০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

নেতৃত্বে তরুণদের প্রাধান্য দিচ্ছে বিএনপি

ঢাকাসহ ৪ মহানগরে নতুন কমিটি ঘোষণা
-

নতুন নেতৃত্বের ক্ষেত্রে তরুণদের প্রাধান্য দিচ্ছে বিএনপি। সম্প্রতি দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে আনা রদবদল ও দলের বিভিন্ন ইউনিট এবং অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা নির্বাচনে এই নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা মহানগরের দুই প্রান্তে যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে দীর্ঘ সময় পর সিনিয়রদের হাত থেকে নেতৃত্ব এসেছে তরুণদের উপর। দলটির নেতারা বলেছেন, আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে তরুণদের উপরই আস্থা রাখতে চায় বিএনপি। দলের সর্বস্তরে তাই অপেক্ষাকৃত তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। আগামীতেও এভাবেই নেতা নির্বাচন করা হবে।

দীর্ঘ ‘অসফল’ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কটের পর দল পুনর্গঠন নিয়ে কাজ শুরু করেছে বিএনপি। জুনের মাঝামাঝিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ৪৫টি পদে রদবদল করা হয়। এর আগে ছাত্রদলের কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি করা হয়। কেন্দ্রে রদবদলের ক্ষেত্রে বিএনপি তরুণদের প্রাধান্য দিয়েছে। বিশেষ করে যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অপেক্ষাকৃত তরুণদের পদ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে গতকাল ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপিসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ চার মহানগরে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ব্যর্থতার কারণে বিলুপ্ত করা কমিটিগুলোর নতুন নেতৃত্বে তরুণদের প্রাধান্য দিয়েছে দলটি।

ঘোষিত কমিটিতে ঢাকা মহানগর উত্তরে দুই সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিতে আহ্বায়ক হয়েছেন জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সদস্যসচিব করা হয়েছে দলের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সদস্যসচিব আমিনুল হককে। আর দক্ষিণের আহ্বায়ক করা হয়েছে দক্ষিণ বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু এবং সদস্যসচিব করা হয়েছে সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর আহমেদ রবীনকে। বরিশাল মহানগরে তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে মনিরুজ্জামান খান ফারুককে। তিনি সাবেক কমিটিরও আহ্বায়ক ছিলেন। সদস্যসচিব করা হয়েছে জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়াকে। তিনি সাবেক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এ ছাড়া সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে আফরোজা খানম নাসরিনকে। তিনিও আগের কমিটির সদস্য ছিলেন। চট্টগ্রাম মহানগরে দুই সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহকে এবং সদস্যসচিব করা হয়েছে নাজিমুর রহমানকে। নবগঠিত চার আহ্বায়ক কমিটিকে আগামী তিন মাসের মধ্যে নতুন কমিটি গঠনের সময়সীমা বেঁধে দেয়ার কথা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্তের পর থেকে পদপ্রত্যাশী নেতারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। কিন্তু এবার সেই দৌড়ঝাঁপ খুব বেশি কাজে লাগেনি। বিগত যেকোনো সময়ের চাইতে এবার অপেক্ষাকৃত তরুণদের দিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের অধিকাংশ চেয়েছিলেন ঢাকা মহানগর কমিটিতে সিনিয়র-জুনিয়র সমন্বয় করে কমিটি দেয়া হোক। ঘোষিত কমিটিতে সেটার প্রতিফলন দেখা যায়নি। এর আগে অবিভক্ত ঢাকা মহানগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মির্জা গোলাম হাফিজ, লে. জে. (অব:) মীর শওকত আলী, সাদেক হোসেন খোকা, মির্জা আব্বাস, আব্দুস সালাম, আমান উল্লাহ আমানের মতো হেভিওয়েট নেতারা দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই তুলনায় এবারের কমিটি অনেকটা তারুণ্য নির্ভর ও জুনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে করা হয়েছে।

মহানগর উত্তরের নতুন আহ্বায়ক সাইফুল আলম নিরব যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক থেকে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘ ১৫ বছর। তবে এই সময়ে রাজপথে তার উপস্থিতি নিয়ে কারো কারো মাঝে প্রশ্ন ছিল। যুবদলে থাকাকালীন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতার কারণেও কেউ কেউ তাকে দায়ী করেন। তবুও সদ্য কারামুক্ত এই নেতার উপর আস্থা রেখেছে বিএনপির হাইকমান্ড। অন্য দিকে ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে আমিনুল হক দায়িত্ব পালনকালে দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি গঠনে তৎপর ছিলেন। তেমন কোনো অনিয়ম কিংবা কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে উঠেনি। এ জন্য আবারো তার উপর হাইকমান্ড আস্থা রেখেছেন। পদ পাওয়ার পর সাইফুল আলম নিরব বলেন, দল তার উপর যে গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছে তার মর্যাদা রক্ষায় তিনিসহ মহানগরের প্রত্যেক নেতাকর্মী ও সমর্থক সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করবেন।

এ দিকে দক্ষিণে মহানগর কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে তেমন কোনো অভিযোগ নেই। কারণ রফিকুল আলম মজনু ও তানভীর আহমেদ রবিন সর্বশেষ আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তানভীর আহমেদ রবিন বলেন, ৯০‘র স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ঢাকা মহানগরের তার বাবার উপর আস্থা রেখে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দায়িত্ব দিয়েছিলেন এবং সফলও হয়েছেন। এবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার উপর যে গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছেন তার মর্যাদা রক্ষায় তিনি সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করবেন।

যুবদলের কমিটি যে কোনো সময় : ঢাকাসহ চার মহানগর বিএনপির কমিটি হওয়ায় এখন যে কোনো দিন ঘোষণা করা হতে পারে জাতীয়তাবাদী যুবদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি। কাদের দিয়ে যুবদলের নতুন আংশিক কমিটি গঠন করা হবে, দলের হাইকমান্ড তা ইতোমধ্যে প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে। এখন শেষ মুহূর্তের ঘষামাজা চলছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যুবদল ও ছাত্রদলের সাবেক নেতা যারা নেতাকর্মীদের কাছে ক্লিন ইমেজসম্পন্ন ও সব মহলে যাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, সর্বোপরি দল ও শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি কমিটমেন্টের কোনো ঘাটতি নেই- নতুন কমিটিতে তারুণ্যনির্ভর এমন নেতাদেরই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এ দিকে নতুন কমিটি গঠনের তৎপরতায় শীর্ষ পদে আসতে শেষ মুহূর্তের লবিং-তদবিরে ব্যস্ত পদপ্রত্যাশীরা। একই সঙ্গে পছন্দের প্রার্থীকে যুবদলে আনতে বিএনপি ও যুবদলের সাবেক নেতারাও চালাচ্ছেন নানামুখী তৎপরতা। ছাত্রদলের পাশাপাশি আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপির অন্যতম ভরসার জায়গা যুবদল। তাই আগামীর আন্দোলন সামনে রেখে আন্দোলনমুখী নেতৃত্বে যুবদলকে নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। এমন বিবেচনা থেকে এবার দলের প্রধান এই অঙ্গ সংগঠনের কমিটি ঘোষণা করবে বিএনপি।

জানা গেছে, যুবদলের নতুন কমিটিতে ৫-৬ জন নেতার নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে। তারা হচ্ছেন-আব্দুল মোনায়েম মুন্না, নুরুল ইসলাম নয়ন, মামুন হাসান, আকরামুল হাসান ও ফজলুর রহমান খোকন। এদের মধ্য থেকেই নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যুবদলের বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না ‘ক্লিন ইমেজসম্পন্ন’ বলে অনেকে মনে করেন। সংগঠনের জন্য ত্যাগ, সততা ও হাইকমান্ডের প্রতি কমিটমেন্টেরও কোনো ঘাটতি নেই তার। এরই মধ্যে সারা দেশে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটা রাজনৈতিক অবস্থানও তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন কারাভোগ করাটাও মুন্নার জন্য নতুন কমিটিতে সভাপতি হওয়ার ক্ষেত্রে ‘প্লাস পয়েন্ট’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও তাকে সভাপতি হিসেবে চান। বিদায়ী কমিটির সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন নতুন কমিটির সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক পদের যেকোনোটিতে আসতে পারেন। ছাত্রদল ও যুবদলে দীর্ঘ ক্যারিয়ার রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থীর। গত ২৮ অক্টোবরের পর যুবদলের পক্ষে রাজপথে আন্দোলন সংগঠিত করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন নয়ন।

রাজনীতিতে তার সততা, ত্যাগ ও কমিটমেন্ট নিয়েও কোনো সন্দেহ নেই। অবশ্য অনেকটা নিভৃতচারী নয়ন নিজের সম্পর্কে তুলে ধরেন কম। তার ব্যাপারে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে একটা পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের যুবদলের নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থীকে ‘সাংগঠনিক’ বলে অনেকে মনে করেন। সরকারবিরোধী বিগত আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন, খেটেছেন জেলও। নতুন কমিটিতে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনও জোরেশোরে আলোচনায় রয়েছেন। ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী খোকনের বাড়ি বগুড়ায়। হয়েছেন কারানির্যাতিতও। দীর্ঘদিন পর কাউন্সিলে ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত হওয়া তার জন্য ইতিবাচক হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।

এদের বাইরে যুবদলের সাবেক নেতা এস এম জাহাঙ্গীর, মাহবুবুল হাসান পিঙ্কু ভূঁইয়া, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, গোলাম মওলা শাহীন ও ইসহাক সরকার আছেন নতুন কমিটির শীর্ষ পদগুলোর জন্য আলোচনায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement