০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১,
`

কনডেম সেলের যে চিত্র দেখেছেন হাইকোর্টের দুইজন বিচারপতি

-


মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে বন্দী রাখা যাবে না বলে হাইকোর্টে রায় দেয়া দুইজন বিচারপতি দেশের দু’টি কারাগার পরিদর্শন করে সেখানকার (ফাঁসির আসামির) কনডেম সেলের চিত্র রায়ে তুলে ধরেছেন। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো: বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চের দেয়া এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চের বিচারকদের কারাগার পরিদর্শনের বিষয়টি উঠে এসেছে।
বহুল আলোচিত এ মামলার রায়ের ৪৮ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে যে, এই মামলার শুনানির অংশ হিসেবে আমরা দুইজন (বিচারপতি) দেশের দু’টি কারাগার পরিদর্শন করেছি। সেখানকার বাস্তব অবস্থা দেখতে গত ১৬ জানুয়ারি এবং ২৭ জানুয়ারি যথাক্রমে আমরা কেরানীগঞ্জের নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এবং ফরিদপুর জেলা কারাগার পরিদর্শন করি। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির আসামিদের কনডেম সেলের অবস্থা কিছুটা উন্নত হলেও ফরিদপুর কারাগারের কনডেম সেলের অবস্থা ছিল খুবই অমানবিক। বিচ্ছিন্নতার ক্ষেত্রে উভয় জেলই প্রায় একই রকম অমানবিক, নিষ্ঠুর এবং অত্যন্ত অবমাননাকর। এ ধরনের বিচ্ছিন্ন বন্দিত্বের মানসিক এবং শারীরিক প্রভাব সহজেই বোঝা যায়।

মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে বন্দী রাখা যাবে না বলে গত ১৩ মে রায় দেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো: বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
তবে পরবর্তীতে হাইকোর্টের রায়টি রাষ্ট্র পক্ষের আবেদনে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত। এ বিষয়ে আগামী ২৫ আগস্ট আপিল বিভাগে শুনানি হবে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
আলোচিত রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, যাদের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে, কিন্তু আপিল বিচারাধীন আছে, তাদের অবশ্যই কনডেম সেলে রাখা যাবে না এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই ধরনের দণ্ডিতদের কনডেম সেল থেকে সাধারণ সেলে স্থানান্তর করতে হবে। প্রকাশিত রায়ে হাইকোর্ট কারাগারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে কনডেম সেল থেকে বন্দিদের সাধারণ কারাগারে ক্রমান্বয়ে স্থানান্তরের জন্য নির্দেশ দেন।

আলোচিত এ মামলায় সাগর-রুনি হত্যা মামলাটি ক্রমাগত ফৌজদারি বিচারব্যবস্থাকে উপহাস করে চলেছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রায়ে পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার (দুই খ্যাতিমান তরুণ সাংবাদিকের নৃশংস হত্যাকাণ্ড) ঘটনার ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও তদন্ত এখনো শেষ হয়নি এবং এটি এখনো বিচারের আলো দেখতে পারেনি। দুর্ভাগ্যবশত, এই মামলাটি ক্রমাগত আমাদের ফৌজদারি বিচারব্যবস্থাকে উপহাস করে চলেছে এবং অপূরণীয় পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, আমাদের দেশে হত্যার বিচার হতে কখনো কখনো ২০ বছরের বেশি সময় লাগে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডকে যদি কোনো রাজনৈতিক চেহারা দেয়া হয়, তাহলে এর চেয়েও বেশি সময় লাগতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার এফআইআর দায়ের করা যায়নি ২১ বছরের বেশি সময় ধরে।
২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। গত বছরের ৫ এপ্রিল এ বিষয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। একই সাথে কনডেম সেলে থাকা বন্দিদের বিষয়ে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয় সেদিন। বিচারপতি মো: মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। চট্টগ্রাম কারাগারে কনডেম সেলে থাকা জিল্লুর রহমানসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন বন্দীর পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির এ রিট দায়ের করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল