০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২ মহররম ১৪৪৬
`
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার

ক্ষমতাসীন দলের ভরাডুবি

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার -


ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় লাভের পর লেবার পার্টি নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন দলটির নেতা স্যার কিয়ার স্টারমার। গতকাল শুক্রবার বাকিংহাম প্যালেসে রাজা তৃতীয় চার্লস লেবার নেতা কিয়ার স্টারমারকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। বিশ্বনেতারা স্টারমারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অন্য দিকে নির্বাচনে ভরাডুবির পর কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব ও প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়লেন ঋষি সুনাক। বিবিসি ও রয়টার্স।
ব্রিটেনের পার্লামেন্টের মোট ৬৫০টি আসনের মধ্যে সরকার গঠনের জন্য কোনো দলকে এককভাবে পেতে হবে ৩২৬টি আসন। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে লেবার পার্টি ৪১২ আসনে জয় পেয়েছে। ১২১ আসন পেয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি। লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ৭১ আসনে জয় পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। তা ছাড়া এসএনপি জয় পেয়েছে ৯ আসনে। ৭ আসন পেয়েছে এসএফ। ২৮টিতে জয় পেয়েছে অন্যরা। ২ আসনের ফলাফল এখনো ঘোষণা করা হয়নি। এর ফলে ২০১০ সালের পর আবারো ডাউনিং স্ট্রিটে একজন লেবার প্রধানমন্ত্রী আসলেন।

নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে দেয়া প্রথম ভাষণে দেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার। তিনি বলেছেন, আমাদের দেশ পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিয়েছে। রাজনীতিকে জনগণের সেবায় ফিরিয়ে দিয়েছে।
বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বাকিংহাম প্যালেসে রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার পর স্টারমার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ডাউনিং স্ট্রিটে যান। ভাষণের শুরুতেই তিনি দেশের প্রথম ব্রিটিশ-এশীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঋষি সুনাকের অর্জনের কথা তুলে ধরেন। নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে সুনাক যে ‘নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রম’ করেছেন, তাও স্বীকার করেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন নতুন করে দেশ গড়া প্রয়োজন। আমরা কে তা নতুন করে আবিষ্কার করার সময় এসেছে।’

ইটের ওপর ইট গেঁথে দেশের অবকাঠামো পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেন স্টারমার। তবে সেই পরিবর্তন আনতে যে কিছু সময় লাগবে, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশে পরিবর্তন নিয়ে আসা সুইচ টেপার মতো কোনো বিষয় নয়। তবে তিনি বলেন, পরিবর্তনের কাজ অবিলম্বেই শুরু হবে। আমাদের কাজ জরুরি। আজই আমরা তা শুরু করব। ২০১০ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা রক্ষণশীলদের যে ভরাডুবি হতে চলেছে, তা অনুমিতই ছিল। বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের দল কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে মাত্র ১২১টি আসন। অর্থাৎ দুইশতাধিক আসন তারা হারিয়েছে।

অভিনন্দন জানালেন বিশ্ব নেতারা
ভোটে ‘পরিবর্তনের’ ডাক দিয়ে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমারকে অভিনন্দন জানিয়ে একসাথে কাজ করার বার্তা পাঠাচ্ছেন বিশ্ব নেতারা। কিয়ার স্টারমারকে চিঠি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আপনার যোগ্য নেতৃত্বে লেবার সরকারের সাথে আমাদের দুই কমনওয়েলথ দেশের পারস্পরিক স্বার্থের আলোকে দীর্ঘ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, জলবায়ু এবং কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরো শক্তিশালী করার প্রতীক্ষায় আছে আমার সরকার।

ভোটের ফল ঘোষণার পর কিয়ার স্টারমারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক্সে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, সাধারণ নির্বাচনে অসাধারণ জয়ের জন্য কিয়ার স্টারমারকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভকামনা। সবক্ষেত্রে আমি পারস্পরিক উন্নতি ও সমৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে ভারত-ইউকে ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরো শক্তিশালী করতে আমাদের ইতিবাচক ও গঠনমূলক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। ভোটে পরাজিত ঋষি সুনাকের উদ্দেশে তিনি বলেন, ব্রিটেনে প্রশংসনীয় নেতৃত্ব ও আপনার মেয়াদে ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে সম্পর্ক গভীর করতে সক্রিয় অবদানের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আইরিশ প্রধানমন্ত্রী সিমন হ্যারিস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আয়ারল্যান্ড ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। সেই সম্পর্কে পুনঃস্থাপনের এখনই সময়। আজ (শুক্রবার) সকালে ডাবলিন থেকে আমি লন্ডনে একটি বার্তা পাঠাতে চাই, আমাদের শান্তি প্রক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার জন্য আমি কিয়ার স্টারমারের প্রতিশ্রুতি ও উদ্যমের সাথে একাত্ম হবো।’
কিয়ার স্টারমারের লেবার পার্টির জয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন যুদ্ধের মধ্যে থাকা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এক্সে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ইউক্রেন ও ব্রিটেন নির্ভরযোগ্য মিত্র হিসেবে আছে। সর্বাবস্থায় সেটিই থাকবে। আমরা আমাদের জীবন, স্বাধীনতা, নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সাধারণ মূল্যবোধকে রক্ষা ও এগিয়ে নিয়ে যাবো। কনজারভেটিভ সরকারের মেয়াদে সহযোগিতার জন্য প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ এক্সে লিখেছেন, ভোটের জয়ে স্যার কিয়ার স্টারমারকে অভিনন্দন। দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা, ইউরোপের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আমরা কাজ করে যাবো। এনটিবি নিউজ এজেন্সিকে নরওয়েজিয়ান প্রধানমন্ত্রী জোনাস গাহর স্টোয়ার বলেন, লেবার পার্টিকে তার গতিপথ পরিবর্তন, গ্রেট ব্রিটেনের আয় সমৃদ্ধি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ও জাতীয় স্বাস্থ্য পরিসেবাকে শক্তিশালী করার জন্য ঐতিহাসিকভাবে ভোটাররা শক্তিশালী ম্যান্ডেট দিয়েছে। আমি স্টারমারের সাফল্য কামনা করি।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন এক্সে লিখেছেন, নির্বাচনী জয়ে কিয়ার স্টারমারকে অভিনন্দন। সাধারণ চ্যালেঞ্জগুলো ও ইউরোপীয় নিরাত্তার বিষয়গুলোতে গঠনমূলক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আপনার সাথে কাজ করতে আগ্রহী।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, নাগরিকদের জন্য পারস্পরিক বোঝাপড়ার সব বিষয়গুলোতে কাজ করতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আপনি ও আপনার সরকারের সাথে কাজ করতে আমি আগ্রহী।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ বলেন, আমাদের দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক। কিন্তু আমি স্যার কিয়ার স্টারমারসহ লেবার পার্টির অন্যদের সাথে বেশ পরিচিত। তাদের সাথে আমি কাজ করতে চাই। ‘আমি নিশ্চিত, এইউকেইউএস (অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র) এর সাথে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করব, যেমনটি আগের সরকারের সময়ে করেছি।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক্সে লিখেছেন, ব্রিটেনের নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয়ে কিয়ার স্টারমারকে অভিনন্দন। আটলান্টিকের উভয় তীরের মানুষের জন্য আরো প্রগতিশীল, সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য সামনে প্রচুর কাজ রয়েছে। চলো বন্ধু, শুরু করি।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সন এক্সে লিখেছেন, ভোটের জয়ে কিয়ার স্টারমার আপনাকে অভিনন্দন। নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য বড় বন্ধু এবং একসাথে অনেক কিছু করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি সবক্ষেত্রে একসাথে কাজ করার জন্য উন্মুখ।
ভূমধ্যসাগরের মাঝে দ্বীপ দেশ মাল্টার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট অ্যাবেলা এক্সে লিখেছেন, ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে দারুণ জয়ে কিয়ার স্টারমারকে অভিনন্দন। প্রগতিশীল ও আকর্ষণীয় প্রচারের জন্য লেবার পার্টিকে অভিনন্দন, যা যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের ক্ষমতায়ন করেছে। মাল্টা ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক আরো জোরদারের অপেক্ষায় আছি। লেবার নেতা কিয়ার স্টারমার বিপুল বিজয়ের পর ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন; বলেছেন, যুক্তরাজ্যে পরিবর্তনের সূচনা হলো।

কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব ছাড়ছেন সুনাক
নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগের পাশাপাশি নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বও ছেড়ে দিচ্ছেন ঋষি সুনাক। সরকারি বাসভবন ১০নং ডাউনিং স্ট্রিটে শেষ বিদায়ী ভাষণে সুনাক বলেছেন, ভোটারদের ক্ষোভ, হতাশা এবং পরিবর্তনের আকাক্সক্ষা তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন। দল নতুন নেতা পেয়ে গেলেই পদত্যাগ করবেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমি টোরি (কনজারভেটিভ) নেতার পদ থেকে পদত্যাগ করব। তবে এখনই নয়। যখন দলের উত্তরসূরি নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে তখন।
১৪ বছর সরকারে থাকার পর কনজারভেটিভ পার্টির পুনর্গঠিত হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে তারা যথেষ্ট পেশাদারিত্ব এবং কৃতিত্বের সাথে বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে সেটিও কম নয়, বলেন সুনাক।

তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার সবটা দিয়েছি। কিন্তু আপনারা পরিষ্কার বার্তা পাঠিয়েছেন যে, যুক্তরাজ্যের সরকার পরিবর্তন হতে হবে। আর কেবল আপনাদের বিচারই আসল কথা। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে পরিবারের কাছ থেকে যে সমর্থন-সহযোগিতা পেয়েছেন সেজন্য ধন্যবাদ জানান সুনাক। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা সে কথা উল্লেখ করে সুনাক বলেন, মূল্যস্ফীতিকে সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রায় নিয়ে এসেছেন তিনি। মর্টগেজের হার কমে আসছে এবং প্রবৃদ্ধিও ফিরে এসেছে।
ভাষণে লেবার নেতা কিয়ার স্টারমারেরও প্রশংসা করেছেন সুনাক। তিনি বলেন, লেবার পার্টি প্রতিপক্ষ হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু দলের নেতা স্টারমার একজন ভদ্র, জনহিতৈষী মানুষ। আমি তাকে সম্মান করি। সুনাক বলেন, টোরিকে এখন দল পুনর্গঠন করে বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে।

ভাষণ শেষেই গাড়িতে করে ডাউনিং স্ট্রিট ছাড়েন তিনি। এরপর রাজার কাছে পদত্যাগপত্র দিতে তিনি বাকিংহাম প্যালেসে গিয়ে পদত্যাগ করেন সুনাক।
নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন স্টারমার
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টিকে হারিয়ে দীর্ঘ ১৪ বছর পর ব্রিটেনের ক্ষমতায় বসেছে লেবার পার্টি। নির্বাচনে ৩৬২ আসনে জয় পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতার চেয়ারে বসেছে দলটি। লেবার পার্টির প্রধান নেতা হিসেবে কিয়ার স্টারমার হয়েছেন ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী। তবে দায়িত্ব নেয়ার শুরুতেই বেশ কিছু কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে। ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলন, ইউরোপীয় জোট, বেক্সিট ইস্যুসহ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক, ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ ছাড়াও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে স্টারমারের নতুন সরকারকে। সেই চ্যালেঞ্জ কতটা দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করতে পারে ১৪ বছর পর ক্ষমতায় বসা লেবার পার্টি তা দেখার অপেক্ষাতেই এখন বিশ্ব।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আগামী মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ন্যাটোর ৭৫তম বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের সাথে বৈঠকে বসতে হবে স্টারমারকে। যেখানে থাকবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ইউরোপীয় অন্যান্য শীর্ষ নেতারা। ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দায়িত্বের শুরুতেই বড় কূটনীতির ঝড়ের মুখে পড়তে হবে তাকে।

এরপর ১৮ জুলাই ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডের কাছে ব্লেনহেইম প্যালেসে ইউরোপীয় রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের সাথে বৈঠকে বসবেন তিনি। যেখানে ফ্রান্সের ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও জার্মানির ওলাফ শলৎস উপস্থিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যেখানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে স্টারমারের। এ ছাড়াও বেক্সিট ইস্যুসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে একটি নিরাপত্তা চুক্তিতে যেতে হতে পারে ব্রিটেনকে। এর বাইরেও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে নানা চ্যালেঞ্জ তো থাকছেই। সব মিলিয়ে স্টারমারের অধীনে ব্রিটেনের পররাষ্ট্র নীতিকে পড়তে হবে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে।
কেননা, গত বছর স্টারমার ব্রিটেনকে বাণিজ্যে এবং প্রযুক্তির মতো ইস্যুতে চীন থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়ার কথা বলেছিলেন। সেই সাথে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার মতো বিষয়গুলোর দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে তাকে। এ ছাড়াও আগামী মার্কিন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের ক্ষমতায় বসলে ব্রিটেনকে চীনের ব্যাপারে চাপ দিতে পারে; সেটিও মাথায় রাখতে হচ্ছে তাকে।
এর বাইরে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সঙ্ঘাতে নিজেদের একটি পক্ষ নিতে হবে তাদের। কেননা লেবার পার্টি নির্বাচনের আগে বলেছিল ফিলিস্তিনকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তারা। সেই সাথে তখন বলেছিল অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিসহ সমস্ত বন্দী মুক্তি ও গাজায় সাহায্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে চায় তারা। এই সঙ্ঘাতের সমাধানের পক্ষে ব্রিটেন। তবে এখন নির্বাচিত হওয়ার পর ব্রিটেন এটি চাইলেও যুক্তরাষ্ট্রের কারণে করতে পারে কি না সেটা নিয়ে শঙ্কা থাকছেই।

এর বাইরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে স্টারমারকে। যদিও তিনিও সব সময় ইউক্রেনের পক্ষেই কথা বলেছেন নির্বাচনের আগে। তা ছাড়া ব্রিটেন ইউক্রেনের কট্টর সমর্থন। রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করতে সহায়তা করার জন্য অর্থ, অস্ত্র এবং সৈন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করেছিল ঋষি সুনাকের সরকার। নতুন সরকারের দায়িত্ব নিয়ে স্টারমারের ভূমিকা কি হবে সেটায় এখন দেখার।
এর বাইরে নির্বাচনের আগে ফ্রান্সের ডানপন্থীদের সমর্থন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন স্টারমার। সেই সাথে ফ্রান্সের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলোকে আরো শক্তিশালী এবং উন্নত করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন স্টারমার। এর বাইরে নিজেদের প্রতিরক্ষার দিকেও মনোযোগ দিতে হবে স্টারমারের। কেননা দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ২.৫ শতাংশে বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। আর সেটি করতে হলে সরকারের প্রথম বছরেই একটি কৌশলগত প্রতিরক্ষা পর্যালোচনা করা হবে। যা হবে স্টারমারের জন্য অন্যতম কঠিন চ্যালেঞ্জ।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement