০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯ ভাদ্র ১৪৩১, ২৮ সফর ১৪৪৬
`

গাজায় বাস্তুচ্যুতদের টার্গেট করে হত্যা করছে ইসরাইল

টার্গেট করে হামাস নেতাদের হত্যার পরিকল্পনা
-

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়ের জন্য ব্যবহৃত স্কুলগুলোতে হামলা জোরদার করেছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় গাজার আল-নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে জাতিসঙ্ঘ পরিচালিত আরেকটি স্কুলে ইসরাইলের হামলায় অন্তত ২৩ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। গাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা এই স্কুলটিকে আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। খবর : আলজাজিরা ও টাইমস অব ইসরাইল।
অন্যদিকে ছিটমহলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার খান ইউনুসের পশ্চিম উপকণ্ঠে আত্তার এলাকায় ইসরাইলি অভিযানে অন্তত ১৭ জন নিহত এবং ২৬ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে চার শিশুও রয়েছে বলে আলজাজিরার একজন সংবাদদাতা জানিয়েছেন। বিমান হামলাটি বাস্তুচ্যুত পরিবারের তাঁবুর একটি এলাকার কাছে আঘাত হানে। এ নিয়ে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৩৮,৭১৩ জন নিহত এবং ৮৯,১৬৬ জন আহত হয়েছে বলে অবরুদ্ধ অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে বলা হয়েছে।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের আবু ওরাইবান স্কুল থেকে হামাস তৎপরতা চালাচ্ছিল, তাদের লক্ষ্য করে হামলাটি চালানো হয়েছে। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে বলেছেন, সেখানে কোনো সশস্ত্র যোদ্ধা ছিল না আর হতাহতদের মধ্যে শিশুরাও আছে।

এই নিয়ে আট দিনের মধ্যে পঞ্চমবারের মতো কোনো গাজার স্কুলে বা স্কুলের কাছে হামলা চালাল ইসরাইল। ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক জাতিসঙ্ঘ সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) পরিচালিত আবু ওরাইবান স্কুলে রোববার বিকেলে যখন হামলা চালানো হয় তখন সেখানে কয়েক হাজার শরণার্থী ছিল বলে জানা গেছে। হামাস শাসিত গাজার দমকল বাহিনী রোববার সন্ধ্যায় জানিয়েছিল, ইসরাইলি হামলায় ১৫জন নিহত হয়েছেন আর তাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। সোমবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ওই হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২২ জনে দাঁড়িয়েছে।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস এ হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে এটি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার আরো বিস্তৃতি’। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী স্বীকার করেছে যে তারা ৬ জুলাই থেকে গাজার বেশ কয়েকটি স্কুলে বা স্কুলের কাছে পাঁচটি হামলা চালিয়েছে। এসব স্কুল হামাসের রাজনীতিক, পুলিশ ও যোদ্ধরা ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছিল বলে দাবি করেছে তারা। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সোমবার গাজার মধ্যাঞ্চলে ফের বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ করে ইসরাইলি বাহিনী। এতে মাঘাজি শরণার্থী শিবিরের একটি বাড়িতে পাঁচজন নিহত হন। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের যুদ্ধবিমান ও সামরিক হেলিকপ্টারগুলো সোমবার দিনভর গাজায় হামাসের ডজনেরও বেশি লক্ষ্যস্থলে আঘাত হেনেছে।

হামাস নেতাদের হত্যার পরিকল্পনা : ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের নেতাদের টার্গেট করে হত্যার পরিকল্পনা করেছে ইসরাইল। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এখন হামাসের শীর্ষ নেতাদের উপর বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। মঙ্গলবার একটি আরব সংবাদমাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি আরো জানিয়েছে, হামাসের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধের তৃতীয় ধাপে প্রবেশ করেছে ইসরাইল। লন্ডনভিত্তিক আশরাক আল-আওসাত নামের এই আরব সংবাদমাধ্যটি আরো জানিয়েছে, হামাসের উচ্চপদস্থ নেতাদের পাশাপাশি যারা ৭ অক্টোবরের হামলা, রকেট ছোড়ার কাজ করেছেন তাদেরও হত্যা করার চেষ্টা চালাবে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। এমনকি যারা হামাস, আল কাসেম ব্রিগেড, ইসলামিক জিহাদ এবং অন্যান্য গোষ্ঠীর সদস্যদের বেতন দেয়ার কাজটি করছে তাদের উপরও হামলা চালাবে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। এ ছাড়া কয়েকদিন আগে গাজা সিটির সাধারণ মানুষকে ইসরাইলিরা সরে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল মূলত ‘হামাসের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষুব্ধ’ করে তুলতে। ইসরাইলিদের ধারণা এভাবে বারবার সরে যাওয়ার নির্দেশনা দিলে গাজার সাধারণ মানুষ হামাসের উপর বিরক্ত হবে। তাদের মধ্যে একটি ধারণা তৈরি হবে যে, হামাসের কারণে তারা এমন দুর্ভোগে পড়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement