১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বাসিন্দাদের গাজা ছাড়তে বলল ইসরাইলি বাহিনী

-


গাজা শহরের সব বাসিন্দাকে বের হয়ে যেতে বলেছে ইসরাইলি বাহিনী। বুধবার বার্তা সংস্থা এএফপি এ তথ্য জানিয়েছে। বার্তা সংস্থাটি জানিয়েছে, বাসিন্দাদের বের হয়ে যেতে গাজা সিটিতে হাজার হাজার লিফলেট ফেলেছে ইসরাইলি বাহিনী। লিফলেটে ‘গাজা শহরের প্রত্যেককে’ সম্বোধন করে শহর থেকে আরো দক্ষিণে মনোনীত নিরাপদ এলাকায় যাওয়ার রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সাথে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানলে শহুরে এলাকা ‘একটি বিপজ্জনক যুদ্ধ অঞ্চলে পরিণত হবে।’
এর আগে ২৭ জুন শহরের একটি অংশ থেকে বাসিন্দাদের বের হয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল ইসরাইলি বাহিনী। গতকাল বুধবার আকাশ থেকে ফেলা লিফলেটগুলোতে বলা হয়েছে, বাসিন্দারা ‘দ্রুত এবং পরিদর্শন ছাড়াই গাজা সিটি থেকে দেইর আল-বালাহ এবং আল-জাওইয়াতে আশ্রয়কেন্দ্রে’ দুটি নিরাপদ সড়ক বেছে নিতে সক্ষম হবে। এএফপি জানিয়েছে, দেইর আল-বালাহতে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হলেও সেখানে ইসরাইলি বাহিনীর হামলা চলছে। জাতিসঙ্ঘ ইসরাইলের এই আদেশে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, তারা ফিলিস্তিনিদের এমন অঞ্চলে যেতে বলেছে যেখানে যুদ্ধ চলছে।
আশ্রয় শিবিরে হামলায় নিহত ২৯ : এদিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে খান ইউনিস শহরের নিকটবর্তী আবাসন আল-কাবিরা শহরে এক স্কুলসংলগ্ন শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলের বিমান হামলায় অন্তত ২৯ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি চিকিৎসা কর্মকর্তারা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার খান ইউনুসের পূর্ব দিকের আবাসন শহরের আল-আওদা স্কুলের গেইটের পাশেই আঘাত হানে ইসরাইলি বিমান।

আলজাজিরা জানিয়েছে, এই নিয়ে চার দিনের মধ্যে চতুর্থবারের মতো গাজার আরেকটি স্কুলভবনে আঘাত হানল ইসরাইল, যেটি একটি আশ্রয় শিবির হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ‘নির্ভুল অস্ত্র’ ব্যবহার করে ‘হামাসের সামরিক শাখার এক সদস্যের’ অবস্থান লক্ষ্য করে হামলাটি চালানো হয়েছে। হামাসের এই যোদ্ধা গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে চালানো হামলায় অংশ নিয়েছিল বলে দাবি করেছে তারা।
এ হামলায় ‘কোনো বেসামরিক নিহত হয়েছে কি না’ তা তারা খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এক সপ্তাহ আগে ইসরাইলি বাহিনী আবাসন আল-কাবিরা শহর ও খান ইউনিসের পূর্বাংশ থেকে বেসামরিকদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। তাদের এ নির্দেশ পাওয়ার পর ওই সব এলাকা থেকে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি পালিয়ে যায়। গাজার হামাস পরিচালিত গণমাধ্যম দফতরের পরিচালক ইসমাইল আল-ছাওয়াবতা জানান, ভূখণ্ডটির মধ্যাঞ্চলে ইসরাইলের অন্য হামলাগুলোতে আরো কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজায় দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে, অপুষ্টিতে ৩০ শিশুর মৃত্যু : গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞদের একটি দল। অপুষ্টির কারণে সাম্প্রতিককালে সেখানে আরো বেশ কিছু শিশুর মৃত্যু হতে পারে, এমন আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার একটি বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে দলটি। রয়টার্স গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বলছে, অন্তত ৩০ শিশু অপুষ্টিতে মারা গেছে। তাদের বেশির ভাগই গাজার উত্তরাঞ্চলের।
ইসরাইলের বিধি-নিষেধের কারণে গাজায় ত্রাণপ্রবাহ ব্যাহত হয়েছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে গাজায় ত্রাণপ্রবেশে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেছে জাতিসঙ্ঘের সংস্থাগুলো। মঙ্গলবারের বিবৃতিতে ১১ জন অধিকার বিশেষজ্ঞের একটি দল মে মাসের শেষ থেকে খান ইউনিসের দক্ষিণাঞ্চল এবং দেইর আল-বালাহের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অপুষ্টিতে ১৩, ৯ এবং ছয় মাস বয়সী তিন শিশুর মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘মধ্য গাজায় চিকিৎসা সত্ত্বেও এই শিশুরা যে অনাহারে মারা গেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। উত্তর গাজা থেকে মধ্য ও দক্ষিণ গাজাতেও দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে।’ খাদ্য অধিকার সম্পর্কিত বিশেষ রিপোর্টার মাইকেল ফাখরিসহ বিশেষজ্ঞদের স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতিতে ‘ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারকে অস্ত্রে হিসেবে ব্যবহারের’ নিন্দা করা হয়েছে। জেনেভায় ইসরাইলের কূটনৈতিক মিশন বলেছে, বিবৃতিটির ‘তথ্য ভুল।’
তারা আরো বলেছে, ‘ইসরাইল গাজা উপত্যকাজুড়ে মানবিক সহায়তা বিতরণে ক্রমাগত সমন্বয় এবং সহায়তা বাড়িয়েছে। সম্প্রতি গাজার পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্টের সাথে দেশটি তার বিদ্যুতের লাইন সংযোগ করেছে।’ সোমবার খান ইউনিসের একটি হাসপাতালে ফিলিস্তিনি নারী ঘানিমা জোমা রয়টার্সকে বলেন, তিনি আশঙ্কা করছেন, তার ছেলে না খেয়ে মরে যাবে। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানকে দেখে কষ্ট হচ্ছে ও অপুষ্টিতে মারা যাচ্ছে। যুদ্ধ, ক্রসিং বন্ধ করা এবং দূষিত পানির কারণে আমি ওকে কিছুই খেতে দিতে পারি না।’
কথাগুলো বলার সময় তিনি তার মৃত্যুর প্রহর গোনা ছেলের পাশে মেঝেতে বসে ছিলেন। ছেলেটির কব্জিতে ড্রিপ লাগানো ছিল। একটি অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ আছে কি না তা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ধারণ করা হয় জাতিসঙ্ঘ-সমর্থিত গ্লোবাল মনিটরের মাধ্যমে, যাকে ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) বলা হয়। আইপিসি প্রযুক্তিগত কিছু মানদণ্ডের ভিত্তিতে তা মূল্যায়ন করে।
গত মাসে আইপিসি বলেছিল, গাজা দুর্ভিক্ষের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। কেননা তখন সেখানে যুদ্ধ অব্যাহত এবং সাহায্যের প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ ছিল। এই অবস্থা এখনো অব্যাহত রয়েছে। গাজায় ৪ লাখ ৯৫ হাজারেরও বেশি মানুষ সবচেয়ে গুরুতর বা ‘বিপর্যয়কর’ স্তরের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হচ্ছে। এই সংখ্যা অঞ্চলটির মোট জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশেরও বেশি।
গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়েছে : গাজার সর্বশেষ হতাহতের রিপোর্ট প্রকাশ করে উপত্যকাটির মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলের হামলায় গতকাল বুধবার পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৮,২৯৫ জন নিহত ও ৮৮,২৪১ জন আহত হয়েছে। মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বোমাবর্ষণে আরো ৫২ ফিলিস্তিনি নিহত ও ২০৮ জন আহত হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
‘আপত্তিকর ভাষা’ ব্যবহারে শাস্তি পেলেন জোসেফ শ্রীমঙ্গলে হত্যা মামলায় প্রেমিক গ্রেফতার জামায়াত নেতা কাজী ফজলুল করিমের মৃত্যুতে ড. রেজাউল করিমের শোক প্রকাশ বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে মাঠে থাকব : মুন্না আমতলীতে ব্যবসায়ীকে আত্মহত্যার প্ররোচনায় জড়িতদের বিচার দাবি সিরিয়া নিয়ে আশা ও শঙ্কা ইসরাইলের সিরিয়ায় বাশারের পতনে ইসরাইল কতটুকু লাভবান অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের ৫৭৯ কর্মকর্তা লক্ষ্মীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহত ৫ এ দেশে রাজনীতি করতে হলে জনগণের সেবক হয়েই রাজনীতি করতে হবে : সেলিম উদ্দিন এখন সময় শান্তি ও স্থিতিশীলতার : অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী

সকল