে আইনের শাসনের প্রতি মারাত্মক হবে, এটা আমরা করব না। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে যে সমস্যা হয়েছিল, সেটা দূর করা হয়েছে।
আন্দোলনে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন ভাষণ দেন তখন একটা কথা বলে দিয়েছেন যারা তখন মৃত্যুবরণ করেছিল সেই হতাহতের ব্যাপারে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। আমরা সেই কথায় আছি। এই ব্যাপারে কিন্তু একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত চলছে। সেটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এ ব্যাপারে কোনো কথা বলব না। তিনি বলেন, আমরা যেহেতু সমস্যার সমাধান করে দিয়েছি সেহেতু এইটুকু বলতে পারি যে, আমাদের বিশ^াস নতুন করে কোনো সমস্যা তৈরি করা হবে না এবং এই পরিস্থিতির অবনতি হবে না। যদি অবনতি ঘটানোর চেষ্টা কোনো অপশক্তি করে, সে ব্যাপারে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবো। জনজীবনে যখন স্বস্তি আসবে আমরা অবশ্যই কারফিউ প্রত্যাহার করব।
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে শান্তিপূর্ণ মুভমেন্টের মধ্যে সহিংসতা ঢোকানোর পরিকল্পনা এটা তারা আগে থেকে করেছে। তাদের মধ্যে প্রস্তুতি ছিল যে তারা ডাটা সেন্টার জ্বালিয়ে দেবে। ইন্টারনেট থেকে দেশকে একেবারে অ্যাপসেন্ট করে ফেলবে। ইন্টারনেটের অনুপস্থিতিতে আমরাও বিপদে পড়েছি। আমরা কিন্তু গ্লোবালি কমিউনিকেশন করতে পারিনি। আমরা যখন পারিনি তাদের যে সিন্ডিকেট মিস ইনফরমেশন বিদেশ থেকে আপনারা চেনেন তারা কারা। তারা কিন্তু এটা করেছে। যেহেতু তারা জানত তাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইন্টারনেটকে বাংলাদেশের যেভাবে তারা ইন্টারপ্রিয়েট করবে। তারা কিন্তু পাঠিয়েছে। এটার প্রতিফলন দেখছে গ্লোবালি ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া। ভুল তথ্যগুলো এজন্য দিচ্ছে। যে আক্রমণগুলো হয়েছে এগুলোর কোনো খবর নেই। ছাত্রদের সাথে যে আমাদের সরকারে অ্যাংগেজমেন্ট, তাদের সাথে যে শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়ে গেছে এটিও নেই। সন্ত্রাসীদের আক্রমণ এটিও নেই। আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে এই অপতথ্যের বিরুদ্ধে আপনারাও খবর পাঠান। ইন্টারনেট স্বল্পমাত্রায় যাতে আনা যায় সে প্রচেষ্টা চলছে। এর আগে গত ২১ জুলাই সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিল ও রহিত করে ঘোষণা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন বিচারপতির আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ বিষয়ে করা দু’টি লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে এ রায় ঘোষণা করেন।


আরো সংবাদ



premium cement
বন্যায় ফেনীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষতি ৩৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা রাজশাহীতে সাবেক রাবি ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হাতে আমেরিকান নাগরিকের হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত চায় পরিবার শিক্ষা জাতি গঠনের প্রধান হাতিয়ার : ড. ইউনূস দুই ‘আইরিশের’ গোলে হারল আয়ারল্যান্ড নতুন জার্মানির পুরনো রূপ, উড়িয়ে দিয়েছে হাঙ্গেরিকে বাংলাদেশের পর্যটক না যাওয়ায় ধুঁকছে কলকাতা তালেবানের কূটনৈতিক বিজয়, কিরগিজস্তানের সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ ভারতের ৬০ কিমি এলাকা দখল করে ফেলেছে চীন? জনমত সমীক্ষার পাশাপাশি তহবিল সংগ্রহেও কমলা পিছনে ফেললেন ট্রাম্পকে

সকল