০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

কারফিউতে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ : মৃত্যু ২

-

কমপ্লিট শাটডাউনের অংশ হিসেবে কারফিউ চলার মধ্যেও রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরসহ কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভে নামেন তারা। এ ছাড়া গতকালও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে দুইজনের। আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন কয়েকশত।
এ দিকে কারফিউ চলাকালে গোটা রাজধানীতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বিরোধী নেতাকর্মীরা রয়েছেন ধরপাকড়ের চরম আতঙ্কে। অলি-গলির মধ্যে কিছু দোকানপাট খুললেও বন্ধ রয়েছে সব ধরনের মার্কেট-শপিংমল, সুপারশপ। প্রধান সড়কের দুই পাশের কোনো প্রতিষ্ঠানই খোলেনি। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহনসহ সব ধরনের যানবাহন। বিশেষ প্রয়োজনে কেউ প্রাইভেট কার ও রিকশা বা মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচল করলেও তাকে নিতে হচ্ছে কারফিউ পাস। বাজারে দেখা দিয়েছে নিত্যপন্যের চরম সঙ্কট। যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে তা বিক্রি হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি দামে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল আরো দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- মো: হৃদয় (২২) ও মো: আবু তালেব (১৯)। দুজনই গুলিতে আহত হয়ে ঢামেকে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হৃদয়। তিনি গত ২১ তারিখে চিটাগাং রোড এলাকায় গুলিতে আহত হন। পরে তাকে স্থানীয় একটি হসপিটালে নেয়া হয়। সেখান থেকে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হৃদয় চট্টগ্রামের একটি কলেজের ছাত্র। পারিবারিক কাজে ঢাকায় এসেছিলেন বলে জানা গেছে। নিহত আবু তালেব একজন রিকশাচালক, থাকতেন জুরাইন রেল গেট এলাকায়। অন্য দিনের মতো গত ২১ তারিখও তিনি রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন। কিন্তু আর জীবিত বাসায় ফিরতে পারেননি। দনিয়া এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেপরোয়া গুলির মুখে পড়েন। তখন দ্রুত ওই এলাকা থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হসপিটাল ও পরে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে গত সোমবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গত সোমবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ছয়জন। এ ছাড়া গতকালও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা ছয়জনকে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
এ দিকে কারফিউ চলা অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বরের ইনডোর স্টেডিয়ামের পাশে বিক্ষোভে নামেন আন্দোলনকারীরা। তারা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ ধাওয়া করে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা প্রতিরোধের চেষ্টা করলেই শুরু হয় সংঘর্ষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা সদস্য রাবার বুলেট, টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে। এ সময় বিক্ষোভকারীরাও পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এভাবে কিছু সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। এরপর দুপুরের দিকে পুলিশ গুলি চালিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীদের।
গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা সরাতে দেখা গেছে বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের। বিশেষ করে শনিরআখড়া, কাজলা, মাতুয়াইল চিটাগাং রোডে পড়ে থাকা ভস্মীভূত যানবাহনগুলো সরিয়ে নিতে কাজ করা হচ্ছিল। আগেই পরিষ্কার করে করা হয়েছিল রাস্তা পড়ে থাকা ইটের টুকরা, লাঠিসোটা ও জুতা-স্যান্ডেল।
ময়মনসিংহ অফিস জানায়, ময়মনসিংহে শান্তিপূর্ণভাবে কারফিউ অতিবাহিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে নগরীজুড়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর টহল অব্যাহত ছিল। গাঙ্গীনার পাড় ট্রাফিক মোড়, পাটগুদাম ব্রিজের মোড়, চরপাড়া মোড়, জামকান্দা বাসস্ট্যান্ড, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দিঘারকান্দা বাইপাস মোড়সহ নগরীর মোড়ে এবং রাস্তায় পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে অবস্থান করে। সকাল থেকে রিকশা, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। নগরীর প্রায় সব ক’টি মার্কেট ও বিপণি বিতান বন্ধ থাকলেও অলিগলিতে কিছু দোকান খোলা ছিল। চার ঘণ্টা কারফিউ শিথিলকালে খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ এবং জরুরি প্রয়োজনে নগরীতে মানুষের ঢল নামে। আমদানি কম ও চাহিদা বেশি থাকায় কাঁচা-শাকসবজি ডিম, মাছ ও গোশতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহক, মোবাইল রিচার্জ, ব্যাংক, বিকাশ, নগদ ও উপায় লেনদেন করতে না পারায় নগদ অর্থসঙ্কটে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা।
কুষ্টিয়ায় প্রতিনিধি জানায়, কুষ্টিয়ায় চলমান কারফিউ ১২ ঘণ্টা শিথিল করা হয়েছে। গতকাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কোর কমিটির এক মিটিংয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জেলা প্রশাসক এহতেশাম রেজা জানান, জেলার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। এ দিকে কুষ্টিয়ার সদরের রাস্তাঘাটে যানবাহন তেমন চলাচল না করলেও মোড়ে মোড়ে মানুষের জটলা লক্ষ করা গেছে।
দূরপাল্লার বাস চলাচল
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়। এ ছাড়া সিএনজি অটোরিকশা, ভাড়ার মোটর সাইকেলে অনেককে গন্তব্যে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পর্যন্ত সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ মোতায়েন দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিলের সময়ে রাস্তায় লোকজনের আনাগোনা বেশ বাড়ে।


আরো সংবাদ



premium cement
সামরিক ইনস্টিটিউটে রুশ হামলায় নিহতদের স্মরণে ইউক্রেনের শোক প্রকাশ বন্যায় ফেনীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষতি ৩৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা রাজশাহীতে সাবেক রাবি ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হাতে আমেরিকান নাগরিকের হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত চায় পরিবার শিক্ষা জাতি গঠনের প্রধান হাতিয়ার : ড. ইউনূস দুই ‘আইরিশের’ গোলে হারল আয়ারল্যান্ড নতুন জার্মানির পুরনো রূপ, উড়িয়ে দিয়েছে হাঙ্গেরিকে বাংলাদেশের পর্যটক না যাওয়ায় ধুঁকছে কলকাতা তালেবানের কূটনৈতিক বিজয়, কিরগিজস্তানের সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ ভারতের ৬০ কিমি এলাকা দখল করে ফেলেছে চীন?

সকল