বিজয় নিয়েই কর্মস্থলে ফেরার আশা ঢাবি শিক্ষক-কর্মচারীদের
- ঢাবি প্রতিনিধি
- ০৯ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
দেশে আলোচিত সংবাদের শীর্ষে চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন। ২০১৮ সালে কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে গত ৫ জুন পুনর্বহালের পক্ষে রায় ঘোষণা করে উচ্চ আদালত। রায়টি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই কোটা বাতিলের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজপথে আন্দোলন- সংগ্রাম করছেন। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, বিক্ষোভসহ ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
চলমান আন্দোলনের সাথে জড়িত রয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থ। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এটা তাদের রুটি, রুজির আন্দোলন। কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন। কিন্তু যৌক্তিক এই আন্দোলনে সাড়া নেই দেশের অন্যতম বৃহৎ ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের। যুগে যুগে শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে সংগঠনটি। তবে, এবারের কোটাবিরোধী আন্দোলনে চিত্রটা ঠিক উলটো। কোটা আন্দোলনে আওয়ামী লীগের এই ছাত্রসংগঠনের পক্ষে কোনো ধরনের কর্মসূচি নিতে দেখা যায়নি। শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির পতাকাবাহী এই সংগঠন বরং কোটাবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বাধা প্রদান করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। দেশের অন্যতম ছাত্রসংগঠনের এই বিরুদ্ধাচারণকে অনেকটা ঘৃণার চোখে দেখছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থ যেখানে জড়িত সেখানে ছাত্রলীগের এমন অবস্থান কোনোভাবেই কাম্য নয় বলছেন দলটির শুভাকাক্সক্ষীরা। কিন্তু এর আগে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্র ঘোষণার পর আনন্দ মিছিল করে ছাত্রসংগঠনটির নেতাকর্মীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট ছিল তারা। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে যেন উলটো চিত্র মেলে ধরেছে ছাত্রলীগ। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধী আন্দোলনের স্পিরিটের সামনে ছাত্রলীগ পার পাবে না বলে জানিয়েছেন আন্দোলনের সংগঠকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের বাধা প্রদান করছে হল ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। গত বৃহস্পতিবার রাতে কোটা আন্দোলনের অন্যতম সন্বয়ক ও ঢাবির অমর একুশে হলের শিক্ষার্থী শারজিস আলমকে হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল হল ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে মাঝরাতে অমর একুশে হল সংলগ্ন চানখারপুল সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। পরে আন্দোলনের তোপে হলে ফিরিয়ে নেয়ার আশ্বাস দেন হলটির প্রভোস্ট অধ্যাপক ইশতিয়াক আহমেদ।
কোটাবিরোধী আন্দোলনের নিষ্ক্রিয় ছাত্রলীগ। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যতটা সম্ভব আন্দোলনে বাধা দেয়া ও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের এই আন্দোলন থেকে দূরে থাকার নির্দেশনা রয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের বাধা দেয়া এবং কোটা আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে ডাকছেন পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। কোটা আন্দোলন চলাকালীন শীর্ষনেতারাও নেতাকর্মীদের নিয়ে মধুর ক্যান্টিনে রাজনৈতিক আড্ডা দিচ্ছেন। যাতে তারা কোটাবিরোধী আন্দোলনে না যেতে পারে। ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে বিশেষ করে গণরুমের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদেরকে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোটা আন্দোলনে গেলে হলে থাকা যাবে না, সিট দেয়া হবে না বলে তাদের হুঁশিয়ারি দিচ্ছে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের পদপ্রত্যাশী নেতারা।
তবে দেখা গেছে, ছাত্রলীগের নির্দেশনা অমান্য করেই কোটা আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় ও হল ছাত্রলীগের পদধারী নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোটাবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের বিপক্ষ অবস্থানের কড়া সমালোচনা করছেন। তাদের ভাষ্য, কোটা বাতিলের আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের অস্তিত্বের লড়াই, বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই। এ আন্দোলনে ছাত্রলীগের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা কাম্য ছিল বলে জানান বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীরা। তবে এ বিষয়ে তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের রাজনীতি বাংলাদেশে নতুন নয়। কিছু দলের প্রবণতা থাকে পানি ঘোলা হলে মাছ শিকার শুরু করবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগ ও অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে কোনো মৌলবাদী গোষ্ঠী, স্বাধীনতাবিরোধী চক্র, সরকারবিরোধীরা তাদের ব্যক্তিগত রাজনীতি করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। শিক্ষার্থীদের আবেগকে কাজে লাগিয়ে তারা শাহবাগে ছাত্রলীগ ও সরকারবিরোধী স্লোগান দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ছাত্রলীগের এই নেতা। তিনি আরো বলেন, তাদের দাবি বৈষম্যহীনতার দাবি নয়। তাদের মূল দাবি সরকার পতনের দাবি। তাদের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের দাবি। কিন্তু ছাত্রলীগ সেই সুযোগটি তাদের দিবে না। তার প্রত্যকেটি অপকর্মের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে সম্পৃক্ত নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কোটা সংস্কারের ওই আন্দোলনের সামনের সারিতেই ছিলেন ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত। যদিও ছাত্রলীগের অনেকে সে সময়ও বিরোধিতা করেছিল। জানা যায় পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছিল। অবশ্য পরে ছাত্রলীগ কোটা বাতিলের আন্দোলনে সংহতি পোষণ করে। পুলিশ যখন শাহবাগে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে তখন সামনের সারিতেই ছিলেন তানভীর হাসান সৈকত। কিন্তু বর্তমানে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সেই বিল্পবী সৈকতই যেন ২০২৪ সালে এসে কোটাবিরোধী আন্দোলনের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ এক মানুষের দুই রূপ বলছেন তারা।
ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, সরকার আদালতের প্রক্রিয়া অনুযায়ী কোটা বাতিলে আবেদন করবে। তারপর আদালত যে রায় দেয় সে রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রলীগ মন্তব্য করবে। আদালতের বিচারাধীন বিষয়ে ছাত্রলীগ সাংগঠনিকভাবে কোনো বিবৃতি এখন পর্যন্ত প্রকাশ না করার সিন্ধান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতে ছাত্রলীগ কাউকেই বাধা দিচ্ছে না। কয়েকটি হলে বিচ্ছিন্নভাবে যা ঘটেছে সেসব ছিল এলে ভুল বোঝাবুঝি ছাড়া আর কিছুই নয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা