০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯ ভাদ্র ১৪৩১, ২৮ সফর ১৪৪৬
`

উত্তাল দেশ, নিহত ৬

চাপাতি হাতে ঢাকা কলেজ এলাকায় ছাত্রলীগকর্মী (বাঁয়ে); চট্টগ্রামে আন্দোলনকারীদের ওপর যুবলীগ-ছাত্রলীগের সশস্ত্র আক্রমণ : নয়া দিগন্ত -

- ছাত্রলীগের হামলার পাশাপাশি পুলিশের গুলি আহত কয়েক হাজার
- স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রাস্তায়
- কয়েকস্থানে ক্যাম্পাস হল থেকে ছাত্রলীগ বিতাড়িত

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গতকাল পুলিশের গুলি ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এর মধ্যে রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাঈদ, চট্টগ্রামে তিনজন ও রাজধানীর ঢাকা কলেজের সামনে দু’জন নিহত হয়েছেন। দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় রাজধানী রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গতকাল বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর ১৫-২০টি স্থানে একযোগে সড়ক অবরোধ শুরু করেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সর্বাত্মক অবরোধে কার্যত অচল হয়ে পড়ে রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলো। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়াসহ দেশের প্রায় সর্বত্র সড়কে নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সাথে কলেজ ও স্কুলপড়–য়া শিক্ষার্থীদেরও গতকাল আন্দোলনে দেখা গেছে। এছাড়া হামলার প্রতিবাদে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে ছাত্রলীগকে বের করে দিয়েছে ক্ষুব্ধ সাধারণ ছাত্ররা।

গত সোমবার রাতে সশস্ত্র ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের একচ্ছত্র হামলার প্রতিবাদ করতে না পারলেও গতকাল মঙ্গলবার রুখে দাঁড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। আর এতেই শুরু হয় ব্যাপক সংঘর্ষ। শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, আন্দোলনে যুক্ত হয় বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীরাও। ভাঙচুরের শিকার হয় বিপুল পরিমাণ যানবাহন। কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিতেও দেখা গেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও বগুড়ায় পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের হামলা, কোটাবিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার এবং কোটার যৌক্তিক সমাধানের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বেলা ৩টায় দিকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও বেলা সাড়ে ১১টার দিকেই কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজধানীর বাড্ডা, কুড়িল, রামপুরা সড়ক অবরোধ করে। এরপর রাজধানীজুড়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বিভিন্ন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। সব ধরনের যানবাহনের সাথে আটকে দেয়া রেল চলাচলও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, সায়েন্স ল্যাবরেটরির সামনে, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, মিরপুর, ফার্মগেট, মহাখালী, তেজগাঁও, বিজয়নগর, পল্টন, মতিঝিল শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে কোটাবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে শুরু।
ঢাবি এখন রণক্ষেত্র : আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, গতকাল দুপুর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এলাকায় শিক্ষার্থীরা ও ছাত্রলীগ অবস্থান করেছে। একদিকে জগন্নাথ হলে অবস্থান করছেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে টিএসসিতে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। নিজ নিজ অবস্থানে দু’পক্ষের মহড়া দিতে দেখা যায়।

সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল নিস্তব্ধ। অনেক শিক্ষার্থীকে ব্যাগ নিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে দেখা যায়। বেলা ১টার দিকে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়া শুরু করে। তাদের সবার মাথায় হেলমেট, হাতে রড, বাঁশ, হকি স্টিক, বেসবল স্টিক দেখা যায়। এসময় পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ এবং হাতে রড, লাঠিসোটা নিয়ে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাস নিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে বহিরাগতদের আগমন দেখা যায়।
চাকরিতে সব গ্রেডে কোটা সংস্কার করে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোটা নিয়ে করা বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হয়েছে রণক্ষেত্রে। সোমবার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় শিক্ষার্থীরা হয়েছেন আরো সঙ্ঘবদ্ধ, বেড়েছে উপস্থিতিও।

রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে তারা জড়ো হতে থাকে। এদিকে বিকেল ৩টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও হল এবং অন্যান্য স্থান থেকে জড়ো হতে শুরু করেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। তবে এদিন শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের হওয়ার সময় ছাত্রলীগের নেতাদের দ্বারা বাধা প্রদান করা নিয়ে কোনো সংঘর্ষ দেখা যায়নি। বিকেল ৪টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীদের বিপুল পরিমাণে উপস্থিতি দেখা যায়।
দুপুর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীরা ও ছাত্রলীগ অবস্থান করে। একদিকে জগন্নাথ হলে অবস্থান করছেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে টিএসসিতে অবস্থান নিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। প্রতিবেদন চলাকালীন নিজ নিজ অবস্থানে দু’পক্ষের মহড়া দিতে দেখা যায়। এর আগে, সোমবার রাত থেকেই রড হকিস্টিক, রামদা নিয়ে মহড়া দেয় ছাত্রলীগ। এ সময় বাসভর্তি কয়েক হাজার বহিরাগত ক্যাম্পাসে আনে ছাত্রলীগ।

ঢাবির আশপাশে বন্ধ যান চলাচল : দুইপক্ষের অবস্থান চলাকালে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় কোটা আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগ সন্দেহে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভেঙ্গেছে বলে জানা গেছে। হলে হলে কোটা আন্দোলনকারীদের শনাক্ত করে ছাত্রলীগ কর্মীরা নির্যাতন করে বলে জানা গেছে। সকাল থেকে বাঁশ, লাঠি নিয়ে শহীদ মিনারে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা।

সায়েন্সল্যাবে দফায় দফায় হামলা : ধানমণ্ডির ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে শুরু করে সায়েন্সল্যাব মোড় পর্যন্ত কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানিয়ে আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, ঢাকা কলেজ ও মুন্সী আব্দুর রউফ কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর শতাধিক শিক্ষার্থী রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান নেন। এ সময়, সায়েন্সল্যাব মোড়ে কোটাবিরোধীদের সাথে ঢাকা কলেজ ও দক্ষিণ মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে। সায়েন্সল্যাবে কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় ১১ জন আহত শিক্ষার্থীরা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন।

চানখারপুলে সংঘর্ষ, ৪ জন গুলিবিদ্ধ : পুরান ঢাকার চানখারপুলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়েছে। যদিও পাশে পুলিশ সদস্যদের কোনো স্টেপ নিতে দেখা যায়নি। গতকাল বিকেল পৌনে ৫টার দিকে সেখানে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ সময় উভয়পক্ষকে একে অপরের দিকে ইটপাটকেল ছুড়তে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পরপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে দেখা যায়।
ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের মহড়া ও খাওয়া-দাওয়া : গতকাল দুপুর ১টার দিকেও রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান করে বহিরাগতরা। তাদের অনেকের হাতে ছিল লাঠি, হকিস্টিক, স্ট্যাম্প। এ ছাড়া টিএসসি, পায়রা চত্বর, ডাস চত্বরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আড্ডা-খোশগল্প করছে তারা। অন্যদিকে জনতা ব্যাংকের বুথের সামনে মোরগ পোলাও বিতরণ করা হচ্ছে। কয়েকজন যাচাইবাছাই করে সবাইকে বিরিয়ানি দিচ্ছেন। আবার রিকশায় করে বিরিয়ানি নেয়া হচ্ছে। এদিকে ক্যাম্পাসে কিছুক্ষণ পর পর মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে মহড়া দিচ্ছে মধ্যবয়স্ক বহিরাগতদের কয়েকটি গ্রুপ।
রাজধানীতে দুজন নিহত : রাজধানীর মিরপুর রোডের ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে শুরু করে সায়েন্সল্যাবরেটরি মোড় হয়ে ঢাকা কলেজ নিউ মার্কেট পর্যন্ত ব্যাপক সংঘর্ষে ২ জন নিহত হন। এই ঘটনায় কমপক্ষে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। গতকাল দুপুর থেকে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সাথে দফায় দফায় চলতে থাকে এই সংঘর্ষ। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের কয়েক দফা হামলা চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে সরানোর চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিবারই ছাত্রলীগকে ধাওয়া করে রাস্তা দখলে রেখেছে আন্দোলনকারীরা। সন্ধ্যার আগে সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি। এরপর থেকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

জানা গেছে, ধানমণ্ডির ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে শুরু করে সায়েন্সল্যাব মোড় এবং নিউমার্কেট পর্যন্ত অবস্থান নিয়েছে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ ও ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মীরা ঢাকা কলেজের ভেতরে অবস্থান নেয়। দুপুর ২টার দিকে ছাত্রলীগ একত্রিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা কিছুটা ছত্রভঙ্গ হয়ে। এর অল্প সময়ের মধ্যে বিক্ষোভকারীরা একত্রিত হয়ে ছাত্রলীগ ধাওয়া করে রাস্তা দখলে নেয়। এভাবে থেকে থেকে চলতে থাকে তাদের সংঘর্ষ, ইট পাটকেল নিক্ষেপ। এর মধ্যে ঢাকা কলেজের উল্টোদিকের পেট্রোল পাম্পের সামনে থেকে মো: শাহজাহানকে (২৫) অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পথচারীরা। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে সন্ধ্যায় অজ্ঞাত (২৫) অপরজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকেও মৃত ঘোষণা করেন। তাদের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে তিনি কাদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং তার পরিচয় কী, তা এখনো জানা যায়নি। তবে হাসপাতালের টিকিটে তার নাম মনির লেখা রয়েছে।
আহত ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে আসা অ্যাম্বুলেন্সের চালক মো: আলী মিয়া ও হেলপার শাকিল জানান, তারা একটি কোম্পানির অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে থাকেন। তাদের মালিক মিজান ফোন করে জানান, দ্রুত পপুলার হাসপাতালে যেতে, সেখান থেকে একজন রোগীকে নিয়ে বাড্ডায় যেতে হবে। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ধানমণ্ডির পপুলার হাসপাতালে গেলে সেখানকার জরুরি বিভাগ থেকে লোকজন দ্রুত ওই যুবককে মাথায় ব্যান্ডেজ করা অবস্থায় আমাদের অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে দেয়। আমরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তবে তারা নিহত যুবকের পরিচয় বলতে পারেননি। কোথায় ঘটনা, কীভাবে তিনি আঘাত পেয়েছেন, সে ব্যাপারেও কিছুই বলতে পারেননি । হাসপাতালের টিকিটে মনির নাম কীভাবে এলো, এমন প্রশ্নের জবাবে চালক ও হেলপার বলেন, কে বা কারা টিকিট কেটে মনির নাম বসিয়ে দিয়েছে তারা জানেন না।

দিনের আন্দোলনের শুরু বাড্ডা : মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা দিকে নতুনবাজার, মেরুল বাড্ডা ও রামপুরা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচিতে অংশ নেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এরপর বেলা বাড়ার সাথে সাথে পুরো রাজধানীজুড়ে নেমে পড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়,কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা। বিকাল ৪টার দিকে বাড্ডা সড়ক ছেড়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। তারা চলে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে কয়েকজন পথচারী ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের একটি বাস ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করে নিয়ে যায়।
মহাখালীতে সহিংসতা, আগুন : রাজধানীর মহাখালীতে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সাথে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ বক্সের সামনে দুটি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো মহাখালী এলাকা। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পুলিশ বক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে। দুপুর থেকেই বিক্ষুব্ধরা মহাখালী রেল লাইনসহ আশপাশের রাস্তা আটকে রেখে বিক্ষোভ করতে থাকে। দিনব্যাপী চলতে থাকে বিক্ষোভ স্লোগান। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা তাদের বিক্ষোভকারীদের সরানোর চেষ্টা করলেও আন্দোলনের সামনে দাঁড়াতে পারেনি। পরে একচ্ছত্রভাবে আন্দোলন চলতে থাকে। তবে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পুলিশ ও ছাত্রলীগ একত্রিত হামলায় বিক্ষোভকারীদের উপর। তারাও পাল্টা হামলা চালালে শুরু হয় রণক্ষেত্র। ট্রাফিক-গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) এ এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, মহাখালী ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে দুটি মোটরসাইকেলে আগুন দেখা গেছে।

রায়সাহেব গুলিতে আহত জবির ৪ শিক্ষার্থী : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ও কবি নজরুল কলেজের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর গুলির ঘটনায় চার শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে জবির তিন শিক্ষার্থী এবং কবি নজরুল কলেজের এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক হাজার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে রায়সাহেব বাজার অতিক্রম করার সময় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতা-কর্মীদের গুলিতে আহত হয় তারা। প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, পুরান ঢাকার আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে বলে জানা গেছে। কারা গুলি করছে জানতে চাইলে আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী বলেন, কারা সন্ত্রাসী হামলা করে সবাই জানে। সরকারের ছত্রছায়ায় এই সন্ত্রাসী সংগঠন সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
ফার্মগেটে মেট্রোরেল ষ্টেশনে হামলা : আন্দোলনকারীদের সাথে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ছড়িয়ে পড়েছে নিরাপত্তাবেষ্টিত মেট্রোরেলের ভেতরেও। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মেট্রোরেলের ফার্মগেট স্টেশনে দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া আন্দোলনকারীরা দৌড়ে মেট্রোরেলের স্টেশনে গিয়ে আশ্রয় নিলে এই ঘটনা ঘটে।

শাপলা চত্বরে নটরডেম ছাত্রদের অবস্থান : দুপুর সাড়ে ১২টার পর শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার ও শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মতিঝিলে শাপলা চত্বর মোড়ে অবস্থান নেয় নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ব্যাংক পাড়া হিসেবে খ্যাত মতিঝিল। এ সময় “আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না” সহ কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। শাপলা চত্বরের চারপাশ ঘিরে রাস্তায় অবস্থান নেয় তারা। এ সময় পুলিশ তাদের রাস্তা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করলেও তারা অনড় অবস্থায় বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে বিকেলের দিকে নিজেরাই রাস্তা ছেড়ে চলে যায়।
মিরপুর ও বেড়িবাঁধে বিক্ষোভ : বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর বেড়িবাঁধ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা। ফলে রাজধানীর গাবতলী থেকে মোহাম্মদপুর হয়ে ধানমন্ডি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ১২টার দিকে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর অবরোধ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিউবিটির (বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি) ও বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা রাস্তা আটকে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের উপর হামলা : আন্দোলনে এবার যুক্ত হয়েছে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা। এরই অংশ হিসেবে পুরান ঢাকায় মাঠে নেমেছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের (মিটফোর্ড) শিক্ষার্থীরা। তবে তাদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলায় ছয়জনের মতো আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল গেটে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা শিক্ষার্থীদের উপর্যুপরি চড় থাপ্পড় ও স্ট্যাম্প-লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে বলে জানায় আন্দোলনকারীরা। প্রায় একই সময়ে বিক্ষোভ করেছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরাও। তারা হাসপাতাল চত্বরে শ্লোগান করে।
ভিকারুননিসা ছাত্রীদের অবরোধ : এবার আন্দোলনে নেমেছেন রাজধানীর স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরের পর তারা বেইলি রোডে অবরোধ করেন। এ ছাড়া, বেইলি রোডে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ করে নানা স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।

চট্টগ্রামে নিহত ৩ : আহত অসংখ্য
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের হামলায় চট্টগ্রামে ৩ জন নিহত হয়েছে। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে নিহতদের মধ্যে মো: ওয়াসীম চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী এবং অন্যজন ফারুক নামের এক পথচারী বলে জানা গেছে। ফারুকের বুকে গুলির চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় বেশ ক’জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে প্রায় শ’ খানেক শিক্ষার্থী। এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচির স্থান ষোলশহর রেল স্টেশনে ছাত্রলীগ-যুবলীগ অবস্থান নিলে নগরীর মুরাদপুরে আন্দোলনরতরা জড়ো হতে থাকলে সেখানে শাসকদলের সশস্ত্র কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালায়। থেমে থেকে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকে। এই সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল বলে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ। নিহতরা হলেন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরাম (২৫) ও মো: ফারুক (৩২)। ওয়াসিমের বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায়। আর ফারুকের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। নিহত অন্যজন শান্ত এমইএস কলেজছাত্র।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নুজহাত ইনু সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ওয়াসিমকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে এবং ফারুককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনা হয়েছিল। আহত আরো ৩০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে তিনি জানান। ২জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: তসলিম উদ্দিনও। জরুরি বিভাগের সামনে আহাজারি করতে থাকা নিহত ফারুকের স্ত্রী সীমা জানিয়েছেন, তার স্বামী ফার্নিচার দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গতকাল বেলা সাড়ে ৩টায় ষোলশহর রেলস্টেশনে নির্ধারিত বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল আন্দোলনকারীদের। কিন্তু এর আগেই লাঠিসোটা নিয়ে সেখানে অবস্থান নেয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিলসহকারে ষোলশহরের দিকে আসতে থাকলে এক পর্যায়ে মুরাদপুরে তাদের ওপর হামলে পড়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডাররা। তারা লাঠিসোটা, ধারালো অস্ত্র দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ করতে থাকে। প্রথম দিকে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লেও কিছুক্ষণ পর তারা আবারো জড়ো হয়ে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে নেয়া পাথর, সেন্ডেল ও কয়েকটি লাঠি হাতে শাসকদলের ক্যাডারদের ধাওয়া দেয়। এ সময় সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। আতঙ্কিত মানুষ দিক-বিদিক ছুটতে থাকে। হামলার তীব্রতায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন মার্কেট ও ভবনে আশ্রয় নিলে সেসব স্থানেও তল্লাশি চালিয়ে হামলা করে ছাত্রলীগ এ সময় পুরো মুরাদপুর থেকে দুই নম্বর গেট পর্যন্ত এলাকা যেন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। নগরীর মুরাদপুর ছাড়াও ষোলশহর রেলস্টেশন ও ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকা, বায়েজিদ এক্সেস রোডের মোড়সহ বিভিন্ন মোড়ে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ মিলেছে।

রংপুরে নিহত ১, আহত শতাধিক
রংপুর অফিস জানায়, রংপুর মহানগরীর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষে একজন নিহত এবং পুলিশ সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হয়েছে। নিহত শিক্ষার্থীর নাম আবু সাঈদ। তিনি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনকারীদের অন্যতম নেতৃত্ব দানকারী।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসবভন, বঙ্গবন্ধু হলে ভাঙচুর পুলিশের গাড়িতে ছাত্রলীগ সভাপতির ব্যবহৃত ব্যক্তিগত কারসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি মোটরসাইকেল ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছে। রাত সাড়ে ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত লালবাগ থেকে মডার্ন মোড় এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি।
আন্দোলনকারীদের নেতা আবু সাইদ পুলিশ এবং ছাত্রলীগকে উদ্দেশ্যে করে বলে আপনারা আর গুলি ছুুড়বেন না। এরপর দুই হাতে তুলে বলে আপনারা আমাকে গুলি করেন। সাথে সাথে ১ নং গেট থেকে পুলিশ তার বুক বরাবর ৩ রাউন্ড ছররাগুলি ছুড়লে সে মাটিতে পড়ে যায়। শিক্ষার্থীরা তাকে দ্রুত রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আবু সাঈদ। এর মধ্যেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পার্কের মোড়সহ আশপাশের এলাকা। দেখা গেছে ১ নং গেট থেকে পুলিশের ভেতর দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাম দা, বেকি, লাঠিসহ বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পার্কের মোড় ও মডার্ন মোড়ের দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ধাওয়া করেছে পুলিশের সহযোগিতায়। আবার সাধারণ শিক্ষার্থীরা গাছের ডাল এবং লাঠি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে তাদের প্রতিরোধ গড়ে তুললে পুলিশ তাদের উদ্দেশ্যে টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং রাবার বুলেট ও গুলি ছুড়ছে। একটি সংঘর্ষের সময় দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে পার্কের মোড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করছে ছাত্রলীগ।

অচল বরিশাল : ধাওয়ায় পালিয়েছে ছাত্রলীগ
বরিশাল ব্যুরো জানায়, শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে অচল হয়ে পড়ে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক। বিকেলে বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা। সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের আহ্বানে অবরোধ কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে অংশ নিয়েছে সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ, বেসরকারি অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়, ইনফ্রা পলিটেকনিকসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বিএম কলেজ শিক্ষার্থী ও কোটা আন্দোলনের সমন্বয়ক হুজাইফা রহমান বলেন, নথুল্লাবাদ এলাকায় তাদের অবরোধ কর্মসূচি চলছে। তবে বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর একাধিকবার হামলা হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। বেলা ২টার পর আন্দোলনকারীরা কলেজের ক্যাম্পাস দখলে নেয়। তারা লাঠিসোটা নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী বলেন, সকালে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান নেয়। পরে তারা মিছিল বের করলে বিএম কলেজ এসএম সাউদের নেতৃত্বে কথিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকায় অবস্থান নেয়া কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কিছু অংশ লাঠিসোটা নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকে। তারা ক্যাম্পাসে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয়া কথিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয়। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মহাত্মা অশ্বিনী কুমার ছাত্রাবা সে গিয়ে অবস্থান নেয়। বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

বগুড়া শহর রণক্ষেত্র, পুলিশ বক্স ও আ’লীগ অফিসে ভাঙচুর
বগুড়া অফিস জানায়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে দফায় দফায় পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে শহর রণক্ষেত্র ও ছাত্রলীগের হামলায় স্কুলছাত্রসহ কমপক্ষে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। এ সময় ছাত্রলীগ ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে গেছে। পুলিশের টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপে ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ হলে সাতমাথা এলাকা দখলে নেয় পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সরকারি আজিজুল হক কলেজের নিকটবর্তী কামারগাড়ী রেলগেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি অধ্যক্ষের বাস ভবনের সামনে দিয়ে কলেজের মূল ক্যাম্পাস অতিক্রম করে রেলগেটের সামনে সাতমাথা-তিনমাথা সড়ক অবরোধ করে। সেখানে ২০-২৫ মিনিট সড়ক অবরোধ করে রাখার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে উত্তেজনা দেখা দেয়। বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ ক্যাম্পাসে বিকট শব্দে ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রাস্তা থেকে সরে যায়। তাদের চারজন এ সময় আহত হয়। একই দাবিতে সোমবার রাত থেকে আন্দোলন করছে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা মহাসড়কে বসে পড়ে। এ সময় উভয় পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

কিশোরগঞ্জে হামলায় আহত ৫০
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জে আন্দোলনকারীদের ওপর দা, লাঠি, রডসহ বিভিন্ন ধারাল অস্ত্র নিয়ে হামলা করেছে ছাত্রলীগ। এতে কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। হামলায় মার খেয়ে পরে লাঠিসোটা হাতে নিয়ে ছাত্রলীগকে প্রতিরোধ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
হামলার এক ঘণ্টা পর লাঠিসোটা হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলে নামে শিক্ষার্থীরা। এ সময় ছাত্রলীগ তাদের মুখোমুখি হওয়ার চেষ্টা করে। শিক্ষার্থীরা লাঠিসোটা হাতে ধাওয়া দিলে ছাত্রলীগ পালিয়ে যায়। বেলা ১টার দিকে লাঠিসোটা নিয়ে শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারি গুরুদয়াল কলেজ প্রাঙ্গণে অবস্থান নেয় তারা।

জাবি থেকে ছাত্রলীগ বিতারিত
সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ ডেইরি গেট এলাকার ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করেন আন্দোলরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের সাথে গণবিশ^বিদ্যালয়সহ আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী একত্র হয়ে মহাসড়ক দখলে নিয়ে সমাবেশ করেন। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশমাইল ফটকে বহিরাগতদের নিয়ে অবস্থান নেয় জাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এই খবরে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে বের হয়ে আসেন। আন্দোলরত শিক্ষার্থীরা কিছুক্ষণ ক্যাম্পাসে আবার কিছুক্ষণ সময় মহাসড়কে অবস্থান করেন। গতকার মঙ্গলবার ১১টার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে বের হয়ে এবং আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা লাঠি ও পাইপ হাতে নিয়ে সড়ক অবরোধ ও সমাবেশে অংশ করেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেনি। বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মৌন মিছিল ও হামলার ঘটনায় শিক্ষকদের তোপের মুখে পড়েন জাবি ভিসি অধ্যাপক ড. নুরুল আলম। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যা¤পাসে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে।
আশুলিয়া (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা দিকে আশুলিয়ার নলামে অবস্থিত গণ-বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে পদযাত্রা শুরু করেন গবি শিক্ষার্থীরা। পরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাইশমাইল বাসস্ট্যান্ডে কিছুক্ষণ সড়ক অবরোধ করে মিছিল নিয়ে জাবি অভিমুখে হেঁটে যাত্রা শুরু করেন। একই সময়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে নয়ারহাটে অবস্থিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল অ্যান্ড রিসার্চের (নিটার) পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। একই দাবিতে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় অবরোধ করেন বেপজা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা জাবি অভিমুখে পদযাত্রা করেন। এ ছাড়া একই দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাইশ মাইল এলাকা অবরোধ করে রাখেন মির্জা গোলাম হাফিজ কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ দিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের আশুলিয়ার জিরানী এলাকায় অবরোধ করেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
ধামরাই (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাই থানা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শিক্ষার্থীরা সড়কের মাঝখানে বসে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে রাখেন। ফলে মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

কুমিল্লায় দুইজন গুলিবিদ্ধ
কুবি সংবাদদাতা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মিছিলে বাধা দিতে রাবার বুলেট ছুড়েছে পুলিশ। এতে দুইজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ সময় উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা সরকারি কলেজ, কুমিল্লা গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল ও কুমিল্লা জিলা স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কয়েকহাজার শিক্ষার্থী যোগ দেন।
এ দিকে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করার প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন টমছম ব্রিজ রোডে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। এ ছাড়াও বিকাল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা তারা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন।

ফরিদপুরে পুলিশের হামলা
ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুরে পুলিশের উপস্থিতিতেই কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে দুইজন গুরুতর আহত সহ অন্ততপক্ষে পাঁচ আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন। আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। শহরের ব্রাহ্মসমাজ সড়কে সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে অবরোধকালে হামলার ঘটনা ঘটে।
এ দিকে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনার পরে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। তারা মুজিব সড়ক হয়ে মিছিল সহকারে জনতা ব্যাংকের মোড়ে সমবেত হয়। এ সময় বৃষ্টিবিঘœ পরিবেশ উপেক্ষা করে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। এর পাশাপাশি ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ ও ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা পৃথক পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। বেলা ১১টার পরে শহরের প্রধান সড়কসহ ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়ক উত্তাল হয়ে উঠে আন্দোলনকারীদের উপস্থিতিতে।

উত্তাল রাবি, ব্যাপক ভাঙচুর
রাবি প্রতিনিধি জানান, গতকাল বিকেল আড়ায়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেট থেকে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। এরপর তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইনগেটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। প্যারিস রোডের ওপর দিয়ে পুরনো শেখ রাসেল স্কুল মাঠ পর্যন্ত গেলে কয়েক শ’ নারী শিক্ষার্থীরা তোদের সাথে যোগদান করেন। এরপর ড. কুদরত-ই-খুদা একাডেমিক ভবন পর্যন্ত গেলে হল থেকে প্রায় দুই হাজার ছাত্র যোগদান করেন বিশাল বড় মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে এসে ছাত্রলীগের মারা হল গেটে মারা তালা ভেঙে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ দিতে সহযোগিতা করেন।

দিনাজপুরে আহত ২৫
দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দিনাজপুর সরকারি কলেজ মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে কোটা সংস্কারের দাবিতে কলেজ মোড়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা শহরের কলেজ মোড়, হাবিপ্রবির অদূরে দশমাইল মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় বসে অবরোধ করেন। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের সময় হঠাৎ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় আন্দোলনকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। উভয়ের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ চলে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী। এতে অন্তত ২৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে আটজন দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আহতদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীও রয়েছেন।
জামালপুরে ছুরিকাহত ছাত্রলীগ নেতা
জামালপুর প্রতিনিধি জানান, জামালপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে এসে নিজ দলের নেতার ছুরিকাঘাতে ছাত্রলীগ নেতা আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় হামলাকারী ছাত্রলীগকর্মী তানজিদকে আটক করেছে সদর থানা পুলিশ। আহত ছাত্রলীগ নেতা নীরবকে উদ্ধার করে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ইবিতে হলে হলে হুমকি
ইবি সংবাদদাতা জানান, গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ^বিদ্যালয়ের বটতলা থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ ম্যুরালের পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। এ দিকে বেলা পৌনে ৩টায় ক্যাম্পাসের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার দাবিতে বিক্ষোভ করে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া হলে হলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বাকৃবি প্রতিনিধি জানান, সারাদেশে শিক্ষার্থীর উপর হামলার প্রতিবাদে পঞ্চম দিনের মতো ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে আন্দোলন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে ঢাকাগামী জামালপুর কমিউটার ট্রেন অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বেলা ৩টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে মুক্তমঞ্চে এসে সমবেত হন শিক্ষার্থীরা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে কে আর মার্কেট হয়ে আব্দুল জব্বার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

কুষ্টিয়ায় রেল ও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে কুষ্টিয়া শহরের শত শত শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এ কারণে কুষ্টিয়ার সাথে ১ ঘণ্টা সড়ক ও রেলপথ বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে শহরের মজমপুর গেটে উপস্থিত হয়। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল, মজমপুর গেট থেকে শুরু হয়ে শহরের ৫ রাস্তা মোড় মুজিব চত্বরে পৌঁছায়। সেখান থেকে আবারো মিছিল সহকারে মজমপুর গেটে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা মজমপুর গেটে রেল লাইন ও মহাসড়কের উপর বসে পড়ে।
এদিকে বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের হামলায় শিক্ষার্থী আহতের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা।

ফেনীতে মানববন্ধনে হামলা
ফেনী অফিস জানায়, ফেনী শহরের ট্রাংক রোডের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মঙ্গলবার মানববন্ধনকারীদের উপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। তারা মানববন্ধনের ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে অংশগ্রহণকারীদের মারধর করেন। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন।

ঠাকুরগাঁওয়ে মিছিলে ছাত্রলীগের হামলা
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। মঙ্গলবার বেলা ৩টায় শহরের সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের (বড়মাঠ) সামনে থেকে সাধারণ ছাত্ররা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে কোটা বাতিলের দাবিতে একটি মিছিল নিয়ে চৌরাস্তায় অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাতে হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগ নেতা রয়েল, হিমেলের নেতৃত্বে হকিষ্টিক, ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প ও লাঠিসোটা নিয়ে মিছিলে হামলা চালানো হয়। এতে বেশ কয়েকজন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী আহত হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রতিবাদ সভায় বাধা দিয়েছে জেলা ছাত্রলীগ। এতে আন্দোলনকারীরা সংক্ষিপ্তভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে মঙ্গলবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদ সভা শুরুতে করতেই বাধা দেয় ছাত্রলীগ। পরে সংঘর্ষ এড়াতে সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যমে কর্মসূচি সমাপ্ত করা হয়।
ময়মনসিংহ অফিস জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, প্রধানমন্ত্রীর অসংলগ্ন বক্তব্য প্রত্যাহার ও কোটা সমস্যার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে ময়মনসিংহে বিক্ষোভ মিছিল করেছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে আনন্দমোহন সরকারি কলেজ, নাসিরাবাদ কলেজ, নটরডেম কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের হাজারো শিক্ষার্থীরা নগরীর টাউন হল মোড়ে জড়ো হতে থাকে। সাড়ে ১২টার দিকে টাউন হল মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে নগরীর জিলাস্কুল মোড়, নতুনবাজার, গাঙিনারপাড় ট্রাফিক মোড়, স্টেশন রোড, র‌্যালির মোড় হয়ে পাটগুদাম ব্রিজের মোড়ে অবস্থান নেয়। এ সময় রাজধানীর সাথে নেত্রকোনা, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ জেলার যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়।

গাজীপুরে সর্বাত্মক অবরোধ
গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরে কোটাবিরোধী আন্দোলনে মঙ্গলবার রেল ও সড়কপথে সর্বাত্মক অবরোধ হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিকেলে রাজপথে নেমে আসেন। এর আগে সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করা হয়। বিকেলে ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তায় হাজার হাজার শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়ে অবরোধ করায় উভয় সড়কে যানবাহন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ডুয়েটের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা-শিমুলতলী সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। পরে তারা ঢাকা-রাজশাহী রেল লাইনের স্থানীয় ভুরুলিয়া তিতাস গ্যাস অফিসসংলগ্ন রেলক্রসিংয়ে অবস্থান নিয়ে কাঠের গুঁড়ি ফেলে রেলপথ অবরোধ করে।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, কোটাবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে সাতক্ষীরা-খুলনা সড়ক অবরোধ করেন সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শহরের খুলনা রোড মোড়ে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। অবরোধের ফলে খুলনা রোড মোড়ের তিন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় তারা বিক্ষোভ মিছিল করে কোটা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবিতে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছি। অথচ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আমরা এই ন্যক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

যশোর অফিস জানায়, যশোরে কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের নেতাকর্মীরা। এ সময় কমপক্ষে ২০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন কোটা আন্দোলনের নেতারা। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডিসি অফিস চত্বরে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এ দিন সকাল ১০ টায় শহরের দড়াটানা ভৈরব চত্বরে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবিতে মুক্তিযোদ্ধারা সমাবেশ করেন। সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের সাথে ছিল মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের নেতাকর্মীরা। একই সময় মিছিল নিয়ে ডিসি অফিস চত্বরে যান কোটা বিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনার সময় শহরে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু তীব্র যানজট।
নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগ ও কোটা আন্দোলনকারীদের মধ্যে ককটেল বিস্ফোরণসহ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আন্দোলনকারী এবং ছাত্রলীগের সংঘর্ষের সময় সাংবাদিকসহ ৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের নরসিংদী জেলা হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে নরসিংদী জেলখানা মোড়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে।

সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে ব্লকেড কর্মসুচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কোটা পদ্ধতি সংস্কার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করে সোনারগাঁওয়ের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অবরোধের কারণে এক ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।
পরে সোনারগাঁও থানা পুলিশ শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সড়ে দাঁড়ানোর অনুরোধ করলে শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে। একপর্যায়ে সোনারগাঁও উপজেলা ছাত্রলীগের ধাওয়ায় অবরোধ কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়।

খুলনায় অবরোধ মিছিল যানজটে ভোগান্তি
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় কোটা সংস্কার আন্দোলন গতকাল নতুন মাত্রা পেয়েছে বিভিন্ন পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েক পয়েন্টে শিক্ষার্থীদের অবরোধে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে নগরবাসীর ভোগান্তি পোহাতে হয়।
প্রতিবাদের অংশ হিসেবে গতকাল মহানগরীর খালিশপুর নতুন রাস্তা মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অবরোধে যানজটের সৃষ্টি হয়। সেখানে অবরোধে অংশ নেন সরকারি বিএল কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মুহসীন কলেজসহ অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীরা। দেড় ঘণ্টার অবরোধ শেষে দুপুর ১২ টার দিকে তারা নতুন রাস্তা মোড় থেকে মিছিল করে শিববাড়ি মোড়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। প্রায় ৬ কিলোমিটার হেঁটে শিববাড়ি মোড়ে পৌঁছে তারা। শিববাড়ি মোড়ে অবশ্য বেলা ১১টা থেকে নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। ফলে সোনাডাঙ্গা বাসটার্মিনালের সাথে মূল নগরীর সংযোগকারী এ মোড়ের চতুর্দিকে যানযটের সৃষ্টি হয়।

টাঙ্গাইলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইল শহরের নিরালা মোড় এলাকায় কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এতে অন্তত তিনজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এরপর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একত্র হয়ে নিরালা মোড়ের দিকে এগিয়ে গেলে সেখান থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়। মঙ্গলবার বেলা ১১টা দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-উত্তরবঙ্গ মহাসড়ক এক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন।
মঙ্গলবার টাঙ্গাইল শহরের প্রাণকেন্দ্র নিরালার মোড়ে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। তারা বেলা ১১টার দিকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শহরের নিরালা মোড়ে শহীদ মিনার চত্বরে আসার সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। হামলায় তিনজন ছাত্র আহত হন। তাদেরকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। হামলার খবরে শিক্ষার্থীরা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এরপর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা একত্র হয়ে নিরালা মোড়ের সামনে পৌঁছলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নির্মম ও অমানবিক হামলার প্রতিবাদ এবং সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন মানিকগঞ্জে কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলার দিঘি এলাকায় মানিকগঞ্জ কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি গড়পাড়া সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবার কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজের ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়।
কক্সবাজার অফিস জানায়, কোটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারেও সমাবেশ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। পাল্টা মিছিল-সমাবেশ করেছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ও ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার দুপুরে কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী কক্সবাজারের প্রবেশমুখ লিংকরোড থেকে আনন্দোলন শুরু করে। এক পর্যায়ে কক্সবাজার সরকারি কলেজ গেটের সামনে গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে ছত্রভঙ্গ হয়। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে না হতে আবারো জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা।
বিকেলে কক্সবাজার সরকারি কলেজ গেটের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়।
ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, কোটা সংস্কারের এক দফা দাবি ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঝালকাঠিতে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় পৌর মিনি পার্ক এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে প্রেস ক্লাবের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে করে শিক্ষার্থীরা।

সমাবেশে বক্তব্য দেন, শিক্ষার্থী রাইয়ান বিন কামাল, অনামিকা দত্ত, তানজিলা আক্তারসহ অনেকে।
বক্তারা, দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারা কোটাপদ্ধতি বাতিল করে অবিলম্বে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়ারও আহ্বান জানান।
খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা জানান, সারা দেশের কোটাবিরোধী আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা খাগড়াছড়ি শহরের চেঙ্গী স্কোয়ার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে মুক্তমঞ্চে এসে প্রতিবাদ সমাবেশ করে বিক্ষোভকারীরা।
সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে সরকারি চাকরিতে যৌক্তিকভাবে কোটা সংস্কারের দাবি জানান। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তারা।

বরগুনায় পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জ
বরগুনা প্রতিনিধি জানান, বরগুনায় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ ও সমাবেশে করলে পুলিশের লাঠিচার্জ হামলায় আন্দোলনকারী বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রী আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বরগুনা পাবলিক লাইব্রেরির সামনে থেকে কোটা আন্দোলনের একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক হয়ে বরগুনা প্রেস ক্লাব চত্বরে এসে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আ: হালিম বলেন, শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করলে পুলিশ সেখানকার রাস্তা অবরোধ মুক্ত করেন। বরগুনাকে শান্ত ও সুষ্ঠু রাখতে শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

কাপ্তাই শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া
রাঙ্গুনিয়া-কাপ্তাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, কোটা সংস্কারের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার কাপ্তাই বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের (বিএসপিআই) শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সকালে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করার পর একপর্যায়ে মূল গেটের তালা ভেঙে কাপ্তাই সড়কে দিকে অগ্রসর হয়। এ সময় কাপ্তাই লকগেটে অবস্থান করা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া করে। পরে বিএসপিআই শিক্ষার্থীরা পিছু হটে ক্যাম্পাসের মূল গেটের সামনে সড়কের উপরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বশেমুরবিপ্রবিতে বিক্ষোভ মিছিল
বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি জানান, সারা দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নৃশংস হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ (বশেমুরবিপ্রবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কোনোরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৬ই জুলাই) বেলা সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে

 

 


আরো সংবাদ



premium cement