০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২ মহররম ১৪৪৬
`

আলোচনার মধ্যেও থেমে নেই গাজায় ইসরাইলের বিমান হামলা

-


যুদ্ধ বিরতি নিয়ে মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় হামাসের সাথে আলোচনায় থাকা সত্ত্বেও গাজায় স্থল ও বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। ইসরাইলি বিমান হামলায় গাজার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়ায় তিন শিশু এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনুসে এক দম্পতিসহ অন্তত পাঁচজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তা ছাড়া ইসরাইলি স্থলবাহিনী গাজা শহরের শুজাইয়া অঞ্চলে তাদের সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। যেখানে প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে তারা।

আলজাজিরার সংবাদদাতা হামদাহ সালহুত রিপোর্ট করেছেন যে ইসরাইলি কর্মকর্তারা ‘সতর্কভাবে আশাবাদী’ কারণ গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। যদিও মূল বিষয়গুলো ইসরাইল ও হামাস উভয়ের জন্যই আলোচনাধীন রয়েছে। ইসরাইলের মোসাদ গোয়েন্দা প্রধান ডেভিড বার্নিয়া আলোচনাকারী প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে দোহার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন। আলোচনা শুরুর আগে কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছেন। হামাসের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের সর্বশেষ প্রতিক্রিয়ার পরে এটি ‘আশাব্যঞ্জক’ খবর বলে মনে করা হচ্ছে।
ডয়েচে ভেলে জানায়, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে পণবন্দীদের মুক্তির লক্ষ্যে বোঝাপড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা। আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় অবশিষ্ট পণবন্দীদের মুক্তি ও অস্ত্রবিরতির একাধিক প্রচেষ্টা এখনো পর্যন্ত সফল হয়নি। মার্কিন প্রশাসন এবার পণবন্দীদের মুক্তির প্রশ্নে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে বোঝাপড়ার আশা করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মার্কিন কর্মকর্তা ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে বোঝাপড়ার দাবি করেছেন। তবে তার মতে, সেই পরিকল্পনা কার্যকর করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে এখনো সমঝোতা হয়নি। ফলে আগামী কয়েক দিনে চূড়ান্ত সাফল্যের আশা নেই। বৃহস্পতিবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু টেলিফোনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে টেলিফোনে কথা বলেন। তিনি পণবন্দীদের মুক্তির লক্ষ্যে হামাসের সাথে আলোচনা আবার শুরু করার জন্য কাতারের রাজধানী দোহায় এক প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা বলেন।

সেই কর্মকর্তার মতে, নেতানিয়াহু আবার আলোচনার ছাড়পত্র দেয়ায় বাইডেন সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য, পরে জানা গেছে, ইসরাইলের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ডাভিড বারনেয়া স্বয়ং দোহায় যাচ্ছেন। শুক্রবারই সেই আলোচনা হওয়ার কথা। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সূত্র অনুযায়ী, তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মহম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানির সাথে সাক্ষাৎ করবেন।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার রাতে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক সদস্যদের সাথে বৈঠক করেন। কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের পাঠানো প্রস্তাব নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। গাজায় ইসরাইলি সামরিক অভিযান বন্ধ করে পণবন্দীদের মুক্তির লক্ষ্যে বোঝাপড়ার জন্য দেশে-বিদেশে প্রবল চাপের মুখে রয়েছে নেতানিয়াহুর সরকার। তবে তার জোট সরকারের উগ্র ধর্মীয় ও জাতিয়তাবাদী শরিকরা হামাসের সাথে আপসের ঘোর বিরোধিতা করে আসছে।

বাইডেন প্রশাসন বর্তমান সঙ্কটের কূটনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে জোরালো উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছে। গাজায় শান্তি ফেরাতে কাতার, মিসরসহ অন্যান্য দেশের সাথে আলোচনা চালাচ্ছেন মার্কিন প্রতিনিধিরা। গত মে মাসে বোঝাপড়ার এক কাঠামো প্রস্তুত হলেও ইসরাইল ও হামাস এতকাল সেই পথে এগোতে দ্বিধা করছিল। এবার হামাসের কিছু পালটা প্রস্তাবের ভিত্তিতে চূড়ান্ত বোঝাপড়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই মার্কিন কর্মকর্তা মনে করছেন। একাধিক সাংবাদিকদের সামনে তিনি সেই আশার আলো দেখানোয় বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে।
টাইমস অব ইসরাইল ও আলজাজিরা জানায়, গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধের জন্য ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস বড় ধরনের ছাড় দিয়েছে বলে একটি ইসরাইলি সূত্র দাবি করেছে। আর এই প্রেক্ষাপটেই ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আলোচনার জন্য ইসরাইলি আলোচক দলকে অনুমতি দিয়েছেন। তবে ঠিক কী ছাড় দেয়া হয়েছে, তা জানা যায়নি। ইসরাইলি আলোচক দলের একটি সূত্র বৃহস্পতিবার রয়টার্সকে জানায়, হামাসের প্রস্তাবে ‘খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়’ রয়েছে।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ওই ইসরাইলি কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি আলোচনাকে এগিয়ে নিতে পারে। সত্যিকারের বাস্তবায়নযোগ্য একটি চুক্তি হতে পারে। ধারাগুলো সহজ না হলেও চুক্তিটি বাতিল করা ঠিক হবে না।’ এদিকে এক মার্কিন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, হামাস বেশ বড় প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি আশা করেন, এর ফলে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পথে এগিয়ে যেতে একটি চুক্তি হতে পারে। তিনি আরো বলেন, তবে এখনো বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। ফলে কয়েক দিনের মধ্যে চুক্তি হয়ে যাবে, এমনটি আশা করা ঠিক হবে না।

তবে নেতানিয়াহু আবারো বলেছেন, ইসরাইলের সব লক্ষ্য অর্জিত হলেই কেবল যুদ্ধ বন্ধ হতে পারে। এর এক মুহূর্ত আগেও যুদ্ধ বন্ধ হবে না। ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বারনিয়া কাতারে মধ্যস্থতাকারীদের সাথে আলোচনায় বসবেন। তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল সানির সাথেও বসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, নেতানিয়াহু চুক্তির পক্ষে। তবে তার সরকারের উগ্র মন্ত্রীদের জন্য, বিশেষ করে অর্থমন্ত্রী বেজালের স্মট্রিচ এবং জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভিরের জন্য তা পারছেন না। তারা যেকোনো চুক্তিকে ভণ্ডুল করে দিতে পারেন। মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধবিরতির জন্য ছয় মাস ধরে চেষ্টা করলেও তেমন সাফল্য পাননি।

হিজবুল্লাহ ও হামাস নেতাদের বৈঠক
এদিকে রয়টার্স জানায়, লেবাননের হিজবুল্লাহর নেতা সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহর সাথে বৈঠক করেছেন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের কর্মকর্তা খলিল আল-হায়া। বৈঠকে গাজা উপত্যকার সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং সেখানে একটি যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করেছেন তারা। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে হিজবুল্লাহ। রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে। হিজবুল্লাহর ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈঠকের আগে হামাসের ডেপুটি চিফ হায়াকে শুভেচ্ছা জানান নাসরাল্লাহ। বৈঠকে ‘গাজা উপত্যকার সর্বশেষ নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে’ আলাপ করেন এই দুই নেতা। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক দিনগুলোতে আলোচনাধীন একটি চুক্তি নিয়েও কথা বলেছেন তারা।’ ওই প্রস্তাবে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধের বিষয়ে তাগাদা দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার এক সিনিয়র মার্কিন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলেছিলেন, ইসরাইলের সাথে বন্দী বিনিময় ইস্যুতে হামাস একটি উল্লেখযোগ্য মীমাংসায় এসেছে। এটি একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পথ সুগম করবে বলে আশা করছেন তিনি। অক্টোবরে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকেই লেবানন-ইসরাইল সীমান্তে নিয়মিত গুলি বিনিময় করছে হিজবুল্লাহ ও ইসরাইল। এতে এই অঞ্চলে একটি আঞ্চলিক সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

পশ্চিমতীরে ইসরাইলের ৫ হাজার নতুন আবাসন
এপি জানায়, ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরে নতুন ৫ হাজার ৩০০ আবাসনের অনুমোদন দিয়েছে ইসরাইলের ক্ষমতাসীন সরকার। বৃহস্পতিবার এই পরিকল্পনাটি পাস হয়েছে বলে জানা গেছে। ইসরাইলের সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত আলোচনা ফের শুরু করতে চান প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। সেজন্য ইতোমধ্যে প্রতিনিধি পাঠানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছেন তিনি। রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে নেতানিয়াহুর সামনে বড় দু’টি চ্যালেঞ্জ উপস্থিত হয়েছে। প্রথমটি হলো হিজবুল্লাহ এবং দ্বিতীয়টি হলো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি প্রদান। দু’টো চ্যালেঞ্জই তার নেতৃত্বাধীন সরকারের জন্য স্পর্শকাতর।

 


আরো সংবাদ



premium cement