০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ জিলহজ ১৪৪৫
`

ঢাকা মহানগর আ’লীগে হ য ব র ল অবস্থা

-

- সভাপতি-সম্পাদকের নাম উল্লেখ করে থানা-ওয়ার্ড কমিটির তালিকা জমা
- দক্ষিণে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের পরামর্শ নেয়া হয়নি
- ঢাকা-৭ ও ৯ আসনে একাধিক তালিকা জমা দেয়ার অভিযোগ

থানা-ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটির তালিকা নিয়ে হ য ব রল অবস্থা বিরাজ করছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগে। সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে কমিটি ঘোষণা দেয়ার নিয়ম থাকলেও দুই বছরের মাথায় গত মাসে থানা-ওয়ার্ডের কমিটির প্রস্তাবিত তালিকা কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়। প্রস্তাবিত ওই তালিকায় বেশ কয়েকটি থানা-ওয়ার্ডে ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের বাদ দিয়ে বিতর্কিত নেতাদের নাম যুক্ত করায় তৃণমূল আওয়ামী লীগে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। প্রস্তাবিত তালিকা নিয়ে চলছে তুমুল সমালোচনা। একই সাথে পদ বাণিজ্যের বিস্তর অভিযোগ উঠায় প্রস্তাবিত তালিকার স্বচ্ছতা নিয়ে তৃণমূলে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এ দিকে উত্তর আওয়ামী লীগের সব থানা ও ওয়ার্ডে একটি তালিকা দিতে সক্ষম হলেও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কয়েকটি থানা-ওয়ার্ডে একাধিক তালিকা জমা দেয়া হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের পর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নীতিগতভাবে দুঃসময়ের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা হিসেবে পরিচিত কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ খান মোহাম্মদ জাহিদকে সাধারণ সম্পাদক পদে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও প্রস্তাবিত তালিকায় ৫৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিকের নাম যুক্ত করা হয়েছে। যদিও বিভিন্ন সময় আকাশ কুমার ভৌমিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। গেল বুধবার আকাশ কুমার ভৌমিকের দুর্নীতিসহ নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে লিখিত একটি অভিযোগ দিয়েছেন বৃহত্তর ঢাকা জেলা তাঁতী লীগের সাবেক সভাপতি এম এ হালিম ঢালী। বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠা জি এম আতিকুর রহমান আতিককে সভাপতি এবং বিতর্কিত কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান আসাদকে সাধারণ সম্পাদক প্রস্তাব করে শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের কমিটির তালিকা জমা দেয়া হয়েছে।

এ দিকে ঢাকা-৭ আসনে দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সমন্বিত একটি লালবাগ, চকবাজার, বংশাল ও কোতোয়ালি থানা এবং অন্তর্গত ১৩টি ওয়ার্ডের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রস্তাব করে একটি তালিকা গত ১৬ জুন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে জমা দেন। তবে প্রায় ৬ মাস আগেই ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিম তার সমর্থিতদের দিয়ে নিজেই প্রস্তাব করে একটি তালিকা কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন। ওই তালিকার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম এখন সবার মুখে মুখে। ঢাকা-৯ আসনেও একই অবস্থা। স্থানীয় এমপিকে উপেক্ষা করে ঢাকা-৯ আসনের অন্তর্গত খিলগাঁ, সবুজবাগ ও মুগদা থানা এবং তার অন্তর্গত ১২টি ওয়ার্ডে পছন্দের ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রস্তাব করে দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মন্নাফী এবং সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির পৃথক দু’টি তালিকা জমা দিয়েছেন এবং দু’জনেই প্রস্তাবিত তালিকার পক্ষে পৃথক দু’টি নোট জমা দিয়েছেন।

এ ছাড়াও রমনা থানা, পল্টন থানা এবং ৮, ৯, ১০, ১১, ১৩, ৪৮ ও ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডসহ বেশ কয়েকটি থানা ও ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটির তালিকায় বিতর্কিত ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং গঠিত সাংগঠনিক টিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মো: মিরাজ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, থানা-ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত যে কমিটি কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়েছে তাতে আমার কোনো পরামর্শ নেয়া হয়নি। সভাপতি-সম্পাদক তাদের ইচ্ছেমতো তাদের পছন্দমতো ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি গঠন করে তালিকা জমা দিয়েছেন। পদ বাণিজ্যের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমিও শুনেছি, দলের মধ্যে আলোচনা আছে, তবে সত্য-মিথ্যা জানি না। যদি এ রকম হয়ে থাকে সেটা আমাদের জন্য অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। দায়িত্বপ্রাপ্ত আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের কোনো পরামর্শ, সহযোগিতা বা কোনো ধরনের কনসার্ন ছাড়াই প্রস্তাবিত কমিটির তালিকা জমা দেয়া হয়েছে।

দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কারো সাথে কোনো মিটিং হয়নি, আলোচনাও করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: হুমায়ুন কবির নয়া দিগন্তকে বলেন, থানা-ওয়ার্ডের কমিটি গঠনের জন্য যে তালিকা জমা দেয়া হয়েছে তাতে ত্যাগী ও যোগ্যদের মূল্যায়ণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পদ দেয়ার যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
এ দিকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ২৬টি থানা ও ৬৪টি ওয়ার্ড এবং একটি ইউনিয়নের প্রস্তাবিত তালিকা গত ৪ জুন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে জমা দেন উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজুলর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি।

উত্তর আওয়ামী লীগের জমা দেয়া প্রস্তাবিত তালিকা নিয়েও বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। দক্ষিণখান, খিলক্ষেত ও তুরাগ থানা এবং ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১ ও ৫৪ নং ওয়ার্ডসহ আরো কয়েটি থানা ও ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত তালিকা নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে। ওই সমস্ত ওয়ার্ড ও থানায় ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের বাদ দিয়ে হত্যা মামলার আসামি, চাঁদাবাজ, চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে কমিটি গঠন করার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত তালিকা জমা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই এলাকার ত্যাগী নেতারা বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে যোগ্য, দক্ষ ও অভিজ্ঞ নেতাদের মূল্যায়ণ করার জন্য দলীয় প্রধানের কাছে দাবি জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে সাংগঠনিক টিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা এবং ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি নয়া দিগন্তকে বলেন, থানা ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটির তালিকা জমা দেয়া হয়েছে। কমিটিতে কাকে রাখা হয়েছে আমি জানি না।

আমাদের কাছে পরামর্শ নিয়েছেন, আমরা আমাদের মতো করে পরামর্শ দিয়েছি। ওই পরামর্শ অনুযায়ী তালিকা করা হয়েছে কি না তাও আমি জানি না। কমিটি ঘোষণা হওয়ার পরে জানতে পারব। উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মিরপুর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা এ বি এম মাজহারুল আনাম বলেন, কমিটিতে কে বা কারা আছেন সেটা জানি না। তবে আমাদের কাছে যখন পরামর্শ নেয়া হয় আমাদের সাধ্যমতো পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছি। এরপর কাকে কমিটিতে রাখা হয়েছে, কাকে বাদ দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রস্তাবিত কমিটিতে ত্যাগী ও যোগ্যদের মূল্যায়ণ করা হয়েছে। কিছু জায়গায় কিছু অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ ওঠার পরই প্রস্তাবিত কমিটি জমা দেয়ার আগেই কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে প্রস্তাবিত কমিটিতে বিতর্কিতদের স্থান পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি আরো বলেন, আমরা তো প্রস্তাব করেছি মাত্র। আমাদের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন। তিনি প্রস্তাবিত কমিটির সংযোজন বিয়োজন করার এখতিয়ার রাখেন। প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেবো।


আরো সংবাদ



premium cement