১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দুর্গত এলাকায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী

জামালপুরে লোকালয়ে প্রবল তোড়ে প্রবেশ করছে বানের পানি : নয়া দিগন্ত -

- রাস্তাঘাট ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
- যমুনায় ৯৩ সেমি. ওপরে পানি
- আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণের জন্য হাহাকার

অতিভারী বর্ষণ এবং সীমান্তের ওপার থেকে ধেয়ে আসা ঢলের তোড়ে দেশের নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সার্বিক বন্য পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নদ-নদী, হাওর, বিল ও পুকুর উপচে পানি জনপদে প্রবেশ করেছে। এতে লাখ লাখ মানুষ দুর্গত এলাকায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে যোগাযোগব্যবস্থা। জামালপুরের যমুনার বিপদসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কুলাউড়ায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে। প্লাবিত এলাকাগুলোর জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, টানাবর্ষণ ও ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। বিভিন্ন নদ-নদী, হাওর, বিল ও পুকুরের পানিতে একাকার হয়ে জেলার অন্তত শতাধিক গ্রাম তলিয়ে হাজার হাজার নারী-পুরুষ পানিবন্দী হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেলের দিকে সীমান্তবর্তী কলমাকান্দা উপজেলার উব্দাখালী নদীর পানি বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া হাওর, বিল, পুকুর ও নদ-নদীর পানি দুই কূল উপচে রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ২৪ ঘণ্টায় জেলার সুসং দুর্গাপুর ও জারিয়া-ঝাঞ্জাইল পয়েন্টে ১০৪ ও মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ৩৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। জেলার মোহনগঞ্জ, মদন, খালিয়াজুরি, কলমাকান্দা, আটপাড়া বারহাট্রা, উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে রস্তাঘাট তলিয়ে যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অসংখ্য নারী-পুরুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। কয়েক শ’ পুকুরের মাছ বানের পানিতে ভেসে গেছে। পানির ঢেউয়ে হাওরসহ নিম্নাঞ্চলের প্রায় দেড় শতাধিক কাঁচা বাড়িঘর ধসে পড়েছে। এমতাবস্থায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে চরম ভোগান্তির কবলে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার লোকজন। বন্যাকবলিত এলাকার পানিবন্দী অনেকেই গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

কলমাকান্দা পোগলা ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক, বরখাপন ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, খারনৈ ইউপি চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক ও কৈলাটি ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন গণমাধ্যমকে জানান, আমাদের তিনটি ইউনিয়নের ৮৩টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পাহাড়ি ঢলের তোরে বিভিন্ন স্থানের রাস্তা ভেঙে যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী লোকজন এখন চরম ভোগান্তির কবলে পড়েছেন।

জামালপুর প্রতিনিধি জানান, জামালপুরের ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জে অবিরাম ভারীবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দুই উপজেলার সহস্রাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে দুই লক্ষাধিক মানুষ। দেওয়ানগঞ্জের একটি আশ্রায়ণ প্রকল্প নদীতে বিলীন হওয়ায় শতাধিক পরিবার দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া শতাধিক পরিবার গরু-বাছুর এবং গবাদি নিয়ে রেলস্টেশনে অবস্থান নিয়েছেন। পৌর শহরের বন্যার পানি প্রবেশ করায় অফিস আদালতের কার্যক্রম বিঘি্ণত হচ্ছে।
এ ছাড়া ইসলামপুর উপজেলার সব ক’টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি আরো বৃদ্ধি পেয়ে যমুনার বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফলে ইসলামপুর উপজেলার যমুনার তীরবর্তী কুলকান্দি, বেলগাছা, চিনাডুলী, সাপধরী, নোয়ারপাড়া, ইসলামপুর সদর, পার্থশীসহ অন্তত ৬টি ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক গ্রাম, হাটবাজার প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার পরিবার। ঘরবাড়িতে পানি উঠায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

বন্যার পানি প্রবেশ করায় জেলার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানর পাঠদান বন্ধ হয় গেছে ।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানান, গতকাল সকল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বন্যার পানির এক সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত এই পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে বলেন জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু ইতোমধ্যে মধ্যে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এবং পানির প্রচণ্ড স্রোতে ইসলামপুর-মাহমুদপুর সড়কের ব্রিজে অ্যাপ্রোচ ধসে গেছে। এ ছাড়া ধর্মকুড়া-উলিয়া সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অপর দিকে দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ি সড়ক এবং দেওয়ানগঞ্জ-ডাংধরা সড়ক ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে পড়েছে। ইসলামপুর উপজেলা প্রকল্পবাস্তবান কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু জানান, ত্রাণ হিসেবে ১২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে ৫০ টন বিতরণের জন্য দেয়া হয়েছে।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবান কর্মকর্তা মো: মাজাহারুল ইসলাম বলেন, ৪১৫টি পরিবার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। ত্রাণ হিসেবে ৩০ মেট্রিক টন চাল ও ২৭৫ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে ।
জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো: শফিকুর রহমান জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোতে চাহিদা মোতাবেক ত্রাণসহায়তা দেয়া হয়েছে।

সোনাতলায় ১২টি গ্রাম ও ৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দী
সোনাতলা (বগুড়া) সংবাদদাতা জানান, বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার দু’টি ইউনিয়নে বন্যার পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। ফলে চরাঞ্চল ও নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেই সাথে উপজেলার তেকানীচুকাইনগর ও পাকুল্লা ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের শতশত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি ওই দু’টি ইউনিয়নের ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১টি দাখিল মাদরাসা পানিবন্দী হওয়ার কারণে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা অফিস।

গতকাল শুক্রবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পাকুল্লা ইউনিয়নের রাধাকান্তপুর, আচারেরপাড়া, খাটিয়ামারী, পূর্ব-সুজাইতপুর, বসুনিয়ারপাড়া এবং তেকানীচুকাইনগর ইউনিয়নের চরসরুলিয়া, খাবুলিয়া, চরমহনপুর, পূর্বতেকানী, মহব্বতেরপাড়া ও জন্তিয়ারপাড়ার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী এলাকার মানুষের মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার,পানি এবং গোখাদ্যের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
ওই দুটি ইউনিয়নের বন্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বালিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাউদেরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভিকনেরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খাবুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুশারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাধাকান্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তেকানীচুকাইনগর পিএম দাখিল মাদরাসা।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খাতিজা খাতুন বলেন, বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ইউএনওকে রিপোর্ট দিয়েছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, সোনাতলা উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে বাঁধের কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি।

রৌমারীর বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের রৌমারীতে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। কয়েক দিনের টানাবর্ষণ ও ভারত থেকে তেড়ে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে সবজিক্ষেত রোপা আমন ধান বীজতলা। মানুষের বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পানিবন্দী মানুষগুলো সাপ বিচ্চুর ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে। অবিরাম গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের তোড়ে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের কাঁচাপাকা গ্রামীণ সড়কগুলো বন্যার পানির প্রচণ্ড চাপে ভেঙে খানাখন্দে পরিণত হচ্ছে।
এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক ও উচ্চবিদ্যালয় কলেজ রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। পানিবন্দী বাড়িঘরের মানুষ বিশুদ্ধ পানি শুকনো খাবার সঙ্কটে ভুগছে।

উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে বন্দবেড়, চরশৌলমারী, রৌমারী, জাদুরচর চারটি ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করেছে। এ ব্যাপারে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ হাসান খান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্ত সামসুদ্দিন, ৫নং ইউপি চেয়ারম্যন শরবেস আলী, ৩নং বন্দবেড় ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের ও উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু, সার্বক্ষণিক বন্যকবলিত এলাকা ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের খোঁজখবর নিচ্ছেন।
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, হাকালুকি হাওরসহ কুলাউড়ার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। ২য় দফার বন্যায় মানুষের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। এ দিকে গত পাঁচ দিন থেকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে কোনো ত্রাণসামগ্রী দেয়া হয়নি।
জানা যায়, হাকালুকি হাওর তীরবর্তী উপজেলাগুলোতে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রান্নাকরা খাবার, বিশুদ্ধ পানি আর স্যানিটেশন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন লোকজন। দিন দিন বাড়ছে পানিবাহিত রোগবালাই। বিশেষ করে গবাদিপশুর খাবার ও বাসস্থান নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বানভাসীরা। ওর তীরের ভূকশিমইল ইউনিয়নের ভুকশিমইল গ্রামের আলী আহমদ জানান, আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষ খাদ্য সঙ্কটের সাথে বিশুদ্ধ পানির সমস্যায় ভুগছেন। এতে পানিবাহিত রোগজীবাণুতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে হাওর এলাকায়।
কুলাউড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: শিমুল আলী জানান, ফের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় অতিরিক্ত দুই হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা করার ব্যবস্থা আছে। নতুন করে বরাদ্দের চাহিদা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই দ্রুত বানভাসী মানুষের মধ্যে সেগুলো বিতরণ করা হবে।

উখিয়ায় ভারী বর্ষণে ৪০ গ্রাম প্লাবিত
উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, উখিয়ায় অন্তত ৪০টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে চার হাজার মানুষ। বহু কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে গ্রামীণ সড়ক লণ্ডভণ্ড হয়েছে। কালভার্ট বিধ্বস্ত হওয়ার পাশাপাশি গাছপালা এবং পানের বরজ ও চিংড়ি ঘের নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, জালিয়া পালং ইউনিয়নের লম্বরীপাড়া, ঘাটঘরপাড়া, পাইন্যাশিয়া, সোনাইছড়ি, সোনারপাড়া, ডেইলপাড়া, মনখালী, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া, রুমখা পালং, বড়বিল, পাতাবাড়ি, নলবুনিয়া, খেওয়া ছড়ি, বৌবাজার, কুলারপাড়া, মনির মার্কেট, পাগলির বিল, রাজাপালং ইউনিয়নের কুতুপালং, মাছকারিয়া, লম্বাশিয়া, তুতুরবিল, হিজলিয়া, পিনজিরকুল, রতœাপালং ইউনিয়নের সাদৃকাটা, পশ্চিম রতœা, বড়ুয়াপাড়া, খোন্দকারপাড়া, গয়ালমারা ও পালংখালী ইউনিয়নের রহমতেরবিল, থাইংখালী, বালুখালী, তেল খোলা, আনজুমানপাড়া, ফারিরবিলসহ অন্তত ৪০টি গ্রামে পানি তলিয়ে গেছে। চার দিকে পানি আর পানি। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় অনেক গবাদিপশু মারা যাচ্ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে চার হাজার মানুষ। জনগণের চরম দুর্ভোগ বেড়েছে। জালিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম সৈয়দ আলম জানান, সমুদ্র উপকূলীয় ডেইলপাড়া, লম্বরিপাড়া ও ঘাটঘর পাড়ায় কয়েক শ’ পরিবার পানিতে আটকা পড়েছে।

বন্যার্তদের আশ্রয় রেলস্টেশন-স্কুল কলেজে
দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, পৌরসভাসহ উপজেলার ৮ ইউনিয়ন, দেওয়ানগঞ্জ, চুকাইবাড়ী, চিকাজানী, বাহাদুরাবাদ, হাতিভাঙ্গা, পাররামরামপুর, চর আমখাওয়া ও ডাংধরা ইউনিয়নের অধিকাংশ নিম্নএলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আখ, পাট, শাকসবজির বাগানসহ অন্য সব ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ অনেক স্থানে বন্ধ হয়ে গেছে। দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের পশ্চিম চুনিয়াপাড়া গুলুঘাট ব্রিজ সংলগ্ন গুলুঘাট গ্রামে ব্যাপক ভাঙন দেখা গিয়েছে। গুলুঘাট-চৌধুরী বাড়ি-মণ্ডলবাজার বাঁধের গুলুঘাট এলাকায় প্রায় সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। উপজেলা প্রকৌশলী মো: তোফায়েল আহমেদ নয়া দিগন্তকে জানান, সর্দারপাড়া ভাঙা রাস্তা মেরামত করা হলেও হাতিভাঙ্গা ইউপির কাঠারবিল ভাঙন এবং চিকাজানী ইউপির নয়া গ্রামের ভাঙনস্থান পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। পানি না কমা পর্যন্ত তা সম্ভব হবে না। কাঠারবিলে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় দেওয়ানগঞ্জের সাথে উত্তরের ৪ ইউনিয়ন এবং কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার কয়েকটি উপজেলার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানিমাপক মো: আব্দুল মান্নান নয়া দিগন্তকে জানান, গত ৪২ ঘণ্টায় যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। নদীভাঙন ও বন্যাদুর্গত শত শত নারী পুরুষ শিশু আশ্রয় নিয়েছে দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশন, স্কুল কলেজে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement