০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ জিলহজ ১৪৪৫
`
সুজনের মন্তব্য

টাকায় কেনা উত্তম গণতন্ত্র

জাতীয় প্রেস ক্লাবে সুজনের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন ড. বদিউল আলম মজুমদার : নয়া দিগন্ত -

উপজেলা নির্বাচনে অধিক হারে ব্যবসায়ীদের নির্বাচিত হওয়া প্রমাণ করে রাজনীতি ক্রমাগতভাবে ব্যবসায়ে পরিণত হয়ে গেছে। ফলে গণতন্ত্র হয়ে পড়েছে ‘বেস্ট ডেমোক্রেসি মানি ক্যান বাই’, অর্থাৎ টাকা দিয়ে কেনা উত্তম গণতন্ত্র।’ বলে মন্তব্য করেছেন সুজন স¤পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। আর অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, মন্ত্রণালয়ের আদেশে নয়, বরং কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা অন্য কোনো গুরুতর অভিযোগ থাকলে বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই জনপ্রতিনিধিদের বহিষ্কার করা উচিত।
নাগরিক সংগঠন ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’ (সুজন)-এর উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২০২৪ : বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তথ্যের বিশ্লেষণ উপস্থাপন ও নির্বাচন-মূল্যায়ন’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানানো হয়। এতে বক্তব্য রাখেন সুজন স¤পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজন নির্বাহী সদস্য ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সুজন কোনো দাতা সংস্থা নয়, এটি একটি নাগরিক সংগঠন। সুজন দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে পরিচ্ছন্ন করার লক্ষ্যে কাজ করছে। সুজন বিভিন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের হলফনামা ও আয়করের তথ্য বিশ্লেষণ করে ভোটার ও গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরে, যাতে প্রার্থীদের স¤পর্কে জানার মাধ্যমে ভোটাররা ক্ষমতায়িত হন এবং সাংবাদিকরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ছিল একতরফা নির্বাচন। ভোটের হারও ছিল কম। আমি মনে করি, নির্বাচনে ভোটদানে অনীহা ও রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন বর্জন একই সূত্রে গাঁথা। আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনঅনাস্থাই এর কারণ। জনগণের মধ্যে এই ধারণা তৈরি হয়েছে যাকেই ভোট দেয়া হোক না কেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরাই বিজয়ী হবেন। সরকার ধারণা করেছিল ভোটের হার বাড়লে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে। কিন্তু ভোটের হার ছিল নিম্নমুখী।
ড. বদিউল আলম বলেন, সংবিধান স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের ওপরই স্থানীয় পর্যায়ের প্রশাসন পরিচালনা থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কিত সব কার্যক্রম, তথা, স্থানীয় শাসন’ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেছে। তাই নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে এমপিদের জন্য ২৫ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেয়া আমাদের সংবিধান ও ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদ-সহ বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির ঘূর্ণায়মান পদ্ধতি প্রবর্তন করা দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, গণতন্ত্র চর্চা না করলে এবং গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ না পেলে আমরা সামনে এগোতে পারব না। যেভাবেই হোক উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখন সরকারের কাজ হবে এই পরিষদকে শক্তিশালী করা। তিনি বলেন, আরেকটি বিষয় হলো, উপজেলা পর্যায়ে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। যা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির হাতে থাকা উচিত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার মতামত দিতে পারেন, কিন্তু সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারেন না। উপজেলা পরিষদকে শক্তিশালী করার জন্য এর আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং কেন্দ্রীয় শাসনের পরিবর্তে বিকেন্দ্রীকরণ করা দরকার। এমন একটি ব্যবস্থা দাঁড় করাতে যে দলের প্রার্থীই চেয়ারম্যান থাকুন না কেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিষদে বরাদ্দ চলে যাবে। তিনি বলেন, অধিক সম্পদশালীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাটাকে আমি কোনো সমস্যা মনে করি না। বরং কেউ যদি টাকা দিয়ে ভোট কেনেন, তাহলে প্রশাসনের উচিত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। নির্দলীয় ভিত্তিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় নির্বাচনে ভোটের হার কিছুটা বেড়েছে। অন্যথায় ভোটের হার ১৫ শতাংশের বেশি হতো না। আমি মনে করি, স্থানীয় নির্বাচন নির্দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হলে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা প্রমাণের সুযোগ থাকে এবং প্রার্থীর সাথে জনগণের সম্পর্ক তৈরি হয়।
একরাম হোসেন বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অধিক হারে ব্যবসায়ীদের নির্বাচিত হওয়ার অর্থ হলো আমাদের ক্ষমতার ভারকেন্দ্র ক্রমেই বিত্তশালীদের কাছে করায়ত্ত হচ্ছে, যা শুভকর বিষয়। এছাড়া অতীতে ও বর্তমানে ৩০২ ধারা, তথা হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের অনেকেই নির্বাচিত হয়েছেন, এটাও শুভকর নয়। তবে অধিক হারে উচ্চচশিক্ষিতদের নির্বাচিত হওয়া একটি ইতিবাচক বিষয়। এমপিদের উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা করা সংবিধানের লঙ্ঘন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শীর্ষ ১০ সম্পদশালী চেয়ারম্যান : সুজনের বিশ্লেষণে বিজয়ী চেয়ারম্যানদের মধ্যে শীর্ষ ১০ সম্পদশালীর মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছেন নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ফেরদৌসী ইসলাম। তার সম্পদের পরিমাণ ১৮৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার বেশি। এরপরে যথাক্রমে রয়েছেন পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো: মিরাজুল ইসলাম (৮১ কোটি ৯৬ লাখ), কুমিল্লার হোমনা উপজেলার চেয়ারম্যান রেহানা বেগম (৭৩ কোটি ৩৩ লাখ), হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার চেয়ারম্যান এস এফ এ এম শাহজাহান (৪২ কোটি ৫৩ লাখ), চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান মো: জাহেদুল হক (৩৭ কোটি ৭০ লাখ), নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাহার ইসরাক শাবাব চৌধুরী (৩৫ কোটি ৯০ লাখ), ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো: মিজানুর রহমান মজুমদার (৩৪ কোটি ৮২ লাখ), শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার চেয়ারম্যান মো: ইদ্রিস ফিরোজ (৩৩ কোটি ১৬ লাখ), ঝালকাঠির সদর উপজেলার চেয়ারম্যান খান আরিফুর রহমান (২৮ কোটি ৪৪ লাখ), নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো: হাবিবুর রহমান (২৮ কোটি ৮ লাখ)।


আরো সংবাদ



premium cement
ইউক্রেনে তেলের লরি ও মিনিবাসের সংঘর্ষ, শিশুসহ নিহত ১৪ হজের অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা জানালেন সানিয়া মির্জা বালিয়াডাঙ্গীতে সাপের কামড়ে গৃহবধূর মৃত্যু দৌলতদিয়া পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি কাশ্মিরে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ৮ ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ শুরু গাজা যুদ্ধে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নেবে যুক্তরাজ্য : নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবসরের জল্পনার মধ্যেই ভবিষ্যৎ নিয়ে ইঙ্গিত রোনালদোর এলপিএলে একই দিনে সফলতা মোস্তাফিজ-তাসকিন-শরিফুলের রাবি ক্যাম্পাসে রিকশা ভাড়া নির্ধারণ, চালকদের থাকবে পোশাক বগুড়ায় ডোবার পানিতে ডুবে ২ বোনের মৃত্যু

সকল